ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

অবশেষে ট্যানারি যাচ্ছে সাভারে

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ৩ এপ্রিল ২০১৬

অবশেষে ট্যানারি যাচ্ছে সাভারে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ সরকারের কঠোর অবস্থানের অবশেষে হাজারীবাগ থেকে ট্যানারির যন্ত্রপাতি সাভারের চামড়া শিল্পনগরীতে সরিয়ে নেয়ার কাজ শুরু হয়েছে। ট্যানারি মালিকদের পরামর্শে যন্ত্রপাতি ও ভারি ভারি ড্রাম সরাতে কাজ করছে শ্রমিকরা। বেশকিছু ট্যানারি ইতোমধ্যে ট্রাকে করে সাভারে ড্রাম ও মেশিনপত্র সরিয়ে নেয়ার কার্যক্রম শুরু করেছে। তবে উদ্যোক্তারা বলছেন, ১৫৫ কারখানাই সাভারে স্থানান্তর হতে প্রস্তুত রয়েছে। পানির লাইন চালু করা হলে আগামী দু’মাসের মধ্যে হাজারীবাগ থেকে সাভারের হেমায়েতপুরের চামড়া শিল্পনগরীতে সব কারখানা সরে যেতে পারবে। এদিকে, শনিবার রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু আবারও ঘোষণা দিয়েছেন, হাজারীবাগে আর কোন কাঁচা চামড়া ঢুকতে পারবে না। কারখানা স্থানান্তরে মালিকদের অনেক সময় দেয়া হয়েছে, আর নয়। মন্ত্রীর এই ঘোষণা আসার পর ট্যানারি এলাকায় পুলিশী টহল বাড়ানো হয়। কারখানায় চামড়া আসা ঠেকাতে প্রবেশপথগুলোতে বসানো হয়েছে অতিরিক্ত চেকপোস্ট। এছাড়া, ট্যানারির মালিক, কর্মকর্তা ও পুলিশ সদস্যরা জানিয়েছেন, গত ৩১ মার্চের পর ট্যানারিগুলোতে নতুন করে আর কোন কাঁচা চামড়া প্রবেশের সুযোগ পায়নি। হাজারীবাগে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা জানিয়েছেন, আগে থেকেই বিষয়টি নির্ধারিত ছিল। এ কারণে মালিকরা সেভাবেই কাজ করেছেন। তবে পুলিশ তৎপর আছে। কোনভাবেই কাঁচা চামড়া নিয়ে কাউকে আর ঢুকতে দেয়া হবে না। এদিকে, শনিবার থেকেই হাজারীবাগ এলাকার কয়েকটি ট্যানারির যন্ত্রপাতি ট্রাকে করে সাভারের হেমায়েতপুরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার, লেদার গুডস এ্যান্ড ফুটঅয়্যার এ্যাক্সপোর্টার্স এ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএলএলএফইএ) সদ্যবিদায়ী সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার আবু তাহের জনকণ্ঠকে বলেন, সব ট্যানারিই সাভারে যেতে প্রস্তুত। ইতোমধ্যে যন্ত্রপাতি ও ড্রাম সরানোর কাজ শুরু করেছেন ট্যানারি মালিকরা। তিনি বলেন, প্রথম শ্রেণীর কয়েকটি কারখানা তাদের যন্ত্রপাতি আগেই সরিয়ে নিয়েছে। পানির লাইনে সংযোগ দেয়া হলে এখনই তাঁরা সাভারে কার্যক্রম শুরু করতে পারেন। এছাড়া সরকারের চাপে গত কয়েকদিনে অনেকেই কারখানা সরিয়ে নিতে প্রস্তুতি গ্রহণ করেছেন। এরই অংশ হিসেবে কেউ কেউ যন্ত্রপাতি সরিয়ে নিচ্ছেন। তিনি বলেন, যখনই স্থানান্তর হোক না কেন ট্যানারি মালিকদের এই কষ্ট করতে