ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস আজ

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ২ এপ্রিল ২০১৬

বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস  আজ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশে সব ধরনের প্রতিবন্ধীর সংখ্যা অর্ধ কোটি ছাড়িয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, তৃণমূল থেকে জাতীয় পর্যায়ের বিভিন্ন উন্নয়নে প্রতিবন্ধীদের সম্পৃক্ত করা দরকার। একজন প্রতিবন্ধীর জীবনে বঞ্চনা ও বিচ্ছিন্নতার একটি পর্যায়ক্রমিক ধারা সৃষ্টি করে। প্রায় সব অঞ্চল ও জনগোষ্ঠীতে এমনকি সরকারী-বেসরকারী উভয় প্রতিষ্ঠানে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে অবহেলা ও বিচ্ছিন্নভাবে দেখা হয়। তাদের প্রতি অসম দৃষ্টিভঙ্গি ও আচরণ প্রবলভাবে পরিলক্ষিত হয়। প্রতিবন্ধিত্ব ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তি সম্পর্কে সমাজে এখনও সনাতন দৃষ্টিভঙ্গি প্রবল। দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থায় প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের চিকিৎসা ব্যবস্থায় পুনর্বাসন ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত করা দরকার বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এমন অবস্থার মধ্য দিয়ে আজ শনিবার পালিত হচ্ছে বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস। এ উপলক্ষে সরকারী ও বেসরকারী উদ্যোগে নেয়া হয়েছে নানা কর্মসূচী। অটিস্টিক ব্যক্তিদের উন্নয়নের সরকারের পাশাপাশি বেসরকারী প্রতিষ্ঠান এবং সমাজের সকলকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একটি সুখী-সমৃদ্ধ ও উন্নত বাংলাদেশ গড়তে হলে উন্নয়ন কর্মকা-ে সকলের অংশগ্রহণ অপরিহার্য। দেশের অটিস্টিক ব্যক্তি ও শিশুরা আমাদের আপনজন। তাদের উপযুক্ত শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে উন্নয়নের মূলধারার সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে পারলে তারাও জাতীয় উন্নয়নে অবদান রাখতে সক্ষম হবেন। অটিজম মোকাবেলায় সচেতনতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অটিজমসহ সকল প্রকার শারীরিক, মানসিক ও বুদ্ধি প্রতিবন্ধিতা মানববৈচিত্র্যেরই অংশ। এদিকে, ভিন্ন মানববৈচিত্র্যের এ জনগোষ্ঠীকে উন্নয়নের মূলধারায় সম্পৃক্ত করতে গত ৭ বছর ধরে সরকার ব্যাপক কর্মসূচী বাস্তবায়ন করছে। গ্লোবাল অটিজম পাবলিক হেলথ ইনিশিয়েটিভ ইন বাংলাদেশের জাতীয় উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারম্যান সায়মা হোসেন ২০১২ সালে জাতিসংঘে অটিস্টিক শিশু ও তার পরিবারের সহায়তায় বিশ্ব সম্প্রদায়কে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে অটিজম আক্রান্ত শিশু ও তার পরিবারের জন্য আর্থ-সামাজিক সহায়তা শীর্ষক প্রস্তাব উত্থাপন করেন। যা সাধারণ পরিষদে গৃহীত হয়। দেশে প্রতিবন্ধীদের শিক্ষা উপবৃত্তি প্রদান, বুদ্ধি প্রতিবন্ধী স্কুল স্থাপন, ঢাকার মিরপুরে জাতীয় বিশেষ শিক্ষাকেন্দ্র স্থাপন, সরকারী চাকরিতে কোটা সংরক্ষণ, ৬৪ জেলায় ৬৮টি প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্র এবং অটিজম রিসোর্স সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। দেশব্যাপী প্রতিবন্ধিতা শনাক্তরণ জরিপের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে আছে। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, ক্রীড়া, সাংস্কৃতিকসহ সকল ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধীর সমধিকার নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে সরকার। পাশাপাশি দেশী-বিদেশী সংস্থা, স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান, সুশীল সমাজ ও বিত্তবানদের প্রতিবন্ধী ও অটিস্টিক জনগোষ্ঠীর কল্যাণে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতিবন্ধী প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে সবচেয়ে প্রান্তিক ও বঞ্চনার শিকার প্রতিবন্ধী নারী ও শিশুরা। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা তাদের মেধা ও যোগ্যতা প্রদর্শনের সুযোগ পাচ্ছে না। তাদের বেকারত্ব দিন দিন বাড়ছে। অনেক পরিবারে তাদের দেখা হচ্ছে বোঝা হিসেবে। বোঝা হিসেবে না দেখে প্রতিবন্ধীদের জনসম্পদে রূপ দিতে হবে। আর সকল ধরনের উন্নয়ন কর্মকা-ের সঙ্গে সম্পৃক্ত করে তাদের বেঁচে থাকার সুযোগ করে দিতে হবে। রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ তাঁর বাণীতে বলেছেন, অটিস্টিক শিশুরা আমাদেরই প্রিয় সন্তান। ভালবাসা, যতœ ও সেবা দিয়ে তাদের লালন পালনের পাশাপাশি কর্মদক্ষ করে তোলার জন্য প্রশিক্ষণ অপরিহার্য। কারণ উপযুক্ত শিক্ষা ও প্রশিক্ষণই অটিস্টিক শিশুকে কর্মদক্ষ করে তোলে। যোগ্যতা অনুযায়ী কর্ম পাওয়া প্রতিটি নাগরিকের অধিকার। অটিস্টিক ব্যক্তিদের সার্বিক উন্নয়নে সরকার বিভিন্ন ধরনের সেবা প্রদানের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। কর্মসংস্থান সমাজে একজন মানুষের মর্যাদা বৃদ্ধি ও প্রতিষ্ঠিত করে। অটিস্টিক ব্যক্তিরাও এর বাইরে নয়। অটিস্টিক ব্যক্তিদের কর্মসংস্থানে অগ্রাধিকার প্রদানের মাধ্যমে আমরা একটি সুন্দর ও সুখী সমৃদ্ধশালী বৈষম্যহীন সমাজ গড়তে পারি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর বাণীতে বলেন, বিশেষ বৈশিষ্ট্যের অধিকারী এ জনগোষ্ঠীকে উন্নয়নের মূলধারায় সম্পৃক্ত করতে বিগত ৭ বছরে আমরা ব্যাপক কর্মসূচী বাস্তবায়ন করেছি। আমরা প্রতিবন্ধীদের শিক্ষা উপবৃত্তি প্রদান, সরকারী চাকরিতে কোটা সংরক্ষণ, বুদ্ধি প্রতিবন্ধী স্কুল স্থাপন, জাতীয় বিশেষ শিক্ষাকেন্দ্র স্থাপন, প্রতিটি জেলায় প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্র এবং অটিজম রিসোর্স সেন্টার স্থাপন করেছি। আমরা অটিস্টিক ব্যক্তিদের অধিকার সুরক্ষায় আইন ও বিধি প্রণয়ন করেছি। অটিস্টিক শিশুর শনাক্তকরণ ও প্রশিক্ষণ প্রদানে আমরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘সিনাক’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছি। অটিস্টিক শিশু-কিশোরদের সম্ভাবনাগুলোকে চিহ্নিত করে পরিবারের স্নেহ, ভালবাসা ও পরিচর্যার মাধ্যমে গড়ে তোলা হলে তারা সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য বোঝা না হয়ে অপার সম্ভাবনা বয়ে আনবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
×