ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বায়োমেট্রিক পদ্ধতির ছাপ অপব্যবহার হলে ৩শ’ কোটি টাকা জরিমানা

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ৫ এপ্রিল ২০১৬

বায়োমেট্রিক পদ্ধতির ছাপ অপব্যবহার হলে ৩শ’ কোটি টাকা জরিমানা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধন ব্যক্তি নিরাপত্তার জন্য কোন হুমকি হবে না। গ্রাহকের আঙ্গুলের ছাপ কোন অপারেটর সংরক্ষণ করলে ৩শ’ কোটি টাকা জরিমানা গুনতে হবে ওই অপারেটরকে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধন করবেন। মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ বিষয়ে জনগণকে আশ্বস্ত করা হয়েছে। এখন আর কোন আলোচনা-সমালোচনা বা বিতর্ক থাকার কথা না। আশা করছি এ বিষয়ে সব আলোচনা-সমালোচনার অবসান ঘটবে। সোমবার মন্ত্রিসভা বৈঠক শেষে ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম সাংবাদিকদের এ কথা বলেন। মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলমও সাংবাদিকদের বলেন, আঙ্গুলের ছাপ নিয়ে ভয়ের কিছু নেই। এটা যদি ‘মিসইউস’ বা অপব্যবহার হয় তাহলে অপারেটরদের জন্য বড় শাস্তি রয়েছে। মন্ত্রিসভা সাধারণ মানুষকে এ বিষয়ে আশ্বস্ত করছেন। মন্ত্রিপরিষদ বৈঠকে সিম নিবন্ধন নিয়ে বায়োমেট্রিক পদ্ধতি নিয়ে জনগণের সংশয়ের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আলোচনায় বলা হয়, নাগরিকদের আঙ্গুলের ছাপ জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্যভা-ারে সংরক্ষিত আছে, তা মিলিয়ে দেখতেই এ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। কোন মোবাইল অপারেটর আঙ্গুলের ছাপ সংরক্ষরণ করতে পারবে না। ফলে নাগরিকরা কোন প্রকার হয়রানির শিকার হবেন না। তাদের আঙ্গুলের ছাপ অন্য কোন কাজে লাগানো বা তাদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি নিয়ে টানাটানির কোন সম্ভবনা নেই। যদি কারও আঙ্গুলের ছাপ নিয়ে অপারেটরদের বিরুদ্ধে কোন প্রকার অভিযোগ পাওয়া যায় তাহলে ওই অপারেটরের বড় শাস্তি পেতে হবে। অপারেটরা যখন লাইসেন্স পেয়েছেন তাখনই লাইসেন্সের শর্ত মেনে তাদের লাইসেন্স নিতে হয়েছে। নানা বাধ্যবাধকতা রয়েছে তাদের। চাইলেই তারা কোনকিছু করতে পারবে না। মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে সোমবার সচিবালয়ে নিজ দফতরে প্রতিমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, জনগণকে আশ্বস্ত করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ৩০ এপ্রিলের মধ্যে নিজের মোবাইল সিম বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে ভেরিফিকেশন করবেন বলে জানিয়েছেন। আঙ্গুলের ছাপ পদ্ধতিতে মোবাইল সিম ভেরিফিকেশন কার্যক্রম নিয়ে চলমান বিতর্ক প্রসঙ্গে বলেন, প্রধানমন্ত্রী আমাদের, জনগণকে আশ্বস্ত করতে নিজের সিম নিজে আগামী ৩০ এপ্রিলের মধ্যে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে ভেরিফিকেশন করে নেবেন। এর মাধ্যমে জনগণ আশ্বস্ত হবেন যে, আঙ্গুলের ছাপ সংরক্ষণ করছি না। জনগণের সর্বোত্তম স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য, সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদ, অবৈধ ভিওআইপি, ক্ষতিকারক কাজগুলো বন্ধ করতে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধন করছি। আঙ্গুলের ছাপ সংরক্ষণসহ অপারেটররা নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসির শর্ত লঙ্ঘন করলে ৩শ’ কোটি টাকা জরিমানা গুনবে বলেও মন্ত্রিসভায় জানিয়েছেন প্রতিমন্ত্রী। গত বছরের ১৬ ডিসেম্বর থেকে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে মোবাইল সিম ও রিম কার্ড ভেরিফিকেশন শুরু হয়েছে। পুরাতন ও ব্যবহৃত সিমের জন্য আগামী ৩০ এপ্রিলের মধ্যে এই কার্যক্রম শেষ করার কথা। এর পরও যারা ভেরিফিকেশন করতে পারবে না তাদের সিমগুলো সাময়িক বন্ধ রেখে বার্তা পৌঁছে দেয়া হবে নিবন্ধন করার জন্য। পরে তারা সিমগুলো ভেরিফিকেশন করে নিতে পারবেন। তবে এজন্য নির্দিষ্ট সময়সীমা উল্লেখ করেননি প্রতিমন্ত্রী। এদিকে, মন্ত্রিসভার বৈঠকে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম ভেরিফিকেশন নিয়ে চলমান বিতর্ক প্রসঙ্গে ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রীর কাছে জানতে চান। প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম বলেন, অর্থমন্ত্রী বললেন, যে প্রোপাগান্ডা চলছে সে বিষয়ে জানতে চাই। আঙ্গুলে ছাপ কোন অবস্থাতে সংরক্ষণ করা হচ্ছে না। আঙ্গুলের ছাপ দেয়ার পর তা বাইনারি কোডে পরিণত হচ্ছে, তারপর এনআইডি তথ্যভা-ারে জমা থাকা ছাপের সঙ্গে মিলছে কি-না সে বার্তা আসছে। মন্ত্রিসভাকে এই পদ্ধতি জানিয়ে দেয়ার সুযোগ হয়েছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রিসভায় আলোচনা হওয়ার কারণে জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি ও বিতর্ক কেটে যাবে বলে তিনি মনে করেন। বিভিন্ন দেশে আঙ্গুলের ছাপ ব্যবহার করার তথ্য মন্ত্রিসভায় উপস্থাপন করেছেন বলেও তিনি উল্লেখ করেন। এক প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, দেশে নয় হাজারেরও বেশি ডাকঘরে ডিভাইস বসিয়ে সিম নিবন্ধনের সুযোগ করে দেয়ার জন্য অপারেটরদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এখন থেকে প্রতিটি ডাকঘর থেকেও গ্রাহক তার সিম নিবন্ধন করতে পারবেন। এছাড়া অপারেটররা নিজেদের কাস্টমার সেন্টার থেকেও নিবন্ধন কাজ করে যাচ্ছেন। এজেন্টগুলোও সিম নিবন্ধনের কাজ করে যাচ্ছে। গ্রাহকদের জন্য সব ধরনের সুবিধা তৈরি করা হয়েছে সিম নিবন্ধনের। ডাকঘরগুলোতে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সিম নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু হবে। কাস্টমার কেয়ার সেন্টার ছাড়াও ডাকঘর থেকে এই বাড়তি সুযোগ পাবেন গ্রাহকরা। সিম নিবন্ধন করতে গিয়ে যাদের আঙ্গুলের ছাপ মিলছে না তাদের নতুন জাতীয় পরিচয়পত্র করতে হচ্ছে। এ কারণে একটা ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। ভোগান্তি এড়াতে আঞ্চলিক অফিসগুলোতে ডিভাইস বসিয়ে ভেরিফিকেশনের ব্যবস্থা করা হবে, যাতে আর বাড়তি ভোগান্তি না হয়। বায়োমেট্রিক পদ্ধতির বিরুদ্ধে একটি চক্র বিরোধিতা করছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ফেসবুকে ২৪টি পেজ খোলা হয়েছে। দেশ ও দেশের বাইরে থেকে প্রোপাগান্ডা চালানো হচ্ছে। যারা জঙ্গী, জঙ্গীবাদে অর্থায়ন করেন, অস্থিরতা সৃষ্টি করতে চান তারাই কাজটি করছেন। তাদের রাজনৈতিক পরিচয় বিতর্কিত। তাদের পরিচয়গুলো জাতির সামনে তুলে ধরা প্রয়োজন, যাতে মানুষ সচেতন হয়। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার কথাও তিনি উল্লেখ করেছেন।
×