ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

রাজস্ব আয় বাড়াতে শুল্ক স্টেশনগুলো প্রযুক্তিনির্ভর করার উদ্যোগ

প্রকাশিত: ০৪:০৬, ৪ এপ্রিল ২০১৬

রাজস্ব আয় বাড়াতে শুল্ক স্টেশনগুলো প্রযুক্তিনির্ভর করার উদ্যোগ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ আমদানি-রফতানিতে অবদান বাড়ছে শুল্ক স্টেশনের। কিন্তু বেশিরভাগ শুল্ক স্টেশন অবকাঠামো, প্রযুক্তিনির্ভর না হওয়ায় যোগাযোগের ক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে রয়েছে। স্টেশনের মধ্যে যেসব স্টেশন বেশি অবদান রাখছে অগ্রাধিকারভিত্তিতে সেসব স্টেশনের অবকাঠামো, প্রযুক্তি স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এজন্য একটি প্রকল্প নেয়া ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে এ সংক্রান্ত চিঠি দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এনবিআর। এনবিআরের একটি সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে। সূত্র জানায়, সীমান্ত পথে প্রতিবেশী ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে রেল, নৌ ও সড়কপথে বাংলাদেশের ১৮১টি শুল্ক ও এলসি (লেটার অব ক্রেডিট) স্টেশন রয়েছে। এর মধ্যে বেশিরভাগ শুল্ক ও এলসি স্টেশন অকার্যকর রয়েছে। যেসব স্টেশন কার্যকর রয়েছে সেগুলোর বেশিরভাগেই আমদানি রফতানি হয় অনেক বেশি। এসব শুল্ক স্টেশনের মধ্যে বেশিরভাগেই নেই নিজস্ব ভৌত অবকাঠামো, মালখানা, প্রযুক্তি সুবিধা। এছাড়া এসব স্টেশনে যোগাযোগ ব্যবস্থাও নাজুক। অপরদিকে এসব স্টেশনের পার্শ্ববর্তী দেশের শুল্ক স্টেশনের একই অবস্থা। আমদানি-রফতানি দু’দেশের মধ্যে বৃদ্ধি পেলেও এসবের কারণে সময়ক্ষেপ, আর্থিক ক্ষতি বাড়ছে। সময় মতো ও দ্রুত পণ্য আমদানি-রফতানিতে ব্যাঘাতে ক্ষতি হয় রাজস্বের। এসব বিবেচনা করে এসব স্টেশনের কার্যক্রমকে আরও গতিশীল করতে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সূত্র আরও জানায়, আমদানি-রফতানি যেসব স্টেশনে বেশি হয় সেগুলোর মধ্যে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রকল্পের অধীনে ১৫-১৬টি স্টেশনে এসব সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করা হবে। আমদানি-রফতানি ও রাজস্ব অনুযায়ী তালিকা করা হবে। তবে বেনাপোল, সোনামসজিদ, হিলি, শেওলা, বুড়িমারী, কক্সবাজারসহ বেশ কয়েকটি এক্ষেত্রে এগিয়ে রয়েছে। সূত্র জানায়, এসব স্টেশনের শুধু বাংলাদেশ অংশে ভৌত অবকাঠামো, প্রযুক্তি, যোগাযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করলে তেমন ফলাফল পাওয়া যাবে না। ভারত বা মিয়ানমার অংশের স্টেশনেও একই সুবিধা বৃদ্ধি করতে হবে। দু’দেশের সীমান্ত অংশেও এসব সুবিধা বৃদ্ধি করতে দু’দেশের সঙ্গে আলোচনা করবে এনবিআর। সূত্র আরও জানায়, এসব করতে দু’দেশের মধ্যে শুল্ক স্টেশনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বসে আলোচনা করতে শীঘ্রই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেবে এনবিআর। এছাড়া সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়, নৌ মন্ত্রণালয় এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে চিঠি দেবে এনবিআর। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে তা সম্পন্ন করা হবে। এনবিআর’র একজন দ্বিতীয় সচিব (কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট) নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রকল্প নেয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, শুল্ক স্টেশনে সুবিধা বৃদ্ধি করা হলে রাজস্ব আয় অনেক বেড়ে যাবে। আমদানি-রফতানিতে পণ্য নিরাপত্তা, ফাঁকি অনেক কমে আসবে, মনিটরিং সহজ হবে। যেসব স্টেশনের তালিকা করা হচ্ছে সেসব স্টেশনের ভারত অংশে অবকাঠামো উন্নয়নে সে দেশের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে শীঘ্রই বৈঠক করা হবে বলে তিনি জানান। এ বিষয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান বলেন, এনবিআরের কাজে গতিশীলতা আনার যে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে এরই অংশ হিসেবে শুল্ক স্টেশনে প্রযুক্তি নির্ভর অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ হাতে নেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত ও নেপাল (বিবিআইএন) এ চারটি দেশ উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতামূলক সম্পর্ক গড়ে তুলেছে। চারটি দেশের মধ্যে প্রধানতম যোগাযোগ ব্যবস্থা হবে স্থলবন্দর নির্ভর। ভবিষ্যতে চারটি দেশের মধ্যে বাণিজ্য, ব্যবসায়িক যোগাযোগ বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে সেজন্য এনবিআর থেকে সকল শুল্ক স্টেশনকে সক্রিয় করার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। চেয়ারম্যান বলেন, শুল্ক স্টেশনের প্রযুক্তিনির্ভর আধুনিক অবকাঠামো নির্মিত হলে আমদানি-রফতানি অনেক বেড়ে যাবে। অর্থনৈতিক গতি বাড়বে, বাড়বে রাজস্ব।
×