ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সংস্কৃতি সংবাদ

শিল্পকলার চিত্রশালা প্লাজায় পাহাড়ী জীবনের জয়গান

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ১ এপ্রিল ২০১৬

শিল্পকলার চিত্রশালা প্লাজায় পাহাড়ী জীবনের জয়গান

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে তাঁদের বসবাস। প্রকৃতির সঙ্গে সংগ্রাম করেই বয়ে যায় জীবনধারা। নিসর্গের ভেতর থেকে গড়ে ওঠে স্বতন্ত্র জীবনাচার। রয়েছে পৃথক ভাষা, পৃথক পোশাক, ঐতিহ্যবাহী বাদ্যযন্ত্রসহ ঐতিহ্যের নানা অনুষঙ্গ। নিসর্গের মতোই সুন্দর তাঁদের সংস্কৃতি ভুবন। প্রতিটি জাতিসত্তার নিজস্ব ভাষার গানের সঙ্গে আছে নান্দনিক নৃত্য। পাহাড়ী জীবনের সেই অনাবিল চিত্রকল্পের দেখা মিলল শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা প্লাজায়। তাঁদের জীবনাচারের খ- খ- টুকরো যেন বিছিয়ে দেয়া হয়েছে এই আঙিনায়। সব মিলিয়ে যেন দৃশ্যমান পাহাড়ী জীবনের জয়জান। বৃহস্পতিবার থেকে শিল্পকলার চিত্রশালা প্লাজায় শুরু হলো তিন দিনের পার্বত্য সাংস্কৃতিক মেলা। সেই সূত্রে পার্বত্য অঞ্চলের সংস্কৃতির সৌন্দর্য ছড়িয়েছে রাজধানী ঢাকায়। মনভোলানো এ মেলার আয়োজক রাঙ্গামাটির ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট। বসন্তের মেঘলা বিকেলে প্রধান অতিথি হিসেবে মেলার উদ্বোধন করেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। বিশেষ অতিথি ছিলেন পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটির সংসদ সদস্য ঊষাতন চাকমা ও চাকমা ভাষার প্রথম বাঙালী কবি মজিবুল হক বুলবুল। রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য সান্তনা চাকমার সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য রাখেন রাঙ্গামাটি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউটের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক রুনেল চাকমা। উদ্বোধনী বক্তব্যে আদিবাসী সম্প্রদায়ের সমৃদ্ধ সংস্কৃতি ও জীবনাচারের কথা উল্লেখ করেন আসাদুজ্জামান নূর। বলেন, এই দেশটা যেন একটা ফুলের বাগান। এখানে সুগন্ধ ছড়াচ্ছে বাঙালী, পাহাড়ী ও সমতলের রকমারি ফুল। এর মাঝে দেশের সবচেয়ে সুন্দর জায়গাগুলোর মধ্যে অন্যতম তিন পার্বত্য জেলা। প্রকৃতির পাশাপাশি এখানকার মানুষগুলো সুন্দর এবং সহজ-সরল। তাঁদের সংস্কৃতিও অত্যন্ত সমৃদ্ধ। যে কারণে সারাদেশের সংস্কৃতিও হয়েছে বৈচিত্র্যময় ও বর্ণাঢ্য। মহান মুক্তিযুদ্ধে বাঙালীর পাশাপাশি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ভূমিকার কথা উল্লেখ করে বলেন, আমাদের সবচেয়ে বড় পরিচয় হচ্ছে আমরা বাংলাদেশের নাগরিক। আর সমতল ও পাহাড়ের মানুষের সম্মিলিত শক্তিতেই স্বাধীন হয়েছে বাংলাদেশ। উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতা শেষে ছিল সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। শুরুতেই ফুল নিয়ে নিজস্ব নৃত্য পরিবেশন করেন চাকমা গোষ্ঠীর নৃত্যশিল্পীরা। নবান্ন উৎসবের বর্ণিলতা তুলে ধরেন তঞ্চঙ্গ্যা নৃগোষ্ঠীর শিল্পীরা। মিলনমেলা শিরোনামে নৃত্য পরিবেশন করে ত্রিপুরা শিল্পীবৃন্দ। নাচের ছন্দে পানি তোলার কৌশল উপস্থাপন করে দর্শকদের মুগ্ধ করেন চাকমা নৃত্যশিল্পীরা। গড়ইয়া নৃত্য পরিবেশনের মধ্য দিয়ে প্রথম দিনের আয়োজন শেষ করেন ত্রিপুরা শিল্পীরা। মোট ১১টি নৃগোষ্ঠীর যাপিত জীবনের নানা অনুষঙ্গ নিয়ে সাজানো হয়েছে মেলা। চোখে পড়ে কোমরের সঙ্গে বেঁধে নেয়া হাদি নামের বিশেষ বুনন যন্ত্রের সাহায্যে চাকমা নারীর কাপড় তৈরির দৃশ্য। রয়েছে আদিবাসী নারীদের পোশাক থামি, চন্দ্রহার নামের গয়নাসহ ঘরা সাজানো নানা আসবাব কিংবা রকমারি গৃহস্থালি পণ্য। আছে আদিবাসী জীবনের বৈচিত্র্যময় বিষয়কে উপজীব্য করে তোলা আলোকচিত্র ও রং-তুলির আঁচড় কাটা চিত্রকর্ম। বর্ণময় এ মেলায় নিজস্ব সংস্কৃতির নানা উপকরণ নিয়ে অংশ নিচ্ছে চাকমা, মারমা, ম্রো, চাক, বম, লুসাই, পাংখোয়া, ত্রিপুরা, তঞ্চঙ্গ্যা, খুমী, খিয়াং ও মং। তিন দিনের এ মেলা চলবে দোসরা এপ্রিল পর্যন্ত। প্রতিদিন বেলা ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত মেলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উন্মুক্ত থাকবে সবার জন্য। রফিক আজাদ স্মরণে ‘গহীনের গান’ ॥ কবি আজাদ স্মরণে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় সঙ্গীত ও নৃত্যকলা মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হলো ‘গহীনের গান’। গানে গানে বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যা রাঙিয়ে তোলেন খ্যাতিমান লালন সঙ্গীতশিল্পী ফরিদা পারভীন ও হাসান মাহমুদ। যৌথভাবে এ সঙ্গীতানুষ্ঠানের আয়োজন করে ফরিদা পারভীন ফাউন্ডেশন ও স্বপ্নকুঁড়ি। সঙ্গীতানুষ্ঠানের আগে ছিল সংক্ষিপ্ত আলোচনা পর্ব। এতে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উদীচী সভাপতি কামাল লোহানী, কবি আসাদ চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী ও চিত্রশিল্পী মাসুক হেলাল। আলোচনা শেষে শুরুতেই গান শোনান হাসান মাহমুদ। মুক্তিযুদ্ধ শহীদদের স্মরণে ‘সালাম সালাম হাজার সালাম’ গানটি পরিবেশন করেন। এরপর তিনি গেয়ে শোনান ‘রঙিলা মন’, ‘ভাবের মানুষ নয় রে আমি’, ‘আমি গাইবো যেমন করে’সহ ছয়টি গান। দুই পর্বে বিভক্ত ছিল ফরিদা পারভীনের পরিবেশনা। শুরুতেই দেশাত্মবোধক ও তার মৌলিক গান গেয়ে শোনান। যার মধ্যে ছিল- ‘তোমরা ভুলে গেছো মল্লিকার দির নাম’, ‘নিমদার কাঁটা না বাঁধিলো গায়ে’। এরপর তিনি শ্রোতাদের অনুরোধে গেয়ে শোনান লালনের বেশ কয়েকটি গান। সঙ্গীতাসর প্রাণের খেলায় পঞ্চকবির গান ॥ উনিশ শতকের শেষার্ধে বাংলা গানে বিপ্লব সাধিত হয় পাঁচ গীতিকবির আবির্ভাবে। এই পঞ্চকবির মধ্যে রয়েছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, রজনীকান্ত সেন, অতুলপ্রসাদ সেন ও কাজী নজরুল ইসলাম। তাঁদের বৈচিত্র্যময় জীবন অনুষঙ্গ গানের সম্ভার, বাঙালীর মানসগঠন ও জীবন ভাবনায় উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর হয়ে ওঠে। কালজয়ী সেই গীতিকবিদের গান নিয়ে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ধানম-ির বেঙ্গল শিল্পালয়ে অনুষ্ঠিত হলো সঙ্গীতাসর ‘প্রাণের খেলা’। এতে গান শোনান শিল্পী ইফ্ফাত আরা দেওয়ান ও মফিজুর রহমান। মফিজুর রহমান পরিবেশিত গানগুলোর শিরোনাম ছিলÑ মাগো ধন্য হলো জীবন আমার, দ্বীপ ছিল শিখা ছিল, বলো, রাধা হতে পারে কজনা, কে গো যোগী, আজি নতুন রতনে ও এমন অনেক কথাই বল। ইফ্ফাত আরা দেওয়ান গেয়ে শোনান ধায় যেন মোর সকল ভালবাসা, চিরবন্ধু চিরনির্ভর চিরশান্তি, লিখন তোমার ধুলায় হয়েছে ধুলি, আমি কাননে কাননে তোমারি সন্ধানে, দেখা হলে এই অবেলায়, ওরে মাঝি তরী হেথা বেধো নাকো, কেনরে অবোধ মন, বাঁধানো তরী খানি, আমার জীবন নদীর ওপারে, কি সুর বাজে ভাঙা হৃদি মাঝে, ওকে মুঠি মুঠি আবির ছড়ায়, আর কতকাল থাকব বসে, কতগান তো হলো গাওয়া, কে তুমি ঘুমায়ে, আমি অকৃতি অধম, তুমি যে হে প্রাণের বধু, সাঝের পাখিরা ফিরিল কুলায় ও সেদিন বলে ছিলে শিরোনামের গানগুলো।
×