ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

জুবাইদা গুলশান আরা হেনা

অভিমত ॥ ভালবাসা কেন নয়!

প্রকাশিত: ০৩:৫৭, ৬ এপ্রিল ২০১৬

অভিমত ॥ ভালবাসা কেন নয়!

কারা আমার দেশের শত্রু? এবং কেন? বিষয়টি আমাদের কাছে আয়নার মতো পরিষ্কার। শত্রু তারা যারা স্বাধীন বাংলাদেশকে মেনে নিতে পারেনি। মনেপ্রাণে তারা পাকিস্তানের আদর্শকে লালন করে। বিভিন্ন লেবাসে গিরগিটির মতো চেহারা পাল্টিয়ে তারা বিভিন্ন আঙ্গিকে পাকিস্তান বন্দনা করে থাকে। পাকিস্তানের কসমেটিক্স ব্যবহার করে, পাকিস্তানের কাপড় ব্যবহার করে, বাংলাদেশ বনাম পাকিস্তানের ক্রিকেট খেলায়- পাকিস্তানকে সাপোর্ট করে। বাংলাদেশ ক্রমশ উন্নতির দিকে এগিয়ে চলছে। চারদিকে উন্নয়নের ধারা বইছে। সাধারণ জনগণ স্বস্তিতে আছে। এটা কারও কারও গাত্রদাহ হয়। পাকিস্তানের দোসর কিছু লোক সেই ’৭১-এর পরাজিত শক্তি বিভিন্ন দিক থেকে কিছু ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করতে চায়। এদের মাঝে কিছু জঙ্গীবাদী মনোভাবাপন্ন, ভ-পীর, ধর্মীয় কুসংস্কারে বিশ্বাসী এবং যারা অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে মেনে নিতে পারে না। উন্নত বিশ্বের সাধারণ মানুষরা কে কখন মন্ত্রী হয় এতকিছু নিয়ে মাথা ঘামায় না। কারণ তারা তাদের মৌলিক অধিকার পায়। আমাদের দেশের অনেকেই এই কথাটি অকপটে স্বীকার করছেন দেশ শান্তিতে আছে। আজকাল গৃহকর্মী পাওয়া যায় না, রাস্তায় ভিক্ষুকও খুব একটা দেখা যায় না। শিশুরা এখন বাসাবাড়িতে কাজ করে না। তারা স্কুলে গিয়ে লেখাপড়া শেখে। শিশুশ্রম বন্ধ হয়ে গেছে। নারীর ক্ষমতায়ন নারীকে শক্তিশালী করে তুলছে। এটাই দেশের উন্নয়নের জ্বলজ্যান্ত প্রমাণ। সাধারণ জনগণ রাজনীতি বোঝে না তারা শান্তি চায়। কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটিয়ে সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করে দেয়ার ব্যর্থ প্রয়াস চালায়। একবিংশ শতাব্দীতে যে ব্যাপারটি আমাকে বিস্মিত করে তা হচ্ছে, ধর্ষণ! ভালবাসা কেন নয়! এখন ছেলেমেয়েরা সমান তালে এগিয়ে যাচ্ছে। তাদের মধ্যে বন্ধুত্বের সম্পর্ক আছে। পছন্দের বিয়ের ব্যাপারে অভিভাবকদের আগের মতো অনড় অবস্থান নেই। যখন পত্রিকায় নারী নির্যাতন, শিশু নির্যাতন সম্পর্কে পড়ি তখন আঁৎকে উঠি। নির্যাতনকারীরা আমার স্বাধীন বাংলাদেশের নাগরিক হতে পারে না। এই চরিত্রটা পাক-হানাদারদের কাছ থেকে তারা শিখেছে। এখনও তাদের অনুসরণ ও অনুকরণ করছে। কোন ছেলে কোন মেয়েকে ভালবাসলে তাকে কখনও ধর্ষণ করবে না, হত্যা করবে না। এটা অবশ্যই অত্যন্ত ঘৃণিত, নিন্দিত, পাশবিক ব্যাপার। একটা চার পায়ের জন্তুও শারীরিক সম্ভোগের জন্য চোখে চোখে তার সঙ্গীকে ডাকে, সোহাগ করে। মুখে ভাষা না থাকলেও তাদের অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে সঙ্গীর প্রতি ভালবাসা প্রকাশ করে। আমাদের দেশের বেশিরভাগ সামাজিক অত্যাচার-অনাচার থেকে নিজেকে বিরত রাখেন। আগে কখনও ধর্ষণ হলে শুধু নারীরা বিচারের দাবিতে আন্দোলন করতেন। এখন নারীদের সঙ্গে পুরুষরাও সমান তালে প্রতিবাদের ঝড় তোলেন সকল নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে। এটি অবশ্যই নারীর প্রতি সম্মান দেখানোর পাশাপাশি দেশের স্বাধীনতা অর্জনের সোপান। ধর্ষণ একটা আক্রমণাত্মক ন্যাক্কারজনক কাজ। মনে রাখতে হবে সমাজে একজন ধর্ষণকারী, নির্যাতনকারী, হত্যাকারী একদিনে সৃষ্টি হয় না। প্রথমে ওরা ছোট ছোট অপরাধগুলো করে নিজেদের দুঃসাহস এবং অপশক্তি অর্জন করে। ছলে-বলে-কৌশলে নিজের পাপ অন্যের ওপর চাপিয়ে দিয়ে পার পেয়ে যায়। এসবে যখন অভ্যস্ত হয়ে যায় তখন তারা খুন, ধর্ষণের মতো পাশবিক জঘন্য কর্মকা- করতে কুণ্ঠিত হয় না, তার হাত কেঁপে যায় না। তার বিবেক নাড়া দেয় না। কারণ অনেক আগে থেকেই সে নিজেকে বিবেক বর্জিত হিসেবে তৈরি করে ফেলেছে। একজন মানুষকে ভাল মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে পরিবারই অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। একজন ছেলে ছোটবেলা থেকে যদি দেখে তার বাবা-মা, ভাই-বোন পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। স্বাভাবিকভাবেই সে ইতিবাচক আচরণ শেখে। যে ছেলেটি ছোটবেলায় বাবা-মায়ের ঝগড়াঝাটি মারামারি দেখে, বাবা-মাকে নেশাগ্রস্ত কিংবা মানসিক বিকারগ্রস্ত দেখে অবচেতন মনেই সে বাবা-মার সেই স্বভাবগুলো রপ্ত করে ফেলে। তার কাছে অনেক আপত্তিকর ব্যাপারগুলোই স্বাভাবিক মনে হয়। সাম্প্রতিককালে ঘটিত তরুণ মেধাবী ছাত্রী তনু হত্যাকারীর বিচারের দাবিতে যে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে আমি তার সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করছি। আসল হত্যাকারীকে খুঁজে বের করে তাকে সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি আজ সকল বিবেকবান মানুষের। হত্যাকারী, নির্যাতনকারী, ধর্ষণকারী কারও আপনজন হতে পারে না। এদের সংখ্যা খুব কম। আমরা এদের চিহ্নিত করে আইনের হাতে সোপর্দ করতে পারি। পুকুরে যখন মাছ চাষ করা হয় তার আগে সম্পূর্ণ পানি সেচে বিষ প্রয়োগ করে রাক্ষুসে মাছগুলো মেরে ফেলতে হয়। তারপর অন্য মাছের পোনা ছাড়তে হয়। আমার প্রিয় বাংলাদেশে এখনও এমন মানুষ আছেন যারা জীবনেও বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত গাননি। অথচ বাংলার আলো-বাতাস নিয়ে বেঁচে আছেন। বাংলার মাটিতে উৎপাদিত শস্য খেয়ে তিনি জীবনযাপন করেন। বাংলাদেশ সরকারের যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা তিনি গ্রহণ করেন। তাদের অন্তরে খোদাই করে লেখা পাকিস্তান। এরা ’৭১ এ নিরীহ মানুষদের হত্যা ও নারীদের সম্ভ্রমহানিতে পাক-হানাদারদের সাহায্য-সহযোগিতা করেছে। এরাই বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে ১৫ আগস্টকে কলঙ্কিত করেছে, ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা, রমনার বটমূলের বোমা বিস্ফোরণ, বাংলা নববর্ষের দিনে নারীকে অসম্মান করে দেশের ইতিহাস ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে ধ্বংস করে দিতে চায়। এদেরকে চিহ্নিত করা উচিত। নয়ত এরা সংক্রামক ব্যাধির মতো নতুন প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে পড়বে। এই দেশ আমাদের। দেশকে সুন্দর করে গড়ে তোলার দায়িত্ব আমাদের সকলের। আমরা যে যে পেশায় আছি সেখান থেকে নিজের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করে অন্যায়ের প্রতিবাদ করলে অবশ্যই দেশকে উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করা সম্ভব। লেখক : শিক্ষাবিদ
×