ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

জাকারিয়া স্বপন

মানুষ পুলিশকে তথ্য দিতে ভয় পায় কেন?

প্রকাশিত: ০৩:২৪, ৪ এপ্রিল ২০১৬

মানুষ পুলিশকে তথ্য দিতে ভয় পায় কেন?

প্রত্যেক বাড়ি-ওয়ালাকে পুলিশ একটি ফরম ধরিয়ে দিয়ে গেছে। সেখানে ভাড়াটিয়ার তথ্য দিতে বলা হয়েছে। একটি সাদা কাগজে অনেক তথ্য চাওয়া হয়েছে। এটা আসলেই কোন থানা থেকে চাওয়া হয়েছে কি না সেটার ছাপ নেই। এটা কোন প্যাড কিংবা ছাপানো কাগজে চাওয়া হয়নি। কম্পিউটারের প্রিন্ট ফটোকপি করে এই তথ্য যোগাড় করা হচ্ছে। সেখানে ভাড়াটিয়ার নাম, পিতার নাম, জন্ম তারিখ, বৈবাহিক অবস্থা, বর্তমান ঠিকানা, স্থায়ী ঠিকানা, ধর্ম, পেশা ও প্রতিষ্ঠান/কর্মস্থলের নাম-ঠিকানা, শিক্ষাগত যোগ্যতা, মোবাইল নম্বর, ই-মেইল আইডি, জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর, পাসপোর্ট নম্বর (যদি থাকে), জরুরী যোগাযোগ, গৃহকর্মীর নাম, স্থায়ী ঠিকানা, জাতীয় পরিচয়পত্র ও মোবাইল নম্বর এবং ড্রাইভারের নাম, স্থায়ী ঠিকানা, জাতীয় পরিচয়পত্র ও মোবাইল নম্বর। সঙ্গে সবার পাসপোর্ট সাইজ ছবি। তথ্যগুলো একই সঙ্গে প্রয়োজনীয় এবং স্পর্শকাতর। তথ্যগুলো পুলিশের জন্য প্রয়োজনীয়। কোন্ বাসায় কে থাকেন, তার কাজের বুয়ার পরিচয় কি, ড্রাইভারের পরিচয় কি- এগুলো জানা থাকলে অনেক সময় অপরাধী ধরতে সুবিধা হয় (যদি তথ্যগুলো সঠিক থাকে)। এই তথ্যগুলো পুলিশকে আরও শক্তিশালী করবে তাতে কোন সন্দেহ নেই। একই সঙ্গে এমন স্পর্শকাতর এবং ব্যক্তিগত তথ্য পুলিশকে দিতে মানুষের এক ধরনের অস্বস্তি কাজ করছে বলে দেখতে পাচ্ছি। সাংবাদিক বন্ধুদের আড্ডায়, কর্পোরেট জগতে, সাধারণ দোকানি থেকে রিক্সাওয়ালা- সবাই এটা নিয়ে এক ধরনের নেতিবাচক চেহারা বানিয়ে বসে আছেন। তাদের মূল চিন্তার বিষয় হলো, পুলিশকে এই তথ্যগুলো দিয়ে বিশ্বাস করা যায় কি না? অনেকেই হয়ত আমার এই প্রশ্নটির সঙ্গে একমত হবেন না। তারা হয়ত মানুষের সঙ্গে মিশে দেখেননি। কিন্তু আমি যাদের সঙ্গে কথা বলেছি, তাদের সবাই এটা নিয়ে এক ধরনের ভয়ের কথা জানিয়েছেন। আমরা যদি একটি সমস্যাকে এড়িয়ে জোর করে এর সমাধান করতে চাই সেটাতে খুব ভাল ফল হয় না। সবচেয়ে ভাল উপায় হলো, বিষয়টিকে এড্রেস করা। একবার কি পুলিশের কোন উর্ধতন অফিসার ভেবেছেন কেন মানুষ এই অস্বস্তি অনুভব করছে? ॥ দুই ॥ পুলিশ জনগণের বন্ধুÑ এটাই পুলিশের সেøাগান। কিন্তু সেই বন্ধুর কাছে মানুষ তথ্য দিতে ভয় পাচ্ছে কেন? তাহলে কি জনগণ আর পুলিশের মধ্যে সেই বন্ধুত্বটি নেই? এই প্রশ্নটি যখন একজন সাংবাদিক বন্ধুকে করেছিলাম সে পাল্টা প্রশ্ন করে বলল, কখনই কি ছিল? সেই বন্ধুত্ব কি কখনও তৈরি করা হয়েছে? নাকি সেটা পুলিশের সাইনবোর্ডেই রয়ে গেছে? আজ পুলিশের একটি গোলটেবিল বৈঠকে পুলিশের একজন উর্ধতন কর্মকর্তা তার বক্তৃতায় বললেন, ‘আমি ছাত্রাবস্থায় পুলিশকে ঠোলা বলতাম এবং ঢিল ছুড়তাম। কিন্তু এখন পুলিশে কাজ করতে এসে বুঝতে পারছি কত সীমাবদ্ধতার ভেতর দিয়ে কাজ করতে হয়।’ পুলিশ অফিসার সত্যি কথাটি বলেছেন। আমরা যারা পুলিশকে ‘ঠোলা’ বলি তারা পুলিশের কষ্টের জীবনটাকে দেখতে পাইনি। ঢাকা শহরে চলতি পথে প্রতিটি মোড়ে কর্তব্যরত পুলিশকে দেখে আমার মায়াই লাগে। দিন, রাত, রোদ, বৃষ্টি, সময়ে-অসময়ে দাঁড়িয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ডিউটি করছেন। হাত তুলে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করছেন। আমি ভাবি, তাদের কি পায়ে ব্যথা হয় না? হাতে বার বার সিগন্যাল দিতে গিয়ে কি হাতটি ব্যথা হয়ে যায় না? নাকি আমরা ধরেই নিয়েছি তারা রোবট। এটাই তো তার কাজ! কিন্তু যারা এই লেখাটি পড়ছেন, আপনাদের কাউকে বললে কি একই কাজটি করতে চাইবেন? আমরা কি সহজেই এমন কঠিন শারীরিক পরিশ্রম করতে চাইব? আমাদেরই ভাই-বোনরা এই পুলিশে কাজ করছে। এই রোদ-বৃষ্টিতে দাঁড়িয়ে রাস্তার নিয়ন্ত্রণ করে যাচ্ছে। আর যারা ট্রাফিক পুলিশে নেই তারাও দিন-রাত কোন না কোন মামলার পেছনে ছুটছেন। কিন্তু কেউ কি কখনও থানায় গিয়ে দেখেছেন কি বিশ্রী পরিবেশে তারা কাজ করেন? আপনার অফিসটি কি তার চেয়ে খারাপ? আমরা বেশিরভাগ মানুষ দেখি পুলিশ ট্রাক ডাইভারের কাছ থেকে চাঁদা নেয়, কিংবা কোন মানুষকে ভয় দেখিয়ে কিংবা ফাঁসিয়ে দিয়ে বখরা নেয়। কথায় বলে, বাঘে ধরলে এক ঘা, আর পুলিশে ধরলে আঠার ঘা। পুলিশ সম্পর্কে এমন একটি নেতিবাচক বিষয় আমাদের সমাজে যে নেই তা অস্বীকার করছি না। কিন্তু এটাই তো পুরো পুলিশের চরিত্র নয়, কিংবা তাদের কাজের অংশ নয়। বাংলাদেশের পুলিশ সম্পর্কে ঘাঁটতে গিয়ে আমি যা কিছু ইন্টারনেটে পেলাম তার কিছু অংশ এখানে তুলে দিচ্ছি। প্রথমেই বলে নেয়া ভাল যে, ১৬ কোটি মানুষের দেশে পুলিশের সংখ্যা মাত্র এক লাখ ৭০ হাজারের মতো। অর্থাৎ প্রায় প্রতি ১০০০ মানুষের জন্য একজন পুলিশ রয়েছে, কিংবা ১ লাখ মানুষের জন্য ১০০ জন পুলিশ। আরও ৫০০০০ পুলিশ নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যাবে, ভারতের অবস্থাও ততটা ভাল নয়। প্রতি ১ লাখ মানুষের জন্য ১২৩ জন পুলিশ রয়েছে। সিঙ্গাপুরে ৫৫ লাখ মানুষের জন্য রয়েছে প্রায় ৪০ হাজার পুলিশ (অর্থাৎ ১ লাখ মানুষের জন্য ৭২৫ জন পুলিশ)। আমাদের পরিচিত দেশ ইংল্যান্ডে প্রতি ১ লাখ মানুষের জন্য রয়েছে ২২৬ জন, জার্মানিতে ২৯৬ জন, থাইল্যান্ডে ৩৪৪ জন, আমেরিকাতে ৩৫২ জন, মালয়েশিয়াতে ৩৭০ জন। অর্থাৎ আমাদের চেনা দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের পুলিশের সংখ্যা সবচেয়ে কম এবং আমি মোটামুটি নিশ্চিত যে, সুযোগ-সুবিধা এবং অন্যান্য রিসোর্সের দিক থেকেও বাংলাদেশের পুলিশের রিসোর্স সবচেয়ে কম। তাদের বেতন, গাড়ির সুবিধা, বাড়ির সুবিধা, নিরাপত্তা, অস্ত্র ইত্যাদিও কম। তবে বর্তমানে বাংলাদেশে পুলিশ কর্মীদের কল্যাণের জন্য বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, মার্কেট তৈরি করছে। তাতে হয়ত তাদের সুবিধা অন্যান্য দেশের চেয়ে বেশি হলেও হয়ে যেতে পারে। তবে সেই বিষয়ে পুরো তথ্য ছাড়া মন্তব্য করা সঠিক হবে না। পাশাপাশি ট্রেনিং এবং লোকবলের মান নিয়ে কথা না-ই বললাম। এই ছোট লোকবল নিয়ে এত বড় একটি দেশের মানুষকে (যাদের সিংহভাগই আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল নন) ম্যানেজ করা যে অসম্ভব কাজ তাতে কোন সন্দেহ নেই। তার ওপর রয়েছে রাজনৈতিক কর্মকা-। পুলিশের একটি বড় সময় কাটে রাজনৈতিক কর্মকা-কে সামাল দিতে। সাধারণ মানুষের পেছনে দৌড়ানোর সময় তাদের কম। সব কিছু মিলিয়ে একজন ভাল অফিসারই জানেন কত কষ্ট করে তাদের দায়িত্ব পালন করতে হয়। কিন্তু এই কষ্টের পরেও যখন সাধারণ মানুষ পুলিশকে বিশ্বাস করে না, তাতে সেই সৎ নির্ভীক পুলিশ অফিসাররা এটাকে কিভাবে নেন, আমার খুব জানতে ইচ্ছে করে। মন খারাপ করা ছাড়া তাদের হয়ত এই বিষয়ে করার আর কিছুই থাকে না। ॥ তিন ॥ পুলিশ যে ফরমটি আমাদের হাতে ধরিয়ে দিয়েছে তার মূল উদ্দেশ্য হলো জঙ্গীদের খুঁজে বের করা এবং নিয়ন্ত্রণ করা। কোন্ বাড়িতে কে আছেন এটা জানতে পারলে, কিংবা সব বাড়িওয়ালা যদি পুলিশকে এই তথ্য দিতে বাধ্য থাকেন তাহলে এক ধরনের ফিল্টারিং প্রক্রিয়া চালু থাকে বৈকি। দেশের মানুষ নিরাপদ থাকুক- এটা চায় না এমন মানুষ কি পাওয়া যাবে? সবাই বিষয়টি বুঝতে পারছে; কিন্তু তারপরও মানুষ ভয় পাচ্ছে। তবে পুলিশ এই ভয় ভাঙ্গানোর জন্য যে কাজগুলো করতে পারত তার কিছু বিষয় এখানে উল্লেখ করলাম। তথ্য সংগ্রহ প্রক্রিয়া : ফটোকপি করা যেই ফরমটি দিয়ে তথ্য চাওয়া হয়েছে সেটা প্রফেশনালি করা নয়। একটি দেশের পুলিশ মানুষের ব্যক্তিগত তথ্য চাইবে, আর সেটা যেনতেন একটা ফটোকপি করা কাগজে পূরণ করে জমা দিতে হবে- এটা মগের মুল্লুক ছাড়া আর কিছুই নয়। এমনকি ফরমটিতে পুলিশের কোন লোগো পর্যন্ত ব্যবহার করা হয়নি। এটা থেকে মানুষ বিষয়টি সিরিয়াসলি নেবে না। এই দেশের মানুষ ভোটার আইডি কার্ডের তথ্য সংগ্রহের নমুনা দেখেছে, আদমশুমারি করার নমুনা দেখেছে। পাশাপাশি একটা বড় অংশ দেশ-বিদেশের খবর রাখেন। সেগুলো অনেক বেশি প্রফেশনাল। পুলিশ এই ক্ষেত্রে আরও যতœশীল হতে পারত। এখানে পুলিশও কিছুটা দায়সারা কাজ করেছে। মানুষ যদি এখানে ভুল তথ্য দেয় তাহলে বলার কিছুই থাকবে না। তাতে মূল উদ্দেশ্য ব্যাহত হবে। জাতীয় পরিচয়পত্র : বাংলাদেশে এখন জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করাটা খুব সুন্দর হয়ে গেছে। এত বড় একটি ফরম হাতে ধরিয়ে না দিয়ে তাদের পরিচয়পত্রের নম্বরটি নিয়ে নিলেই তো হয়। যার জাতীয় পরিচয়পত্র নেই সে কি কোথাও বাড়ি ভাড়া নেবে না? বাংলাদেশে এখন ১০ কোটির ওপর মানুষের ভোটার আইডি আছে। বাকিদের এখনও বয়স হয়নি। এর বাইরে বাড়ি ভাড়াটা নেবে কে? যদি তারপরেও কেউ কেউ থাকে, তাহলে পুলিশ তাদের বিস্তারিত চাইতে পারে। যেমন অনেক বিদেশীর জাতীয় পরিচয়পত্র থাকবে না। তারা পাসপোর্টের ফটোকপি জমা দিতে পারেন। রাজউক এবং সিটি কর্পোরেশনের তথ্যভা-ার : পুলিশকে আলাদা করে ডাটাবেজ তৈরি করতে হবে কেন? যেভাবে হচ্ছে তাতে তো এটা বেশিদিন ধরে রাখা যাবে না। আর এগুলো আপডেট করবে কে? পুরো বিষয়টিই কিছুদিন পর মাঠে মারা যাবে এবং এটার অপব্যবহার হবে। তার চেয়ে কেন রাজউক এবং সিটি কর্পোরেশনের ডাটাবেজ ব্যবহার করা হচ্ছে না? পুলিশকে দিয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে বলানো হোক, তোমরা সিটি কর্পোরেশনের তথ্যগুলো আপডেট করো। এত জায়গায় তথ্য দিতে গেলে তো মানুষ হয়রানির শিকার হবে। ওয়েবসাইটে তথ্য নেয়া : বর্তমান ডিজিটাল বাংলাদেশের যুগে এভাবে একটি যেনতেন ফরমে মানুষ তথ্য দেবে কেন? এই তথ্য নিয়ে যদি আপনি অন্য কিছু করেন? মানুষকে এত রদ্দিমাল ভাবার কারণটা কি? মানুষের প্রতি একটু সম্মান দেখালে কি পুলিশের কাজটা সফল হয় না? নাকি পুলিশের কাজই হলো হুমকি-ধমকি দিয়ে করানো? ভাবটা এমন যে, ‘এই, দিতে বলেছি দে।’ বর্তমান সময়ে সিটি কর্পোরেশন তার প্রতিটি বাড়ির এবং ভাড়াটিয়ার তথ্য ডিজিটাল ফরম্যাটে সংগ্রহ করতে পারে। পুলিশ খুব সহজেই সেই তথ্য ব্যবহার করতে পারে। বর্তমান প্রযুক্তি এত সুন্দর আর সহজলভ্য হয়ে গেছে যে, বাড়ির ম্যাপসহ ঠিকানা এবং ছবি- সবকিছুই ওয়েবসাইটের সঙ্গে যুক্ত করে দেয়া যায় এবং সেই তথ্য খুব সহজে ব্যবহারও করা যায়। এখন যেভাবে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে এগুলো ফাইলবন্দী হলে কে এগুলো থেকে খুঁজে তথ্য বের করবে? কম্পিউটারের ডাটাবেজে থাকলে খুব সহজেই সেটা করা সম্ভব। এমনকি বাড়িওয়ালা কাউকে বাড়ি ভাড়া দেয়ার আগে নিজেও সেটা পরীক্ষা করে নিতে পারবেন। বিটিআরসির ফোনবুক : বাংলাদেশ টেলিকম রেগুলেটরি কমিশন (বিটিআরসি) বাংলাদেশের সকল ফোন ব্যবহারকারীর একটি ডাটাবেজ তৈরি করে ফেলছে। আর ২/৩ মাসের মধ্যেই এটা পুরোপুরি সচল হয়ে যাবে। বাংলাদেশে এমন কোন ফোন থাকবে না যা কারও সঠিক নামে রেজিস্ট্রেশন করা নেই। পুলিশ কিন্তু ওই