জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ ৫৮ বছর পর মিয়ানমারের প্রথম বেসামরিক প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়েছেন থিন কিয়াও, যিনি মূলত মিয়ানমারের ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসির (এনএলডি) নেতা আউং সান সুচির পরামর্শক্রমে দেশ শাসন করবেন। থিন কিয়াও সাবেক প্রেসিডেন্ট থিন সিয়েনের স্থলাভিষিক্ত হলেন। গত পাঁচ বছর থিন সিয়েন দেশটি যেসব সংস্কার কর্মসূচী বাস্তবায়ন করেছেন তার ফলে মিয়ানমারের গণতন্ত্রে উত্তরণের পথ অনেকটা প্রশস্ত হয়েছে। খবর বিবিসির।
জান্তা প্রণীত সাংবিধানিক বাধার কারণে স্বামী, সন্তান বিদেশী নাগরিক হওয়ায় প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হতে পারেননি নোবেল বিজয়ী সুচি। এ কারণে তার স্কুল জীবনের বন্ধু এবং দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সহযোগী থিন কিয়াওকেই প্রেসিডেন্ট পদে মনোয়ন দেয় এনএলডি। ১৫ মার্চ পার্লামেন্টে ভোটাভুটিতে তিনি নির্বাচিত হন। প্রেসিডেন্টের পাশাপাশি ভাইস প্রেসিডেন্ট হেনরি ভ্যান থিও ও মিন্ট সুয়েও এদিন শপথ নিয়েছেন। তারা দুজনই প্রেসিডেন্ট পদে ভোটাভুটিতে থিন কিয়াওয়ের কাছে হেরেছিলেন।
শপথ নিয়েছেন মন্ত্রিসভার সদস্যরাও। তাদের বেশিরভাগই এনএলডির সদস্য। সুচি পেয়েছেন পররাষ্ট্র, প্রেসিডেন্টের দফতর, শিক্ষা, জ্বালানি ও বিদ্যুত মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব। তবে প্রতিরক্ষা, স্বরাষ্ট্র ও সীমান্ত বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকছেন সেনাবাহিনী মনোনীতরা। গত বছর ৮ নবেম্বর জাতীয় নির্বাচনে সুচির দল এনএলডি নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়, যার মাধ্যমে দীর্ঘ সেনা শাসনের ইতিহাস পেরিয়ে এক যুগসন্ধিক্ষণে পৌঁছায় মিয়ানমার।
প্রেসিডেন্টের ওপর থেকে দেশ পরিচালনা করবেন বলে জানিয়েছিলেন সুচি। থিন কিয়াওয়ের জন্ম ১৯৪৬ সালে। তার পিতা খ্যাতিমান কবি ও লেখক মিন থু উন নিজেও এনএলডির সক্রিয় কর্মী ছিলেন। ১৯৬৮ সালে থিন কিওয়াও এমবিএ করেন। পরে যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব লন্ডন থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে উচ্চতর ডিগ্রী নেন তিনি। ১৯৭৫ সালে মিয়ানমারের সিভিল সার্ভিসে যোগ দেন থিন কিয়াও। ১৯৮০ সাল থেকে বৈদেশিক অর্থনীতি বিভাগে তিনি যোগ দেন। তিনি ১৯৯০ সালে এনএলডির পক্ষে ইয়াঙ্গুনের কামারিউত থেকে এমপি হয়েছিলেন।
তার স্ত্রী সু সু লুইন এনএলডির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। তিনিও বর্তমানের পার্লামেন্ট সদস্য। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজীতে স্নাতকোত্তর করেন সু সু লুইন। তাদের কোন সন্তান নেই।
থিন কিয়াওয়ের শ্বশুর উ লুইন এনএলডির প্রতিষ্ঠাতাদের একজন এবং বিভিন্ন সময় দলের শীর্ষ পর্যায়ে দায়িত্ব পালন করেছেন।
১৯৯২ সালে সরকারী চাকরি ছেড়ে রাজনীতিতে আসা কিয়াওকে সুচির অন্যতম ঘনিষ্ঠ হিসেবেই বিবেচনা করা হয়। সুচির মায়ের নামে করা খিন চি দাতব্য সংস্থার পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছিলেন কিয়াও। গৃহবন্দী থাকাকালে সুচির সঙ্গে বহির্বিশ্বের যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম ছিলেন কিয়াও।
২০০০ সালে সুচির সঙ্গে সেন্ট্রাল বার্মিজ শহর মান্দাল সফর করেন তিনি। ওই সময় সুচিকে আংশিক মুক্তি দিয়েছিল জান্তা সরকার। মাঝে মাঝে সুচির গাড়িচালক হিসেবেও তাকে দেখা গিয়েছিল বলে বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। থিন কিয়াও জেলও খেটেছেন। রেল স্টেশনে এক সামরিক কর্মকর্তার সঙ্গে ধস্তাধস্তির অভিযোগে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। ওই অভিযোগে চার মাস ইয়াঙ্গুনের কুখ্যাত ইনসেন কারাগারে কাটাতে হয়েছিল তাকে।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: