ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয় র‌্যাগিং নয়, সৌহার্দের সম্পর্ক

প্রকাশিত: ০৬:৪৬, ৩ এপ্রিল ২০১৬

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয় র‌্যাগিং নয়, সৌহার্দের সম্পর্ক

বিশ^বিদ্যালয়ে নবীনদের ক্ষেত্রে উচ্ছ্বাসের পাশাপাশি বিরাজ করে শঙ্কা। একজন শিক্ষার্থী যখন বিশ^বিদ্যালয় জীবনে সবে পা রাখে, চারপাশের পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেয়ার পাশাপাশি থাকে বিশ^বিদ্যালয়ের ‘সিনিয়র-জুনিয়র’ নামক শব্দের আতঙ্ক। দক্ষিণ এশিয়ায় বিষয়টি আরও দূর এগিয়ে গেছে। শুধুমাত্র আমাদের পাশর্^বর্তী দেশ ভারতে প্রতিবছর অনেক নবীন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করে এই ‘সিনিয়র-জুনিয়র’-এর মানসিক ও শারীরিক চাপ সহ্য করতে না পেরে। যেটাকে এক কথায় বলে ‘র‌্যাগিং’। তবে এ ধারা থেকে সরে এসে নিজেরাই নবীন শিক্ষার্থীদের বরণ করে নিয়ে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত রাখছে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। অন্যান্য বিশ^বিদ্যালয়ে যখন নবীনকে প্রথমদিকে সিনিয়রদের ভয়ে তটস্থ থাকতে হয়, তখন এই বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ব্যস্ত নানাবিধ আয়োজনে নবীনদের বরণ করে নিতে। গত জানুয়ারির ১০ তারিখে বিশ^বিদ্যালয়ের ওরিয়েন্টেশনের পরপরই নবীন শিক্ষার্থীদের নিয়ে জানুয়ারির ২৪-৩০ স্পোর্টস উইকের আয়োজন এবং ফেব্রুয়ারির প্রথমে ‘বিজনেস ফ্যাস্টিভাল’-এর আয়োজন করে ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থীরা। যাতে করে আসলে সিনিয়র-জুনিয়রের সম্পর্কের তিক্ততা বুঝতেই পারেনি নবীনরা। তবে এই আয়োজন থেমে নেই। ২০১৫/১৬ সেশনের (বিভাগের ১৮তম ব্যাচ) শিক্ষার্থীরা প্রথম থেকেই যেন মুখরিত হয়ে আছে বিভাগের সবার আন্তরিকতায়। ১৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা সময় করে এরই মাঝে অনানুষ্ঠানিকভাবে বরণ করে নেয় এদের। ধারাবাহিকতায় মার্চের ১৫ তারিখে এদের বরণ করে নেয় বিভাগের ১৬তম ব্যাচ। শাসন নয়, বরং ভালবাসায় পরিবারের সদস্যদের আপন করে নেয়ার চেয়ে আনন্দের দ্বিতীয়টি কি আছে এমনটিই জানালেন ১৬তম ব্যাচের ছাত্র সাইফ। ক্লাস-পরীক্ষার ফাঁকে সময় হয়ে উঠছিল না ব্যবসায় প্রশাসন পরিবারের নতুন সদস্যদের সঙ্গে বসার। অবশেষে আসে সে মাহেন্দ্রক্ষণ। ১৫ মার্চ বেলা বারোটা বাজতেই নবীন-প্রবীণের পদচারণায় মুখরিত শাবির সুউচ্চ শহীদ মিনার। মিনিট দশেকের মধ্যেই সংখ্যাটা হয়ে দাড়াল শ’য়ের কাছাকাছি। শহীদ মিনারের বিশালাকার স্থাপনার র‌্যালিতে গোল করে বসা। ‘একই বিভাগে পড়ি, তোমরা আমাদের ছোট ভাইবোন। অথচ মুখোমুখি হলে শুধুমাত্র না চেনার কারণে একে অপরকে এড়িয়ে যাওয়া হয়, যেটা ঠিক না’ বলেই শুরুটা ১৬তম ব্যাচের। একে একে নাম পরিচয় আদান-প্রদান। দেখা গেল, নিজের জেলা এমনকি স্কুল-কলেজেরও অনেক পরিচিত পাওয়া গেল। এরপর ক্যাম্পাসে নবীন হওয়ার অভিজ্ঞতা সংক্ষেপে শেয়ার করল কামাল, সূচনা। ‘নতুন ক্যাম্পাস, কিভাবে পড়বে, কিভাবে পড়লে ভাল রেজাল্ট করা যায়’ জুনিয়রদের সঙ্গে এসব কৌশল শেয়ার করল ব্যাচে তৃতীয় স্থান অর্জনকারী সিনিয়র অনিন্দিতা দে। নতুন পর্যায়ে কি করা উচিত, না করা উচিত, বিভাগে কি করা উচিত এসব নিয়ে কথা বলেন তানহার, হিমেল, মিটু ও প্রতিবেদক নিজে। কথাবার্তার ফাঁকে ফাঁকে নিজেদের নবীন অবস্থায় যেসব সমস্যার সম্মুখীন সিনিয়ররা হয়েছিল সেসব সমস্যায় যাতে জুনিয়ররা না পড়ে সে দিকটাও বলা হলো। একে একে সময় বয়ে যায়। দুপুরে বসা, তাই যদি খাবার না থাকে তাহলে পরিপূর্ণতা পায় না। তবে তার আগে সবাই মিলে তোলা হলো গ্রুপ ছবি। সঙ্গে হালের নতুন ক্রেজ সেলফি তো আছেই। সময়ের কাছে হার মেনে একসময় সবাইকে ফিরে আসতে হয় নিজস্ব গন্তব্যে। তবে আফসোস ঠিকরে পড়ছিল সবার চোখে-মুখেই। ‘আমরা অনেক ভাগ্যবান যে আমরা এই বিভাগে ভর্তি হয়েছি। পরিবার থেকে দূরে থাকার কষ্ট এক নিমিষেই দূর হয়ে যায় যখন সিনিয়ররা দেখা হলে মুচকি একটা হাসি দিয়ে বলে, ‘কিরে ভাই, ভাল আছিস?’ জানালেন নবীন শিক্ষার্থী হবিগঞ্জের রনি তালুকদার। মেহেদী কবীর
×