ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

‘ব্যাংক’ শব্দ ব্যবহার করে প্রতারণা করছে ৭ সমবায় প্রতিষ্ঠান

প্রকাশিত: ০৪:০৪, ৪ এপ্রিল ২০১৬

‘ব্যাংক’ শব্দ ব্যবহার করে প্রতারণা করছে ৭ সমবায় প্রতিষ্ঠান

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ নেই ব্যাংকিং লাইসেন্স। তারপরও ‘ব্যাংক’ শব্দ ব্যবহার করে দীর্ঘদিন ধরেই গ্রাহকের সঙ্গে প্রতারণা করে যাচ্ছে সাতটি সমবায় প্রতিষ্ঠান। শুধু তাই নয়, সমবায় অধিদফতরের অধীনে পরিচালিত এসব প্রতিষ্ঠান কোন আইনই মানছে না। আইনে তিন মাসের মধ্যে ব্যাংক শব্দ সংশোধনের কথা বলা হলেও সেটি পরিচালিত হয়নি। আবার বেআইনীভাবে ঢাকার বাইরে একাধিক শাখা এবং ব্যাংকিং কার্যক্রমও পরিচালনার অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। এর সত্যতাও পেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এজন্য এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং আইনে ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। রবিবার বিকেলে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর সঙ্গে এক সমন্বয় সভায় এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানানো হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর ফজলে কবির। সভায় বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ, মাইক্রোরেগুলিটরি অথরিটি, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জ কমিশন, জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ এ্যান্ড ফামর্সের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। সভায় আলোচনার ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র শুভঙ্কর সাহা বলেন, ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী, ব্যাংকিং লাইসেন্স ব্যতীত কোন কোন সমবায় প্রতিষ্ঠান ব্যাংক শব্দ ব্যবহার করতে পারে না। কিন্তু কিছু প্রতিষ্ঠান তা উপেক্ষা করে ব্যাংক শব্দ ব্যবহার করছে। তিনি বলেন, সমবায় প্রতিষ্ঠানগুলো সমবায় অধিদফতরের নিয়ন্ত্রণাধীন। ফলে এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সরাসরি বাংলাদেশ ব্যাংক কোন ব্যবস্থা নিতে পারে না। এজন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সমবায় অধিদফতরকে অবৈধভাবে ব্যাংক শব্দ ব্যবহারকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। বিদ্যমান ব্যাংক কোম্পানি আইনে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন ছাড়া ব্যাংক শব্দটি ব্যবহারের সুযোগ নেই। সমবায় সমিতির সংশোধিত আইনেও ব্যাংক শব্দ ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। এ বিষয়ে সংশোধিত সমবায় সমিতি আইন ৯ এর ৩ ধরায় বলা হয়েছে, নিবন্ধিত বা নিবন্ধনের জন্য প্রস্তাবিত কোন সমবায় সমিতির নামের সঙ্গে কমার্স, ব্যাংক, ইনভেস্টমেন্ট, লিজিং, ফাইন্যান্সিং প্রভৃতি শব্দ ব্যবহার করা যাবে না। ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা, চেক ইস্যু ও আন্তঃশাখা লেনদেন করতে পারবে না। একটির বেশি শাখা থাকবে না। তবে কোন সমবায় সমিতি তাদের নামে ব্যাংক শব্দ নিয়ে নিবন্ধিত হয়ে থাকলে তা তিন মাসের মধ্যে সংশোধন করে নিবন্ধককে অবহিত করতে হবে। এ আইনের বিধান লঙ্ঘন করলে অনধিক সাত বছরের কারাদ- বা ১০ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দ-ে দ-িত হবে। আইনে বলা হলেও সেটি মান হচ্ছে না। বৈঠক সূত্রে জানা যায়, সমবায় অধিদফতরের হিসাবে দি ঢাকা মার্কেন্টাইল কো-অপারেটিভ ব্যাংক লিমিটেড, আজিজ কো-অপারেটিভ কমার্স এ্যান্ড