ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মাথাপিছু আয় বেড়ে হয়েছে ১৪৬৬ ডলার ;###;রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার ফল ;###;তবে ধরে রাখাই চ্যালেঞ্জ- বিশ্ব ব্যাংকের ঢাকাস্থ প্রধান অর্থনীতিবিদ

বৃত্ত ভেঙ্গে প্রবৃদ্ধি ৭.০৫ ॥ নতুন উচ্চতায় জিডিপি

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ৬ এপ্রিল ২০১৬

বৃত্ত ভেঙ্গে প্রবৃদ্ধি ৭.০৫ ॥ নতুন উচ্চতায় জিডিপি

হামিদ-উজ-জামান মামুন ॥ কয়েক বছর ধরেই ছয় শতাংশের বৃত্তে আটকে ছিল দেশের প্রবৃদ্ধি। কিন্তু দেশের ইতিহাসে এই প্রথম মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি সাত শতাংশের ঘর অতিক্রম করেছে। এর মধ্য দিয়ে নতুন উচ্চতায় পৌঁছাল প্রবৃদ্ধির অর্জন। চলতি অর্থবছরে প্রাথমিক হিসেবে এই হার দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশে, যা গত অর্থবছর ছিল ৬ দশমিক ৫৫ শতাংশ। অন্যদিকে প্রবৃদ্ধি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৪৬৬ ডলারে, যা গত অর্থবছর চূড়ান্ত হিসেবে ছিল এক হাজার ৩১৬ মার্কিন ডলার। প্রাথমিক হিসেবে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ২০০৫-০৬ ভিত্তিবছর ধরে এসব তথ্য প্রকাশ করেছে। এর আগে বিশ্বব্যাংক এডিবি পূর্বাভাস দিয়েছিল চলতি অর্থবছরও ছয় শতাংশের ঘরেই থাকবে প্রবৃদ্ধি। কিন্তু উন্নয়নসহযোগীদের পূর্বাভাস ভুল প্রমাণিত হয়েছে বিবিএসের হিসাবে। সেই সঙ্গে জাতীয় বাজেটের যে লক্ষ্য ধরা হয়েছিল ৭ শতাংশ তা অর্জিত হয়েছে। অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশ যে এগিয়ে যাচ্ছে এটি তারই বড় উদাহরণ। গত কয়েক বছর ধরেই বাংলাদশের মানুষের মাথাপিছু আয় বাড়ছে। দেশ যে দ্রুত মধ্যম আয়ের দেশের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে এটি তারই লক্ষণ। কিন্তু এই অর্জন ধরে রাখা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশ্বব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন। তিনি বলেন, বেতন বাড়ার কারণে প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশ হলেও ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ এবং কৃষি খাতের প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়া এই অর্জন ধরে রাখা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। প্রবৃদ্ধি এবং মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশের মানুষকে অভিনন্দন জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে তিনি বলেন, এটি অর্জন সম্ভব হয়েছে দেশের সকল শ্রেণী ও পেশার মানুষের যার যার অবস্থান থেকে অবদান রাখার কারণে। তাই সকলে মিলে কাজ করে গেলে আমরা কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারব। প্রধানমন্ত্রীর অভিনন্দনের বিষয়টি জনকণ্ঠকে নিশ্চিত করেছেন পরিকল্পনামন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল। প্রবৃদ্ধি ও মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে পরিকল্পনামন্ত্রী জনকণ্ঠকে বলেছেন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বিরাজ করায় এ অর্জন সম্ভব হয়েছে। তাছাড়া গত কয়েক বছরে অর্থনীতিতে যে বেঞ্চমার্ক অর্জন করেছি তারই ফল হচ্ছে জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন এবং এই মাথাপিছু আয়। এ সময়ের মধ্যে বিশ্বের যত দেশ তাদের প্রবৃদ্ধি ছয় শতাংশের ওপরে ধরে রাখতে পেরেছে তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। তিনি জানান, বর্তমানে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ বাড়ছে। এ কারণেই আগামী ৫ বছর হবে বাংলাদেশের জন্য। বিবিএস সূত্র জানায়, দেশের ইতিহাসে এই প্রথম সাত শতাংশের ঘর অতিক্রম করেছে জিডিপি প্রবৃদ্ধি। ২০০৫-০৬ ভিত্তিবছর ধরে প্রাথমিক হিসেবে এ হার দাঁড়িয়েছে সাত দশমিক ০৫ শতাংশে, যা গত অর্থবছরে ছিল ছয় দশমিক ৫৫ শতাংশ। চূড়ান্ত হিসেবে জিডিপি প্রবৃদ্ধি আরও বাড়বে বলে জনকণ্ঠকে জানিয়েছেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব কানিজ ফাতেমা। তিনি বলেন, এখনও বোরো ধানের হিসাব পাওয়া যায়নি। তাই প্রাথমিক হিসেবে বোরো ধানের হিসাব যুক্ত হয়নি। এটি যুক্ত করা হলে আরও বাড়বে। আর প্রবৃদ্ধি বাড়লে স্বাভাবিকভাবেই মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পায়। বিবিএসের হিসাব মতে, গত ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ছিল ছয় দশমিক শূন্য ছয় শতাংশ, ২০১২-১৩ অর্থবছরে ছিল ছয় দশমিক শূন্য এক এবং ২০১১-১২ অর্থবছরে ছিল ছয় দশমিক ৫২ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে সেবা এবং শিল্প খাতের ভর করে বেড়েছে এই প্রবৃদ্ধি। দেখা গেছে, শিল্প খাতে প্রবৃদ্ধি বেড়ে দাঁড়িয়েছে দশ দশমিক দশ শতাংশে, যা গত অর্থবছরে ছিল নয় দশমিক ৬৭ শতাংশ। সেবা খাতে প্রবৃদ্ধি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ছয় দশমিক ৭০ শতাংশে, যা গত অর্থবছরে ছিল পাঁচ দশমিক ৮০ শতাংশ এবং কৃষি খাতে প্রবৃদ্ধি কিছুটা কমে হয়েছে দুই দশমিক ৬০ শতাংশ, যা গত অর্থবছরে ছিল তিন দশমিক ৩৩ শতাংশ। প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধির বিষয়ে বলা হয়েছে পরিকল্পিতভাবে এগোচ্ছে বাংলাদেশের অর্থনীতি। মধ্য আয়ের অর্থনীতিতে যেতে গত ৫ বছরে ব্যাপক পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিল সরকার। এছাড়া আগামী পাঁচ বছরের জন্যও রয়েছে সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা। শুধু পরিকল্পনা তৈরিই নয়, পাশাপাশি বাস্তবায়ন করেছে। এর সুফলও মিলতে শুরু করেছে ইতোমধ্যই। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, কর্মসংস্থান ও দারিদ্র্য নিরসনে অসাধারণ অগ্রগতি, সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় যথেষ্ট দক্ষতা অর্জন, অবকাঠামো উন্নয়ন বিশেষত বিদ্যুত সম্প্রসারণ, মানব উন্নয়ন ও সামাজিক নিরাপত্তা খাতে দৃষ্টি গোচর উন্নতি অর্জিত হয়েছে বলে মনে করছে সরকারের অর্থনৈতিক থিঙ্কট্যাংক হিসেবে খ্যাত পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি)। তাছাড়া বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার সময়ও অর্থনীতির বিভিন্ন খাতে প্রবৃদ্ধির ধারাবাহিকতা রক্ষা সম্ভব হয়েছে। এছাড়া ২০২০ সালের মধ্যে আট শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্য নিয়ে জুলাই থেকে বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা। এ বিষয়ে সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য ড. শামসুল আলম জনকণ্ঠকে বলেন, পরিকল্পিতভাবে দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ায় এর সুফল ইতোমধ্যেই মিলতে শুরু করেছে। ফলে ছয় শতাংশের বৃত্ত ভাঙ্গা সম্ভব হয়েছে। এই ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে আগামীতে মধ্য আয়ে উন্নীত হতে খুব বেশি সময় লাগবে না। এর আগে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অর্জনে প্রশংসা করেছিল বিশ্বব্যাংক। সেই সঙ্গে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার বিষয়েও প্রকাশ করা হয়েছিল