ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সিভিল সার্ভিসের নয়া ক্যাডারদের প্রতি প্রধানমন্ত্রী

দেশ ও জনগণকে ভালবাসা সরকারী কর্মকর্তাদের প্রথম শর্ত

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ১ এপ্রিল ২০১৬

দেশ ও জনগণকে ভালবাসা সরকারী কর্মকর্তাদের প্রথম শর্ত

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ও জনগণের জন্য অপরিসীম ভালবাসা হৃদয়ে ধারণ করার জন্য সিভিল সার্ভিসের নবনিযুক্ত ক্যাডারদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, জনগণের সর্বোত্তম সেবাদান ও সাফল্য অর্জনে সর্বাগ্রে পূর্বশর্ত হলো দেশপ্রেম। খবর বাসসর। তিনি বলেন, ‘আপনাদের অবশ্যই জনগণকে ভালবাসতে হবে এবং সর্বাগ্রে দেশকে জানতে হবে’। তিনি বলেন, অবশ্যই দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত করতে এবং দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন জোরদারে গৃহীত প্রকল্পসমূহ দ্রুত বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নিতে হবে। সর্বোপরি আপনাদের জনগণের আস্থা অর্জন এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। তিনি বৃহস্পতিবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) বাংলাদেশ জনপ্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের (বিপিএটিসি) ৬০তম ফাউন্ডেশন ট্রেনিং কোর্সে অংশগ্রহণকারীদের মাঝে সমাপনী ও সনদ বিতরণ করেন। সংবিধানের ২১(২) ধারাটি সর্বদা মনে রাখার জন্য নতুন ক্যাডারদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সিভিল সার্ভিসের প্রত্যেক সদস্যের দায়িত্ব হচ্ছে জনগণের সেবায় সর্বোত্তম প্রয়াস চালিয়ে যাওয়া। শেখ হাসিনা বলেন, সরকারী কর্মকর্তাদের অবশ্যই প্রতিটি জনগণের সামাজিক নিরাপত্তার ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। ‘আমি কোন দুর্নীতিতে নিজেকে জড়াবো না অথবা কারো দুর্নীতি প্রশয় দেব না’ এই আদর্শ নিয়ে কাজ করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী উন্নয়ন প্রকল্প যাতে যথাযথ মান বজায় রেখে বাস্তবায়ন হয় সে ব্যাপারে সতর্ক থাকার জন্য ক্যাডারদের প্রতি আহ্বান জানান। প্রকল্প বাস্তবায়ন এবং প্রকল্প গ্রহণকালে জনগণের স্বার্থ সর্বাগ্রে অগ্রাধিকার পাবে। তিনি পরিবেশ ও মাতৃসম প্রকৃতি সংরক্ষণের জন্য তাদের প্রতি আহ্বান জানান। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এবং প্রতিমন্ত্রী ইসমত আরা সাদিক অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী এবং বিএপিটিসি’র রেক্টর এএলএম আবদুর রহমান অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন। অংশগ্রহণকারীদের পক্ষে হিয়া পাল এবং সৈয়দ আশরাফুজ্জামান বক্তব্য রাখেন। বিপিএটিসি এবং অপর ৯টি প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন ক্যাডারের ৭২৫ জন কর্মকর্তাকে ছয় মাস মেয়াদী প্রশিক্ষণ প্রদান করেছে। মুক্তিযুদ্ধকালে বাঙালী সরকারী কর্মকর্তাদের অংশগ্রহণের কথা স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, অনেক সরকারী কর্মকর্তা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ এবং দেশকে মুক্ত করতে শাহাদাৎবরণ করেছেন। যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনেও সরকারী কর্মকর্তারা ব্যাপক অবদান রেখেছেন। শেখ হাসিনা বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতা লাভের পরপরই ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণ এবং পাশাপাশি একটি স্বাধীন দেশের উপযোগী প্রশাসন ব্যবস্থা চালুর জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে নৃশংসভাবে হত্যার পর পরবর্তী শাসকরা এসব গণমুখী উদ্যোগ বন্ধ করে দিয়েছিল। ফলে জনগণের মধ্যে ব্যাপক বৈষম্য দেখা দেয় এবং তারা দেশকে পিছনের দিকে নিয়ে গিয়ে একটি এলিট গ্রুপ সৃষ্টি করেছিল। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর পুরো প্রশাসনিক ব্যবস্থাকে আত্মনির্ভরশীল হয়ে ওঠার মৌলিক নীতি থেকে সরিয়ে অন্যদিকে ধাবিত করার লক্ষ্যে সামরিক শাসকদের দিকনির্দেশনা অনুযায়ী পরিচালনা করা হয়েছে। তারা বাংলাদেশকে দরিদ্র রাখতে চেয়েছে যাতে তারা নিজেদের ভাগ্য গড়ে তোলার জন্য অন্য দেশ থেকে ভিক্ষা করতে পারে। শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার অর্থনৈতিক উন্নয়ন সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কর্মসূচী ও প্রকল্প বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে গণমুখী প্রশাসন নিশ্চিত করার প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে। সরকারী কর্মকর্তাদের কল্যাণের জন্য তাঁর সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, কর্মকর্তাদের অবসর গ্রহণের বয়স বৃদ্ধি করা হয়েছে। বেতন সর্বোচ্চ ১২৩ শতাংশ বৃদ্ধি করে নতুন পে স্কেল বাস্তবায়ন করা হয়েছে। তিনি বলেন, আমার জানা নেই অন্য কোন দেশ বা সরকার সরকারী কর্মকর্তাদের বেতন-ভাতা এত বেশি বৃদ্ধি করে কিনা। তিনি আশা প্রকাশ করেন, এই বেতন-ভাতা বৃদ্ধির ফলে সরকারী কর্মকর্তাদের মধ্যে সন্তুষ্টি বিরাজ করবে, তাদের পরিবারে সচ্ছলতা ফিরে আসবে এবং তাদের দুর্নীতি থেকে দূরে রাখবে। তিনি বলেন, কেবল নতুন পে স্কেল দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার জন্য কাজ করবে না। কর্মক্ষেত্রে উৎকর্ষ লাভের জন্য প্রশিক্ষণের গুরুত্ব তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার কর্মকর্তাদের জন্য বিদেশে প্রশিক্ষণের সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে এবং তাদের জন্য স্থানীয় ও বিদেশী প্রশিক্ষণের ওপর গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। তিনি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নতির বিষয়ে নতুন সরকারী কর্মকর্তাদের সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়ে আশা প্রকাশ করেন, তারা একটি ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার কাজটি এগিয়ে নিয়ে যাবেন। তিনি বলেন, আমরা গত ৭ বছরে অসংখ্য নতুন পদ সৃষ্টি করেছি। প্রতিটি ক্যাডারে ব্যাপকভাবে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। ২০০৯ থেকে এ পর্যন্ত আমরা ১১৩ জনকে সচিব, ৬০৯ জনকে অতিরিক্ত সচিব, ১৪১১ জনকে যুগ্ম সচিব এবং ১৪৩৪ জনকে উপসচিব পদে পদোন্নতি দিয়েছি। দেশের ইতিহাসে এত বেশি পদোন্নতি ইতোপূর্বে কখনও দেয়া হয়নি। প্রধানমন্ত্রী সরকারী কর্মকর্তাদের জন্য আন্তর্জাতিক মানের উপযুক্ত প্রশিক্ষণের জন্য বিপিএটিসিতে অবকাঠামো না থাকার বিষয়টি উল্লেখ করে অবিলম্বে কেন্দ্রের উন্নয়নের জন্য একটি প্রকল্প প্রস্তাব দেয়ার জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ প্রদান করেন।
×