ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

তনুর মা-বাবাসহ পাঁচ জনকে সিআইডির জিজ্ঞাসাবাদ

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ৩ এপ্রিল ২০১৬

তনুর মা-বাবাসহ পাঁচ জনকে সিআইডির জিজ্ঞাসাবাদ

মীর শাহ আলম, কুমিল্লা থেকে ॥ দেশব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টিকারী কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজছাত্রী ও নাট্যকর্মী সোহাগী জাহান তনুর হত্যা মামলা তদন্তে ঢাকা ও কুমিল্লার সিআইডির একটি দল ফের শনিবার কুমিল্লা সেনানিবাস এলাকার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। দুপুর বারোটার দিকে দলটি সেনানিবাসে যায় এবং সেখানে তারা প্রায় ৩ ঘণ্টা অবস্থান করে বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে। এ ছাড়া শুক্রবারও দিনভর কুমিল্লা সিআইডির একটি দল সেনানিবাসের তিন স্থান পরিদর্শন করে। এদিকে তনু হত্যার বিচার দাবিতে শনিবারও জেলার বিভিন্ন স্থানে মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ ছাড়া গণজাগরণ মঞ্চের উদ্যোগে শনিবার বিকেলে নগরীর কান্দিরপাড় এলাকার পূবালী চত্বর থেকে এক কোটি গণস্বাক্ষর সংগ্রহ অভিযান শুরু হয়েছে। এ ছাড়া তনু হত্যাকা-ের পর মিজানুর রহমান সোহাগ নামের এক যুবক ৬ দিন হলো নিখোঁজ রয়েছে, তার পরিবারের দাবি জিজ্ঞাসাবাদের নামে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বাসা থেকে তাকে তুলে নেয়। জানা যায়, জেলা গোয়েন্দা শাখা থেকে গত বৃহস্পতিবার রাতে তনু হত্যা মামলাটি সিআইডিতে হস্তান্তরের পর শুক্রবার থেকে আনুষ্ঠানিক তদন্ত কার্যক্রম শুরু করা হয়। গতকাল শনিবার সিআইডি ঢাকার সিনিয়র পুলিশ সুপার আবদুল কাহ্হার আকন্দের নেতৃত্বে সিআইডির ঢাকা ও কুমিল্লার একটি দল দুপুর ১২টার দিকে কুমিল্লা সেনানিবাসে যায়। তদন্তকারী দল প্রথমে তনুর মরদেহ যে স্থান থেকে উদ্ধার করা হয় সে স্থানটি পরিদর্শন করে। পরে তনু সেনানিবাস এলাকার অলিপুরে সেনাবাহিনীর যেসব লোকদের বাসায় প্রাইভেট পড়াত সেসব বাসায় যান এবং আসা-যাওয়ার পথে তারা ঘটনাস্থল ও আশপাশের পুরো এলাকা পর্যবেক্ষণ করেন। এ সময় দলের অন্যান্যের মধ্যে ছিলেন সিআইডি-ঢাকার সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার এহসান উদ্দিন চৌধুরী, পরিদর্শক মাওলা এবং কুমিল্লা থেকে সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার ড. নাজমুল করিম খান, সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার জালাল উদ্দিন আহমেদ, সহকারী পুলিশ সুপার মোজাম্মেল হক, পরিদর্শক শাহনেওয়াজ, মামলার বর্তমান তদন্তকারী কর্মকর্তা গাজী ইব্রাহীম, সাবেক দুই তদন্তকারী কর্মকর্তা জেলা গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) ওসি একেএম মনজুর আলম ও ক্যান্টনমেন্ট পুলিশ ফাঁড়ির এসআই সাইফুল ইসলামসহ পুলিশ-সিআইডি’র পদস্থ কর্মকর্তারা। পরিদর্শন শেষে বিকাল ৩টার দিকে কুমিল্লা সেনানিবাসের বাসা থেকে তনুর বাবা-মা, দুই ভাই ও চাচাত বোনসহ ৫জনকে সিআইডি কার্যালয়ে নিয়ে আসা হয়। তনুর বাবা-মাকে সিআইডি’র কার্যালয়ে এনে জিজ্ঞাসাবাদ তনু হত্যা মামলায় গতকাল শনিবার বিকেলে তার বাবা-মাকে তদন্তকারী সংস্থা অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) কার্যালয়ে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। জানা যায়, কুমিল্লা সেনানিবাসে তনুদের বাসা থেকে বেলা ৩টার দিকে তনুর বাবা ইয়ার হোসেন, মা আনোয়ারা বেগম, দুই ভাই নাজমুল হোসেন ও আনোয়ার হোসেন রুবেল, চাচাতো বোন লাইজু জাহান লাইজুকে কুমিল্লা সেনানিবাসের বাসা থেকে সিআইডি কুমিল্লা কার্যালয়ে নিয়ে আসা হয়। বিকালে সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার ড. নাজমুল করিম খান সাংবাদিকদের জানান, তথ্য-উপাত্ত দিয়ে প্রমাণ করে মামলার তদন্ত কাজ এগুতে চাই। সবদিক যাচাই-বাছাই করে দেখছি। প্রাপ্ত তথ্য উপাত্তের সমন্বয় করা হচ্ছে। মৃতদেহটি পরীক্ষার পর ডাক্তারের উচিত ছিল তনু কখন মারা গিয়েছে তা উল্লেখ করা। এটা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। অনেক কিছু ধোঁয়াশার মধ্যে রয়েছে এবং তথ্যের ঘাটতিও আছে। দোয়া করবেন যেন সবকিছুর সমন্বয় সাধন করে দেশ-জাতির আকাংখা পূরণ করতে পারি। এ বিষয়ে সময়ের প্রয়োজন রয়েছে বলে তিনি জানান। তনুর মা-বাবাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে তাদেরকে আবার সেনানিবাসের বাসায় পৌঁছে দেয়া হবে। তিনি আরও বলেন, তদন্তের অনেক কাজ রয়েছে। সবগুলো দিক দেখতে হয়। সকাল থেকে আমরা ঘটনাস্থল দেখেছি। সবগুলো বিষয় দেখে আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হচ্ছে। আমরা আলোর মুখ দেখাতে চাই। মাত্র শুরু করেছি তদন্ত। তনুর মা-বাবাকে আমাদের দফতরে এনেছি। এটা চলমান প্রক্রিয়া। তাদের বারবার জিজ্ঞেস করা হবে। কোন কিছু বাদ গেল কি না। একেক সময় একেকটা বলবেন, এরপরে আরও কিছু বলবেন। এভাবেই আমাদের কথা বলতে হবে। সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার ও তদন্ত সহায়ক দলের প্রধান আবদুল কাহার আকন্দ সাংবাদিকদের বলেন, আমরা বিষয়টি দেখছি। এটা নিয়ে বিশ্লেষণ করছি। এর বাইরে আর কিছু বলা যাবে না। তনু হত্যাকা-ের পর এক যুবক নিখোঁজ ॥ তনু হত্যাকা-ের পর জেলার বুড়িচং উপজেলার নারায়ণসার গ্রামের মোঃ নুরুল ইসলামের ছেলে মিজানুর রহমান সোহাগ গত ২৮ মার্চ গভীর রাত থেকে নিখোঁজ রয়েছে। তার পরিবারের দাবি, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে ওই রাতে তাকে বাসা থেকে তুলে নেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে তার পিতা বুড়িচং থানায় গত ৩০ মার্চ একটি জিডি (১১৩২) করেন। নিখোঁজ সোহাগের বোন উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী খালেদা আক্তার ও চাচা গিয়াস উদ্দিন শনিবার বিকেলে সাংবাদিকদের জানান, তনু হত্যাকা-ের পর তনুর ভাই ও মা-বাবার ছবি টেলিভিশনে দেখে তনুর ছোট ভাইয়ের কাছে বন্ধু হিসেবে ফোনে খোঁজখবর নেয়ার চেষ্টা করে। এর পরই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে তাকে বাসা থেকে তুলে নেয়া হয়। এরপর থেকে থানা, ডিবি, র‌্যাব ও জেলা পুলিশসহ জেলখানা পর্যন্ত খোঁজখবর নিয়ে তার কোন খবর পাওয়া যায়নি। তনু হত্যার বিচার দাবিতে মানববন্ধন-বিক্ষোভ ॥ তনু হত্যার বিচার দাবিতে গতকাল শনিবার কুমিল্লা নগরীর কান্দিরপাড়-রানীর বাজার সড়কে মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করে মডার্ন হাইস্কুলের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়া নগরীর রামমালা সড়কে প্রতিবাদী শিক্ষার্থীরা কর্মসূচী পালন করেছে। একই দাবিতে জেলার দেবিদ্বার উপজেলার মফিজ উদ্দিন বালিকা বিদ্যালয় ও আজগর আলী মুন্সী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করা হয়। কুমিল্লার গণজাগরণ মঞ্চের উদ্যোগে গতকাল শনিবার বিকেল থেকে এক কোটি গণস্বাক্ষর সংগ্রহ অভিযান শুরু হয়েছে। গণজাগরণ মঞ্চ-কুমিল্লার সংগঠক খায়রুল আনাম রায়হান জানান, এক কোটি প্রতিবাদী জনতার স্বাক্ষর সংগ্রহ শেষে তা সংসদে প্রেরণ করা হবে। এদিকে তনু হত্যার বিচারের দাবিতে গতকালও কুমিল্লা নগরীর পূবালী চত্বরে কুমিল্লার গণজাগরণ মঞ্চের উদ্যোগে নাগরিক সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে প্রতিবাদী জনতার সঙ্গে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ অংশগ্রহণ করে উল্লেখ্য, গত ২০ মার্চ রাতে কুমিল্লা সেনানিবাস এলাকার বাসার অদূরে একটি জঙ্গলে তনুর লাশ পাওয়া যায়। এ ঘটনায় তনুর বাবা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের অফিস সহায়ক ইয়ার হোসেন বাদী হয়ে কোতোয়ালি মডেল থানায় মামলা করেন। পুলিশ ও ডিবির পর মামলাটি তদন্ত করছে সিআইডি।
×