ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নীল কুমারের বুকে চাষাবাদ

প্রকাশিত: ০৩:৫৭, ৪ এপ্রিল ২০১৬

নীল কুমারের বুকে চাষাবাদ

স্টাফ রিপোর্টার, কুড়িগ্রাম ॥ ফুলবাড়ী উপজেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত খরস্রোতা নীল কুমার নদ এখন মরা খাল। নদীর বুকে চলছে চাষাবাদ। বেদখল হয়ে যাচ্ছে নদের তলদেশ। কালের বিবর্তনে নীল কুমার নদের তলদেশ পলি পড়ে ভরাট হয়ে যাওয়ায় দু’পাড় কেটে করা হচ্ছে ফসলের চাষ। মাঝিপাড়ার ওমল চন্দ্র জানান, ১০ থেকে ১২ বছর আগেও নদে পানি থাকত। প্রচুর মাছ পাওয়া যেত এ নদে। কিন্তু এখন শুকনো মৌসুমে বোরোসহ নানান ফসলের চাষ হচ্ছে নদের বুক জুড়ে। জেলে সম্প্রদায়ের অনেকেই শুকনো মৌসুমে রিকসা, ঠেলাগাড়ি চালিয়ে ও দিন মজুরের কাজ করে সংসার চালায়। হাসেম আলী জানান, ৩০/৩৫ বছর আগেও নীল কুমার নদটি ছিল গভীর ও খরস্রোতা। ফুলবাড়ীর ব্যবসা-বাণিজ্যের পণ্য আনানেয়া হয়েছে নদীপথ দিয়ে। ফুলবাড়ী সদর, গংগারহাট, সদ্য বিলুপ্ত দাসিয়ার ছড়া ছিটমহল, খড়িবাড়ী বাজার, নেওয়াশী বাজার ও পাখিরহাট প্রভৃতি বড় বড় হাটবাজারে এই নদেই আনানেয়া করা হত মালপত্র। উৎপাদিত ধান, পাট, সরিষা, ডাল, গরু, মহিষ ও হাঁস-মুরগি নীল কুমার নদ দিয়ে ধরলা হয়ে কাঁঠালবাড়ী, যাত্রাপুর, কুড়িগ্রাম সদর এবং চিলমারী বন্দরসহ দেশের বিভিন্ন হাটবাজারে যেত। উত্তরবঙ্গের বিখ্যাত সুফি-সাধক ও ওলি মাওলানা কেরামত আলী এই নদের পথেই আসাম যাওয়া-আসা করত । ইসলাম প্রচার ও ভক্ত-মুরিদের বাড়ি বাড়ি ঘুরতেন তিনি। এলাকাবাসী জানান, নদ থেকে উঠানো হচ্ছে বালু। শ্যালো মেশিনের সাহায্যে একশ্রেণীর মানুষ এ কাজ দিনরাত করছে। ফলে প্রাকৃতিক ভারসাম্য বিনষ্ট হচ্ছে। গংগারহাট সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল কাদের বলেন, আসাম হয়ে নীল কুমার নদ ফুলবাড়ী উপজেলা দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে ধরলা নদীতে মিলিত হয়েছে। ভারতে ফারাক্কা বাঁধ দিয়ে একতরফা পানি প্রত্যাহারের ফলে নীল কুমার নদের যৌবন হারায়। নাখারজান সীমান্ত হতে ধনিরাম ধরলার সংযোগ পর্যন্ত পানি নিষ্কাশনের জন্য সংস্কার করা হলে নীল কুমার আবারও তার যৌবন ফিরে পাবে। ফুলবাড়ী উপজেলা কৃষি অফিসার মাহবুবু রশিদ জানান, নীলকুমারসহ অন্যান্য নদীতে প্রায় ৭৫ হেক্টর জমিতে বোরোসহ বিভিন্ন ফসল হয়েছে। এ ব্যাপারে কুড়িগ্রাম সরকারী কলেজের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মীর্জা নাছিরউদ্দিন বলেন, নীল কুমার, ধরলা, তিস্তাসহ জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত নদ-নদী শুকিয়ে যাওয়ায় জীববৈচিত্র্যের ওপর ব্যাপক প্রভাব পড়ছে। প্রকৃতি হারাচ্ছে সৌন্দর্য।
×