ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

সুহৃদদের ভালবাসায় উদ্যাপিত সন্জীদা খাতুনের জন্মদিন

প্রকাশিত: ০৬:১৬, ৫ এপ্রিল ২০১৬

সুহৃদদের ভালবাসায় উদ্যাপিত সন্জীদা খাতুনের জন্মদিন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জীবনভর অশুভের বিরুদ্ধে উচ্চারণ করেছেন কল্যাণের বাণী। মানবিক ও মুক্ত সমাজ বিনির্মাণে রেখে চলেছেন অনন্য ভূমিকা। সংস্কৃতিকে সঙ্গী করে দীর্ঘ পথ হেঁটেছেন সম্প্রীতির পথে। সুরকে হাতিয়ার করে আজও লড়াই করছেন সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে। সম্প্রীতি ও প্রগতির দেশ গড়ার স্বপ্ন নিয়ে কেটে যায় তার প্রতিটি দিন। এই কীর্তিমান মানুষটি হলেন ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানটের সভাপতি সন্জীদা খাতুন। সোমবার ছিল তার ৮৪তম জন্মদিন ও ৮৩তম জন্মবার্ষিকী। উদ্্যাপিত হলো বাঙালী সংস্কৃতির শেকড়ের দিশারীতে পরিণত হওয়া এই মহিয়সী নারীর জন্মদিন। তবে ছিল না ঘটা করে জন্মদিন উদ্্যাপনের আনুষ্ঠানিকতা। ছিল না কোন আড়ম্বরপূর্ণ আয়োজন। প্রাতিষ্ঠানিক আনুষ্ঠানিকতার বাইরে ঘরোয়াভাবে অতিবাহিত হয় আনন্দের এ দিনটি। মূলত পরিবারের আপনজনের সঙ্গেই কেটেছে দিনটি। তবে জন্মদিনের কোন অনুষ্ঠানিকতা না থাকলেও সুহৃদরা ঠিকই হাজির হয়েছেন সন্জীদা খাতুনের ধানম-ির বাসগৃহে। প্রিয় মানুষটিকে জানিয়েছেন ফুলেল শুভেচ্ছা। কেউ বা তাকে নিবেদন করে গেয়েছেন গান। সব মিলিয়ে আনুষ্ঠানিকতার বাইরেও প্রিয়জনদের অকৃত্রিম ভালবাসায় সিক্ত হয়েছেন জন্মদিনে। বয়স ৮৪ স্পর্শ করলেও বয়সের ভারে ভারাক্রান্ত হননি এই শিল্পী ও সঙ্গীতজ্ঞ। শরীরে বয়সের ছাপ থাকলেও মননে বহন করছেন তারুণ্যের প্রাণোচ্ছলতা। সেই তরুণ প্রাণ সবার প্রিয় ‘সন্দা আপা’র জন্মদিনে তাকে ঘিরে রেখেছিলেন তারই অসংখ্য ভক্ত, অনুরাগী এবং ছায়ানটের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। দিনটিতে ভক্তরা তাকে গানের ভেতর দিয়ে সুরের মালায়, কবিতার শাণিত ভালবাসায় জড়িয়ে নিলেন। সন্জীদা খাতুনের বসার কক্ষটির একপাশেই ছিল সিঙ্গাড়া, সমুচা, পিঠা, পায়েস, মিষ্টান্নসহ চা-কফির আয়োজন। চায়ে চুমুক দিয়ে কেউ শুনিয়েছেন কবিতা, কেউ শুনিয়েছেন গান। ছায়ানটের এক তরুণ শিল্পী গেয়ে শোনান ‘তোমার শেষ নাহি, তাই শূন্য সেজে শেষ করে দাও আপনাকে যে/ ওই হাসিরে দেয় ধুয়ে মোর বিরহের রোদন/ ও মোর ভালোবাসার ধন’। সুরে সুরে সুরের সাধক সন্দা খাতুনের জন্মদিনে এ বারতাই দিয়েছেন ছায়ানটের শিল্পী। জানাতে চাইলÑ‘তুমি আমাদের ভালবাসার ধন’। এভাবেই সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ছায়ানট ও কণ্ঠশীলনের শিল্পীরা মেতে থাকেন তার জন্মদিন ঘিরে। ড্রয়িংরুমের একপাশে বসে ভক্তদের ভালবাসা উপভোগ করলেন সন্জীদা খাতুন। তবে তেমন কোন কথাই বললেন না তিনি। তবে তার নীরব থাকাটাও যেন বলেছে অনেক কথা। রবীন্দ্রনাথের চরণ ধরে যেন উচ্চারিত হয়েছে ‘অনেক কথা যাও যে বলে কোনো কথা না বলি’। ‘একজন মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রীর ডায়েরি’ ॥ একাত্তরে মীর মোশাররফ হোসেন লালমনিরহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার দায়িত্ব পালনকালে মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। লালমনিরহাট যুদ্ধের নেতৃত্ব দিতে গিয়ে পাকবাহিনী কর্তৃক আহত হন। এরপর হাসপাতালে চিকিৎসারত অবস্থায় পাক বাহিনীর হামলায় শহীদ হন। ছয় সন্তান নিয়ে এই শহীদের স্ত্রী বেগম রওশন আখতার শত প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে যুদ্ধ করেছেন। মুক্তিযুদ্ধ ও যুদ্ধ-পরবর্তী জীবনসংগ্রামের এ কাহিনী তিনি ডায়েরিতে লিপিবদ্ধ করেন। সেই ডায়েরি প্রকাশিত হলো গ্রন্থ আকারে। গ্রন্থটির নাম দেয়া হয়েছে ‘একজন মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রীর ডায়েরি’। সোমবার রাজধানীর সেগুনবাগিচার মুুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের উন্মুক্ত মঞ্চে গ্রন্থটির প্রকাশনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বইটির মোড়ক উন্মোচন করেন বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন উদীচীর সভাপতি কামাল লোহানী, প্রতিদিনের সংবাদের সম্পাদক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক আবু সাঈদ খান, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল, লেখক-গবেষক রশীদ হায়দার, অর্থনীতিবিদ আবুল বারকাত, মুন্নী সাহা, মেঘনা গুহঠাকুরতা প্রমুখ। স্বাধীনতা জন্য ত্যাগ স্বীকার করে যুদ্ধবিধস্ত দেশে অনেক মানুষকে বেঁচে থাকার জন্য দীর্ঘ লড়াই করতে হয়েছে, তাদেরই একজন বেগম রওশন আখতার। তার সেই জীবনযুদ্ধের প্রেরণা হিসেবে তিনি যা ডায়েরিতে লিখেছিলেন, সেটি অনুলিখন করেছেন তার ছোট মেয়ে রুচিরা সুলতানা। একজন শহীদ মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রীর ডায়েরি’ গ্রন্থটি মুক্তিযুদ্ধে একজন লড়াকু বীর যোদ্ধার সংগ্রাম, দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থা ও তার পরিবারের অবর্ণনীয় কষ্টকর দিনাতিপাতের ঘটনা বিধৃত হয়েছে। সর্বোপরি একটি জীবনযুদ্ধের ঘটনা সমৃদ্ধ আকরগ্রন্থ। বইটি মূলত মহীয়সী নারীর জীবনালেখ্য। বইটি প্রকাশ করেছে প্রকাশনা সংস্থা নন্দিত । বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে মুখোশ নিষিদ্ধের প্রতিবাদ উদীচীর ॥ পহেলা বৈশাখে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের সময় নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক সরকারের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী। একইসঙ্গে মঙ্গল শোভাযাত্রায় মুখোশ ব্যবহার নিষেধ করা নিয়ে দেয়া সিদ্ধান্তেরও নিন্দা জানিয়েছে উদীচী। অন্যদিকে বিকট আওয়াজের বিদেশী সংস্কৃতির পরিচায়ক ভুভুজেলা বাঁশি নিষিদ্ধ করায় সরকারকে সাধুবাদ জানিয়েছে উদীচী। সোমবার সংবাদ মাধ্যমে প্রেরিত এক বিবৃতিতে এসব কথা জানান উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি কামাল লোহানী ও সাধারণ সম্পাদক প্রবীর সরদার। বিবৃতিতে উদীচী নেতারা জানান, বর্ষবরণ উৎসবকে নির্দিষ্ট সময়ের ঘেরাটোপে বেঁধে দেয়ার সিদ্ধান্ত কোনভাবেই সমীচীন নয়। এর মাধ্যমে উৎসবমুখর বাঙালীর প্রাণের উচ্ছ্বাসকে দমন করা হচ্ছে মন্তব্য করে তারা বলেন, নিরাপত্তার অজুহাত দেখিয়ে বিকেল ৫টার মধ্যে সব অনুষ্ঠান শেষ করার এ নির্দেশনা গ্রহণযোগ্য নয়। অবিলম্বে এ সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করার জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানান তারা।
×