ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মমতাজ লতিফ

হাসিনাবিহীন নির্বাচন চান খালেদা!

প্রকাশিত: ০৪:০১, ৫ এপ্রিল ২০১৬

হাসিনাবিহীন নির্বাচন চান খালেদা!

বর্তমান সরকার দেশে অর্থনৈতিক, অবকাঠামো, তথ্যপ্রযুক্তি খাতে যথেষ্ট উন্নয়ন করেছে এবং এ উন্নয়নের গতি দ্রুতই এগিয়ে যাচ্ছে। এর সঙ্গে মানানসই নারী ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর উপার্জন বৃদ্ধি, জীবনযাত্রা সহজসাধ্য করা, বসবাসের একটি নিরাপদ বাড়ি এবং শিশু ও কিশোরদের জন্য শিক্ষা-স্বাস্থ্য সুবিধাকে সহজলভ্য করার লক্ষ্যে বিগত যে কোন সময়ের সরকারের চাইতে অনেক বেশি দৃশ্যমান, যা সরকারের দেশপ্রেমকে প্রমাণ করে। এ কথা প্রায় প্রমাণিত যে- ক. সামরিক ব্যক্তিদের শাসনের সময় শাসকদের চক্ষুশূল হয়েছিল- রাজনীতিক, দেশের রাজনীতি, গণপরিবহন রেল, বৃক্ষ ও জলাধার-নদী, পুকুর, খাল, জলাভূমি! আশ্চর্য হলেও সত্য, সেই পাকিস্তান আমলের আইয়ুব, ইয়াহিয়া অথবা আফ্রিকার সেনা শাসকরা সবাই দুর্নীতিবাজ হিসেবে প্রথম গ্রেফতার করেছে রাজনীতিবিদদের। এদিকে নিজেরা জনগণের প্রাকৃতিক সম্পদসহ রাষ্ট্রীয় কোষাগারের অর্থ লুটে নিয়েছে। বিদেশীদের সঙ্গে চুক্তিতে পার্সেন্টেজ নামক এক ঘুষ গ্রহণের রীতি আবিষ্কার করেছে, যা পরে সরকারী চাকরিতে নিয়োগবাণিজ্য নামে এমন এক পদ্ধতির সূচনা করেছে যা বর্তমানে একটি স্থায়ী দুষ্টচক্রে পরিণত হয়েছে। দেখা যাচ্ছে, এটিতে রাজনৈতিক সরকারও অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। এটি সরকারী সবরকম প্রতিষ্ঠানে উচ্চ, মধ্যম ও নিম্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ভাঙ্গা কঠিন এমন এক শৃঙ্খলে বন্দী করেছে। রাজনৈতিক সরকারের জন্য এটি একটি ‘কালো বেড়াল’ জন্মদানের অব্যাহত, বাধাহীন প্রক্রিয়া হিসেবে অবস্থান করেছে। প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানের উচ্চতম কর্মকর্তার আন্তরিক প্রচেষ্টা ও সততা ছাড়া এই জেঁকে বসা কলঙ্কজনক দুর্নীতির উৎসটিকে বন্ধ করা যাবে না। তবে ক্ষেত্রবিশেষে প্রযোজ্য স্থানে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার এ দুর্নীতির উচ্চহার হ্রাস করতে সক্ষম। খ. আমাদের দেশে সামরিক শাসন অবসান ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে নব্বইয়ের গণআন্দোলনের পর ’৯১-এ যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় তাতে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি জয়লাভ করে সরকার গঠন করে। ’৯২ সালে যুদ্ধাপরাধীদের অনিষ্পন্ন বিচারের দাবিতে বেগম জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে ‘৭১-এর ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি’ গঠিত হয় এবং গোলাম আযমের যুদ্ধাপরাধের বিচার গণআদালতে প্রবল সরকার বিরোধিতার মধ্যেও অনুষ্ঠিত হয়। তখন স্পষ্ট হলোÑ খালেদার নেতৃত্বে বিএনপি জিয়ার অনুসরণে যুদ্ধাপরাধীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেবে এবং তাদের বিচারের প্রশ্নে কোন সহায়তা দেবে না। উল্টো দেশের বরেণ্য চব্বিশ আইনজীবী, বুদ্ধিজীবী, কবি, শিক্ষক, শহীদ জননী, মুক্তিযোদ্ধা, সাংবাদিককে গণআদালতে অনুষ্ঠানের দায়ে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করে গ্রেফতার আদেশ বের করলে খালেদার নেতৃত্বে বিএনপি সরকারের চেহারা স্পষ্ট হয়। ওদের শত্রুর তালিকায় চিহ্নিত হয় মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধপন্থী ও মুক্তিযোদ্ধা। সুতরাং ওদের মিত্র চিহ্নিত হয় ’৭১-এর মুক্তিযোদ্ধা হত্যাকারী, গণহত্যাকারী যুদ্ধাপরাধী দল। এখানে একটা কথা স্মরণ করে দিতে হয়- আমাদের দেশে নতুন প্রজন্ম বারবার অবাক বিস্ময়ে প্রশ্ন তুলেছে, ভবিষ্যতেও তুলবে- পৃথিবীর কোন দেশে কি সে দেশের স্বাধীনতার বিরোধীরা অর্থ-বিত্ত, ব্যবসা-বাণিজ্য, চাকরি- সবকিছুর অধিকার ভোগ করে সমাজে প্রবল ক্ষমতার অধিকারী হতে পারে? তারা কি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হতে পারে? কেন তারা বাংলাদেশে সরকারের মন্ত্রী পর্যন্ত হতে পারল? অন্যদিকে হাজার হাজার মুক্তিযুদ্ধের বীরসেনা, ক্যু-এর নামে নিহত হলো। তাদের অনেকেই জীবন সংগ্রামে পরাজিত হলো। কেনইবা তাদের সন্তানদের অধিকাংশ যুদ্ধাপরাধীদের সন্তানদের মতো উচ্চশিক্ষা, অর্থ-বিত্তের অধিকারী হতে সক্ষম হলো না? এ অন্যায়-অবিচার এবং উল্টো ফল। ওদের পক্ষ থেকে ঘোষণা উঠে এলো- ‘এ অন্যায়-অবিচার চলতে পারে না, যুদ্ধাপরাধী ও স্বাধীনতাবিরোধীদের রাষ্ট্রের জন্মের বিরোধিতার, হত্যা, লুণ্ঠন ও ধর্ষণের অপরাধের জন্য বিচার করতে হবে।’ বাঙালীর দুর্ভাগ্য, ’৭১-এর যুদ্ধাপরাধীদের রাজনৈতিকসহ সবদিক দিয়েই পুনর্বাসন করে দিল ক্ষমতা দখল করেই বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রধান বেনিফিশিয়ারি জিয়াউর রহমান। শুধু তা-ই করে তিনি ক্ষান্ত হননি, তাদের মুক্তি, নাগরিকত্ব প্রদান করে তাদেরকে সমাজে মুক্তিযোদ্ধাদের ও স্বাভাবিক নাগরিকদের সমান অধিকার এবং মর্যাদা দেয়া হলো। এভাবে জিয়া জামায়াতের সমর্থক; কিন্তু গণতান্ত্রিক রাজনীতি চর্চার নামে ‘বিএনপি’ নামে যুদ্ধাপরাধীদের আশ্রয়-প্রশ্রয়দানকারী একটি দল গঠন করে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগকে রাষ্ট্রীয়, রাজনৈতিক ও সামরিক এই তিন শক্তি দ্বারা পরাভূত করার নীতি গ্রহণ করেছিল। যখন যুদ্ধাপরাধী ও তাদের আশ্রয়দাতা মিত্র শক্তিকে জিয়া ঐক্যবদ্ধ করে ফেলল, তখন মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী ও অংশগ্রহণকারী দলগুলো বিভক্ত হয়ে গেল। জাসদ ছাত্রলীগ থেকে বের হয়ে ভিন্ন দল গঠন করল দেশের এমন একটি ক্রান্তিকালে যখন মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযোদ্ধা ও স্বাধীনতার বিরোধীরা ঐক্যবদ্ধ শক্তি নিয়ে সদ্য স্বাধীন রাষ্ট্রের প্রথম সরকার বঙ্গবন্ধু সরকারকে আঘাত হানার পটভূমি তৈরিতে রত। আশ্চর্য এই যে, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি যখন বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, অসাম্প্রদায়িক রাজনীতি, গণতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ ইত্যাদি বাস্তবায়নের স্বপ্ন চোখে নিয়ে নানা লক্ষ্যে দলে বিভক্ত হচ্ছে, তখন বঙ্গবন্ধুর প্রাণপণ ঐক্য প্রচেষ্টা- বাকশাল, জেলা গবর্নর, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধের প্রচেষ্টাগুলো এদের মনোযোগ লাভ করেনি। অথচ বিপরীতে আমরা যদি বিএনপি দলটির জন্মদাতা জিয়া, পরবর্তী নেতা খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের অব্যাহত মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী দলের নেতা-নেত্রী, সমর্থকদের ওপর দশক দশক ধরে আঘাতের ঘটনাগুলোর দিকে দৃষ্টি দেই তাহলে দেখা যাবে তারা তাদের ‘শত্রু’র বিরুদ্ধে কখনোই কোন ছাড় দেয়নি এবং তাদের মিত্র যুদ্ধাপরাধীদের বিরোধিতা করেনি বরং অব্যাহত সহযোগিতাই করেছে। ১. ’৭৫-এ ১৫ আগস্ট যেমন বঙ্গবন্ধু, চার জাতীয় নেতা, উঠতি তরুণ নেতা শেখ মনি, শেখ নাসের, শেখ কামাল, সেরনিয়াবাত এবং বঙ্গবন্ধু পরিবারের কোন সদস্যকে জীবিত না রাখার পরিকল্পনাটি বাস্তবায়ন হয়েছিল, তার সঙ্গে প্রায় মিলে যায় ২০০৪-এর ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের সমাবেশে শেখ হাসিনা, সাজেদা চৌধুরী, আবদুর রাজ্জাক, মেয়র হানিফ, ওবায়দুল কাদেরসহ প্রায় আওয়ামী লীগের সব নেতা-নেত্রীকে হত্যার উদ্দেশ্যে সংঘটিত গ্রেনেড হামলার ঘটনাটি। তারা তাদের ‘শত্রু’ বিনাশ করার প্রক্রিয়া কখনো বন্ধ করেনি। বলা চলে জিয়া ’৮১ সালে নিহত হলেও তার স্ত্রী-পুত্র তার অপরাজনীতির চর্চা অব্যাহত রেখেছিল এবং আঘাতের লক্ষ্যও ছিল পাকিস্তানী ও রাজাকার যুদ্ধাপরাধী জামায়াতকে পরাজিত করে বাংলাদেশ স্বাধীন করার প্রধান ভূমিকা গ্রহণকারী দল আওয়ামী লীগ, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ও এ দলের বিশ্বস্ত নেতা-নেত্রী, কর্মী ও সমর্থক। উল্লেখ্য, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় আইভী রহমানসহ মোট ২৩ জন নেতা-কর্মী-সমর্থক নিহত হন এবং অলৌকিকভাবে শেখ হাসিনা দেহরক্ষীর প্রাণের বিনিময়ে, অন্যান্য নেতা-নেত্রী আহত হলেও রক্ষা পান। ২. ’৭১-এ ইসলাম রক্ষার নামে জামায়াত যে আলবদর, আল শামস, রাজাকার, শান্তিবাহিনীর মতো খুনী দল তৈরি করেছিল অনেকটা সে আদলে জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মী নিয়ে প্রত্যক্ষভাবে খালেদা-নিজামী-তারেকের পরিকল্পনায় ২০০২/৩-এ জন্ম দেয়া হয় জেএমবি, জেএমজেবি, হরকাতুল জিহাদ, হিজবুত তাহরীর, হিজবুত তৌহিদসহ আরও পঞ্চাশের বেশি উগ্র জঙ্গী দল, যাদের লক্ষ্য আওয়ামী লীগ, মুক্তিযুদ্ধে বিশ্বাসী নেতা-কর্মী, বাঙালী সংস্কৃতির ধারক সংস্কৃতি কর্মী, বাউল, সাধু, পীর প্রমুখ এবং হিন্দু সম্প্রদায়। ৩. জিয়াউর রহমান ’৭৭ থেকে কর্নেল তাহেরের ফাঁসির মধ্য দিয়ে অসংখ্য ‘ক্যু’-এর নামে সামরিক বাহিনীকে ‘মুক্তিযোদ্ধামুক্ত’ করার যে রাষ্ট্রবিরোধী অপরাধ সংঘটন করেছিল তাতে কথিত আছে প্রায় চার হাজার মুক্তিযোদ্ধা সেনার ফাঁসি কার্যকর করে। এর সঙ্গে আশ্চর্যজনক মিল পাওয়া যায় ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে সংঘটিত পরিকল্পিত বিডিআর বিদ্রোহের। এ বিদ্রোহে নিহত হন যে সব সেনা ও বিডিআর সদস্য তারা জঙ্গী বাংলাভাই ও অন্যদের গ্রেফতারে ভূমিকা রেখেছিল, অনেকেই ছিল মুক্তিযোদ্ধার সন্তান নতুবা মুক্তিযুদ্ধে বিশ্বাসী অথবা অন্য দোষ না থাকলেও তারা গোপালগঞ্জের সন্তান। এ সময় জানুয়ারিতে সদ্য ক্ষমতা গ্রহণ করে মাত্র সরকার গঠন করেছে আওয়ামী লীগের নেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দীর্ঘদিন পর মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের চৌদ্দ দলীয় জোট। দেশকে চরম অস্থিরতায় ফেলে হাসিনা সরকারের উৎখাতই কি ছিল না ঐ বিডিআর বিদ্রোহের পরিকল্পকদের? ৪. এরপর ২০১০-এ ’৭১-এর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন-’৭৩ দ্বারা গঠিত ট্রাইব্যুনালে। খালেদা জিয়া হেফাজতে ইসলামকে দিয়ে ঢাকার বাণিজ্যিক এলাকা মতিঝিল, শাপলা চত্বরে অবস্থান ধর্মঘট ডেকে একদিন একরাত শিবির, বিএনপি, হেফাজতের গু-াদের দিয়ে যে ধ্বংসযজ্ঞ, অগ্নিসংযোগ, লুট, ভাংচুর, হামলা চালিয়েছিল, তার সঙ্গে শুধুমাত্র ’৭১-এর ২৫ মার্চের অপারেশন জ্যাকপটের মিল খুঁজে পাওয়া যায়। সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সুশৃঙ্খল শান্তিপূর্ণ পন্থাই এ হামলাকে স্তব্ধ করে। সংঘর্ষ বাধলে এটি পুরো জাতির জন্য বিপজ্জনক হতে পারত। ৫. এরপর সাঈদীর মৃত্যুদ-ের রায়কে কেন্দ্র করে জামায়াত অধ্যুষিত জেলাগুলোতে- রাজশাহী, সাতক্ষীরা, কুষ্টিয়া অঞ্চলে যে হত্যা, ধ্বংসযজ্ঞ জামায়াত ও জঙ্গী গোষ্ঠী, বিএনপির সন্ত্রাসীরা সংঘটিত করে, তাদেরও হামলা এবং হত্যার টার্গেট হয়েছিল আওয়ামী লীগ নেতা, কর্মী ও হিন্দু নারী-পুরুষ। যাদের ’৭১ থেকে জামায়াত এবং পরে বিএনপি বার বার হামলার টার্গেট করেছে। এই বর্বরতার সঙ্গে মিল রয়েছে ’৭১-এর যুদ্ধকালীন ও ২০০১-এর নির্বাচনকালীন হত্যা, ধর্ষণ, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ, দেশত্যাগে, গ্রামত্যাগে বাধ্য করার মতো আওয়ামী লীগ ও হিন্দুবিরোধী সন্ত্রাসী ও বর্বর ঘটনা। ৬. ২০১৩-তে নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে জাতিসংঘের দূত ও অন্য সব দেশের দূতদের দ্বারা প্রস্তাবিত নির্বাচনকালীন সরকার পদ্ধতি প্রত্যাখ্যান করে খালেদা ও পুত্র তারেক। সবরকম ফর্মুলাই তারা প্রত্যাখ্যান করে। নির্বাচনের সময় খালেদা-তারেকের নির্দেশে আবারও সারাদেশে চালানো হয় ধ্বংসযজ্ঞ, হত্যা ও লুণ্ঠন। শুধু পাঁচ শ’ প্রাইমারী স্কুল পুড়িয়ে ছাই করা হয়, ধর্ষিত হয় হিন্দু নারী, ধ্বংস হয় তাদের ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের বাড়িঘর, ব্যবসা, দোকান, পুকুর, ক্ষেতের ফসল। এরপর ২০১৪-১৫-এর ডিসেম্বর, জানুয়ারিতে খালেদা দু’মাস যাবত বনানী অফিসে অবস্থান নিয়ে সারাদেশে নির্দেশ দিয়ে চালায় পেট্রোলবোমা ছুড়ে নিরীহ চালক ও নিরীহ বাস, ট্রাক, রেলযাত্রী হত্যা। যে পৈশাচিকতার হাত থেকে নারী, পুরুষ, তরুণ, কিশোর-কিশোরী, শিশু কেউই রেহাই পায়নি। প্রায় দুই শ’ মানুষ প্রাণ হারায় আগুনে পুড়ে এবং পাঁচ শ’র বেশি বাস, ট্রাক জ্বলে ছাই হয়ে যায়। রেহাই পায়নি রেল, অটোরিকশাও। সংক্ষেপে এই হলো জিয়া, জামায়াত-শিবির নেতা-কর্মী, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের সম্মিলিত রাষ্ট্রবিরোধী, আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, আদিবাসী এবং শেখ হাসিনাবিরোধী অপতৎপরতা। এরপর সংঘটিত হলো বিদেশী খ্রীস্টান হত্যা। তাই সম্প্রতি খালেদার দেয়া বক্তব্য- হাসিনাবিহীন নির্বাচন চাই- এর নিগূঢ় অর্থ কি তা ভাল করে জনগণকে ভেবে দেখতে হবে। কেননা, খালেদার প্রত্যেক বক্তব্যের পরপরই অতীতে সে অনুযায়ী কোন একটা অপঘটনা ঘটতে দেখা গেছে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও উন্নয়নের শত্রু কারা তা বোঝার জন্য ওপরের ঘটনাগুলো যথেষ্ট। সুতরাং, এবার ওরা কিছু করার আগে খালেদা, তারেকের মামলাগুলো দ্রুত শেষ করে এ দুই খল, অপরাজনীতিককে রাজনীতির মাঠ থেকে নিষিদ্ধ করতে হবে। পাশাপাশি জামায়াতকে দল হিসেবে ’৭১-এ যুদ্ধাপরাধ সংঘটনের জন্য নিষিদ্ধ করতে হবে। সব জেলার প্রধান যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করতে হবে এবং তাদের সবার সম্পদ বাজেয়াফত করতে হবে। এ ছাড়া সংখ্যালঘু নিরাপত্তা আইন প্রণয়ন করে দেশের হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রীস্টান, আদিবাসীদের জানমাল, ভূসম্পত্তি, জীবিকা, ধর্মচর্চার অধিকার রক্ষার জন্য কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে, যাতে দখলকারীদের বিচার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান সম্ভব হয়। এটি করা না হলে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রে সুশাসন প্রতিষ্ঠা সুদূরপরাহত থেকে যাবে।
×