ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

১৮০ গভীর নলকূপে পানি উঠছে না ॥ অনাবাদি ফসলি জমি

বরেন্দ্র অঞ্চলে সেচ সঙ্কট

প্রকাশিত: ০৪:০৭, ৬ এপ্রিল ২০১৬

বরেন্দ্র অঞ্চলে সেচ সঙ্কট

মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী ॥ ভূগর্ভস্থ পানির স্তর অস্বাভাবিকভাবে নিচে নেমে যাওয়ায় রাজশাহীর বরেন্দ্র অঞ্চলে পানি মিলছে না গভীর নলকূপে। গত কয়েক বছরের ব্যবধানে এ অঞ্চলে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমেছে তিনগুণের বেশি। ফলে বন্ধ হয়ে গেছে এ অঞ্চলের ১৮০টি গভীর নলকূপ। সেচ সঙ্কটের মুখে এবার কয়েক হাজার হেক্টর জমি অনাবাদি পড়ে আছে বরেন্দ্র অঞ্চলে। বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) তথ্য অনুযায়ী পানির স্তর ক্রমেই নিচে নেমে যাচ্ছে। অপেক্ষাকৃত উঁচু এলাকায় কয়েক বছরে বিএমডিএর প্রায় ১৮০ গভীর নলকূপ পুরো বন্ধ হয়ে গেছে। আর অল্প পরিসরে কিছু পানি উঠছে ১২০টি গভীর নলকূপে। বন্ধ হয়ে যাওয়া নলকূপগুলোর আওতায় থাকা হাজার হাজার হেক্টর জমি পতিত পড়ে আছে। কৃষিক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তনের লক্ষ্য নিয়ে বরেন্দ্র অঞ্চলজুড়ে আশির দশক থেকে ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার শুরু হয়। সেই পানি ব্যবহার করে খরা মৌসুমে পতিত জমিগুলোকে আনা হয়েছিল চাষের আওতায়। কিন্তু অতিমাত্রায় ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনের ফলে এখন কুফল দেখা দিয়েছে। অতিমাত্রায় পানি ব্যবহারের ফলে এ অঞ্চলে প্রতি বছর পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। বিএমডিএর তথ্য অনুযায়ী রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের ১২৪টি উপজেলা নিয়ে বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ১৯৮৫ সাল থেকে সেচের জন্য ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার শুরু করে। পুরো অঞ্চলে ১৫ হাজার ১০৫টি গভীর নলকূপ রয়েছে। এর মধ্যে উঁচু এলাকা হিসেবে চিহ্নিত রাজশাহীর তানোর, গোদাগাড়ি, চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল, নওগাঁর পোরশা, সাপাহার, নিয়ামতপুর ও পতœীতলা উপজেলা। এসব এলাকার ভূগর্ভস্থ পানির স্তর এত নিচে নেমেছে যে, গত কয়েক বছরে বিএমডিএর প্রায় ১৮০টি গভীর নলকূপ বন্ধ হয়ে গেছে। রাজশাহীর তানোর উপজেলার বোদ্যপুর মৌজায় বিএমডিএর গভীর নলকূপ অপরেটর আব্দুল আজিজ জানান, তার নলকূপটি পানির অভাবে গত দুই বছর ধরে পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। এতে ২০০ বিঘার বেশি জমি পতিত পড়ে আছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ স্ট্যাডিজের (আইবিএস) গবেষক রাজ্জাকুল ইসলাম বরেন্দ্র অঞ্চলে পানি শাসন ব্যবস্থা ও টেকসই উন্নয়ন বিষয়ে গবেষণা করছেন। তিনি জানান, ১৯৮০ সালে পানির স্তর মাত্র ৩৯ ফুট নিচে পাওয়া যেত। ২০১৬ সালে এসে এসব এলাকায় পানির স্তর মিলেছে ১৫০ থেকে ১৬০ ফুট নিচে। ৩৫ বছরে ১১৮ ফুট নিচে নেমে গেছে ভূগর্ভস্ত পানির স্তর। তানোর উপজেলা বিএমডিএ প্রকৌশলী শরিফুল ইসলাম জানান, বরেন্দ্র অঞ্চলে ১৫ থেকে ২০ বছর আগেও ১২০ থেকে ১৩০ ফুট ডাউন দিয়ে গভীর নলকূপগুলো স্থাপন করা হয়েছিল। সেই সময়ের উঁচু এলাকার গভীর নলকূপগুলোর অনেকগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। সেগুলো এখন ১৬০ থেকে ১৭০ ফুট বোরিং করে পুনর্¯’াপনের চেষ্টা চলছে।
×