ডাটাবেজটাও ব্যবহার করতে পারে। তাতে মানুষকে এমন সন্দেহজনক অবস্থায় পড়তে হতো না। ড্রাইভারদের ডাটাবেজ : বাংলাদেশে বৈধ উপায়ে গাড়ি চালাতে ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রয়োজন। বিআরটিএ কিন্তু সেই লাইসেন্স দিয়ে থাকে। পুলিশের নিজস্ব ডাটাবেজের সঙ্গে সেই ড্রাইভিং লাইসেন্সের ডাটাবেজ যুক্ত করা যেতে পারে। একইভাবে কাজের বুয়াদের তথ্য রাখাটাও অসম্ভব কিছু না। এই মুহূর্তে খুব জটিল মনে হচ্ছে। কিন্তু একটা পরিকল্পনা নিয়ে এগোলে পুরো দেশের মানুষের তথ্য হাতের মুঠোয় নিয়ে আসা সম্ভব। মূল কথা হলো, পুলিশকে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে। ॥ চার ॥ যে কোন দেশের পুলিশকে যদি শক্তিশালী করতে হয় তাহলে তাদের তথ্য দিয়ে সমৃদ্ধ করতে হবে। কোন একটি ঘটনা ঘটার পর পুলিশ অন্ধের মতো আসামি হাতড়ে বেড়াবে, আর আমরা পুলিশের কাছে ভাল সেবা চাইব- সেটা হবার নয়। আমি জানি, পাঠকরা মনে মনে ভাবছেন এই পুলিশ দিয়ে কিছু হবে না। কিন্তু আমার কথা হলো, এই পুলিশ দিয়েই তো হতে হবে। আমরা এখন আর পুলিশ পাব কোথায়? সিঙ্গাপুর থেকে নিয়ে আসব? জার্মানি থেকে নিয়ে আসব? আমেরিকা থেকে নিয়ে আসব? সেটা তো হবার নয়। এই পুলিশ দিয়েই আমাদের দেশকে চালাতে হবে। তাদের সঠিক দিকে চালিত করতে হবে। এই কথার সঙ্গেই চলে আসে সরকারের সদিচ্ছার কথা। সবাই বলবেন, সরকার চায় না পুলিশ প্রফেশনালি চলুক। এটা ঠিক, একটি সার্ভিস ক্যাডারকে সরকারের কথা শুনতে হয়। কিন্তু পুলিশ ছাড়া কি আমাদের আর কোন বিকল্প আছে? ভাল প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসার ছাড়া আমাদের বিকল্প নেই। বর্তমান সময়ে যে গতিতে বিশ্ব এগিয়ে যাচ্ছে, সমাজ যেভাবে জটিল আকার ধারণ করছে, সেখানে সঠিক দৃষ্টিভঙ্গির পুলিশ ছাড়া আমাদের সমাজ ভেঙ্গে পড়বে। জঙ্গীবাদ এবং অরাজক অবস্থার উত্থান হবে। তবে হ্যাঁ, পুলিশ যদি তার ক্ষমতার অপব্যবহার করে তার একটা ব্যালেন্সও প্রয়োজন আছে। একই সঙ্গে পুলিশকেও পুরো বিষয়টি একটি কম্প্রিহেনসিভ সমাধান হিসেবে দেখতে হবে। মানুষকে অমানুষের মতো না দেখে তাদের ভাবতে হবে কিভাবে জনগণের বন্ধু হয়ে কাজ করা যায়। মানুষ যদি একবার পুলিশকে বিশ্বাস করে তখন তারাই নিজেদের দায়িত্বে সকল তথ্য দিয়ে পুলিশকে সহায়তা করবে। তারা যদি নিজেদের মানুষের আস্থার জায়গাটায় আনতে না পারেন তাহলে তারাই দেখে যাবেন তাদের সন্তানরা কতটা অনিরাপদে এই মাটিতে বসবাস করছে। একজন দায়িত্বশীল পুলিশ কর্মকর্তা সেটা দেখে যেতে চান কি না, সেটা তারাই ভাল বলতে পারবেন। ২ এপ্রিল ২০১৬ লেখক : তথ্য প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ এবং সম্পাদক, প্রিয়.কম ুং@ঢ়ৎরুড়.পড়স
×