ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

শিরোপা জয়ের মহনায়কের দাবি- ক্রিকেটাররা দলের ভালর জন্য সবকিছু উজাড় করে দেয়

আমাদের রয়েছে প্রকৃতি প্রদত্ত মেধা ॥ ব্রেথওয়েট

প্রকাশিত: ০৪:৩৭, ৫ এপ্রিল ২০১৬

আমাদের রয়েছে প্রকৃতি প্রদত্ত মেধা ॥ ব্রেথওয়েট

মোঃ মামুন রশীদ ॥ এমনটা করতে সক্ষম তা আগেই দেখিয়েছিলেন। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে গ্রুপ পর্বের ম্যাচে শেষ ওভারে ছক্কা হাঁকিয়ে দলকে জয় পেতে ভূমিকা রেখেছিলেন। কিন্তু কার্লোস ব্রেথওয়েটের আসল পরিচয়টা মেলেনি। ফাইনালে নিজেকে এমনভাবে চিনিয়েছেন যে হয়ে গেছেন নিজ দেশে জাতীয় বীর। যদিও প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ডের কাছে যতদিন ক্রিকেট থাকবে ততবারই তিনি চক্ষুশূল হয়ে হন্তারক হিসেবেই বিবেচিত হবেন। কারণ রহস্যময় কোন অবিশ্বাস্য কা- কিংবা অভূতপূর্ব কিছু সবসময় হয় না। সেটাই করেছেন রবিবার টি২০ বিশ্বকাপের ফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। জিততে দরকার ৬ বলে ১৯, সেখানে তিনি টানা চার বলে ছক্কা হাঁকিয়ে অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন। ক্যারিবীয়রা হয়েছে চ্যাম্পিয়ন। এক প্রতিক্রিয়ায় পড়ে ব্রেথওয়েট দাবি করেছেন দলের ক্রিকেটাররা যা কিছুই করে সেটা ওয়েস্ট ইন্ডিজের সবচেয়ে ভালটার জন্যই করে। এছাড়া তার দাবি অন্য দেশগুলোর মতো অনেক সম্পদ দলে না থাকলেও ক্যারিবীয়দের আছে প্রকৃতি প্রদত্ত মেধা। প্রোটিয়া বধে মাত্র ১ ছক্কা, সেটা যে কেউ হুট করে মেরে বসতেই পারেন। তাই হয়ত ব্রেথওয়েটের দিকে মনোযোগ যায়নি কারও। কিন্তু তাকে ক্যারিবীয় দলে একজন নির্ভরযোগ্য হার্ডহিটার হিসেবে ভাবা হয়। তা প্রোটিয়াদের বিপক্ষে সেই ম্যাচে এবং ইংল্যান্ডের বিপক্ষে শেষ দুই ওভারে যখন ২৭ রান প্রয়োজন তখনও অধিনায়ক ড্যারেন সামির অম্লান হাসি দেখেই যেন বোঝা গিয়েছিল। ব্রেথওয়েট আছেন, ক্রিকেটে অসম্ভব বলে কিছুই নেই- স্নায়ুচাপটা সামির হাসিতেই অর্ধেক কমে যায়। এবার ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগে (আইপিএল) টি২০ আসরে প্রথমবার খেলোয়াড় নিলামে উঠেছিলেন ২৭ বছর বয়সী ব্রেথওয়েট। ভিত্তি মূল্য মাত্র ৩০ লাখ রূপী হলেও ৬ ফেব্রুয়ারি হওয়া নিলামে কলকাতা নাইট রাইডার্স ও দিল্লী ডেয়ার ডেভিলসের মধ্যে দর কষাকষির লড়াই হয়েছে। শেষ পর্যন্ত দিল্লী তাকে ৪ কোটি ২০ লাখ রূপীতে দলে টেনে চমক দিয়েছিল। কারণ তখন পর্যন্ত ব্রেথওয়েট তেমন কোন বড় তারকা হয়ে ওঠেননি। কিন্তু নিজের সামর্থ্য ও যোগ্যতা প্রমাণ দিয়ে ফেলেছেন ব্রেথওয়েট। টানা চার ছক্কা হাঁকিয়ে অসম্ভব জয়কে ছিনিয়ে আনলেন এবং সামিসহ দলের বাকিদের, ক্যারিবীয় মানুষদের এবং ক্যারিবীয় ক্রিকেট ভক্ত-সমর্থকদের হৃদয়ে আনলেন অন্যরকম এক আনন্দ। হতবাক করে দিলেন পুরো ক্রিকেট বিশ্বকে। এ বিষয়ে ব্রেথওয়েট বলেন, ‘আমরা সবকিছুই করি ওয়েস্ট ইন্ডিজের ভালর জন্য। অধিকাংশ দেশের ক্রিকেটে অনেক সম্পদ আছে। কিন্তু আমাদের যে মেধা আছে সেটা প্রকৃতি প্রদত্ত। এটাও অনেক সময় বলা হয়ে থাকে আমাদের কোন বিবেক বোধ নেই বলে নিজেদের মেধাটাকে শাণিত করতে পারি না। আর সে কারণেই আমরা মাঠের বাইরে অনেক কিছুই করতে পারি যেটা মাঠের ভেতরে সাফল্য আনার ক্ষেত্রে একেবারেই নিম্নমানের অবদান রাখে। কিন্তু এখন আমি চারপাশে ছড়িয়ে থাকা সেসব মানুষকে বলতে চাই, আমরা মাঠের বাইরে ও ভেতরে সবকিছুই করি শুধু ওয়েস্ট ইন্ডিজের ভালর জন্য। শুধু দলের জন্য নয়, ক্রিকেটের জন্য এবং প্রতি অঞ্চলের জন্য আমরা ভালর চেষ্টায় থাকি।’ শেষ ওভারে যখন স্নায়ুচাপ, সে সময় এত বড় রানের টার্গেটে কিভাবে অবলীলায় ছক্কা হাঁকিয়ে ছুঁয়ে ফেললেন? এ বিষয়ে ব্রেথওয়েট বলেন, ‘কিছুটা স্নায়ুটান তো ছিলই। কিন্তু আমি শুধু মনোযোগ ধরে রাখার চেষ্টা করেছি এবং আর যে কথাটি আমি সবসময় মাথায় রাখি সেটাই মনে করেছি- ভালভাবে বল দেখো এবং হিট করে মারলনের চাপ কমাও! তিন ছক্কা হাঁকানোর পর নিজেকে আরও প্ররোচিত করেছি কঠিন হয়ে যাও। আমাদের শক্তিমত্তাই হচ্ছে বাউন্ডারি হাঁকানোতে। তাই আমাদের বিশ্বাস ছিল আমরা এটা ছুঁতে পারব। এটাকে পেরিয়ে যাওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব।’
×