ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

টাঙ্গাইলে চলন্ত বাসে পোশাককর্মীকে গণধর্ষণ ॥ গ্রেফতার ৩, দু’জন রিমান্ডে

প্রকাশিত: ০৬:০৬, ৩ এপ্রিল ২০১৬

টাঙ্গাইলে চলন্ত বাসে পোশাককর্মীকে গণধর্ষণ ॥ গ্রেফতার ৩, দু’জন রিমান্ডে

নিজস্ব সংবাদদাতা, টাঙ্গাইল, ২ এপ্রিল ॥ টাঙ্গাইলে চলন্ত বাসে এক পোশাককর্মীকে গণধর্ষণ করা হয়েছে। শুক্রবার ভোর পাঁচটার দিকে ‘বিনিময় পরিবহন’ নামে একটি বাসে ধনবাড়ী-মধুপুর সড়কে এই ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। শুক্রবার দুপুরে তাকে টাঙ্গাইল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ওই নারী গাজীপুরের চন্দ্রায় একটি পোশাক প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। পরে পুলিশ রাত সাড়ে ১০টার দিকে গোয়েন্দা পুলিশের সহায়তায় অভিযান চালিয়ে এলেঙ্গা বাসস্ট্যান্ড বাজার থেকে বাসের চালক হাবিবুর রহমান নয়ন, সুপারভাইজার রেজাউল করিম জুয়েল ও হেলপার আব্দুল খালেক ভুটুকে গ্রেফতার করে। পুলিশ বাসটিও আটক করেছে। শুক্রবার গভীর রাতে ধর্ষিতার স্বামী বাদী হয়ে ধনবাড়ি থানায় নয়জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন। এদিকে শনিবার বিকেলে পুলিশ আসামিদের আদালতে হাজির করে রিমান্ড আবেদন করে। টাঙ্গাইল সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক লুনা ফেরদৌস বাসের চালক হাবিবুর রহমান নয়ন ও সুপারভাইজার রেজাউল করিম জুয়েলকে তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এছাড়া বাসের হেলপার আব্দুল খালেক ভুটুর ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী রেকর্ড করেন। এর আগে বিচারক ধর্ষিতা নারীর ২২ ধারায় জবানবন্দী রেকর্ড করেন। ধর্ষিত নারী ও তার স্বামী জানান, বৃহস্পতিবার দুপুরে টাঙ্গাইলের ধনবাড়ীর দত্তবাড়ি গ্রামে তার খালার বাড়ি বেড়াতে যান। শুক্রবার সকালে গাজীপুরের চন্দ্রায় এসে তার ওই প্রতিষ্ঠানে কাজে যোগ দেয়ার কথা ছিল। এ কারণে তিনি শুক্রবার ভোর পাঁচটার সময় ধনবাড়ী বাসস্ট্যান্ডে এসে টিকেট কেটে ‘বিনিময় পরিবহন’ বাসটিতে ওঠেন। ভোরে বাসে অন্য কোন যাত্রী না থাকায় গেট আটকে গাড়িটি ছেড়ে দেয়। কিছুক্ষণ চলার পর বাসের সুপারভাইজার ও দুইজন সহকারী এসে ওই মহিলার আসনের পাশে বসে। এরপর তিনজনে মিলে তাকে কুপ্রস্তাব দেয়। মহিলাটি তাতে সাড়া না দিলে তাকে মুখ চেপে ধরে তারা। ওড়না দিয়ে মহিলাটির মুখ ও হাত-পা বাঁধে তারা। এরপর তাকে জোর করে ধর্ষণ করে তারা। এতে মহিলাটি অজ্ঞান হয়ে পড়ে। চালক এ সময় বাসটি চালিয়ে মধুপুর চলে আসে। মহিলাটির জ্ঞান ফিরলে গাড়ির মধ্যেই তিনি চিৎকার করতে থাকেন। পরে চালক ঢাকার দিকে না গিয়ে গাড়িটি ময়মনসিংহের দিকে চালাতে থাকে। মধুপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে ময়মনসিংহের দিকে প্রায় আধা কিলোমিটার দূরে সকাল সাড়ে সাতটার দিকে মহিলাটিকে মারপিট করে বাস থেকে নামিয়ে দিয়ে তারা বাস নিয়ে পালিয়ে যায়। রাস্তায় মহিলাটির চিৎকার শুনে আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসে। এ সময় তারা ওই নারীর স্বামীর কাছে ফোন করেন। গাজীপুরের চন্দ্রায় শ্রমিক হিসেবে কর্মরত স্বামী মধুপুর এসে তাঁর স্ত্রীকে নিয়ে টাঙ্গাইলে আসেন। পরে দুপুর ১টা ১৫ মিনিটে টাঙ্গাইল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। মহিলার স্বামী বলেন, ‘ঘটনা জানার পর আমি মধুপুরে চলে আসি। এরপর স্ত্রীকে নিয়ে টাঙ্গাইল বাসস্ট্যান্ডে আসি। আমি দীর্ঘদিন টাঙ্গাইলের বিভিন্ন সড়কে গাড়ি চালিয়েছি। বর্তমানে চন্দ্রায় লেগুনা চালাই। আমি বাসস্ট্যান্ডে এসে শ্রমিক নেতাদের কাছে ঘটনা বলি এবং এর সুষ্ঠু বিচার দাবি করি। এ ঘটনার বিচারের