হতো। তাই এখনই যন্ত্রপাতিগুলো সরিয়ে নেয়া হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ট্যানারি মালিকদের স্বার্থেও কারখানা স্থানান্তর জরুরী হয়ে পড়ছে। পরিবেশ ইস্যুতে হাজারীবাগের কোন কারখানা কমপ্লায়েন্স নয়। ফলে চামড়া রফতানি হচ্ছে না, আরও যাও বা যাচ্ছে তার ভাল মূল্য পাওয়া যায় না। ফলে মালিকদের খেসারত দিতে হচ্ছে। এই বাস্তবতায় সবাইকে সাভারের চামড়া শিল্পনগরীতে যেতে হবে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকা হাইড এ্যান্ড স্কিন লিমিটেড তাদের ট্যানারির কাঁচা চামড়া প্রক্রিয়া করার ড্রামগুলো (ট্যানিং ড্রাম) সরিয়ে নেয়ার কাজ শুরু করেছে। চারটি ড্রাম সাভারের হেমায়েতপুরে নেয়া হয়েছে। ইতোপূর্বে ১০টি নেয়া হয়েছে। এছাড়া হাজারীবাগে এখনও কয়েকটি ট্যানারিতে আগের পুরোনো চামড়া দিয়েই পণ্য উৎপাদন চলছে। এগুলো শেষ হলে কারখানাগুলোর কাছে আর কোন চামড়া থাকবে না বলে জানা গেছে। তবে সাভারে কারখানাগুলোতে পুরোদমে কাজ শুরু করতে কমপক্ষে দুই থেকে তিন মাস সময়ের প্রয়োজন হবে দাবি করছেন ট্যানারি মালিকরা। জানা গেছে, হাজারীবাগ থেকে সাভারে চামড়া শিল্প স্থানান্তর প্রক্রিয়া শুরু হওয়ায় এই এলাকায় বসবাসরত ট্যানারি শ্রমিকদের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বাড়ছে। চাকরি থাকবে কি না তা নিয়ে চিন্তিত তারা। এছাড়া সাভারের ওই পরিবেশে অভ্যস্ত হতে পারবেন কি না এসব ভাবনায় ট্যানারি শ্রমিকরা। শিল্পমন্ত্রীর ঘোষণা ॥ শনিবার রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু। ওই অনুষ্ঠান শেষে বেরিয়ে যাওয়ার পথে গণমাধ্যম কর্মীদের মুখোমুখি হন শিল্পমন্ত্রী। হাজারীবাগ থেকে সাভারে ট্যানারি সরছে কি না সাংবাদিকদের এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা আমাদের সিদ্ধান্তে অটল আছি। ব্যবসায়ীরা কি করবেন, সেটা তাদের ব্যাপার। তারা ব্যাংক ঋণ পাবেন কি-না তাও আমি জানি না। হাজারীবাগ থেকে সাভারে ট্যানারি স্থানান্তরে আর সময় বাড়ানো হবে না বলে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, সময় বাড়ানো হবে না। তাছাড়া ব্যাংক ঋণ এবং টার্মন্স এ্যান্ড কন্ডিশন তাদের ব্যাপার। তারা দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসা করে কিভাবে ব্যাংক ঋণ নেন, কিভাবে পরিশোধ করেন- সেটা তাদের ব্যাপার। ব্যাংক ঋণের ব্যাপারে আমাদের কোন এখতিয়ার নেই। তিনি বলেন, আমি আগেই নির্দেশ দিয়েছি, ৩১ মার্চের পর হাজারীবাগে কোন কাঁচা চামড়া প্রবেশ করবে না। যে কাঁচা চামড়া সাধারণত বায়ু দূষণ করে পরিবেশ নষ্ট করে, নদীর পানি নষ্ট করে, সেই কাঁচা চামড়া ইমিডিয়েটলি রিমুভ (অপসারণ) করতে হবে। এ ব্যাপারে ব্যবসায়ীদের বেশি করে উদ্যোগ নিতে হবে।
×