ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা আইন লঙ্ঘন করেন ॥ আইজি

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ৩ এপ্রিল ২০১৬

রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা আইন লঙ্ঘন করেন ॥ আইজি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজি) একেএম শহীদুল হক বলেছেন, রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরাই আইন লঙ্ঘন করেন। পুলিশ ইচ্ছা করলেই সব কিছু করতে পারে না। পুলিশের অনেক সীমাবদ্ধতা থাকে। শনিবার দুপুরে রাজধানীর হোটেল আমারিতে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উদ্যোগে ‘জননিরাপত্তা বিধানে গণমাধ্যম ও পুলিশের ভূমিকা’ শীর্ষক এ মতবিনিময় সভার তিনি এসব কথা বলেন। এদিকে এই আলোচনাসভায় সাংবাদিকরা জানান, পুলিশ অনেক সময় সরাসরি সাধারণ জনগণের কাছে পৌঁছাতে পারে না। জনগণের কাছে যেতে তারা গণমাধ্যমের সাহায্য নেয়। তাই জনগণের আস্থা অর্জনে পুলিশকে আরও উন্মুক্ত হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তারা। মতবিনিময় সভায় বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুলের পরিচালনায় এতে বক্তব্য রাখেন সাংবাদিক আবেদ খান, বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক নঈম নিজাম, মানবজমিন সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী, সাংবাদিক মুন্নী সাহা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সলিমুল্লাহ খান, সাবেক তথ্য কমিশনার সাদেকা হালিম, নির্বাচন পর্যবেক্ষক নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ, কলাম লেখক সৈয়দ আবুল মকসুদ, ফকির আলমগীর ও পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তারা। সভায় পুলিশের মহাপরিদর্শক একেএম শহীদুল হক বলেন, ভুলত্রুটি পুলিশেরও আছে। পুলিশের সমালোচনা করতে হবে। পুলিশ পরিবর্তনে বিশ্বাসী। গণমাধ্যমের পরামর্শ নিয়ে জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করতে চাই। জঙ্গীবাদ ও মাদকের বিরুদ্ধে পুলিশের অবস্থান শক্ত জানিয়ে আইজি বলেন, ট্রাফিক সিগন্যাল নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব সিটি কর্পোরেশনের। ফলে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে পুলিশ ট্রাফিক সিগন্যাল পরিচালনা করছে। ভাড়াটিয়াদের তথ্য সংগ্রহের বিষয়ে তিনি বলেন, পাবলিক নিরাপত্তার কারণেই ভাড়াটিয়াদের তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। এতে পাবলিক নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। শহীদুল হক বলেন, আমরা রাষ্ট্রের কাছে, জনগণের কাছে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে চাই। একই সঙ্গে জননিরাপত্তা রক্ষায় সবার সহযোগিতা কামনা করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, সব সময় পুলিশ বন্ধু হতে পারে না। যারা আইন মানে তাদের বন্ধু, কিন্তু অপরাধীদের ক্ষেত্রে যম। পুলিশ ও গণমাধ্যমের সম্পর্কটা সম্পূরক। অন্য মানুষের মতো বিপদে পড়লে আমরাও পুলিশের সাহায্য চাই। একে-অপরকে সাহায্য করলে জননিরাপত্তা বিধান করা সম্ভব। সাংবাদিক আবেদ খান বলেন, এটি বুঝতে হবে যে গণমাধ্যম সারা বিশ্বে ওয়াচ ডগের ভূমিকা পালন করে। পুলিশকে নিজেদের আরও উন্মুক্ত করতে হবে। তাদের ওপেননেস দরকার। গণমাধ্যম যদি পুলিশের বাণিজ্যের সংবাদ প্রকাশ করে তবে এর প্রতিবাদ না করে বরং ব্যবস্থা নেয়া উচিত। জনসাধারণের পাশাপাশি প্রভাবশালীদের ক্ষেত্রেও আইনের যথাযথ প্রয়োগের দাবি জানান তিনি। মুন্নী সাহা বলেন, গুরুত্বপূর্ণ নানা বিষয়ে অনেক সময় আপনারা সাংবাদিকদের কিছুই জানান না। সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্নের উত্তর দেন না। অনেক সময় প্রশ্নের সুযোগ দেন না। এসব কারণে অনেকের মধ্যে নানা ধরনের প্রশ্ন আসে। আমি মনে করি, যে কোন ঘটনায় রিপোর্টারদের প্রশ্ন করার সুযোগ দিতে হবে। এভাবেই ভাল পুলিশ এবং ভাল সাংবাদিকের মেলবন্ধন ঘটাতে হবে। অপরাধ নিয়ন্ত্রণে ডিএমপি রাজধানীতে অবস্থানরত অস্থায়ী বাসিন্দা বা ভাড়াটিয়াদের তথ্য সংগ্রহের উদ্যোগকে সমর্থন জানিয়েছেন গণমাধ্যমের ব্যক্তিত্বকে। তবে এই তথ্য দেয়ার কারণে কেউ যাতে হয়রানির শিকার না হয় সেই দিকে লক্ষ্য রাখার পরামর্শ দেন তারা। নাইমুল ইসলাম খান বলেন, তথ্য সংগ্রহের ফর্মটি আমি গবেষণা করে দেখেছি। এই তথ্যের সঙ্গে জাতীয় পরিচয় পত্রের তথ্যের কোন মিল নেই। এসব তথ্য না থাকলে পুলিশের কাজ কঠিন হবে। আমি মনে করি, নিরাপত্তার স্বার্থে নাগরিকদের উচিত পুলিশকে এসব তথ্য সরবরাহ করা। পুলিশের এই উদ্যোগকে আমি পূর্ণ সমর্থন দিচ্ছি। সাংবাদিক আবেদ খান বলেন, আমি উত্তরায় থাকি। এটি একটি সেনসিটিভ এলাকা। এখানে প্রায়ই জঙ্গীদের উৎপাত টের পাওয়া যায়। এ ধরনের সেনসিটিভ জায়গায় ভাড়াটিয়াদের তথ্য সংগ্রহের প্রয়োজন রয়েছে। আমাদের উচিত আন্তরিকতার সঙ্গে পুলিশকে তথ্য সরবরাহ করা। তবে ভাড়াটিয়ার তথ্য সংগ্রহ না করে জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য যাচাই বাছাইয়ের কথা বলেন অনেকে। মানবজমিন সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী বলেন, এই উদ্যোগটি নেয়ার আগে পুলিশের গ্রাউন্ড ওয়ার্ক করার প্রয়োজন ছিল। ভাড়াটিয়ার তথ্য সংগ্রহের বিষয়ে ডিএমপির অতিরিক্ত যুগ্ম কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায় বলেন, সংগৃহীত তথ্য গোপন রাখা হবে। শুধুমাত্র অপরাধ প্রতিরোধের কাজে এটি ব্যবহৃত হবে। এই তথ্য যেন অন্য কেউ পেতে না পারে সে জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে নির্দেশনা দেয়া আছে। উর্ধতন কর্মকর্তারা বিষয়টি তদারকি করছেন। ডা. অরূপ রতন চৌধুরী বলেন, একসময় মানুষ আয়কর দিতে ভয় পেত। রাজস্ব বিভাগ আয়কর মেলা করে তাদের সামনে এসেছে। জনগণের কাছে যেতে পুলিশেরও এ ধরনের কোন মেলা আয়োজন করা যায় কি না বিষয়টি ভেবে দেখা দরকার।
×