ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

জাতীয় টাস্কফোর্স গঠন

প্রক্রিয়াজাত খাদ্য রফতানির বিশেষ উদ্যোগ

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ২ এপ্রিল ২০১৬

প্রক্রিয়াজাত  খাদ্য রফতানির  বিশেষ  উদ্যোগ

এম শাহজাহান ॥ কৃষিভিত্তিক ফুড প্রসেসিং শিল্পের রফতানি বাড়াতে এ খাতে এবার বিনিয়োগ বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে ফুড প্রসেসিং শিল্পের বিকাশ ও চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় জাতীয় টাস্কফোর্স গঠন করেছে সরকার। টাস্কফোর্স মনে করছে, উদ্যোক্তাদের সহযোগিতা প্রদান ও সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো গেলে অতি দ্রুত দেশের এই সম্ভাবনাময়খাত ফুড প্রসেসিং শিল্পের বিকাশ ঘটবে। ফুড প্রসেসিং শিল্পের আওতায় বাংলার ঐতিহ্য কুমিল্লার রসমালাই থেকে বগুড়ার দই, টাঙ্গাইলের চমচম এমনকি নেত্রকোনার ঐতিহ্য বালিশ মিষ্টি সবই রফতানি করা সম্ভব। তারা বলছেন, রূপকল্প-২১ সামনে রেখে ৬০ বিলিয়ন ডলার রফতানির যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে তা পূরণ করতে হলে এখন কৃষিভিত্তিক এই শিল্পে নজর দেয়া প্রয়োজন। জানা গেছে, কৃষিভিত্তিক এই সেক্টরের বিনিয়োগ বাড়ানো হলে ফুড প্রসেসিং করে সব ধরনের খাদ্যপণ্য রফতানি করা সম্ভব। এসব খাদ্যপণ্যের কদর রয়েছে প্রবাসী বাঙালীদের কাছে। এছাড়া এসব খাবার বিদেশীদের কাছেও খুব পছন্দ। ইতোমধ্যে ফুড প্রসেসিং শিল্পে বিনিয়োগ বাড়িয়ে আরএফএল শিল্পগোষ্ঠীর ‘প্রাণ’ সামগ্রী বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রফতানি হচ্ছে। এদের পাশাপাশি এ শিল্পে বিনিয়োগ বাড়িয়েছে স্কয়ার শিল্প গ্রুপ ও আহমেদ ফুড প্রডাক্টস। ফুড প্রসেসিংয়ের মাধ্যমে আমের আচার থেকে শুরু করে এখন মুড়ির মোয়া পর্যন্ত বিদেশে রফতানি করা হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব শওকত আলী ওয়ারেছী জনকণ্ঠকে বলেন, ফুড প্রসেসিং শিল্প একটি সম্ভাবনাময় খাত। এ শিল্পের বিকাশ ঘটিয়ে রফতানি কয়েকগুণ বাড়ানো সম্ভব। একই সঙ্গে দেশের প্রধান কৃষিভিত্তিক শিল্পেরও ব্যাপক প্রসার ঘটার সুযোগ সৃষ্টি হবে। তিনি বলেন, আমাদের সিঙ্গারা, ডালপুরি, মুড়ি ও মোয়া সবই রফতানি করা সম্ভব। তবে এজন্য খাদ্যপ্রক্রিয়াজাতকরণ করতে হবে। আর এটি করতে হলে এ শিল্পে বিনিয়োগ বাড়ানো প্রয়োজন। ইতোমধ্যে এ শিল্পের সম্ভাবনা বিবেচনায় নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওই সভায় এই শিল্পখাতকে এগিয়ে নিতে একটি জাতীয় টাস্কফোর্স গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। জানা গেছে, রফতানি খাতে নতুন পণ্য হিসেবে বিশেষ জায়গা দখল করে নিচ্ছে ফুড প্রসেসিং শিল্প। দেশের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি উত্তর-পূর্ব ভারতে বাংলাদেশে তৈরি বিভিন্ন ধরনের প্রক্রিয়াজাত খাদ্য এখন রফতানি হচ্ছে। এসব পণ্য যাচ্ছে বিশ্বের অন্যান্য দেশেও। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তৈরি পোশাক শিল্প বর্তমানে দেশের প্রধান রফতানি খাত হলেও এর প্রায় ৮৫ ভাগ অর্থ আবার বাইব্যাক আমদানির মাধ্যমে দেশের বাইরে চলে যায়। কিন্তু কৃষিভিত্তিক ফুড প্রসেসিং শিল্প এমন একটি খাত যেটার রফতানি আয়ের ৯৮ ভাগ দেশে থাকবে। পাশাপাশি জিডিপিতে কৃষির অবদান বাড়ানো এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও কৃষকের আয় বাড়াতেও এ খাতটি সহায়ক হবে। এছাড়া খাদ্য প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে বিভিন্ন পণ্য তৈরি করে এ শিল্পখাত একদিকে যেমন কৃষকের পণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করছে, তেমনি প্রক্রিয়াকরণের কারণে কৃষিজাত এসব পণ্য সংরক্ষণ করা যাচ্ছে বছরজুড়ে। স্বাস্থ্যসম্মত ও পুষ্টিকর এসব খাদ্য দেশের পুষ্টি চাহিদা মেটাতেও সহায়তা করছে। বিশেষ করে টমেটো, আলু, আম, জলপাই, বিভিন্ন ধরনের ভেজিটেবল থেকে বর্তমানে দেশেই চিপস, কুকিবাইট, ভেজিটেবল জুস, চানাচুর, আলুচুর, ম্যাংগো জুস, পিংক গোয়াভা, ফ্রুট মকটেল, চকলেটসহ বিভিন্ন খাদ্য তৈরি করা হচ্ছে। সম্প্রতি বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের সঙ্গে দেখা করে পোল্যান্ড সরকারের অর্থনৈতিক উন্নয়ন বিষয়ক উপ-মন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশে কৃষিপণ্য সংরক্ষণ ও খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পে বিনিয়োগ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এছাড়া দেশীয় উদ্যোক্তারা ফুড প্রসেসিং শিল্পে বিনিয়োগ বাড়ানোর লক্ষ্যে কাজ করছেন। এদিকে, রফতানি নীতিমালায় সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত খাতের তালিকায় স্থান পেয়েছে এ্যাগ্রো-প্রোডাক্টস ও এ্যাগ্রো-প্রসেসড পণ্য। এ শিল্পের বিনিয়োগকারীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে হ্রাসকৃত সুদ-হারে প্রকল্প ঋণ প্রদান করা হবে। এছাড়া আয়কর রেয়াত প্রদান, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিমানে পরিবহনের সুযোগ-সুবিধা প্রদান, বন্ড সুবিধা, পণ্যের মানোন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে প্রাতিষ্ঠানিক ও কারিগরি সুবিধা সম্প্রসারণ করা, কমপ্লায়েন্ট শিল্প স্থাপনে বিনাশুল্কে ইকুপমেন্ট আমদানির ব্যবস্থা করা, পণ্য উৎপাদন ও বাজারজাতে সহায়তা করা হবে। পাশাপাশি বিদ্যুত, পানি, গ্যাস প্রভৃতি ইউটিলিটি সার্ভিসের ক্ষেত্রে ডব্লিউটিও’র এগ্রিমেন্ট অন এগ্রিকালচারাল এবং এগ্রিমেন্ট অন সাবসিডিজ এ্যান্ড কাউন্টার ভেইলিং মেজারসের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ সম্ভাব্য আর্থিক সুবিধা বা ভর্তুকি প্রদান করার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। টাস্কফোর্স ॥ এই টাস্কফোর্স খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পের সম্ভাবনা সংক্রান্ত জাতীয় টাস্কফোর্স নামে অভিহিত হবে। আট সদস্য বিশিষ্ট এই টাস্কফোর্সে বাণিজ্যমন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবকে আহ্বায়ক হিসেবে রাখা হয়েছে। এছাড়া কমিটিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গবর্নরের প্রতিনিধি-ডেপুটি গবর্নর পদমর্যাদার যে কেউ, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিবের প্রতিনিধি, শিল্প, কৃষি, মৎস্য, পরিবেশ ও বন, সচিব অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ, নির্বাহী চেয়ারম্যান বেজা, মহাপরিচালক গবর্নেন্স ইনোভেশন ইউনিট-প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের প্রতিনিধি (তবে অতিরিক্ত সচিবের নিচে নয়) এবং এ্যাগ্রো প্রসেসিং এ্যাসোসিয়েশনের নির্বাহী চেয়ারম্যান রয়েছেন। আগামী ১৫ এপ্রিল এই টাস্কফোর্সের প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হবে। ওই সভার সুপারিশমালা আগামী ১৫ মে’র মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানোরও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। প্রতিমাসে একবার এই টাস্কফোর্সের সভা অনুষ্ঠিত হবে।
×