ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আপাতত ব্যাংকিং কমিশন গঠন করা হচ্ছে না ॥ অর্থমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ৪ এপ্রিল ২০১৬

আপাতত ব্যাংকিং কমিশন গঠন করা হচ্ছে না ॥ অর্থমন্ত্রী

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ আপাতত ব্যাংকিং কমিশন গঠন করা হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনি আরও বলেছেন, রাজস্ব আয় বাড়াতে আগামী বাজেটে ইলেক্ট্রনিক ক্যাশ রেজিস্ট্রার (ইসিআর) বাধ্যতামূলক করা হবে। গত কয়েক বছর ধরে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ইলেক্ট্রনিক মেশিনের কথা বলে আসলেও এর তেমন প্রসার হচ্ছে না। এবার এটি বাধ্যতামূলক করা হবে। রবিবার সচিবালয়ে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) সঙ্গে এক প্রাক-বাজেট মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা জানান। ইতোপূর্বে ব্যাংকিং খাতের সংস্কার ও উন্নয়নে চলতি ২০১৫-১৬ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় একটি ব্যাংকিং কমিশন গঠনের কথা বলা হয়েছিল। অর্থমন্ত্রীর সভাপতিত্বে এবং ইআরএফ সভাপতি সাইফ ইসলাম দিলালের সঞ্চালনায় বৈঠকে অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব মাহবুব আহমেদ, ইআরডি সচিব মেজবাহ উদ্দিন, এনবিআর চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান, সদস্য ফরিদউদ্দিনসহ অর্থ মন্ত্রণালয়, এনবিআরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সভায় ইআরএফ সদস্যরা আগামী বাজেটের জন্য বেশকিছু প্রস্তাবনা দেন। অর্থমন্ত্রী বলেন, ব্যাংকিং কমিশন করার এখন কোন ইচ্ছা নেই আমার। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, বিশেষ করে ব্যাংকিং খাতে অনেকগুলো ঘটনা-টটনা ঘটে গেছে, সেখানে যেসব ইনকোয়ারি হচ্ছে, সেগুলো লিমিটেড ইনকোয়ারি। এটার ফল-টল দেখা দরকার। তারপর ঠিক করা যাবে ব্যাংকিং কমিশন করার প্রয়োজন আছে কি-না বা থাকলে কিভাবে সেটাকে কাস্ট করা যায়। তিনি আরও বলেন, অনেক হৈচৈ করে ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং এ্যাক্টটা (এফআরএ) পাস করলাম। কিন্তু এখন পর্যন্ত এফআরএ কাউন্সিল গঠন করা সম্ভব হয়নি। আশা করছি, আগামী বছর এটা বাস্তবায়িত হবে। রাজস্ব আদায় বাড়াতে আগামী বাজেটে প্রতি উপজেলায় কর অফিস স্থাপনের ওপর গুরুত্বারোপ করে মতবিনিময় সভায় উপস্থিত রাজস্ব বোর্ড কর্মকর্তাদের উদ্দেশে অর্থমন্ত্রী বলেন, ৪৯৫টি উপজেলায় কর অফিস স্থাপনে চেয়ারম্যানদের সময়সীমা বেঁধে দিয়ে একটা কর্মসূচী দাও। এ সময় এনবিআরের পক্ষ থেকে জানানো হয়, বর্তমানে ৮৬টি উপজেলায় কর অফিস আছে। তবে এগুলোকে সক্রিয় করা প্রয়োজন। এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, কৃষি ও কৃষকের ওপর কোন কর নেই। কৃষি উপকরণ আমদানির ওপর কর আছে, আবার নেই-ও। অপর এক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাংলাদেশের জন্য জুলাই-জুন পর্যন্ত সময়টিই অর্থবছর হিসেবে সর্বোত্তম, এপ্রিল-মার্চ নয়। জুলাইয়ে অর্থবছর শুরু হলে প্রকল্পের অর্থছাড় করতে করতে তিন মাস লেগে যায়। তার পর অক্টোবর থেকে মার্চ-এপ্রিল পর্যন্ত কাজ করা যায়। সরকারের পক্ষ থেকে উদ্যোক্তা তহবিল গঠনের প্রস্তাবের বিরোধিতা করে মুহিত বলেন, উদ্যোক্তা তহবিল সরকারের কোনমতেই থাকা উচিত নয়। এটা করার জন্য অন্যান্য পার্টি আছে। অর্থমন্ত্রী বলেন, বাজেটে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের ওপর সরকার বরাবরই জোর দিয়ে আসছে। কারিগরি শিক্ষাটাকে প্রশিক্ষণ বলা উচিত নয়। এটা আসলে বৃত্তিমূলক শিক্ষা। প্রশিক্ষণ হচ্ছে যেটা বিএমইটি দিয়ে থাকে। আমরা বিএমইটির প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা আরও বাড়িয়েছি। কারণ এখান থেকে পাস করে যারা বেরোয়, তারা বেকার থাকে না। তাদের অনেক দাম। যারা বাইরে যায় তারাও প্রচুর টাকা-পয়সা পাঠায়। আয় বৈষম্য প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, আয় বৈষম্য বাড়ছে, এতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু এটা এমন পর্যায়ে যাচ্ছে না। এটা যাতে কোন সামাজিক সমস্যা বা বিদ্রোহের পর্যায়ে না যেতে পারে সেদিকে আমরা সব সময় সচেষ্ট আছি। আয় বৈষম্য কিছুটা বাড়বেই। আমরা সব সময় চেষ্টা করি আয় বৈষম্য কমিয়ে আনতে। দেশের পুঁজিবাজার নিয়ে মুহিত বলেন, আইপিওতে বিনিয়োগকারীদের ব্যাপক সাড়া পাওয়া যায়। উদ্যোক্তারা বাজার থেকে যত টাকাই তুলতে চান না কেন সমস্যা নেই। আইপিওতে কয়েকগুণ বেশি আবেদন পড়ে। এ কারণে কোম্পানিগুলো বোনাসে শেয়ার বিক্রি করে। কিন্তু আইপিও শেষে বাজারে এলেই সেগুলোর বোনাস শেষ হয়ে যায়। দাম অনেক কমে যায়। অর্থমন্ত্রী বলেন, পুঁজিবাজারের উন্নয়নের জন্য সরকার নীতিগত সহায়তা দিয়ে যাবে। তবে বাজারে সরাসরি কোন হস্তক্ষেপ করা হবে না। অর্থ সচিব মাহবুব আহমেদ বলেন, জীবনমানের উন্নয়নে প্রবৃদ্ধি দরকার। আর প্রবৃদ্ধির জন্য বিনিয়োগ দরকার। বেসরকারী খাতের বিনিয়োগ ২২ শতাংশ স্থির থাকলেও ভলিউম বেড়েছে। তবে কাক্সিক্ষত মাত্রায় বিনিয়োগ হচ্ছে না। এজন্য পাবলিক ইনভেস্টমেন্ট বাড়ানো দরকার। তিনি আরও বলেন, বিদ্যমান বিনিয়োগে গতি এনে প্রবৃদ্ধি বাড়াতে হবে। এনবিআর চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান বলেন, অব্যাহতির সংস্কৃতি পরিহারের চেষ্টা করছি। রাজস্ববান্ধব সংস্কৃতি চালুর চেষ্টা চলছে। অর্থপাচারের বিষয়ে তিনি বলেন, মানি লন্ডারিং ধরতে কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। এজন্য অর্থ মন্ত্রণালয়, দুদক, বাংলাদেশ ব্যাংক এবং এনবিআর সমন্বিতভাবে কাজ করছে।
×