ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সহিংসতার সমালোচনাকে বিভ্রান্তিকর মনে করছে নির্বাচন কমিশন

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ৫ এপ্রিল ২০১৬

সহিংসতার সমালোচনাকে বিভ্রান্তিকর মনে করছে নির্বাচন কমিশন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ইউপি নির্বাচনে চলমান সহিংসতার ঘটনায় ইসির বিরুদ্ধে বিভিন্ন মহলের অব্যাহত সমালোচনাকে বিভ্রান্তিকর মনে করছে নির্বাচন কমিশন। একই সঙ্গে আগামী দফার নির্বাচনগুলো অধিকতর গ্রহণযোগ্য করতে আরও কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের দৃঢ়প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়েছে। সোমবার গণমাধ্যমে পাঠানো ইসির এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে- কমিশন দৃঢ়তার সঙ্গে ভোটার ও দেশবাসীকে জানাচ্ছে যে, নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। আগামী নির্বাচনগুলোতেও সর্বোচ্চ সতর্কতামূলক কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে, যাতে ভোটাররা নির্ভয়ে ভোট কেন্দ্রে গিয়ে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন। একই সঙ্গে নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলোর সহযোগিতার আহ্বান জানিয়ে বলা হয়েছে- নির্বাচন সুষ্ঠু করার জন্য রাজনৈতিক দল ও তাদের কর্মী, প্রার্থী, প্রার্থীর এজেন্ট সকলেরই দায়িত্ব রয়েছে। নির্বাচন কমিশন প্রতিনিয়ত উচ্চমানের নির্বাচন করার জন্য সচেষ্ট হয়েছে। এ লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। কমিশন আশা করে সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতায় পরবর্তী পর্যায়ে আরও অধিকতর গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে সক্ষম হবে। গত দুই দফা নির্বাচনে দেশের বিভিন্ন স্থানে নির্বাচন চলাকালীন ও নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতায় ২০ জনের অধিক ব্যক্তির প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। নির্বাচনে সহিংসতার ঘটনায় বিভিন্ন মহল থেকে ব্যাপক সমালোচনার ঝড় উঠেছে। ইতোমধ্যে এ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দল বিএনপির পক্ষ থেকে ইউপি নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি বিধায় বাতিলের দাবি জানানো হয়েছে। নির্বাচনে অংশ নেয়া সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকেও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ হচ্ছে না বলে দাবি করা হয়েছে। একই সঙ্গে এই বিতর্কিত নির্বাচন বাতিলের দাবি জানিয়েছেন জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান জিএম কাদের। একই সঙ্গে নির্বাচনে সহিংসতার দায় কমিশন এড়াতে পারে না বলেও দাবি করেন তিনি। নির্বাচনের পর থেকেই বিভিন্ন মহল থেকে সহিংসতার বিষয়ে কশিমনের বিরুদ্ধে ব্যাপক সমালোচনার ঝড় ওঠেছে। বিভিন্ন পত্রিকা টিভি টকশো অনুষ্ঠানে কমিশনের বিরুদ্ধে সমালোচনা করা হচ্ছে। তবে কমিশন সম্পর্কে এসব সমালোচনাকে বিভ্রান্তিকর বলে ব্যাখ্যায় অভিযোগ করেছে ইসি। প্রতিষ্ঠানটির জনসংযোগ শাখার পরিচালক এসএম আসাদুজ্জামান স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছেÑ ‘লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, কিছু পত্র-পত্রিকায় ও টিভি টকশোতে নির্বাচন কমিশন সম্পর্কে বিভ্রান্তিকর আলোচনা চলছে।’ তারা এর ব্যাখ্যা দিয়ে জানায়, ভোট কেন্দ্রের সহিংসতা বন্ধ ও শন্তিপূর্ণ পরিবেশ রক্ষার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে তার দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন, সতর্ক করা হয়েছে। এর মানে এই নয় যে, নির্বাচন কমিশন তার দায়িত্বে এগিয়ে গেল। কারণ একই সঙ্গে তাদের হুঁশিয়ারি করে দেয়া হয়েছে যে, দায়িত্ব পালনে কোন প্রকার শৈথিল্য প্রদর্শন করলে বা ব্যর্থ হলে কমিশন তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেবে। এছাড়াও ব্যাখ্যায় নির্বাচনে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে গৃহীত ব্যবস্থা ও নির্বাচনে আচরণ বিধি ভঙ্গের দায়ে নেয়া ব্যবস্থার কথা উল্লেখ করে বলা হয়েছেÑ নির্বাচনে দায়িত্বে অবহেলার জন্য ইতোমধ্যে কেন্দ্র রক্ষার দায়িত্বপ্রাপ্ত ১১ জন এএসআইকে তাৎক্ষণিকভাবে সাসপেন্ড করা হয়েছে। ভোট কারচুপির অভিযোগে ১০২টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ বন্ধ করে যাদের প্রতীকে জালভোট দেয়া হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে এবং অন্যান্য দুষ্কৃতকারীদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। এছাড়া ৬ থানার ওসিকে ও একজন এসপিকে কমিশনে তলব করে জবাবদিহি করে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে। ৩ জন উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও ৪ জন ওসিকে নিরর্বাচনী দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে বদলি করা হয়েছে। এছাড়া নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের ১ জন জেলা নির্বাচন অফিসার ও ১ জন উপজেলা নির্বাচন অফিসারকে বদলি করা হয়েছে। নির্বাচনে আচরণবিধি ভঙ্গের দায়ে প্রার্থী ও তার সমর্থকদের ১২ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদ- দেয়া হয়েছে। দুই দফা নির্বাচনে ১৩০ জনকে মোট ৪ লাখ ১৭ হাজার ৫শ’ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। সংসদ সদস্যদের নির্বাচনী প্রচারণা থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে। কয়েকজনকে নির্বাচনী এলাকা থেকেও সরিয়ে দেয়া হয়েছে। একজনের বিরুদ্ধে আচরণবিধি ভঙ্গের দায়ে মামলা করা হয়েছে। এতে বলা হয়Ñ ইউপি নির্বাচনে অধিকাংশ সংসদ সদস্যই কমিশনের অনুরোধে নির্বাচনী এলাকায় যাননি। বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছেÑ প্রথম পর্যায়ের ৬ হাজার ৮৭০টি কেন্দ্রের মধ্যে প্রিসাইডিং অফিসারদের নিয়ন্ত্রণ বহির্ভূত হওয়ার কারণে ৬৫টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে, যা মোট ভোট কেন্দ্রের মাত্র ০.৯৪ শতাংশ। দ্বিতীয় পর্যায়ের ৬ হাজার ৮৮০ কেন্দ্রের মধ্যে বন্ধ করা হয়েছে ৩৭টি কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ, যা মোট কেন্দ্রের ০.৫০ শতাংশ। এ থেকে দেখা যায় দ্বিতীয় পর্যায়ের কেন্দ্র স্থগিতের সংখ্যা অপেক্ষাকৃত কমে গেছে। দুই পর্যায়েই কেন্দ্র বন্ধের হার খুবই নগণ্য। এক শতাংশেরও কম, যা এ ঘটনাকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলেই প্রমাণ করে। এছাড়া প্রথম পর্যায়ে শতকরা ৭৫ ভাগ এবং দ্বিতীয় পর্যায়ের ৭৮.৫ ভাগ ভোট প্রদানকে ভোট প্রদান অংশগ্রহণমূলক বলেই ইঙ্গিত প্রদান করে। এতে আরও উল্লেখ করা হয়েছেÑ কেন্দ্রের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা এবং ভোটারদের নিরাপত্তার জন্য প্রতি কেন্দ্রে ৫ থেকে ৭ জন অস্ত্রসহ ২০ থেকে ২৫ জন পুলিশ, আনসারসহ প্রায় এক লাখ ৮০ হাজার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। পুলিশ র‌্যাব ও বিজিবির মোবাইল টিম ভোটগ্রহণের ২ দিন আগে ও পরেসহ ৪ দিন নির্বাচনী এলাকায় নিবিড় টহল প্রদান করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করছে। বেসরকারী টেলিভিশনগুলো ভোটগ্রহণের দিন সর্বক্ষণিকভাবে সারাদেশব্যাপী তাদের ভ্রাম্যমাণ ক্যামেরা দ্বারা ভোটের দৃশ্য দেশবাসী ও বিশ্বকে দেখিয়েছে। সেখানে দেশের অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ভোটারদের লম্বা লাইন, মহিলা বৃদ্ধ ভোটারদের সুশৃঙ্খলভাবে ভোট প্রয়োগ করতে দেখা গেছে। কোনরূপ বাধা ছাড়াই সুন্দরভাবে ভোট দিতে পেরেছেন বলেও টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে প্রচারিত হয়েছে। এর সঙ্গে কোথাও কোথাও কেন্দ্রের বাইরে প্রার্থী ও তার সমর্থকদের মধ্যে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। যেখানেই ভোট কারচুপি বা সহিংসতার খবর পাওয়া গেছে, সেসব স্থানে অতিরিক্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও ম্যাজিস্ট্রেট উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছেন। যেখানে প্রমাণ পাওয়া গেছে সেখানে ভোট কেন্দ্র বন্ধ করে দেয়া হয়েছে বলে কমিশনের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে। এতে আরও বলা হয়েছেÑ সকলের সহযোগিতায় কমিশন পরবর্তী পর্যায়ে আরও অধিকতর গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে সক্ষম হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। জাসদের দু’পক্ষকে ডেকেছে কমিশন ॥ দলীয় প্রতীক মশাল নিয়ে কাড়াকাড়ির পেক্ষাপটে মূল অংশ চিহ্নিত করতে শুনানির জন্য আগামীকাল জাসদের দুই অংশকে ডেকেছে নির্বাচন কমিশন। এর আগে দু’পক্ষ থেকেই তাদের প্রার্থীকে মশাল প্রতীক বরাদ্দ দিতে কমিশনে আবেদন জানানো হয়েছে। এছাড়া দু’পক্ষ থেকেই পুনরায় প্রার্থী প্রত্যায়নের জন্য অনুস্বাক্ষর কমিশনে জমা দেয়া হয়েছে। সোমবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের সভাপতিত্বে কমিশন সভায় জাসদের মূল অংশ চিহ্নিত করতে শুনানির সিদ্ধান্ত হয় বলে জানা গেছে। ইসির যুগ্মসচিব জেসমীন টুলী বলেন, বিদ্যমান জটিলতা নিরসনের জন্য শুনানির সিদ্ধান্ত হয়েছে। ৬ এপ্রিল দুই পক্ষকে ডাকা হয়েছে। ইসি কর্মকর্তারা জানান, ওই দিন বেলা ১১টায় হাসানুল হক ইনু ও শিরীন আখতারের এবং বিকেল ৩টায় মঈন উদ্দিন খান বাদল ও নাজমুল হক প্রধানের বক্তব্য শুনবে ইসি। তাদের কাছে চিঠি পাঠানো হচ্ছে।
×