ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মেধা ও উন্নয়ন

প্রকাশিত: ০৩:৫৬, ৬ এপ্রিল ২০১৬

মেধা ও উন্নয়ন

সার্বিকভাবে বাংলাদেশের উন্নয়ন নিয়ে দেশে ও বিদেশে কোন বিতর্ক নেই বললেই চলে। এর সর্বশেষ উদাহরণ মিলেছে জরিপকারী প্রতিষ্ঠান নিয়েলসন বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউটের (আইআরআই) আন্তর্জাতিক মানের সমীক্ষায়। জরিপে বলা হয়েছে যে, বাংলাদেশের ৭৭ শতাংশ লোক মনে করেন দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল, ৮৩ শতাংশ নিরাপত্তা পরিস্থিতি ভাল এবং ৭৩ শতাংশ লোক মনে করেন দেশ সঠিক পথেই এগোচ্ছে। বাংলাদেশ নিয়ে এ রকম আশাবাদ প্রায়ই ব্যক্ত করে থাকে বিশ্বব্যাংক, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, বিশ্ব খাদ্য সংস্থা, ইউনিসেফসহ কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংগঠন। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন এবং বিশ্বব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ কৌশিক বসুও সার্বিক উন্নয়নসহ বিভিন্ন সামাজিক সূচকে বাংলাদেশের অগ্রগতির ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। তারা এও বলছেন যে, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, মা ও শিশু স্বাস্থ্য পরিস্থিতি, পানি ও পয়ঃনিষ্কাশনসহ কিছু ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অগ্রগতি দক্ষিণ এশিয়ার অনেক দেশের তুলনায় ভাল। অনেকটা উপরোক্ত বক্তব্যেরই সমর্থন মেলে চতুর্থবারের মতো আয়োজিত দেশব্যাপী সৃজনশীল মেধা প্রতিযোগিতা অন্বেষণে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় আয়োজিত বছরের সেরা মেধাবীদের তালিকায় স্থান করে নেয়া ১২ জনের মধ্যে দেখা যায় ১০ জনই উঠে এসেছে গ্রাম থেকে। গত বছর দেশ সেরা ১২ মেধাবী শিক্ষার্থীর ৯ জনই ছিল রাজধানীর বাইরের। ষষ্ঠ থেকে অষ্টম, নবম থেকে দশম ও উচ্চ মাধ্যমিকÑ এই তিন বিভাগে চারটি বিষয়ে অনুষ্ঠিত প্রতিযোগিতায় নির্বাচিত হয়ে থাকে সেরা মেধাবীরা। বিষয়গুলোও আধুনিক ও চিত্তাকর্ষকÑভাষা ও সাহিত্য, দৈনন্দিন বিজ্ঞান বা বিজ্ঞান, গণিত ও কম্পিউটার এবং বাংলাদেশ স্টাডিজ ও মুক্তিযুদ্ধ। দেশব্যাপী সৃজনশীল মেধা অন্বেষণের জাতীয় পর্যায়ের এই প্রতিযোগিতায় নির্বাচিত ১২ সেরা শিক্ষার্থীকে দেয়া হয় সনদসহ ১ লাখ টাকা। সেরা মেধাবীদের বিদেশেও উচ্চশিক্ষা সফরের সুযোগ রয়েছে। এতে স্বভাবত তারা উপকৃত ও অনুপ্রাণিত হয়। এতদিন একটা ধারণা প্রচলিত ছিল যে, গ্রাম ও শহরের শিক্ষাব্যবস্থা ও সুযোগ-সুবিধায় বৈষম্য রয়েছে। বৈষম্য যে একেবারেই নেই, এমন কথা বলা আমাদের উদ্দেশ্য নয়। বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, বৈষম্য অল্প-বিস্তর থাকলেও প্রকৃতপক্ষে তা মেধা বিকাশের অন্তরায় নয়। বরং সীমিত সুযোগ-সুবিধার মধ্যেও যে বা যারা ভাল করছে, তাদের প্রশংসা করতেই হয়। জাতীয় পর্যায়ে অনুষ্ঠিত মেধা প্রতিযোগিতায় দেখা যায়, গ্রাম-গঞ্জ ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে অনেক মেধাবী শিক্ষার্থীই ভাল করছে জ্ঞান-বিজ্ঞান ও কম্পিউটারে। কোন অংশে পিছিয়ে নেই মেয়েরাও। দেশের অনেক অঞ্চলে বরং ছেলেদের তুলনায় বেশি মেয়ে শিক্ষার্থীর হার। সাফল্যের স্বীকৃতি হিসেবে বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রথমবারের মতো ৩২ নারী পুলিশকে জাতীয় পর্যায়ে পদক প্রদানের বিষয়টিও নিঃসন্দেহে ইতিবাচক। উদ্যোক্তা হিসেবে পুলিশ নারীকল্যাণ সমিতিও পেয়েছে এই সম্মাননা। এসবই বাংলাদেশের উন্নয়ন এবং অগ্রগতিকে দেশে ও বিদেশে তুলে ধরার জন্য যথেষ্ট। তবে এখানেই থেমে থাকলে চলবে না। উন্নয়ন সর্বদাই একটি চলমান প্রক্রিয়া ও পন্থা। একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি নিশ্চিত করতে হলে সৃজনশীল মেধা বিকাশের পাশাপাশি গুরুত্বারোপ করতে হবে নর-নারীর সমতাবিধানেও। সেই প্রেক্ষাপটে বলা যায়, বাংলাদেশ সঠিক পথেই এগোচ্ছে।
×