ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

বহুমাত্রিক আয়োজনে উদযাপিত জাতীয় চলচ্চিত্র দিবস

প্রকাশিত: ০৬:০১, ৪ এপ্রিল ২০১৬

বহুমাত্রিক আয়োজনে উদযাপিত জাতীয় চলচ্চিত্র দিবস

স্টাফ রিপোর্টার ॥ হারিয়ে গেছে বাংলা চলচ্চিত্রের সেই সোনালি সময়। তাই বলে একেবারে থেমেই যায়নি পথচলা। এখনও প্রেক্ষাগৃহের আলো-আঁধারিতে বসে ছবি দেখার আনন্দ উপভোগ করেন অনেকেই। তাই আবার ফিরে আসবে বাংলা ছবির সেই সুদিন- এমন প্রত্যাশায় উদ্্যাপিত হলো জাতীয় চলচ্চিত্র দিবস। দিবসটি উপলক্ষে রাজধানীজুড়ে ছিল বহুমাত্রিক আয়োজন। রবিবার সকাল থেকেই উৎসবমুখর হয়ে ওঠে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএফডিসি)। শোভাযাত্রা বের করার পাশাপাশি সকাল থেকে রাত অবধি ছিল নানা আনুষ্ঠানিকতা। যদিও এসব আনুষ্ঠানিকতার ঢাকাই ছবির নামী শিল্পীদের উপস্থিতি ছিল নগণ্য। বিএফডিসির পাশাপাশি দিবসটি উদ্্যাপনে বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত পোস্টার প্রদর্শনী, আলোচনা এবং চলচ্চিত্রের গানের সুরে নাচে সজ্জিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। চৈত্রের সকালে বিএফডিসির জহির রায়হান মিলনায়তনে সামনে একঝাঁক পায়রা উড়িয়ে অনুষ্ঠানমালার উদ্বোধন করেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় চলচ্চিত্র দিবস উদযাপন কমিটির চেয়ারম্যান নায়ক রাজ রাজ্জাক, সংসদ সদস্য ও তথ্য মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সুকুমার রঞ্জন ঘোষ এমপি, তথ্যসচিব মরতুজা আহমেদ, বিটিভির মহাপরিচালক এসএম হারুনুর রশীদ, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সৈয়দ হাসান ইমাম, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তপন কুমার ঘোষ, চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির মহাসচিব মুশফিকুর রহমান গুলজার, চলচ্চিত্র অভিনয়শিল্পী জাভেদসহ চলচ্চিত্রের কলাকুশলীরা। সকলের সম্মিলনে বের করা হয় বর্ণিল শোভাযাত্রা। হাতি-ঘোড়াসমেত দেশীয় বাদ্যের তালে তালে বিএফডিসি থেকে যাত্রা শুরু করে সোনারগাঁও হোটেল হয়ে আবার বিএফডিসিতে গিয়ে শোভাযাত্রাটি শেষ হয়। এতে চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি, চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি, চলচ্চিত্র প্রযোজক ও পরিবেশক সমিতি, চলচ্চিত্র চিত্রগ্রাহক সমিতি ও চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংগঠন ও ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় চলচ্চিত্র অধ্যয়ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা অংশ নেয়। এবারের দিবসটির প্রতিপাদ্য ছিল ‘ডিজিটাল চলচ্চিত্র সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত’। উদ্বোধনী বক্তব্যে তথ্যমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৫৭ সালের ৩ এপ্রিল চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মাইলফলকের সূচনা করেছিলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই দিনটিকে জাতীয় চলচ্চিত্র দিবস ঘোষণা করেন। বাংলা ছবির সুদিন ফিরে আনার প্রত্যাশা ব্যক্ত করে বলেন, চলচ্চিত্র উন্নয়নের সব ধরনের কার্যক্রম চালানো হবে। এরই মধ্যে চলচ্চিত্র প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ক্রয় করা হয়েছে। ডিজিটাল পদ্ধতিতে চলচ্চিত্র নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। বর্তমানের জনপ্রিয় চলচ্চিত্রশিল্পীদের অনুপস্থিতিতে ক্ষোভ করে নায়ক রাজ রাজ্জাক বলেন, আমরা একটা চলচ্চিত্র দিবস পেয়ে অনেক আনন্দিত হয়েছি। কিন্তু আজ যা ঘটল, তা রীতিমতো দুঃখজনক। এমন একটি দিবসের আনুষ্ঠানিকতায় এই সময়ের জনপ্রিয় তারকাদের কারও দেখা পেলাম না! এই কিংবদন্তি চলচ্চিত্রশিল্পী আরও বলেন এখন যাঁরা চলচ্চিত্রের কাজ করছেন