ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

তনু হত্যা ॥ দ্বিতীয় ময়নাতদন্তের অপেক্ষায় সিআইডি

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ৫ এপ্রিল ২০১৬

তনু হত্যা ॥ দ্বিতীয় ময়নাতদন্তের অপেক্ষায় সিআইডি

মীর শাহ আলম, কুমিল্লা থেকে ॥ থানা পুলিশ ও ডিবির পর তদন্তকারী সংস্থা বদল হয়ে মামলার তদন্তের ভার সিআইডির নিকট হস্তান্তর হলেও দেশব্যাপী বহুল আলোচিত কলেজছাত্রী ও নাট্যকর্মী সোহাগী জাহান তনু হত্যাকা-ের রহস্য ১৫ দিনেও উদ্ঘাটন হয়নি। শনাক্ত কিংবা আটক হয়নি ঘাতকদের কেউ। এদিকে তনু হত্যাকা-ের ঘটনার প্রথম ময়নাতদন্তের রিপোর্ট কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজের ফরেনসিক বিভাগে সোমবার বিকেলে দাখিল করেছেন তদন্তকারী কর্মকর্তা প্রভাষক ডাঃ শারমিন সুলতানা। বিভাগীয় প্রধান ডাঃ কামাদা প্রাসাদ সাহা ওরফে কেপি সাহা সাংবাদিকদের জানান, ময়নাতদন্ত রিপোর্টে তনু হত্যাকা-ের কোন কারণ উল্লেখ করা হয়নি এবং ধর্ষণের আলামতও পাওয়া যায়নি। এর আগে দেয়া ভিসেরা রিপোর্টেও বিষক্রিয়ার আলামত মেলেনি। এখন দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত রিপোর্টের অপেক্ষায় সিআইডি। জানা গেছে, সহসাই এ রিপোর্ট জমা দেয়া হবে। তদন্তকারী সূত্র বলছে তনু হত্যাকা-ের রহস্য উদ্ঘাটনে প্রয়োজনীয় সকলকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এরই মধ্যে তদন্তকারী দল রবিবার রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের অতিথিশালায় বসে সিএমএইচের সংশ্লিষ্ট এক চিকিৎসক, সেনানিবাসের এক ওয়ারেন্ট অফিসার, ২ সার্জেন্টসহ ৭ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। এছাড়া রবিবার সকালে সিআইডি কার্যালয়ে নিয়ে আসা এক সেনা কর্মকর্তার ছেলে পিয়ারকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এদিকে মামলার অগ্রগতি ও পরবর্তী কর্মপন্থা নির্ধারণে ঢাকায় সিআইডির উচ্চপর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। জানা গেছে, গত ২০ মার্চ রাতে কুমিল্লা সেনানিবাস এলাকা থেকে কলেজছাত্রী ও নাট্যকর্মী সোহাগী জাহান তনুর লাশ উদ্ধারের পর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ক্যান্টনমেন্ট পুলিশ ফাঁড়ির এসআই সাইফুল ইসলাম তনুর লাশের প্রথম সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত করে ময়নাতদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করেন। কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রভাষক ডাঃ শারমিন সুলতানা লাশের প্রথম ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করেন। শুরুতে মামলাটি তদন্ত করেন কোতোয়ালি মডেল থানাধীন ক্যান্টনমেন্ট পুলিশ ফাঁড়ির এসআই সাইফুল ইসলাম। পরে মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য গত ২৫ মার্চ রাতে জেলা ডিবিতে হস্তান্তর করা হয়। ডিবিতে হস্তান্তরের পর মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ওসি একেএম মনজুর আলম গত ২৮ মার্চ কুমিল্লার অতিরিক্ত চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে ভিকটিম সোহাগী জাহান তনুর মৃতদেহে আসামি কর্তৃক সৃষ্ট জখম শনাক্ত, মৃতদেহ থেকে ডিএনএ নমুনা-আলামত সংগ্রহ করে বিশেষজ্ঞ দ্বারা পরীক্ষা ও সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুতসহ মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে কবর থেকে পুনরায় তনুর লাশ উত্তোলনের জন্য আদালতে আবেদন করেন। এ আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত কবর থেকে তনুর লাশ উত্তোলনের আদেশ প্রদান করে। এরই প্রেক্ষিতে ৩০ মার্চ কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার পশ্চিম বাঙ্গরা ইউনিয়নের মীর্জাপুর গ্রামের পারিবারিক কবরস্থান থেকে তনুর লাশ উত্তোলনের পর দ্বিতীয়বার সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত করে পুনঃময়নাতদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। আদালতের নির্দেশে ওই দিন কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডাঃ কামাদা প্রাসাদ সাহার নেতৃত্বে ৩ সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ড লাশের পুনঃময়নাতদন্ত করেন। প্রথম ময়নাতদন্ত রিপোর্টে ধর্ষণের আলামত-হত্যার কারণ উল্লেখ নেই ॥ তনু হত্যাকা-ের প্রথম ময়নাতদন্ত রিপোর্ট গতকাল সোমবার বিকেলে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগে দাখিল করেছেন ময়নাতদন্তকারী কর্মকর্তা ও ফরেনসিক বিভাগের প্রভাষক ডাঃ শারমিন সুলতানা। ওই বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডাঃ কামাদা প্রাসাদ সাহা সাংবাদিকদের জানান, ময়নাতদন্তের রিপোর্টে তনুকে ধর্ষণের কোন আলমত পাওয়া যায়নি। এছাড়া মৃত্যুর কারণও সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করা যায়নি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মৃত্যুর কারণ চিহ্নিত করতে মেডিক্যালের ফরেনসিক বিভাগের আর কোন প্রক্রিয়া জানা নেই। এছাড়া বিষক্রিয়ারও কোন অস্তিত্ব নেই বলে তিনি জানান। ৩ সদস্যের বোর্ড গঠন করে দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত করা হয়। সহসাই দ্বিতীয় ময়নাতদন্তের রিপোর্ট দেয়া হবে। তিনি আরও বলেন, প্রাপ্ত প্রথম ময়নাতদন্ত রিপোর্টটি তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট হস্তান্তর করা হবে। চিকিৎসক-ওয়ারেন্ট অফিসারসহ ৭ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ ॥ সিআইডির তদন্তকারী দল রবিবার রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের অতিথিশালায় বসে সিএমএইচের জরুরী বিভাগের সংশ্লিষ্ট ১ চিকিৎসক, ১ আয়া, সেনানিবাসের ১ ওয়ারেন্ট অফিসার, ২ সার্জেন্ট ও ১ কর্পোরালসহ ৭ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। এছাড়া রবিবার সকালে সিআইডি কার্যালয়ে নিয়ে আসা এক সেনা কর্মকর্তার ছেলে পিয়ারকে ৪ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। ঢাকায় সিআইডির উচ্চপর্যায়ের বৈঠক ॥ তনু হত্যা মামলা তদন্তে সিআইডির কুমিল্লা ও ঢাকার তদন্তকারী দলের কর্মকর্তাসহ উচ্চপর্যায়ের বৈঠক সোমবার ঢাকায় মালিবাগের সিআইডি সদর দফতরে অনুষ্ঠিত হয়। সূত্র জানায়, বৈঠকে উপস্থিত ছিলেনÑ সিআইডির অতিরিক্ত আইজিপি মোঃ হেমায়েত উদ্দিন, ডিআইজি (ক্রাইম-ইস্ট) মোঃ মাহবুব মহসিন, অতিরিক্ত ডিআইজি (ক্রাইম-ইস্ট) একে আজাদ চৌধুরী, তদন্ত সহায়ক দলের প্রধান সিআইডি-ঢাকার বিশেষ পুলিশ সুপার আবদুল কাহহার আকন্দ, সিআইডি-কুমিল্লার বিশেষ পুলিশ সুপার ড. নাজমুল করিম খান, সিআইডির সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার জালাল উদ্দিন আহমেদ ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পরিদর্শক গাজী ইব্রাহিমসহ পদস্থ কর্মকর্তারা। সূত্র জানায়, গত বৃহস্পতিবার মামলার দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে রবিবার পর্যন্ত ঘটনাস্থল পরিদর্শন, সেনানিবাস এলাকায় বিভিন্ন জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্তের বিশ্লেষণ ও মামলার অগ্রগতি নিয়ে বেলা ১১টা থেকে বিকেল পর্যন্ত আলোচনা-পর্যালোচনা করা হয়। এছাড়া রহস্য উদ্ঘাটন, আসামিদের শনাক্ত ও গ্রেফতারে পরবর্তী কর্মপন্থা নির্ধারণ করা হয়।
×