স্টাফ রিপোর্টার ॥ পুরান ঢাকার ইসলামপুরে মসজিদের ভেতরে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে এক মুয়াজ্জিনকে হত্যা করা হয়েছে। হত্যাকা-ের সঙ্গে আর্থিক সংশ্লিষ্টতার পাশাপাশি ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব থাকার বিষয়টিকে তদন্তে প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। তবে হত্যাকা-ের সঙ্গে জঙ্গী সংশ্লিষ্টতার বিষয়টিও গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। এ ঘটনায় মসজিদের ইমামসহ ৫ জনকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করছে।
সোমবার ভোরে কোতোয়ালি থানাধীন ২৪ নম্বর ইসলামপুরের জব্বু খানম জামে মসজিদের সিঁড়ি থেকে বিল্লাল হোসেন (৫৫) নামে ওই মুয়াজ্জিনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহতের পিতার নাম হেলাল উদ্দিন (মৃত)। বাড়ি মানিকগঞ্জের ঘিওর থানাধীন নয়েশচর গ্রামে। নিহতকে গ্রামের বাড়িতে সোমবার মাগরিবের নামাজের পর দাফন করা হয়। নিহত মুয়াজ্জিন পাঁচ ভাই ও এক বোনের মধ্যে সবার বড় ছিলেন। নিহতের একমাত্র ছেলে ইয়াসিন (২০) সূত্রাপুরের ফরিদাবাদ মাদ্রাসায় কিতাব বিভাগের ছাত্র। একমাত্র মেয়ে তাসলিমা (১৮) পড়াশুনা করছে। স্ত্রী ইয়াছমিন বেগম গ্রামের বাড়িতে থাকেন ।
মসজিদের ইমাম তাজুল ইসলাম জানান, ভোরে তিনি ফজরের নামাজ আদায় করতে মসজিদে যান। তিনি অনেকবার মুয়াজ্জিনকে ডাকাডাকি করেন। কিন্তু সাড়া মিলছিল না। এরপর তিনি সিঁড়ি দিয়ে উপরে যান। মসজিদটির তৃতীয় তলায় মুয়াজ্জিন থাকতেন। সেখানে যেতেই দোতলা ও তিনতলা সিঁড়ির মাঝামাঝি জায়গায় সিঁড়িতে মুয়াজ্জিনের লাশ রক্তাক্ত জখম অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। এরপর স্থানীয়দের খবর দিলে তারা সেখানে হাজির হন। এরপর খবর পেয়ে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ মর্গে পাঠায়।
চিকিৎসকরা জানান, মুয়াজ্জিনকে পেটে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়েছে। এছাড়া হত্যার আগে মুয়াজ্জিনের শ্বাসরোধ করার লক্ষণ রয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, ওইদিন ফজরের নামাজের আযান তার শোনেননি। স্থানীয়দের ধারণা, ফজরের নামাজের আগেই মুয়াজ্জিনকে হত্যা করা হতে পারে। চারতলা ভবনের দ্বিতীয় তলা থেকে জব্বু খানম মসজিদ। মসজিদ ভবনের নিচতলায় ১৭ এবং একতলায় ১৩ দোকান ও গুদাম রয়েছে। এটি জব্বু খানম মার্কেট নামেই পরিচিত। প্রতিমাসে সেসব দোকানের ভাড়া বাবদ প্রায় ৪০ হাজার টাকা ওঠে। দোকান ভাড়া দেয়া এবং ভাড়া তোলার কাজটি করতেন নিহত মুয়াজ্জিন। গত রমজান মাসে একবার দুর্বৃত্তরা মুয়াজ্জিনকে বেঁধে সঙ্গে থাকা দোকান ভাড়ার ৬৫ হাজার টাকা লুটে নেয়। এ ব্যাপারে থানায় সাধারণ ডায়েরিও করেন নিহত মুয়াজ্জিন।
মার্কেটের নিরাপত্তাকর্মী আব্দুল আউয়াল জানান, মোট ১০ নিরাপত্তা প্রহরী রয়েছে।
নিহত মুয়াজ্জিনের কক্ষের পাশের আরেকটি কক্ষে ছোট মুয়াজ্জিন হিসেবে পরিচিত মোশারফ হোসেন থাকতেন।
এ ব্যাপারে ডিএমপির লালবাগ বিভাগের উপ-কশিনার মফিজ উদ্দিন আহমেদ জানান, হত্যাকা-ের ঘটনায় অজ্ঞাত কয়েকজনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের হয়েছে। ঘটনার আর্থিক বিষয়াদি ছাড়াও ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব এবং জঙ্গী সংশ্লিষ্টতা আছে কিনা তা গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ ঘটনায় কাউকে আটক করা হয়নি। ঘটনার বিষয়ে জানতে মসজিদের ছোট মুয়াজ্জিন, মসজিদ কমিটির এক সদস্য ও ইমামসহ পাঁচ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। অন্তত ২৮ বছর ধরে বিল্লাল ওই মসজিদে মুয়াজ্জিন হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: