ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

পরিচয় গোপন করে বগুড়ার গ্রামে বাড়ি ভাড়া নেয় জঙ্গীরা

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ৬ এপ্রিল ২০১৬

পরিচয় গোপন করে বগুড়ার গ্রামে বাড়ি ভাড়া নেয় জঙ্গীরা

স্টাফ রিপোর্টার, বগুড়া অফিস ॥ বগুড়ার শেরপুরের গ্রামে শক্তিশালী বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় নিহত দুইজনের মধ্যে একজনের পরিচয় মিলেছে। তার নাম তরিকুল ইসলাম (৩৮)। বাড়ি সিরাজগঞ্জ। পরিবারের সদস্যরা মঙ্গলবার সকালে লাশ দেখে শনাক্ত করেছেন। সে নিষিদ্ধ ঘোষিত উগ্র জঙ্গী জেএমবির প্রথম সারির সদস্য। এই ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তরিকুলের পরিবারের ৬ সদস্যকে ডিবি পুলিশের হেফাজতে নেয়া হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, তাদের গ্রেফতার করা হয়নি। মূলত লাশ শনাক্তের জন্য তাদের আনা হয়। এদিকে উগ্র জঙ্গীরা যে দেশের বিভিন্ন স্থানে নানা ছদ্মাবরণে অবস্থান নিয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে মরিয়া তার প্রমাণও মিলছে বগুড়ার ঘটনায়। যে বিস্ফোরকদ্রব্য পাওয়া গেছে তা এতটাই উচ্চক্ষমতার যে একটি শহর ধ্বংস করে দেয়া যাবে। শক্তিশালী জেলের টিউবে হাই পাওয়ার এক্সপ্লোসিভ লেখা আছে। উল্লেখ্য রবিবার রাতে বগুড়ার শেরপুরের জোয়ানপুর কুঠিরভিটা এলাকায় এক বাড়িতে বোমা বানানোর সময় দুই ব্যক্তি নিহত হয়। উদ্ধার করা হয় বোমা বানানোর বিপুল সরঞ্জাম। বগুড়া পুলিশ সুপার মোঃ আসাদুজ্জামান জানান, এই ঘটনায় মামলা দায়ের হয়েছে। ওই বাড়ি থেকে কুদরুত উল্লাহ নামের পাসপোর্টের সূত্র ধরে সিরাজগঞ্জের পুলিশকে জানানো হয়। রাতেই তরিকুলের বাবা আবু বকর সিদ্দিকী, বড় ভাই মোঃ সানাউল্লাহ, লিয়াকত হোসেন, বরকতউল্লাহ, বোন সাকেরা খাতুন ও ভাবি মেহবুবা আক্তারকে সিরাজগঞ্জের জামুয়া গ্রাম থেকে বগুড়ায় আনা হয়। তাদের শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালের মর্গে দুই লাশ দেখালে তারা প্রথমে চেনেন না বলে জানান। মঙ্গলবার সকালে তারা তরিকুলের লাশ শনাক্ত করেন। এ থেকে পরিষ্কার বোঝা যায় জেএমবির জঙ্গীরা কতটা কৌশলী। ২ হাজার ৫ সালে দেশজুড়ে সিরিজ বোমা হামলার সঙ্গে জড়িত ছিল তরিকুল। তাকে গ্রেফতার করা হয়। সে তিন বছর সাজা খেটেছে। কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্বদ্যিালয়ে সে লেখাপড়া করত। সেখানে কিন্ডারগার্টেন স্কুলে শিক্ষকতাও করেছে। তিন বছর ধরে সে বাড়ি ছাড়া। বগুড়ায় যে বাড়িতে বোমা বিস্ফোরিত হয় তা ছিল সুদূর প্রসারী পরিকল্পনার আওতায় ভাড়া নেয়া। মিজানুর রহমান নামে এক ব্যক্তি নিজেকে সিএনজি অটোরিক্সা চালকের পরিচয় দিয়ে মাসছয়েক আগে ওই বাড়ি ভাড়া নেয়। স্ত্রী শাপলা, দশ বছরের মেয়ে মোসলেমা ও এক ভগ্নিপতিকে নিয়ে সে থাকত। মূলত সে সিএনজি অটোরিক্সা চালক ছিল না। সিএনজি ব্যবহার হতো অন্য কাজে। বোমা বিস্ফোরিত হওয়ার পর ওই বাড়িতে যে মোটরসাইকেল পাওয়া যায় তা একেবারে নতুন। পুলিশের ধারণা এই যানবাহন অসৎ উদ্দেশে ব্যবহার করার জন্য কেনা হয়। ঘটনার আগে শুক্রবার মিজানুর ও তার পরিবার ওই বাড়ি থেকে চলে যায়। তাদের বাড়ি নওগাঁ বলে আশপাশের লোকদের জানালেও তা কতটা সত্য এ নিয়েও সন্দেহ করছে পুলিশ। বগুড়ার পুলিশ সুপার জানান গ্রেফতারের জন্য তাদের খোঁজা হচ্ছে। এদিকে এক সূত্র জানায়, নিহত তরিকুলেরা ৫ ভাই ৪ বোন। এক ভাই এক বোন মারা গেছে। তার বড় এক ভাই কুদরুতুল্লাহ জেএমবির সদস্য ছিল। জঙ্গীদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ কোন্দলে সে মারা যায়। পুলিশ বিষয়টি খতিয়ে দেখছে। এই ঘটনায় যে বিস্ফারকগুলো উদ্ধার করে ধ্বংস করা হয়েছে তার সবই বিদেশ থেকে আসা। বোমা নিষ্ক্রিয়করণ দল এত উচ্চ ক্ষমতার বিস্ফোরক ও নিওজেলের মতো দুষ্প্রাপ্য জেল বিস্ফোরক দেখে বিস্মিত হয়ে যান। জেএমবি ও উগ্র জঙ্গী গোষ্ঠী যে পুনরায় সংগঠিত হচ্ছে তার প্রমাণ দিল বগুড়ার এই ঘটনা। বগুড়ার এই ঘটনা প্রকাশ হওয়ার পর সাধারণের ভাবনা : দেশে এ ধরনের কত বাড়িতে জঙ্গীরা বোমা বানাচ্ছে! এদের দ্রুত গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা দরকার। উল্লেখ করা যায় ২ হাজার ৫ সালের দিকে বগুড়া ও শেরপুরে জঙ্গীরা আস্তানা গেড়েছিল। বিচারে মৃত্যুদ-প্রাপ্ত রায় কার্যকর হওয়া শায়খ আব্দুর রহমান বাংলা ভাই নামে পরিচিত সিদ্দিকুল ইসলাম বগুড়ায় আত্মগোপন করে অনেকটা সময় ছিল। বছর তিনেক আগে বগুড়ার ঠনঠনিয়া এলাকার এক বাড়িতে অভিযান চালিয়ে বিপুল আধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়। এবার বগুড়ার শেরপুর উপজেলার গ্রাম থেকে উদ্ধার হলো উচ্চ শক্তির বোমা বানানোর সরঞ্জাম। যা বানাতে গিয়ে নিহত হয় দুই জন। প্রকাশ হয়ে পড়ে জঙ্গী আস্তানা।
×