ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

চাহিদা অনুযায়ী বরাদ্দ মিলছে না

প্রকাশিত: ০৪:০৫, ৪ এপ্রিল ২০১৬

চাহিদা অনুযায়ী বরাদ্দ মিলছে না

হামিদ-উজ-জামান মামুন ॥ চাহিদা অনুযায়ী বরাদ্দ পাচ্ছে না নয়টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ। মূল এডিপির তুলনায় সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীতে বরাদ্দের ঘাটতি থাকছে ১১ হাজার ৭১৪ কোটি ১৮ লাখ টাকা। চাহিদা থাকলেও অতিরিক্ত বরাদ্দ না দেয়ার বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানান, অর্থবছর শেষ হতে আর খুব বেশি সময় বাকি নেই। মাত্র দুই মাস সময় হাতে রয়েছে। এর মধ্যে অতিরিক্ত বরাদ্দ দিলে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো ব্যয় করতে পারবে না। পরবর্তীতে দখা যাবে অর্থবছর শেষে সার্বিকভাবে সংশোধিত এডিপি বাস্তবায়ন হার কমে যাবে। এসব বিবেচনা করে বাস্তবতার নিরিখে সতর্ক অবস্থানে থেকে বরাদ্দ দিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন। এ বিষয়ে সংশোধিত এডিপি তৈরির দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা বিভাগের সচিব তারিক-উল-ইসলাম জনকণ্ঠকে বলেন, মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো খসড়া বরাদ্দ চূড়ান্ত করা পর্যন্ত আমাদের যেভাবে বোঝাতে পেরেছে আমরা সেভাবেই বাস্তবতার ভিত্তিতে খসড়া বরাদ্দ দিয়েছি। তবে এই বরাদ্দ আরও বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভায় যদি সংশ্লিষ্টরা বোঝাতে সক্ষম হন তাহলে হয়ত আরও বাড়তে পারে। কেননা সেটি সবচেয়ে বড় ফোরাম। পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, নয় মন্ত্রণালয়ের সংশোধিত এডিপিতে অতিরিক্ত বরাদ্দ দিয়েও চাহিদা অনুযায়ী ঘাটতি অর্থায়ন হচ্ছে, স্থানীয় সরকার বিভাগ প্রথম কল নোটিস অনুযায়ী অতিরিক্ত চাহিদা রয়েছে সরকারী তহবিলের তিন হাজার ৬৮ কোটি টাকা। গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত চাহিদা রয়েছে তিন হাজার ৩০৮ কোটি টাকা। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের অতিরিক্ত চাহিদা রয়েছে এক হাজার ১৩৭ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত চাহিদা রয়েছে ৮৮৬ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অতিরিক্ত চাহিদা রয়েছে ৯৭২ কোটি ৩০ লাখ টাকা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত চাহিদা রয়েছে ৬৯২ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের অতিরিক্ত চাহিদা রয়েছে ৬৮৬ কোটি ২৪ লাখ টাকা। নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত চাহিদা রয়েছে ৭৩২ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের অতিরিক্ত চাহিদা হচ্ছে ২৪৫ কোটি ৫১ লাখ টাকা। সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরে মূল এডিপির আকার ৯৭ হাজার কোটি টাকা ছিল। যা প্রায় সাড়ে নয় শতাংশ কমিয়ে সংশোধিত এডিপির আকার দাঁড়াচ্ছে ৮৮ হাজার কোটি টাকা করার সুপারিশ করে অর্থ বিভাগ। এ পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের নিজস্ব তহবিল অংশে ৩ হাজার ৬৬০ কোটি টাকা কমিয়ে ৫৮ হাজার ৮৪০ কোটি টাকা করা হচ্ছে। বিদেশী সাহায্য প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকা কাটছাঁট করে ২৯ হাজার ১৬০ কোটি টাকা করা হচ্ছে। সংশোধিত এডিপিতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাচ্ছে পরিবহন খাত। পরিবহন খাতে সংশোধিত এডিপির ২২ শতাংশ বা ১৯ হাজার ৬৭৪ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়ার প্রস্তাব করা হচ্ছে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাচ্ছে বিদ্যুত খাত। মাতারবাড়ী কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র, ঘোড়াশালের দুটি ইউনিটের রিপাওয়ারিং, পল্লী বিদ্যুতের ১৫ লাখ গ্রাহককে সংযোগ প্রদানসহ বড় কয়েকটি প্রকল্প বাস্তবায়নে এ খাতে ১৫ হাজার ৩০০ কোটি টাকা দেয়ার প্রস্তাব চূড়ান্ত করেছে পরিকল্পনা কমিশনের শিল্প ও শক্তি বিভাগ। তৃতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাচ্ছে শিক্ষা ও ধর্ম খাত। শিক্ষার প্রসার ও গুণগত মান বৃদ্ধির লক্ষ্যে এ খাতে নয় হাজার ৮৮২ কোটি টাকা বরাদ্দ প্রস্তাব করা হচ্ছে। পরিকল্পনা কমিশনের প্রস্তবিত খসড়া অনুযায়ী, ভৌত পরিকল্পনা, পানি সরবরাহ ও গৃহায়ণ খাতে সাড়ে নয় হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে। গ্রামীণ অর্থনীতিতে গতিশীলতা আনা ও অধিক কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে পল্লী উন্নয়ন ও পল্লী প্রতিষ্ঠান খাতে ৮ হাজার ২১০ কোটি টাকা দেয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে। স্বাস্থ্য, পুষ্টি, জনসংখ্যা ও পরিবার কল্যাণ খাতে সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকা এবং কৃষি খাতে চার হাজার ৩৪ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করছে পরিকল্পনা কমিশন। সূত্র জানায়, গত অর্থবছরে (২০১৪-১৫) ৮০ হাজার ৩১৫ কোটি টাকার এডিপি অনুমোদন দেয়া হয়েছিল। পরবর্তীতে কাটছাঁট নিয়ে অর্থ এবং পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের মধ্যে টানাপোড়েন সৃষ্টি হয়। অর্থমন্ত্রণালয় ব্যাপকভাবে এডিপি আকার কমাতে চাইলেও তাতে রাজি হয়নি পরিকল্পনা মন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল। পরবর্তীতে এনইসি বৈঠকে ৭৫ হাজার কোটি টাকার সংশোধিত এডিপি অনুমোদন দেয়। এতে মূল এডিপি থেকে বরাদ্দ কমে যায় ৫ হাজার ৩১৪ কোটি টাকা। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) সর্বশেষ হিসেবে চলতি অর্থবছরে কাটছাঁটের মূল কারণ এডিপি বাস্তবায়নে গতিহীনতা। প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) ৩৪ শতাংশ অর্থ বা ৩৩ হাজার ২০৮ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। গত অর্থবছরে একই বাস্তবায়নের হার ছিল ৩৮ শতাংশ। এর আগে ২০০৭-০৮ অর্থবছরে এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছিল ৩২ শতাংশ।
×