ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

যুদ্ধাপরাধী বিচার;###;নিজামীর রিভিউ আবেদন

রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের শুনানি ৩ এপ্রিল পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে

প্রকাশিত: ০৬:৪৪, ৩১ মার্চ ২০১৬

রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের শুনানি ৩ এপ্রিল পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদ-প্রাপ্ত বদরবাহিনীর প্রধান জামায়াত আমির মতিউর রহমান নিজামীর রিভিউ (রায় পুনর্বিবেচনা) আবেদনের দ্রুত শুনানির জন্য রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদনটি আপীল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠিয়ে দিয়েছেন চেম্বার বিচারপতির আদালত। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে চার সদস্যের বেঞ্চে ৩ এপ্রিল এ আবেদনের শুনানি হবে। বুধবার দুপুরে আপীল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দারের আদালত এ আদেশ দেন। এর আগে সকালে আবেদনটি দাখিলের কথা সাংবাদিকদের জানান ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল একরামুল হক টুটুল। এর আগে ২৯ মার্চ মঙ্গলবার সুপ্রীমকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় নিজামীর রিভিউ আবেদন দাখিল করেন তার আইনজীবীরা। দাখিলের পরপরই অতিরিক্ত এ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা বলেন, যে তিনটি চার্জে (অভিযোগে) আপীল বিভাগ (নিজামীর) মৃত্যুদ- বহাল রেখেছেন তার বিরুদ্ধে রিভিউ করেছেন আসামিপক্ষ। রায় যেটা ছিল আমরা মনে করি সে রায় বহাল থাকবে। রিভিউটা শুধু হবে আইনগতভাবে। রিভিউতে আপীলের রায়ে কোন ভুলভ্রান্তি আছে কিনা সেটা দেখা হবে। আশা করি, এই তিনটি অভিযোগের ডেথ সেন্টেন্স (মৃত্যুদ-) বহাল থাকবে। তিনি আরও বলেন, আপীলে সমস্ত সাক্ষ্য সারকমুস্টেনসেস (সংশ্লিষ্ট ