ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

লুটেরা বিশ্বনেতা ও প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বদের গোমর ফাঁস ;###;তালিকার শীর্ষে চীনের প্রেসিডেন্ট, রুশ প্রেসিডেন্ট, অমিতাভ বচ্চন, ঐশ্বরিয়া রাই, সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আসাদ ছাড়াও রয়েছেন বহু নামীদামী মুখ

কালো টাকার নেশার চমক

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ৫ এপ্রিল ২০১৬

কালো টাকার নেশার চমক

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ আয়কর ফাঁকি দিয়ে বিদেশে নামে ও বেনামে কোম্পানি খুলে কালো টাকা জমানোর ‘বস্তুবাদে’ কেউ-ই পিছিয়ে নেই। এতে যেমন আগ্রহ আছে চীনের কমিউনিস্ট প্রেসিডেন্টের, তেমনই এ ব্যাপারে আগ্রহে ঘাটতি নেই ঘোর কমিউনিস্ট-বিদ্বেষী রুশ প্রেসিডেন্টেরও! যার ওপর ভরসা রাখেন আমেরিকার ‘কাছের লোক’ পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ। আস্থা রাখেন বলিউডের মেগা স্টার অমিতাভ বচ্চন, ঐশ্বরিয়া রাই আর ফুটবলার লিওনেল মেসিও। এই ‘বস্তুবাদে’ অন্তত কোন ‘দ্বন্দ্ব’ নেই! বিশ্বের এক শ’টিরও বেশি সংবাদ মাধ্যমের চালানো যৌথ তদন্তে উঠে এসেছে ওই সব চাঞ্চল্যকর তথ্য। সেই তদন্তে দেখা গেছে, নামে-বেনামে ওই রাষ্ট্রপ্রধান, রাজনীতিক, শিল্পপতি, ফুটবলার, ফিল্ম স্টারসহ সমাজের মান্যগণ্য ব্যক্তিরা আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে বিদেশে কালো টাকা জমিয়ে চলেছেন। নামে ও বেনামে একের পর এক খুলে চলেছেন বেআইনী কোম্পানি। আর দিয়ে চলেছেন আয়কর ফাঁকি। এই তালিকায় নাম রয়েছে বিশ্বের অন্তত ১৪৩ জন রাষ্ট্রপ্রধান ও প্রথম সারির রাজনীতিকের। তালিকায় এখন পর্যন্ত কোন বাংলাদেশী নেতানেত্রীর নাম থাকার খবর পাওয়া না গেলেও, এই ‘বস্তুবাদে’ আস্থা রয়েছে কম করে ৫০০ জন বিশিষ্ট ভারতীয়ের। পানামার সংবাদপত্রের দাবি, এই ৫০০ জনের তালিকায় যেমন রয়েছেন অমিতাভ বচ্চন, ঐশ্বরিয়া রাইয়ের মতো ফিল্ম স্টাররা, তেমনই নাম রয়েছে ভারতের প্রাক্তন এ্যাটর্নি জেনারেল সোলি সোরাবজির পুত্র জাহাঙ্গীর এস সোরাবজি, শিশির বাজোরিয়াসহ বেশ কয়েক জন বড় শিল্পপতিও। মিডিয়ার নজর কেড়ে নিয়েছেন মূলত দু’জন। যাদের একজনের রাজনীতি ‘বস্তুবাদে’র পক্ষে। চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। আর অন্যজন রাজনীতিতে রয়েছেন একেবারেই তাঁর বিপরীত মেরুতে, রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন। ওই তদন্ত জানাচ্ছে, চীনের কমিউনিস্ট পার্টির নেতাদের বেআইনী সম্পত্তির রাশ টানতে হালের দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের ‘হোতা’ প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং আর তাঁর পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা বেশ কয়েকটি ‘বেআইনী’ সংস্থার হদিশ মিলেছে বিদেশে। সে ক্ষেত্রে অনেক ‘সাবধানী’ রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন। তদন্তে যার নাম উঠে এসেছে তিনি রুশ প্রেসিডেন্টের ‘ডান হাত’। যিনি ‘বাঁ হাতে’ অন্তত দু’শ’ কোটি ডলার পাচার করেছেন বিদেশে। আর সেই ‘ব্ল্যাক মানি’ হয় রেখেছেন কোন বিদেশী ব্যাংকে। না হলে তার একাংশ ব্যবহার করেছেন কোন বেআইনী কোম্পানি খুলতে। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের আত্মীয়ের নামে বিদেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে অন্তত চারটি বেআইনী সংস্থা। আর্জেন্টিনার মতো একটি ‘গরিব দেশে’র ফুটবলার লিওনেল মেসিই বা কম যান কিসে? তিনি আর তাঁর বাবা মিলে স্পেনে একটি তেলের কোম্পানি খুলেছেন। এছাড়াও কর ফাঁকির মাধ্যমে যারা বিশাল অর্থের মালিক হয়েছেন তাদের অন্যতম হলেন, সিরিয়ার বর্তমান প্রেসিডেন্ট বাসার আল আসাদ, মিসরের সাবেক প্রেসিডেন্ট হোসনি মোবারকসহ তার পরিবারের সদস্য ও তার সহায়তাকারীরা এবং লিবিয়ার সাবেক নেতা কর্নেল গাদ্দাফি। টাকা লুটপাটে আরও যেসব বিশ্বনেতার নাম এসেছে তাদের মধ্যে অন্যতম সৌদি আরবের বাদশা সালমান বিন আব্দুল আজিজ বিন আব্দুল রহমান আল সৌদ, আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট মৌরিকিও ম্যাক্রি, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট পেত্রো পোরসেনকো, সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট খলিফা বিন জায়েদ বিন সুলতান আল নাহিয়ান, ইউক্রেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী পালভো লেজারেনকো, জর্জিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিদজিনা লাভানিসভিলি, ইরাকের সাবেক মন্ত্রী আয়াদ আলাওয়ি, আইসল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী সিগমুন্দুর দাভিও গুন্নালাওগসন, কাতারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী হামিদ বিন জসিম বিন জাবের আল থানি, কাতারের সাবেক আমির শেখ হামিদ বিন খলিফা আল থানি, জর্দানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী আলী আবু আল-রাগেব, সুদানের সাবেক প্রেসিডেন্ট আহমেদ আলী আল-মির্ঘানি। এছাড়া ব্রিটেনের হাউস অব লর্ডসের ছয়জন সদস্যের নামও এই অর্থ পাচারের তালিকায় রয়েছে। ব্রিটিশ রাজনৈতিক দলগুলোকে বিভিন্ন সময় অর্থ সহায়তা করা বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ীর নামও অর্থ পাচারকারীর তালিকায় রয়েছে। গোপনীয়তা রক্ষাকারীর গোপনীয়তা ফাঁস ॥ গোপনীয়তা রক্ষাকারী হিসেবে পৃথিবীর অন্যতম প্রতিষ্ঠান মোওস্যাক ফনসেকা। এটি পানামার একটি আইনী প্রতিষ্ঠান। এখান থেকেই সম্প্রতি ফাঁস হয়েছে এক কোটি ১০ লাখ নথিপত্র। কারা ফাঁস করেছে এসব নথি তা জানা না গেলেও নথিগুলো প্রথমে আসে জার্মানির দৈনিক সুইডয়চে সাইটংয়ের হাতে। পরে এগুলো সাংবাদিকদের সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টের (আইসিআইজে) কাছে পাঠায় পত্রিকাটি। যারা নথিগুলো ঘাঁটাঘাঁটি করে বিশ্বের শীর্ষ ধনী ও ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের কর ফাঁকি ও অর্থ পাচারের নথি ফাঁস করেছেন। যা বিশ্বজুড়েই আলোড়ন তৈরি করেছে। ডেইলি মেইলের এক খবরে বলা হয়েছে, ফাঁসকৃত নথির পরিমাণ ২০১৩ সালে এডওয়ার্ড স্নোডেন কর্তৃক ফাঁস করা সিআইএ’র গোপন নথির চেয়েও বেশি। ধনিক ও ক্ষমতাবানেরা কত কৌশলে কর ফাঁকি দিয়ে নিজেদের সম্পদ লোকচক্ষুর অন্তরালে লুকিয়ে রাখে সেই কথাই প্রকাশ্যে এসেছে এই ব্যাপক সংখ্যক নথি ফাঁসের ঘটনায়। এই নথিগুলোই প্রমাণ দিচ্ছে যে মোওস্যাক ফনসেকা তার মক্কেলদের অর্থ পাচার ও কর আদায়ের ক্ষেত্রে আইনী পরামর্শ দিয়েছে। মোওস্যাক ফনসেকা ৪০ বছর ধরে তার যেসব মক্কেলের অর্থ পাচার, কর ফাঁকি এবং বিভিন্ন রকম নিষেধাজ্ঞা এড়াতে পরামর্শ দিয়েছে তার সবই এসব নথির মধ্যে রয়েছে। নথিগুলো বিশ্লেষণ করে এখনো দেশের সম্পদ পাচার ও কর ফাঁকিতে জড়িত শীর্ষ ধনী ও ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের সবার নাম জানা সম্ভব হয়নি। খবরে বলা হয়, মোওস্যাক ফনসেকা পৃথিবীর অন্যতম গোপনীয় কোম্পানিগুলোর একটি। প্রতিষ্ঠানটি গত ৪০ বছর ধরে কোন প্রকারের সমস্যা বা সঙ্কট বা নিন্দা ছাড়াই এটি পরিচালনা করে আসছেন। মোওস্যাক ফনসেকার পক্ষ থেকেও বলা হয়েছে, কোন প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই তারা ৪০ বছর ধরে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে। তাদের বিরুদ্ধে কোন ধরনের অপরাধমূলক কর্মকা-ে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়নি। যেভাবে ফাঁস হলো নথি ॥ নাম প্রকাশ করা হয়নি এমন একটি সূত্র থেকে মোওস্যাক ফনসেকার ওই ১ কোটি ১০ লাখ নথি জার্মান দৈনিক সুইডয়চে সাইটংয়ের হাতে আসে। এরপর সুইডয়চে সাইটং সেসব নথি ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টসকে (আইসিআইজে) দেয়। পরে আইসিআইজের কাছ থেকে সেসব নথি পায় বিবিসি, গার্ডিয়ানসহ ৭৮টি দেশের ১০৭টি সংবাদমাধ্যম। এখনও চলছে এসব নথির বিশ্লেষণ। নতুন নতুন তথ্য জানতে বিশ্বের অন্তত ৩০০ সাংবাদিক নথিগুলো ঘেঁটে চলেছেন। জানা যায়, সম্পদের তথ্য গোপন রেখে কর ফাঁকি দিতে মোওস্যাক ফনসেকা কীভাবে হোমরা চোমরাদের সহযোগিতা দিয়ে আসছিল তার বিবরণ এসেছে এসব নথিতে। ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টস (আইসিআইজে)-এর পরিচালক জেরার্ড রাইল বলেন, গত ৪০ বছরে মোওস্যাক ফনসেকার দৈনন্দিন কর্মকা-ের দলিল এসব নথি। এসব নথির যে গুরুত্ব, তাতে আমার মনে হয়, এটাই হবে বিশ্বে গোপন নথি ফাঁসের সবচেয়ে বড় ঘটনা। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি অফসোর দুনিয়ার জন্য এই নথিগুলো সবচেয়ে বড় আঘাত বলে প্রমাণিত হতে যাচ্ছে।’ পুতিন কি সত্যিই অর্থ পাচারে জড়িত ॥ পানামার একটি ল’ ফার্মের ফাঁস হয়ে যাওয়া গোপন নথিতে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের ঘনিষ্ঠ কয়েকজন সহযোগী একটি সন্দেহজনক অর্থ পাচারকারী চক্রের সঙ্গে জড়িত বলে প্রকাশ পাচ্ছে। বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এসব নথিতে বিলিয়ন ডলার পাচারের একটি চক্রের সন্ধান মিলেছে, যা পরিচালিত হয় রুশ মালিকানাধীন ব্যাংক রোশিয়ার মাধ্যমে। রাশিয়া ক্রিমিয়াকে নিজেদের অংশ করে নেয়ার পর ব্যাংক রোশিয়া নামের ওই ব্যাংকের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন। বিদেশি কোম্পনিগুলোর মাধ্যমে ব্যাংকটি কীভাবে অর্থ পাচার করে আসছিল তা ফাঁস হওয়া নথির মাধ্যমেই প্রথম জানা যাচ্ছে। তাতে দেখা যায়, সোনেত্তি ওভারসিস, ইন্টারন্যাশনাল মিডিয়া ওভারসিস, সানবার্ন এবং স্যান্ডালউড কন্টিনেন্টাল ভুয়া শেয়ার হস্তান্তর, মিথ্যা পরামর্শক চুক্তি, অবাণিজ্যিক ঋণ এবং অবমূল্যায়িত সম্পত্তি কেনার মাধ্যমে কীভাবে লাভবান হয়েছে। নথিতে আরও দেখা যায়, রুশ প্রেসিডেন্টের অন্যতম ঘনিষ্ঠ এক বন্ধু সের্গেই রোলদুগিন ইন্টারন্যাশনাল মিডিয়া ওভারসিস এবং সোনেত্তি ওভারসিস-এর মালিক। সঙ্গীত বাদন দলের চেলো বাদক রোলদুগিন কিশোর বয়স থেকেই পুতিনের পরিচিত, প্রেসিডেন্ট পুতিনের কন্যা মারিয়ার ধর্মপিতাও তিনি। নথি অনুযায়ী. সন্দেহের আবর্তে ভরা ওই চুক্তিগুলো থেকে রোলদুগিন ব্যক্তিগতভাবে কোটি কোটি ডলার লাভ করেছেন। চেলো বাদক রোলদুগিন এর আগে সাংবাদিকদের কাছে তিনি ব্যবসায়ী নন বলে দাবি করেছিলেন। বিদেশী কোম্পানির সঙ্গে জটিল ওই চুক্তিগুলোর সঙ্গে তার জড়িত থাকার বিষয়টি সন্দেহ এমন বাড়িয়ে তুলছে যে, তিনি হয়ত শুধুমাত্র অন্য কারও প্রতিনিধিত্ব করছেন। ইন্টারন্যাশনাল মিডিয়া ওভারসিস তিনটি ব্যাংক এ্যাকাউন্ট খোলার সময় রোলদুগিনের সঙ্গে রুশ প্রেসিডেন্টের সম্পর্কের বিষয়টিও গোপন করে। প্রতিটি এ্যাকাউন্টের আবেদনপত্রে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল রোলদুগিনের সঙ্গে রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী কারও কোন সম্পর্ক আছে কিনা? উত্তরে সে ধরনের কারও সঙ্গে তার কোন সম্পর্ক নেই বলে বলা হয়েছে- যা নিশ্চিতভাবেই সত্য নয়। ব্রিটেনের দ্য গার্ডিয়ানের খবরে বলা হয়, গোপন এই লেনদেনের মাধ্যমে পুতিন অন্তত ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সরিয়েছেন। তবে কোন রেকর্ডে পুতিনের নিজ নাম পাওয়া যায়নি। এসব কাজে তাকে সহায়তা করেছে তার পরিবার ও ঘনিষ্ঠ বন্ধুরা। কারণ বিশাল এই অর্থের লেনদেন তার প্রত্যক্ষ মদদ ছাড়া করা অসম্ভব। গোপন কোম্পানির সুবিধাভোগী ফুটবলার মেসিও ॥ পানামার ল ফার্মের ফাঁস হওয়া গোপন নথিতে বিশ্বের বহু হোমরা-চোমরার সঙ্গে পাওয়া গেছে ফুটবলার লিওনেল মেসির নাম। গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নথিতে দেখা যায় মেসি ও তার বাবা হোর্হে হোরাসি ২০১২ সালে মোওস্যাক ফনসেকায় নিবন্ধিত ‘মেগা স্টার এন্টারপ্রাইজ’ নামে একটি কোম্পানির চূড়ান্ত সুবিধাভোগী মালিক। দেশের বাইরে কোম্পানি খুলে তা পরিচালনা বেআইনী না হলেও স্বচ্ছতার অভাব থাকায় তা নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। এফসি বার্সিলোনার এই খেলোয়াড় ও তার বাবার বিরুদ্ধে স্পেনে কর ফাঁকির মামলার বিচার চলছে। ৬ বার স্পেনের কর ফাঁকি দিতে অফসোরের সঙ্গে তার চুক্তি হয়েছিল বলে জানানো হয়। গার্ডিয়ান বলছে, উরুগুয়ে ও বেলিজে কিছু নামকাওয়াস্তে প্রতিষ্ঠানকে ব্যবহার করে বার্সিলোনার ফুটবল তারকার ইমেজ রাইটস বিক্রির মাধ্যমে কর ফাঁকি দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। তবে এই মামলায় মেগা স্টারের নাম উল্লেখ করা হয়নি। তবে বাবা ও ছেলে এই অভিযোগ অস্বীকার করে দায় চাপান এক সাবেক আর্থিক উপদেষ্টার উপর। ২০১৩ সালের আগস্টে হোর্হে মেসি স্বেচ্ছায় ৫০ লাখ ইউরো জরিমানা পরিশোধ করেন। গার্ডিয়ান বলেছে, মেগা স্টারের বিষয়ে জানতে ১২ দিন আগে মেসির সঙ্গে যোগাযোগ করেও কোন সাড়া মেলেনি। তার বাবা আইসিআইজের কাছে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে এও বলা হয়েছে, নতুন এসব নথিতে মেসির কোন বেআইনী কর্মকান্ডের তথ্য এখনো পাওয়া যায়নি। আইসল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীর গোপন তথ্য ॥ ফাঁস হওয়া আদালতের নথি থেকে জানা যায়, আইসল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী সিগমুন্ড গুনলাগসন ও তার স্ত্রী একটি অফশোর কোম্পানির আড়ালে কয়েক কোটি ডলারের সম্পদের তথ্য এতদিন গোপন করে এসেছেন। প্রধানমন্ত্রী একটি গোপন সমুদ্র অনুসন্ধান কোম্পানির মাধ্যমে দেশের ব্যাংকগুলোতে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছেন, যা তিনি গোপন করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। বিবিসি বলছে, ফাঁস হয়ে যাওয়া নথির বরাতে দেখা যাচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী সিগমুন্ড গুনলাগসন ও তার স্ত্রী ২০০৭ সালে উইনট্রাস নামের কোম্পানি ক্রয় করেন। ২০০৯ সালে দেশটির পার্লামেন্ট সদস্য নির্বাচিত হওয়ার সময় তিনি প্রতিষ্ঠান থেকে পাওয়া লভ্যাংশের কথা গোপন করেছিলেন। এর আট মাস পর উইনট্রাস নামের কোম্পানির ৫০ শতাংশ তার স্ত্রীর কাছে মাত্র ১ মার্কিন ডলারে বিক্রি করেন গুনলাগসন। তিনি দাবি করেছিলেন, এতে আইন ভঙ্গ হয়নি এবং তিনি এবং তার স্ত্রী আর্থিকভাবে লাভবান হননি। ২০১৫ সালে প্রধানমন্ত্রী গুনলাগসনের স্ত্রী আনা সিগুরলাগ পালসডোটিরের সই করা একটি নথিতে দাবি করা হয়েছে, উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার কোম্পানির মাধ্যমে বিনিয়োগ করা হয়েছে। ফাঁস হয়ে যাওয়া তথ্যে জানা গেছে, গুনলাগসনকে উইনট্রাসের সাধারণ আইনী ক্ষমতা দেয়া আছে। এর মধ্যদিয়ে কোন প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই তাকে কোম্পানি পরিচালনার সুযোগ দেয়া হয়। নথি থেকে আরও জানা যায়, ২০০৮ সালে অর্থনৈতিক মন্দা শুরুর পর আইসল্যান্ডের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাংক পথে বসে। ওই তিন ব্যাংকের বন্ডে উইনট্রাসের উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বিনিয়োগ রয়েছে। উইনট্রাসের মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার দাবির কারণে ব্যাংকগুলোকে দেউলিয়া ঘোষণা করা হয়। গুনলাগসন ২০১৩ সালে আইসল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। তিনি ক্ষতিগ্রস্ত ব্যাংকগুলোর সঙ্গে সমঝোতা আলোচনায় যুক্ত ছিলেন। যুক্তরাজ্যসহ অনেক দেশের গ্রাহকদের তাদের জমানো সম্পূর্ণ অর্থ ফেরত দেয়ার চাপ প্রতিরোধে ভূমিকা রাখেন গুনলাগসন। যদি বিদেশী বিনিয়োগকারীদের অর্থ ফেরত দেয়া হতো তবে আইসল্যান্ডের ব্যাংকগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হতো এবং উইনট্রাসের বন্ডগুলোর মূল্য কমে যেত। অবশ্য প্রধানমন্ত্রী গুনলাগসনের মুখপাত্র দাবি করেছেন, পালসডোটির সবসময় কর কর্তৃপক্ষের কাছে তার সম্পদের হিসাব দিয়েছেন। কিন্তু পার্লামেন্টের নিয়ম অনুসারে উইনট্রাসের লাভ জানানোর প্রয়োজন নেই গুনলাগসনের। তিনি আরও বলেন, উইনট্রাসের যৌথ শেয়ার সার্টিফিকেট ইস্যু করা হয়েছে, কারণ প্রধানমন্ত্রী এবং তার স্ত্রী দুজনেরই একটি যৌথ এ্যাকাউন্ট রয়েছে।
×