ফাইন্যান্স ক্রেডিট লিমিটেড (সাবেক এসিসিএফ ব্যাংক), দি ঢাকা আরবান কো-অপারেটিভ ব্যাংক লিমিটেড, স্মল ট্রেডার্স কো-অপারেটিভ ব্যাংক লিমিটেড, মার্চেন্ট কো-অপারেটিভ ব্যাংক লিমিটেড, ক্রিসেন্ট কো-অপারেটিভ মাল্টিপারপাস সোসাইটি ব্যাংক লিমিটেড এবং আদর্শ সমবায় ব্যাংক লিমিটেড এই সাতটি প্রতিষ্ঠান এখনও তাদের নামের শেষে বেআইনীভাবে ব্যাংক শব্দ ব্যবহার করে সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করছে। সারাদেশে অফিস খুলে সদস্য সংগ্রহের নামে অবৈধ ব্যাংকিং ও ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। এজন্য এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং আইনে ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। শুভঙ্কর সাহা বলেন, এমএফআই লিঙ্কেজের মাধ্যমে যে ঋণটুকু কৃষিতে যায় সেটা আগে ১৩ শতাংশ সুদে দেয়া হতো। কিন্তু তা অনেক আগেই কমিয়ে ১১ শতাংশে নিয়ে আসা হয়েছে। এনজিওগুলো এটা বাস্তবায়ন শুরু করেছে, ২৫ শতাংশ ইতোমধ্যেই এটা করেছে। আবার এসব ঋণ নেয়ার ক্ষেত্রে জীবন বীমা-কমপলসরি সেভিংসের নামে যে টাকাগুলো রাখতে বলা হয় সেটা পরিহার করতে বলা হয়েছে। তিনি বলেন, আর্থিক খাতের যেসব রেগুলেটর আছে তাদের নিয়ে আজকে একটি সমন্বয় সভা হয়েছে, প্রতি তিন মাস পর পরই এ সভা হয়। বন্ড মার্কেটের ডেভেলপমেন্ট নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এ মার্কেটটা আমাদের দেশে সেভাবে উন্নয়ন হয়নি। বন্ডের ক্ষেত্রে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি ভূমিকা আছে। এজন্য প্রথমদিকে কর মওকুফের যদি সুবিধা দেয়া হয়, সেটি ভাল। এ ব্যাপারে এর আগে আমরা এনবিআরকে পত্র দিয়েছিলাম। সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। শুভঙ্কর সাহা বলেন, আইডিআরএ একটি সার্কুলারে বলা ছিল, বীমা কোম্পানি তাদের মোট জামানতের ২ শতাংশের বেশি কোন একক আর্থিক প্রতিষ্ঠানে এবং একাধিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে সবমিলিয়ে ১৫ শতাংশের বেশি জমা রাখতে পারবে না। তবে ব্যাংকের ক্ষেত্রে এ সীমাটা আরেকটু বেশি। এখানে সীমাটা নিয়ে পুনর্গঠনের প্রস্তাব ছিল, সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এছাড়া সিম রি-রেজিস্ট্রেশনের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এর মাধ্যমে আমাদের মনে হয় মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস নিরাপদ হবে। এর অগ্রগতির বিষয়ে আমরা বিটিআরসির কাছে জানতে চেয়েছিলাম, তাদের একজন প্রতিনিধি উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও আসতে পারেননি। আমরা এ বিষয়ে পত্র দেব হয়তবা। সভায় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে বীমা কোম্পানির বিনিয়োগে সীমা নির্ধারণ করে দেয়ায় আপত্তি জানায় বাংলাদেশ লিজিং এ্যান্ড ফিন্যান্স কোম্পানিজ এ্যাসোসিয়েশন। এ ব্যাপারে সংগঠনটির সভাপতি মফিজুদ্দিন সরকার বলেন, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে বীমা কোম্পানির বিনিয়োগে সীমা নির্ধারণ করে দেয়ায় যে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে তা যৌক্তিক নয়। তাই আমরা এ ব্যাপারে আমাদের বক্তব্য তুলে ধরেছি। একইসঙ্গে বন্ড মার্কেট সচল করার প্রস্তাব এসেছে, আমরা বলেছি এজন্য ট্যাক্স কমানো দরকার। আর্থিক খাতে সাইবার নিরাপত্তা জোরদারে নির্দেশনার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর ফজলে কবির আমাদের জোর দিতে বলেছেন, আমরা জানিয়েছি যে এ ব্যাপারে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
×