ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বিএফডিসিতে অন্তিম শ্রদ্ধা

সিনেমা পরিচালক শহীদুল ইসলাম খোকনের ইন্তেকাল

প্রকাশিত: ০৬:২১, ৫ এপ্রিল ২০১৬

সিনেমা পরিচালক শহীদুল ইসলাম খোকনের ইন্তেকাল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ চলচ্চিত্র পরিচালক শহীদুল ইসলাম খোকনকে শেষবারের মতো দেখার জন্য বিএফডিসি চত্বরে ছিল উৎসুক মানুষের ভিড়। চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্বদের পাশাপাশি ছিল মিডিয়া কর্মীরাও। সোমবার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে খোকনের মরদেহ বিএফডিসি চত্বরে আনা হয়। এ সময় কান্নায় ভারি হয়ে ওঠে পুরো চত্বর। রাজধানীর উত্তরার একটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার সকাল আটটা ১০ মিনিটে ইন্তেকাল করেন দেশের বিশিষ্ট ফ্যাশনেবল এই ফিল্ম মেকার (ইন্নালিল্লাহি ... রাজিউন)। তাঁর বয়স হয়েছিল ৫৯ বছর। বিএফডিসিতে একে একে সবাই ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান দেশী চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় এই পরিচালককে। শ্রদ্ধা জানাতে এসেছিলেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, চিত্রনায়ক সোহেল রানা, আলমগীর, ওমর সানী, রুবেল, চিত্রপরিচালক কাজী হায়াৎ, আমজাদ হোসেন, চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি দেলোয়ার জাহান ঝন্টু ও মহাসচিব মুশফিকুর রহমান গুলজার, সোহানুর রহমান সোহান, অভিনেতা এটিএম শামসুজ্জামান, চ্যানেল আইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর, পরিচালক এসএ হক অলিকসহ অনেকে। তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, আশি থেকে নব্বইয়ের দশকে দেশের যে সকল পরিচালক আমাদের চলচ্চিত্রকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টায় ছিলেন, শহীদুল ইসলাম খোকন তাদের মধ্যে অন্যতম। তিনি প্রখ্যাত এবং নন্দিত চিত্র পরিচালক এই অর্থে যে, তাঁর চলচ্চিত্রে ছিল আধুনিকতা, নান্দনিকতা ও সামাজিকতা। তিনি অনেককে এই অঙ্গনে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন। চলচ্চিত্রের নবযাত্রায় তাঁর মতো পরিচালকের খুবই প্রয়োজন ছিল। সবার উদ্দেশে খোকনের ছেলে হৃদয় বলেন, আমার বাবা চলচ্চিত্র পাগল ছিলেন এ কথা সবাই জানেন। পাশাপাশি তিনি একজন ভাল বাবাও ছিলেন। কারও কাছে যদি বাবা কোন অন্যায় করে থাকেন, আপনারা ক্ষমা করে দেবেন। সবাই আমার বাবার জন্য দোয়া করবেন। বিএফডিসিতে দ্বিতীয়বারের মতো বাদ আছর জানাজা শেষে শহীদুল ইসলাম খোকনের মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় উত্তরার ৪নং সেক্টরের কবর স্থানে। সেখানে বাদ মাগরিব তাঁকে দাফন করা হয়। এর আগে বাদ জোহর উত্তরার মাটিকাটা মসজিদে তাঁর প্রথম জানাজা হয়। তাঁর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর ও তথ্য সচিব মর্তুজা আহমদ। পৃথক পৃথক শোক বার্তায় তারা শহীদুল ইসলামের আত্মার মাগফেরাত কামনা ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান। ১৯৫৭ সালে বরিশালের ইমামকাঠির বোয়ালিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন শহীদুল ইসলাম খোকন। বেশ কয়েক বছর যাবত তিনি মুখগহ্বরে ‘মটর নিউরো ডিজিসে’ (এএলএস) ভুগছিলেন। তিনি স্ত্রী জয়’সহ তিন ছেলে মেয়ে আত্মীয়স্বজন এবং বহুগুণগ্রাহী রেখে গেছেন। আশির দর্শকের মাঝামাঝি সময় থেকে নব্বই দশকজুড়ে তার নির্মিত চলচ্চিত্র’র সময়কাল ছিল যেন এক সোনালি সময়। তার চলচ্চিত্রের কুংফু এ্যাকশন, গল্পে নতুনত্ব, গান আর টানটান উত্তেজনা দর্শককে হলমুখী করতে বাধ্য করেছিল। মাসুদ পারভেজের (সোহেল রানা) সঙ্গে দশ বছর সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করার পর ‘রক্তের বন্দী’ চলচ্চিত্র নির্মাণের মধ্য দিয়ে পরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশ হয় তার। প্রথম এবং দ্বিতীয় ছবি ব্যবসায়িকভাবে ব্যর্থ হয়। কিন্তু তৃতীয় ছবি নবাগত নায়ক রুবেলকে নিয়ে ‘লড়াকু’ ছিল ব্যাপক ব্যবসাসফল চলচ্চিত্র। খোকনের নির্মিত প্রায় চলচ্চিত্রের নামই নেতিবাচক শব্দ দিয়ে। ইচ্ছে করেই নয় সামাজিক বাস্তবতা থেকেই নামগুলো দিতেন তিনি। প্রয়াত বরেণ্য অভিনেতা হুমায়ুন ফরীদিকে তিনিই বাণিজ্যিক চলচ্চিত্রে সফলভাবে উপস্থাপন করতে পেরেছিলেন। নব্বই দর্শকের শেষদিকে কমেডি ঘরানার চলচ্চিত্র ‘ভ-’ নির্মাণ করেও তিনি গতানুগতিক ধারাকে ভেঙ্গে দিয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে শেষ দেখা করতে চাইলে ২০১৪ সালের শেষপ্রান্তে শহীদুল ইসলাম খোকন দেখা করার সুযোগ পান এবং প্রধানমন্ত্রী আর্থিক সহযোগিতা করেন। চলচ্চিত্রের প্রতি অদম্য ভালবাসার কারণে আজ থেকে ১৫ বছর আগে ‘পালাবি কোথায়’ চলচ্চিত্র নির্মাণের সময় অর্থ সঙ্কটের কারণে উত্তরার ৬ নম্বর সেক্টরের নিজ বাড়ি বিক্রি করে দেন খোকন। যুদ্ধবিরোধীদের নিয়ে চলচ্চিত্র ‘ঘাতক’, নারী জাগরণের চলচ্চিত্র ‘পালাবি কোথায়’ এবং বাংলা ভাইকে নিয়ে চলচ্চিত্র ‘লাল সবুজ’ নির্মাণ করেছেন খোকন।
×