ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

দুর্গম এক হাজার পাঁচ ইউপি আসছে ব্রডব্যান্ডের আওতায়

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ২ এপ্রিল ২০১৬

দুর্গম এক হাজার পাঁচ ইউপি আসছে ব্রডব্যান্ডের আওতায়

ফিরোজ মান্না ॥ দেশের দুর্গম এলাকার এক হাজার পাঁচটি ইউনিয়ন পরিষদে অপটিক্যাল ফাইবার কেবল নেটওয়ার্ক উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নিয়েছে বিটিসিএল। প্রকল্পের আওতায় ৪৯ জেলার ১২৮ উপজেলার ১০০৫ ইউনিয়নে অপটিক্যাল ফাইবার কেবল সংযোগের মাধ্যমে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা দেয়া হবে। একই প্রকল্পের অধীনে ৫ জেলার ১২ উপজেলায় রেডিও লিঙ্ক ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট স্থাপন করা হবে। প্রকল্পটির সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার ৮৮ কোটি ৮২ লাখ ১৬ হাজার টাকা। সরকারী অর্থে প্রকল্পটি ৪ বছর মেয়াদে বাস্তবায়ন করবে বিটিসিএল। বর্তমানে প্রকল্পটির প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে অনুমোদনের অপেক্ষায়। এর আগে আরও এক হাজার ইউনিয়নে অপটিক্যাল ফাইবার কেবল স্থাপনের প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে বিটিসিএল। এই প্রকল্প পুরোপুরি বাস্তবায়ন করতে এ বছর জুন মাস লেগে যাবে। প্রকল্পে বেশ কিছু ইউনিয়নে পরীক্ষামূলকভাবে ইন্টারনেট সেবা দেয়া শুরু হয়েছে। বিটিসিএল সূত্র জানিয়েছে, নতুন করে ১০০৫ ইউনিয়নে অপটিক্যাল ফাইবার কেবল সংযোগ দেয়ার প্রকল্প হাতে নিয়েছে বিটিসিএল। প্রকল্পটি টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হলে পরে এটি একনেকে পাঠানো হয়। একনেক প্রকল্পটি অনুমোদন দিলে বিটিসিএল প্রকল্পের কাজ শুরু করবে। একই প্রকল্পের আওতায় ৫ জেলায় রেডিও লিঙ্কের মাধ্যমে ইন্টারনেট সেবা দেয়া হবে। এই ৫ জেলার ১২ উপজেলার সঙ্গে সরাসরি কোন সড়ক যোগাযোগ নেই। এ কারণে এই ১২ উপজেলার ইউনিয়ন পরিষদ পর্যন্ত বিটিসিএল ফাইবার অপটিক্যাল কেবল স্থাপন করতে পারবে না। সব ক’টি উপজেলা বা ইউনিয়ন নদী বা সাগরের মধ্যে পড়েছে। বিটিসিএল এই ১২ উপজেলার জন্য পরিকল্পনা কমিশনে ওয়্যারলেস ব্রডব্যান্ড নেটওয়ার্ক স্থাপনের জন্য বিকল্প প্রস্তাব পাঠিয়েছে। প্রস্তাবটি অনুমোদন হলেই কার্যক্রম শুরু করা হবে। দেশে গ্রাম পর্যায়ে নির্ভরযোগ্য ও সহজভাবে তথ্য যোগাযোগের জন্য ওয়্যারলেস ব্রডব্যান্ড নেটওয়ার্ক বেশি সাশ্রয়ী ও দীর্ঘস্থায়ী হবে। এছাড়া গ্রাহক এই ইন্টারনেট খুব সহজেই ব্যবহার করতে পারবে। দুর্গম এলাকায় ওয়্যারলেস ব্রডব্যান্ডের মাধ্যমে ইন্টারনেট সেবা বিশ্বজুড়েই গ্রহণযোগ্য। একটি বিটিএস টাওয়ারের (বেজ স্টেশন) মাধ্যমে ৫ থেকে ৮ কিলোমিটার ব্যাসার্ধে বসবাসরত জনগোষ্ঠী নেটওয়ার্কের আওতায় থাকবে। এক্ষেত্রে বসতি অথবা বিচ্ছিন্ন এলাকায় বসবাসরত মানুষের নেটওয়ার্ক কভারেজের আওতায় আনতে টাওয়ার স্থাপন করতে হবে। ওয়্যারলেস ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথ একটি স্থায়ী ট্রান্সমিশন ব্যবস্থা। এর মাধ্যমে নেটওয়ার্ক সর্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করা সহজ। এটি অনেকটা মোবাইল নেটওয়ার্কের মতোই। ওয়্যারলেস ইন্টারনেট সহজে বিচ্ছিন্ন হয় না। ১২ উপজেলায় এ মুহূর্তে ভৌগোলিক কারণে অপটিক্যাল ফাইবার কেবল নেটওয়ার্ক সংযোগ দেয়া সম্ভব হবে না। উপজেলাগুলোÑ ভোলা সদর, সন্দ্বীপ, হাতিয়া, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি, লংদু, জুরাইছড়ি, বিলাইছড়ি, বরকল, বরিশালের মুলাদী, মেহেদীগঞ্জ এবং হিজলা এলাকা। এ জন্য দুর্গম এলাকায় ওয়্যারলেস ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা দেয়ার জন্য বিটিসিএল এই প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এসব এলাকার চারদিক দিয়েই রয়েছে নদী। নদীর নিচ দিয়ে কেবল স্থাপন ব্যয়বহুল বলে ওয়্যারলেস ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক স্থাপনের পরিকল্পনা করা হয়। পরে এসব এলাকা সার্ভে করে ওয়্যারলেস ইন্টারনেট স্থাপনের বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনে বিটিসিএল একটি প্রস্তাব পাঠায়। এটি বিটিসিএলের ভবিষ্যত প্রকল্প বাস্তবায়নের একটি অংশ। এদিকে, বিটিসিএল এক হাজার ইউনিয়নে অপটিক্যাল ফাইবার কেবল স্থাপনের কাজ প্রায় শেষ করেছে। কিছু ইউনিয়নে ইন্টারনেট সংযোগ চালু করা হয়েছে। এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে ৭০৩ কোটি ৩৪ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন্স কোম্পানি লিমিটেড (বিটিসিএল) জানিয়েছে, ভিশন ২০২১ বাস্তবায়নে প্রকল্পটির ভূমিকা হবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পর্যায়ক্রমে দেশের সব ইউনিয়নকেই অপটিক্যাল ফাইবারের আওতায় আনার ঘোষণাও দিয়েছে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়। সূত্র জানিয়েছে, প্রকল্পের আওতায় ১৩০ উপজেলার এক হাজার ইউনিয়নে সংযোগ স্থাপন করতে প্রায় ১২ হাজার কিলোমিটার অপটিক্যাল কেবল স্থাপন করা হয়েছে ? সারা দেশে শক্তিশালী ও উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন তথ্য প্রযুক্তিগত অবকাঠামো নির্মাণের অংশ হিসেবে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এর আওতায় প্রতিটি ইউনিয়নে একটি করে ই-তথ্যকেন্দ্র নির্মাণ করা হবে।
×