তাঁদের অবস্থা এমন যে চলচ্চিত্রে কয়দিন কাজ করেই চলে যাবেন। এভাবে চললে এঁদের কেউ মনে রাখবে না। ৮ নম্বর শূটিং ফ্লোরে অনুষ্ঠিত হয় সেমিনার। ফিল্ম আর্কাইভ এবং বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএফডিসি) যৌথ উদ্যোগে ‘দর্শক সঙ্কট ও বিলুপ্তির পথে প্রেক্ষাগৃহ : বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের সমস্যা ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ সিনেমা ও টেলিভিশন ইনস্টিটিউটের প্রধান নির্বাহী এবং বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভের মহাপরিচালক ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন। প্রধান অতিথি ছিলেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। বিএফডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক তপন কুমার ঘোষের সভাপতিত্বে সেমিনারে বিশেষ অতিথি ছিলেন তথ্য সচিব মরতুজা আহমদ। আলোচনায় অংশ নেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সৈয়দ হাসান ইমাম, চলচ্চিত্র পরিচালক মসিহ উদ্দীন শাকের, ম. হামিদসহ চলচ্চিত্র শিল্পী-কলাকুশলীবৃন্দ। বিএফডিসির অন্যান্য অনুষ্ঠানমালার মধ্যে ছিল চলচ্চিত্র মেলা, চলচ্চিত্র প্রদর্শনী, স্থিরচিত্র প্রদর্শনী, স্মরণিকা প্রকাশ এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এফডিসির জহির রায়হান কালার ল্যাব প্রেক্ষাগৃহে ছিল চলচ্চিত্র প্রদর্শনী। জাতীয় চলচ্চিত্র দিবস ঘিরে নানা সাজে সাজানো হয় বিএফডিসিকে। ফিল্ম আর্কাইভের উদ্যোগে বাংলাদেশের বিখ্যাত সিনেমার পোস্টার-ব্যানার দিয়ে সাজানো হয়েছে পুরো এফডিসি চত্বর। প্রবেশদ্বার থেকে এফডিসির ভেতর অন্দর মহল পর্যন্ত সাজানো হয় সিনেমার পোস্টার দিয়ে। ছুটির ঘণ্টা, সূর্যদীঘল বাড়ি, চাঁদনী, সুজন সখি, অভিসার, সারেং বৌ, ফুলের মালা, তালাশ, গোলাপী এখন ট্রেনেসহ সোনালী সময়ের ছবির সঙ্গে ছিল চলমান সময়ের নির্মিত চলচ্চিত্রের পোস্টার। এই সংগঠনের সভাপতি জিডি পিন্টু বলেন, এই স্থিরচিত্র প্রদর্শনীতে চেষ্টা করেছি ফেলে আসার দিনগুলোর দুর্লভ ছবিগুলোকে ধরে রাখতে। বিশেষ করে এমন কিছু ছবি আছে সিনেমামোদীদের পেছনে ফিরে নিয়ে যায়। শিল্পকলা একাডেমির নাট্যকলা ও চলচ্চিত্র বিভাগের ব্যবস্থাপনায় একাডেমির জাতীয় সঙ্গীত ও নৃত্যকলা কেন্দ্রের নিচে উন্মুক্ত মঞ্চে বর্ণিল সাজে আয়োজন করা হয় বাংলা চলচ্চিত্রের পোস্টার ও প্রয়াত চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্বদের প্রতিকৃতি প্রদর্শনী। নন্দিত সজ্জার এ প্রদর্শনীতে উপস্থাপিত হয় বরেণ্য চলচ্চিত্র পরিচালক ও চলচ্চিত্রাভিনয় শিল্পীদের নানা অভিব্যক্তির প্রতিকৃতি। সঙ্গে স্বর্ণযুগের কালজয়ী বাংলা সিনেমার নজরকাড়া পোস্টার। সন্ধ্যায় একাডেমির সঙ্গীত ও নৃত্যকলা কেন্দ্র মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা ও চলচ্চিত্রের গানের অনুষ্ঠান। ১০ এপ্রিল পর্যন্ত প্রতিদিন সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার ইন্টারন্যাশনাল কালচারাল আর্কাইভে জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র নিয়ে ফিল্ম আর্কাইভের সঙ্গে যৌথভাবে চলচ্চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। আজ সোমবার দেখানো হবে মুরাদ পারভেজ পরিচালিত ‘বৃহন্নলা’। প্রদর্শনীর দ্বিতীয় দিন আজ সোমবার দেখানো হবে গাজী রাকায়েত রচিত ‘মৃত্তিকা মায়া’। শেষ দিন ১০ এপ্রিল দেখানো হবে নন্দিত কথাশিল্পী হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত তৌকির আহমেদ পরিচালিত ছবি ‘দারুচিনি দ্বীপ’। এছাড়াও এ আয়োজনে দেখানো হবেÑ নাসির উদ্দিন ইউসুফ নির্মিত ছবি গেরিলা, উত্তরের সুর, গহীনে শব্দ ও মনপুরা শিরোনামের ছবিগুলো। বিভিন্ন উন্মুক্ত এই প্রদর্শনীতে এসব চলচ্চিত্র দেখতে সিনেমাপ্রেমীদের কোন দর্শনী বা পাস লাগবে না।
×