ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে নারী শিক্ষা

প্রকাশিত: ০৩:২৭, ৪ এপ্রিল ২০১৬

জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে নারী শিক্ষা

বাংলাদেশ একটি জনবহুল দেশ। জনসংখ্যার ঘনত্বের দিক থেকে এদেশ বিশ্বের অষ্টম স্থানে। অনেকটা গ্রামনির্ভর বাংলাদেশের অর্থনীতির চালিকাশক্তি এদেশের ভূমি ব্যবস্থা। ভূমিনির্ভর গ্রামীণ অর্থনীতির সিংহভাগ অর্জন আসে কৃষিখাত থেকে। জনসংখ্যার উর্ধগতির সঙ্গে ভূমির স্বল্পতা এদেশের একটি বাস্তব চিত্র। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা কৃষি জমির ওপর যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে তার প্রভাব এসে পড়ে পুরো অর্থনীতিতে। সারাদেশে হতদরিদ্র এবং নিম্নবিত্তদের কারণে গড়ে ওঠা অপরিকল্পিত বস্তিসমূহ জনসংখ্যা বিস্ফোরণের অন্যতম কারণ। শহরগুলোতে জনসংখ্যার চাপ এবং আর্থ-সামাজিক এবং বাসস্থানের সমস্যা প্রকট হয়ে ওঠে। পরিবেশের ভারসাম্য বিঘিœত হয়। সুস্থ-স্বাভাবিক সমাজ গড়ার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে। সুতরাং জনসংখ্যা আমাদের বলা যায় বড় একটি জাতীয় সমস্যা। এ সঙ্কট মোকাবেলা করতে না পারলে ভবিষ্যতে দেশ আরও বিপর্যয়ের মুখে পড়ার আশঙ্কা আছে। জনসংখ্যা সমস্যার অন্যতম কারণ হিসেবে বলা যেতে পারে শিক্ষার অভাব, বাল্যবিবাহ, নারীর অসম সামাজিক অবস্থান, সচেতনতার ঘাটতি ইত্যাদি। এমন সমস্যা নিয়ন্ত্রণে আনতে হলে নারী শিক্ষা বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে। জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেকই নারী। প্রাইমারি থেকে মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা বলতে গেলে সমানই। কিন্তু স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর পর্যায়ে নারী শিক্ষার হার ক্রমান্বয়ে কমতে থাকে। কারণ বাল্যবিবাহ কিছুটা কমলেও ১৮ থেকে ২০ বছরের মধ্যে অনেক মেয়ের বিয়ে হয়ে যায়। সুতরাং উচ্চশিক্ষায় নারীদের সংযুক্ত হওয়া অত্যন্ত জরুরী। কারণ উচ্চশিক্ষায় নারীদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পেলে স্বাভাবিকভাবেই বাল্যবিবাহ কমে যাবে, যা সরাসরি প্রভাব ফেলবে জনসংখ্যা রোধে। কারণ শিক্ষা মানুষকে সচেতন করে, সমস্যা অনুধাবন করতে সহায়ক শক্তি হয়, সর্বোপরি প্রতিকারের যথার্থ পথ খুঁজে পেতেও দেরি হয় না। সুতরাং জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে নারী শিক্ষা একটি প্রয়োজনীয় পূর্বশর্ত। একজন সচেতন, শিক্ষিত মা শিশুর জন্মদান থেকে শুরু করে লালন-পালন, তাকে গড়ে তোলা এবং তার বেড়ে ওঠাতে সবচাইতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারে। নেপোলিয়নের ভাষায় একজন শিক্ষিত মা-ই একটি সুশিক্ষিত জাতি উপহার দিতে পারে। তার ওপর শিক্ষিত মেয়েরা বিভিন্ন পেশায় নিজেদের সম্পৃক্ত করার সুযোগ পায়। কর্মজীবী মহিলাদের বেশকিছু সময় পেশার ক্ষেত্রে ব্যয় করতে হয়। ফলে সংসারে সময় দেয়া কিছুটা কমে যায়। এছাড়া শিক্ষিত হওয়ার কারণে সুস্থ, স্বাভাবিক ও উন্নত সমাজ গড়ার ক্ষেত্রে সজাগ দৃষ্টি দেয়াও সম্ভব হয় নারীর পক্ষে। সমাজের উন্নয়নের পথে অন্তরায় বাধা-বিঘœগুলো চিহ্নিত করে এর প্রতিকারের উপায় বের করাও খুব একটা কঠিন হয় না। সুতরাং জনসংখ্যার মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা মোকাবেলায় নারী শিক্ষা অপরিহার্য। শুধু শিক্ষাই নয়, সমাজের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের সমান অংশগ্রহণ দেশের সার্বিক অগ্রযাত্রায় সক্রিয় ভূমিকা রাখতে পারে। সমাজের অর্ধাংশ নারী জাতিকে পেছনে ফেলে সমাজ পরিপূর্ণভাবে এগিয়ে যেতে পারে না। শিক্ষা প্রতিটি নাগরিকের মৌলিক অধিকার। নারী-পুরুষ সবাইকে এ শিক্ষা অর্জন করতে হবে দেশ ও সমাজের সার্বিক উন্নয়নের স্বার্থে।
×