ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত ৩, আহত অর্ধশত

বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ নিয়ে বাঁশখালী রণক্ষেত্র

প্রকাশিত: ০৬:১২, ৫ এপ্রিল ২০১৬

বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ নিয়ে বাঁশখালী রণক্ষেত্র

জোবাইর চৌধুরী, নিজস্ব সংবাদদাতা, বাঁশখালী, ৪ এপ্রিল ॥ চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার গ-ামারা ইউনিয়নে বেসরকারী পর্যায়ে ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুতকেন্দ্র নির্মাণকে কেন্দ্র করে সোমবার এলাকাবাসীর দুই গ্রুপ ও পুলিশের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় তিনজন নিহত হয়েছে বলে পুলিশ নিশ্চিত করেছে। তবে এলাকাবাসীর দাবি, মৃতের সংখ্যা ৫। এর পাশাপাশি মৃতের সংখ্যা চাউর হয়েছে ৯। মৃতের সংখ্যা যাই হোক না কেন এদের কোন নাম-পরিচয় কোন পক্ষই নিশ্চিত করতে পারেনি। এ ঘটনা নিয়ে এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। সেইসঙ্গে পরিস্থিতির অবনতি রোধে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। উল্লেখ্য, বেসরকারী চট্টগ্রামের এস আলম গ্রুপ ও চীনা প্রতিষ্ঠান সেফকো ইলেকট্রিক কোম্পানি এর যৌথ উদ্যোগে বাঁশখালীতে নির্মিতব্য কয়লাভিত্তিক বিদ্যুতকেন্দ্রের মালামাল পরিবহন ঘটনা নিয়ে গত শনিবার প্রথমবারের মতো এলাকাবাসীর দুই পক্ষের সংঘর্ষ হয়েছে। এতে প্রকল্পের প্রকৌশলীসহ আহত হয় ৬ জন। এরপর সোমবার রক্তক্ষয়ী এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটল। নিহতরা হচ্ছে মর্তুজা আলী (৫২), তার ভাই আংকুর আলী (৪৫) এবং জাকের আহমেদ (৩৫)। এরা সবাই বিদ্যুতকেন্দ্র নির্মাণের বিরোধিতাকারী এবং গ-ামারা এলাকারবাসিন্দা। পুলিশ এলাকাবাসী এবং প্রত্যক্ষদর্শীর সূত্রে জানা গেছে, সোমবার বিকেল ৪টার দিকে সংঘর্ষ শুরু হয়ে তা সন্ধ্যা পর্যন্ত তা চলছিল। সংঘর্ষে পুলিশের ওসি, পুলিশ ও আনসার সদস্যসহ অন্তত ৬০ গ্রামবাসী আহত হয়েছেন। সংঘর্ষ চলাকালে সময়ে পুলিশ ও এলাকাবাসীর মধ্যে কমপক্ষে ৫০০ রাউন্ড গুলি বিনিময়ের ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনায় বাঁশখালী উপজেলার সর্বত্র উত্তেজনা বিরাজ করছে। যে কোন মুহূর্তে আরও বড় ধরনের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা করছে স্থানীয়রা। ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকায় পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তা ও অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য মোতায়েন রয়েছে। জেলা পুলিশের অতিরিক্ত সুপার (দক্ষিণ) হাবিবুর রহমান জানান, সংঘর্ষে তিনজন প্রাণ হারিয়েছেন বলে তারা নিশ্চিত হয়েছেন। কিন্তু এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে যে দাবি করা হচ্ছে তার সপক্ষে কোন প্রমাণ এখনও মিলেনি। তবে তদন্ত চলছে। সংঘর্ষের ঘটনা প্রসঙ্গে তিনি জনকণ্ঠকে জানান, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত প্রকল্প নির্মাণকে কেন্দ্র করে এলাকাবাসীর মধ্যে পক্ষ-বিপক্ষ রয়েছে। এ নিয়ে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। গত শনিবার প্রথম দফা যে সংঘর্ষ হয় তাতে কোন হতাহতের ঘটনা না ঘটলেও সোমবারের ঘটনাটি রক্তক্ষয়ী। তিনি জানান, দু’পক্ষের মধ্যে গোলাগুলি চলাকালে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ আনার জন্য গুলিবর্ষণ করে। এ ত্রিপক্ষের গুলিবর্ষণে কাদের গুলিতে প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে তা নিশ্চিতভাবে বলা সম্ভব নয়। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সোমবার গ-ামারা হাজীরপাড়া এলাকায় বেসরকারী পর্যায়ে এস আলম গ্রুপের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত উৎপাদন কেন্দ্রে পক্ষে-বিপক্ষে দুটি গ্রুপ সমাবেশ ডাকে। সেই সমাবেশকে কেন্দ্র করে এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছিল। উত্তেজনাকে কেন্দ্র করে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ হতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ শামসুজ্জামান ও সহকারী পুলিশ সুপার (সাতকানিয়া সার্কেল) কে এম এমরান ভুঁইয়া ও থানা অফিসার ইনচার্জ স্বপন কুমার মজুমদার শতাধিক পুলিশ ও আনসার সদস্য নিয়ে ঘটনাস্থলে ১৪৪ জারির উদ্দেশে ওই এলাকায় যান। পুলিশ সদস্যের উপস্থিত টের পেয়ে কয়লা বিদ্যুত বিরোধী সংগঠন ও এলাকাবাসী রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়ে আটকে দেয়। পুলিশ ব্যারিকেড তুলে নিতে গেলে বাঁধে সংঘর্ষ। সেই সংঘর্ষ একপর্যায়ে পুরো এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। হাজার হাজার এলাকার নারী-পুরুষ রাস্তায় নেমে এসে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট, পাটকেল ছুড়তে থাকে। অবস্থা বেগতিক দেখে পুলিশ প্রথমে ফাঁকা গুলি ও পরে গুলি ছুড়ে তাদের লক্ষ্য করে। গ্রামবাসীও পুলিশের পাল্টা জবাব দেয় গুলিতে। উভয় পক্ষে কমপক্ষে ৫০০ রাউন্ড গুলি বিনিময়ের ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ এলাকাবাসী সংঘর্ষে পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। সংঘর্ষে ৫ জন গ্রামবাসী নিহত হওয়ার দাবি জানিয়েছে এলাকাবাসী। যাদের মৃত্যুর গুজব রয়েছে তারা হলেন- মর্তুজা আলী (৫০), আনোয়ার হোসেন (৪০), জাকের (৫০), বদিউল আলম ও আঙ্গুর মিয়া। তাছাড়া সংঘর্ষে ওসিসহ পুলিশের ৯ সদস্য ও আনসারের ৩ সদস্যসহ ৬০ গ্রামবাসী আহত হয়েছে। আহতদের মধ্যে অনেকে গুলিবিদ্ধ। গুলিবিদ্ধদের এলাকা হতে নৌপথে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বলে স্থানীয় এক গ্রাম চৌকিদার সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে। বর্তমানে এই সংঘর্ষের খবর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে উত্তেজনা আরও বেড়ে যায়। প্রশাসন সংঘর্ষ এড়াতে চট্টগ্রাম শহর হতে দুই শতাধিক অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য এলাকায় মোতায়েন করেছে। গ-ামারা এলাকার গ্রামবাসীরা পুলিশী নির্যাতনের ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। তাই সাধারণ গ্রামবাসী সরকারের উর্ধতন কর্মকর্তাদের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
×