ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

পানামা পেপার্সে বিশ্বজুড়ে আলোড়ন, তদন্ত দ্দরু

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ৬ এপ্রিল ২০১৬

পানামা পেপার্সে বিশ্বজুড়ে আলোড়ন, তদন্ত দ্দরু

স্টাফ রিপোর্টার ॥ কর ফাঁকি দিয়ে বেনামে বিদেশে কালো টাকার পাহাড় গড়ে তোলার চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ হওয়ার পর বিশ্বব্যাপী তা নিয়ে তদন্তের কার্যক্রম শুরু হতে যাচ্ছে। পানামার আইনী পরামর্শক প্রতিষ্ঠান মোওস্যাক ফনসেকার সহাতায় কর ফাঁকি দিয়ে বিশ্বের ধনী ও পরাক্রমশালী ব্যক্তিরা বিদেশে অর্থ জমিয়ে যাচ্ছিলেন। রাষ্ট্রপ্রধান, রাজনীতিক, শিল্পপতি, ফুটবলার, ফিল্মস্টারসহ সমাজের মান্যগণ্য ব্যক্তিরা আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে বিদেশে কালো টাকা জমিয়েছেন। নামে ও বেনামে একের পর এক খুলে চলেছেন বেআইনী কোম্পানি। এই তালিকায় নাম রয়েছে বিশ্বের অন্তত ১৪৩ জন রাষ্ট্রপ্রধান ও প্রথম সারির রাজনীতিকের। এই কেলেঙ্কারী এখন ‘পানামা পেপার্স’ নামেই বিশ্বব্যাপী আলোচিত হচ্ছে। মঙ্গলবার বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কেলেঙ্কারী ফাঁস হওয়ার পর বিভিন্ন দেশের কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে তদন্ত কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রিয়া, সুইডেনসহ বেশ কিছু দেশ এই ঘটনা আরও বিশদভাবে তুলে আনতে তদন্ত শুরু করতে চায়। তবে চীনে ঘটেছে উল্টো। দেশটিতে পানামা পেপার্স কেলেঙ্কারীর সংবাদ প্রচার সীমাবদ্ধ করে দেয়া হয়েছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিনফিং, রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন, সিরিয়ার বর্তমান প্রেসিডেন্ট বাসার আল-আসাদ, মিশরের সাবেক প্রেসিডেন্ট হোসনি মোবারকসহ তার পরিবারের সদস্য ও তার সহায়তাকারীরা এবং লিবিয়ার সাবেক নেতা কর্নেল গাদ্দাফি ফনসেকার মাধ্যমে কালো টাকা জমিয়েছেন বিদেশে। ভারতের ফিল্মস্টার অমিতাভ বচ্চন ও ঐশ্বরিয়া রাই, আর্জেন্টিনার তারকা ফুটবলার লিওনেল মেসির নাম আছে তালিকায়। টাকা লুটপাটে আরও যেসব বিশ্বনেতার নাম এসেছে তাদের মধ্যে অন্যতম সৌদি আরবের বাদশা সালমান বিন আব্দুল আজিজ বিন আব্দুল রহমান আল সৌদ, আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট মৌরিকিও ম্যাক্রি, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট পেত্রো পোরসেনকো, সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট খলিফা বিন জায়েদ বিন সুলতান আল নাহিয়ান, ইউক্রেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী পালভো লেজারেনকো, জর্জিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিদজিনা লাভানিসভিলি, ইরাকের সাবেক মন্ত্রী আয়াদ আলাওয়ি, আইসল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী সিগমুন্দুর দাভিও গুন্নালাওগসন, কাতারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী হামিদ বিন জসিম বিন জাবের আল থানি, কাতারের সাবেক আমির শেখ হামিদ বিন খলিফা আল থানি, জর্দানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী আলী আবু আল-রাগেব, সুদানের সাবেক প্রেসিডেন্ট আহমেদ আলী আল-মির্ঘানি। এছাড়া ব্রিটেনের হাউস অব লর্ডসের ছয়জন সদস্যের নামও এই অর্থ পাচারের তালিকায় রয়েছে। ব্রিটিশ রাজনৈতিক দলগুলোকে বিভিন্ন সময় অর্থ সহায়তা করা বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ীর নামও অর্থ পাচারকারীর তালিকায় রয়েছে। তবে তালিকায় কোন বাংলাদেশীর নাম নেই। এদিকে মঙ্গলবার বিভিন্ন খ্যাতনামা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম পানামা পেপার্স নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ অব্যাহত রেখেছে। সেসব প্রতিবেদনে আইনী সহায়তাকারী প্রতিষ্ঠান মোওসেক ফনসেকার কার্যক্রম নিয়ে এবং কিভাবে তথ্য ফাঁস হয়েছে তা নিয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, পানামাভিত্তিক আইনী পরামর্শ ও কর্পোরেট সেবাপ্রদানকারী প্রতিষ্ঠান মোওস্যাক ফনসেকার কাজ বিশ্বব্যাপী বিস্তৃত। ৪২টি দেশে ৬০০ কর্মী এর ওয়েবসাইট সচল রেখেছেন। মোওস্যাক ফনসেকা ‘অফশোর’ সেবায় বিশ্বের চতুর্থ বড় প্রতিষ্ঠান, যারা তিন লাখেরও বেশি কোম্পানির জন্য কাজ করে। ফনসেকার তথ্যভা-ার থেকে ফাঁস হয়েছে ১ কোটি ১০ লাখ নথি, যা সংরক্ষণে হার্ডডিস্কে ২.৬ টেরাবাইট জায়গা প্রয়োজন। সর্বকালের অন্যতম বৃহৎ এ তথ্য ফাঁসের ঘটনায় পরিমাণের দিক দিয়ে ২০১০ সালে উইকিলিকসের প্রকাশ করা কূটনৈতিক তারবার্তা এবং ২০১৩ সালে এ্যাডওয়ার্ড স্নোডেনের ফাঁস করা যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা তথ্যের চেয়েও বেশি। অফশোরে বিপুল পরিমাণ অর্থ লেনদেনের মধ্য দিয়ে মোওস্যাক ফনসেকা গুরুত্বপূর্ণ অনেক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কর ফাঁকিতে সহায়তা করেছে। অফশোর কোম্পানি খোলা বা এর মাধ্যমে ব্যবসা পুরোপুরি বৈধ হলেও মাদক ও অস্ত্র চোরাচালানি এবং মুদ্রা পাচারের মতো অবৈধ কর্মকা-ের অর্থও ফনসেকার মাধ্যমে নিরাপত্তা পেয়েছে। এ কোম্পানি অনেক স্বৈরশাসক, রাজনীতিবিদ, ধনী ব্যবসায়ী ও প্রভাবশালীদের সম্পদের মালিকানার তথ্য গোপন রেখে কর ফাঁকি দিতে সহায়তা করেছে। বেশিভাগ ক্ষেত্রে কাজটি হয়েছে শেল কোম্পানির মাধ্যমে। তবে বেআইনী কোন ধরনের কাজ করার কথা অস্বীকার করেছে মোওস্যাক ফনসেকা। প্রতিষ্ঠানটি দাবি করেছে, তাদের কাজের ধরন সম্পর্কে সাধারণ জনগণ খুব ভালভাবে অবগত নন। আর গণমাধ্যমগুলো বিষয়গুলোকে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করছে।
×