ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

স্বাস্থ্য ও স্যানিটেশন সুবিধা পেয়ে স্বস্তি

সোলার প্যানেল- পাল্টে গেছে শহুরে দরিদ্রদের জীবন

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ৫ এপ্রিল ২০১৬

সোলার প্যানেল- পাল্টে গেছে শহুরে দরিদ্রদের জীবন

বাবুল হোসেন ॥ ময়মনসিংহ শহরের বস্তি আর কলোনিতে সোলার প্যানেল সংযুক্ত করে নির্মাণ করা হয়েছে আধুনিক মানের গোসলখানা, টয়লেট ও বিশুদ্ধ খাবার পানির পয়েন্ট। দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য ও স্যানিটেশন সেবার মান উন্নয়নের জন্যই এসব করা। এর বাইরে শহরের কয়েকটি বেসরকারী স্কুলেও স্বাস্থ্য ও স্যানিটেশন সুবিধার এই ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। বিশেষ করে বয়স সন্ধিক্ষণে মেয়ে শিক্ষার্থীদের পিরিয়ড সমস্যার বিষয়টি মাথায় রেখে স্কুলে স্কুলে নির্মাণ করা হয়েছে আধুনিক মানের বাথরুম। বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা-এনজিও ফোরামের এমন উদ্যোগে খুশি পৌর এলাকার স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও স্কুল কর্তৃপক্ষসহ সুবিধাভোগী পরিবারের সদস্যরা। এই শহরের কংগ্রেস জুবলি রোড পেরিয়ে ব্রহ্মপুত্র বেড়িবাঁধের দিকে চলে গেছে একটি সরু গলি। গলি পেরিয়ে শহরের বিপিন পার্ক থেকে গঙ্গামন্দির পর্যন্ত জুবলিঘাট বাস্তুহারা কলোনি। ব্রহ্মপুত্র নদের সরকারী বেড়িবাঁধের ওপর গড়ে ওঠা এই কলোনিতে বাস করে নিম্ন আয়ের ৩ শতাধিক নারী পুরুষ ও শিশু। এর মধ্যে চা ও পান দোকানী, পরিবহন ও নির্মাণ শ্রমিক, ভ্যান ও রিক্সাচালক এবং গৃহপরিচারিকা রয়েছে। দরিদ্রসীমার নিচে বসবাসকারী এসব মানুষ এক সময় প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিত সংলগ্ন ব্রহ্মপুত্র নদে। গোসল ও বাসার ধোয়ামোছার কাজেও ব্যবহার করত ব্রহ্মপুত্র নদের দূষিত পানি। বিশুদ্ধ খাবার পানি সংগ্রহ করা ছিল কষ্টসাধ্য। বিশেষ করে শুকনো মৌসুমে খাবার পানির সঙ্কট দেখা দিত পুরো কলোনি জুড়ে। কিন্তু এখন আর সেই দিন নেই। বদলে গেছে কলোনির সেই চেহারা। গত বছর এই কলোনিতে বসানো হয়েছে একসঙ্গে ৩ চেম্বার বিশিষ্ট কমিউনিটি ল্যাট্রিন ও ১ চেম্বার বিশিষ্ট গোসলখানা। গোসলখানা ও ল্যাট্রিনের বাইরে রয়েছে বিশুদ্ধ খাবার পানির পয়েন্ট। ল্যাট্রিন ও গোসলখানার ছাদে বসানো হয়েছে সোলার প্যানেল। গোসলখানা ও ল্যাট্রিনের ভেতর বাল্ব জ্বলছে সোলার প্যানেল থেকে। একই ছাদে সঙ্গে বসানো হয়েছে পানির ট্যাঙ্ক। কলোনির বাসা থেকে বিদ্যুত সংযোগ থেকে বসানো হয়েছে বৈদ্যুতিক পাম্প। এই পাম্প থেকে তোলা পানি সরাসরি যাচ্ছে পানির পয়েন্টে থাকা টেপে। এ থেকে বিশুদ্ধ পানির সরবরাহ পাচ্ছেন কলোনির বাসিন্দারা। এই কলোনির সুবিধাভোগী আসমা উল হোসনা (৩৫) জানান, আগে খাবার পানি সংগ্রহ করা ছিল কষ্টসাধ্য। দূরের আবাসিক বাসাবাড়ি থেকে সংগ্রহ করা হতো খাবার পানি। শুকনো মৌসুমে এ নিয়ে ঝগড়া বিবাদ লেগে যেত অনেকের সঙ্গে। একই এলাকার গৃহবধূ রোকেয়া (২৫) জানান, আগে তাদের প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে বসতে হতো ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ে। বাসাবাড়ির কাজে ও গোসলের জন্য ভরসা ছিল এই ব্রহ্মপুত্র নদের পানি। কিন্তু এখন আর এই সমস্যা নেই তাদের। স্থানীয়রা জানায়, জুবলিঘাট বাস্তুহারা কলোনির ৮ নম্বর ওয়ার্ডের এই বাথরুম ও টয়লেটসহ খাবার পানির পয়েন্ট নির্মাণে এনজিও ফোরাম ও ময়মনসিংহ পৌরসভা ৪ লাখ ১৭ হাজার ৫৬১ টাকার সহায়তা দিয়েছে। এর মধ্যে কলোনির অংশগ্রহণ রয়েছে ১০ হাজার টাকার। ময়মনসিংহ পৌরসভাসহ এনজিও ফোরাম পাবলিক হেল্থ ও স্থানীয় জনগণ এটি বাস্তবায়ন করার পর স্থানীয় কলোনির বাসিন্দারাই এর দেখভাল ও তদারকি করছে।
×