উদ্বেগ। এক বাক্যে বলা হয়েছে অর্থনীতি স্থিতিশীল আছে, তবে নিশ্চয়তা নেই। এ অবস্থায় চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) ৬ দশমিক ৫ শতাংশ হবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছিল সংস্থাটি। বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেটে এসব বিষয় উঠে আসে। এ বিষয়ে ঢাকা কার্যালয়ের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন জনকণ্ঠকে বলেন, বর্তমানে চাকরিজীবীদের বেতন বেড়েছে। প্রবৃদ্ধি বাড়ার এটিই হচ্ছে প্রধান কারণ। তারপরই রয়েছে সেবা ও শিল্প খাতের প্রবৃদ্ধি। কিন্তু দেখা গেছে কৃষি খাতে প্রবৃদ্ধি কমেছে। অন্যদিকে রেমিটেন্স বাড়েনি এবং ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ কমেছে। এই অবস্থা যদি চলতে থাকে তাহলে সাত শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা সম্ভব হবে না। কেননা প্রতিবছর তো আর বেতন বাড়বে না। তাই এখন থেকেই রেমিটেন্স বৃদ্ধি ও ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন এই অর্থনীতিবিদ। অপর উন্নয়নসহযোগী সংস্থা এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) অতি সম্প্রতি বলেছে, মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি বাড়বে। চলতি অর্থবছরে এই প্রবৃদ্ধি বেড়ে দাঁড়াবে ৬ দশমিক ৭ শতাংশে এবং আগামী ২০১৭ অর্থবছরে সেটি আরও কিছুটা বেড়ে হবে ৬ দশমিক ৯ শতাংশ। বলা হয়েছে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকলে এবং রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি, রফতানি বৃদ্ধি, রেমিটেন্স বৃদ্ধি এবং বিনিয়োগ বাড়তে থাকলে জিডিপি প্রবৃদ্ধি বাড়বে। এডিবির প্রিন্সিপাল কান্ট্রি স্পেশালিস্ট মোহাম্মদ পারভেজ এমদাদ বলেছেন, গত অর্থবছরের চেয়ে চলতি অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি সামান্য বাড়বে। এর কারণ হচ্ছে, পোশাক খাতের রফতানি বৃদ্ধি পাওয়ায় সার্বিক রফতানি বাড়বে, মূল্যস্ফীতির নিম্নমুখী ধারা, সরকারী পে স্কেল বাস্তবায়িত হওয়া এবং রেমিটেন্স বাড়ায় বেসরকারী ভোগ বাড়বে। প্রবৃদ্ধির বাড়তি ধারা অব্যাহত রাখতে এবং নিম্ন মধ্য আয়ের থেকে মধ্য আয়ের দেশে যেতে সংস্কারের মাধ্যমে ব্যবসার পরিবেশ উন্নত করে উচ্চ বিনিয়োগ, সম্পদ ব্যবস্থাপনা এবং আর্থিক খাতের শৃঙ্খলা রক্ষা করতে হবে। অন্যদিকে বিবিএসের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, প্রবৃদ্ধি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দেশের মানুষের মাথাপিছু আয়ও বেড়েছে। চলতি অর্থবছর এটি বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৪৬৬ ডলারে, যা গত অর্থবছরে ছিল এক হাজার ৩১৬ ডলার। এ বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী জনকণ্ঠকে বলেন, আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে ২০২১ সালের মধ্যে মাথাপিছু আয় দুই হাজার ডলারে নিয়ে যাওয়া। কিন্তু এখন আমাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি যেভাবে এগোচ্ছে এতে আশা করা যায় লক্ষ্যমাত্রার আগেই এটি পূরণ হবে। কেননা ২০০৯-১০ অর্থবছরে মাথাপিছু আয় ছিল মাত্র ৮৪৩ ডলার, ২০১০-১১ অর্থবছরে সেটি কিছুটা বেড়ে দাঁড়ায় ৯২৮ ডলারে, ২০১১-১২ অর্থবছরে হয় ৯৫৫ ডলার, ২০১২-১৩ অর্থবছরে এক হাজার ৫৪ ডলার এবং ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ছিল এক হাজার ১৮৪ মার্কিন ডলার। এভাবে ধারাবাহিকভাবেই বাড়ছে মাথাপিছু আয়। প্রবৃদ্ধি ও মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির বিষয়ে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর মহাপরিচালক আবদুল ওয়াজেদ জনকণ্ঠকে বলেন, আমরা চলতি অর্থবছরে নয় মাসের হিসাব নিয়েছি এবং বাকি তিন মাসের হিসাব আগের ট্রেন্ড থেকে নেয়া হয়েছে। এই প্রাথমিক হিসেবে দেখা গেছে প্রবৃদ্ধি ও মাথাপিছু আয় বেড়েছে। অর্থবছর শেষে চূড়ান্ত হিসাব পাওয়া গেলে হয়ত আরও বাড়তে পারে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সমীক্ষা থেকে দেখা যায়, নব্বইয়ের দশকে বাংলাদেশ পুরোপুরি মুক্তবাজার অর্থনীতিতে প্রবেশের পর বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় বাড়তে থাকে। কিন্তু রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে তা খুব দ্রুতগতিতে বাড়তে পারেনি। স্বাধীনতা-পরবর্তী গত ৪১ বছরের মধ্যে ৩৪ বছরে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় বেড়েছে ৫০০ ডলার। আর গত কয়েক বছরে তা দ্বিগুণ বেড়ে এক হাজার ডলার ছাড়িয়েছে। ১৯৭২-৭৩ সাল থেকে মাথাপিছু আয় বেড়ে ২০০৬-০৭ অর্থবছরে তা দাঁড়ায় মাত্র ৫২৩ ডলারে। আর ২০০৭-০৮ অর্থবছর থেকে ২০১২-১৩ অর্থবছরে তা দ্বিগুণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৪৪ ডলারে। গত কয়েক বছরে মাথাপিছু আয় দ্বিগুণ বৃদ্ধিতে সবচেয়ে বেশি কার্যকরী ভূমিকা রেখেছে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচী। এ কর্মসূচীর কারণেই উপকারভোগী জনগোষ্ঠীর মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পেয়েছে। সমীক্ষায় দেখা গেছে, সরাসরি উপকারভোগীদের মাথাপিছু আয় যেভাবে বেড়েছে তার তুলনায় যারা এ কর্মসূচীভুক্ত নয়, তাদের মাথাপিছু আয় কম হারে বেড়েছে। সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচীর উপকারভোগী নারীদের আর্থিক সক্ষমতার মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়ন বৃদ্ধি পেয়েছে। অভাবগ্রস্ত দরিদ্র শিশুদের খাদ্য চাহিদা পূরণ হয়েছে, তবে পুষ্টি চাহিদা বিশেষ করে দুগ্ধজাত এবং আমিষজাত খাদ্যের ঘাটতি পরিলক্ষিত হয়েছে। সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী সম্পর্কে পরিকল্পনা কমিশনের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, উপকারভোগীদের ওপর সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচী ব্যাপক প্রভাব ফেলতে সক্ষম হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে খাদ্য নিরাপত্তায় বিরাজমান ঝুঁকিসমূহ তাৎপর্যপূর্ণভাবে হ্রাস পেয়েছে। সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচীর প্রভাবে মৌসুমী অভাব কমেছে, যার ফলে দিনে তিনবার খাদ্যগ্রহণকারী পরিবারের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে দ্বিগুণ হয়েছে। আর্থিক ও অন্যান্য সঙ্কট মোকাবেলার ক্ষেত্রে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সঞ্চয় প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সম্পদ সংগ্রহ, যেমন ভূমি মালিকানা ও গবাদি পশু পালনে মিশ্র পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। দরিদ্রের মধ্যে ভূমিহীনতা থেকে উত্তরণ দৃশ্যমান না হলেও আর্থিক সক্ষমতার কারণে ভূমিবন্ধক নেয়ার ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে। পরিবারপ্রতি ভূমিবন্ধকের গড় সক্ষমতা এক দশমিক নয় শতাংশ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে তিন দশমিক ৩৬ শতাংশ হয়েছে। অন্যদিকে পরিবারপ্রতি গবাদি পশুর গড়সংখ্যা শূন্য দশমিক ৭৫ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে এক দশমিক ৩৭ শতাংশ হয়েছে।
×