দাবিতে টাঙ্গাইল শ্রমিক সংগঠনের কার্যালয়ে গেলে সেখানে ধর্ষকরা সবাই উপস্থিত ছিল। উপস্থিত শ্রমিক নেতারা এটা সাধারণ ঘটনা বলে তারা আমাকে এটা নিয়ে কাউকে কিছু না বলতে নিষেধ করেন। তারা এক লাখ টাকা দিয়ে ঘটনা মিটিয়ে ফেলতে চাপ দেন। এ ঘটনার মীমাংসা করার জন্য আগামী ৬ এপ্রিল দিন ঠিক করে শ্রমিক নেতারা। আমি এ ঘটনার উপযুক্ত বিচার চাই। টাঙ্গাইল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের গাইনী চিকিৎসক রেহেনা পারভীন বলেন, প্রাথমিকভাবে দেখে ধর্ষণের ঘটনা মনে হয়েছে। আলামত সংগ্রহ করে ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হয়েছে। পরীক্ষা হয়ে আসলেই প্রমাণ মিলবে। টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর জানান, ঘটনা শুনেই হাসপাতালে পুলিশ পাঠিয়েছি। ভিকটিমের বক্তব্যের সূত্র ধরেই রাত সাড়ে ১০টার দিকে ঘটনার সঙ্গে জড়িত তিন ধর্ষককে ইতোমধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে। এই চাঞ্চল্যকর মামলা টাঙ্গাইল গোয়েন্দা পুলিশ তদন্ত করবেন বলে তিনি জানান। তাদের সহযোগীদেরও গ্রেফতারের প্রস্তুতি চলছে। ধর্ষণের ঘটনার সঙ্গে জড়িত তিন শ্রমিককেই টাঙ্গাইল জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে বলে জানান জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মীর লুৎফর রহমান লালজু। কিশোরগঞ্জে স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের চেষ্টা ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা কিশোরগঞ্জ থেকে জানান, কিশোরগঞ্জ সদরের বৌলাই ভরাটি গ্রামে তৃতীয় শ্রেণীর স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের চেষ্টার প্রতিবাদে এবং অভিযুক্ত বখাটে শফিককে গ্রেফতারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল, সড়ক অবরোধ ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার দুপুরে কিশোরগঞ্জ-করিমগঞ্জ সড়কের হাবিবনগর এলাকায় শত শত এলাকাবাসী ও স্কুলের শিক্ষার্থীরা এ কর্মসূচী পালন করে। এ সময় বিক্ষুব্ধরা রাস্তায় আগুন জ্বেলে বিক্ষোভ করতে থাকলে রাস্তার দুইদিকে শত শত যানবাহন আটকা পড়ে। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ধর্ষককে গ্রেফতারের আশ্বাস দিলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। গত সোমবার রাতে পাশের বাড়ি টিভি দেখতে যাওয়ার সময় বৌলাই ভরাটি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্রীকে জঙ্গলে নিয়ে ধর্ষণের চেষ্টা করে ভরাটি গ্রামের আব্দুল মালেকের বখাটে ছেলে শফিক (২৮)। ধর্ষণের চেষ্টার ঘটনায় স্কুলছাত্রীর পরিবারের পক্ষ থেকে শফিককে আসামি করে থানায় একটি মামলা হয়েছে। লক্ষ্মীপুরে দুবোনকে গণধর্ষণের মামলা তুলে নিতে হুমকি ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা লক্ষ্মীপুর থেকে জানান, কমলনগরের তোরাবগঞ্জ ইউনিয়নের ইসলামগঞ্জ বাজার এলাকায় দুই বোনকে গণধর্ষণে জড়িতদের এখনও গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। এদিকে মামলা তুলে নেয়ার জন্য বাদীকে হুমকি-ধমকি দিচ্ছে আসামিরা। এতে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে ওই পরিবার। তবে পুলিশ সুপার আ.স.ম মাহাতাব উদ্দিন বলেছেন, শীঘ্রই জড়িতদের গ্রেফতার করা হবে। ধর্ষিতার পরিবারকে নিরাপত্তা দেবে পুলিশ। শনিবার বিকেলে লক্ষ্মীপুর পুলিশ সুপার কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন পুলিশ সুপার। এছাড়া ঘটনাটি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করা এবং ধামাচাপা দেয়ার যে অভিযোগ ইউপি সদস্য আবদুর রহিম দুলালের বিরুদ্ধে উঠছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে তিনি জানান।
×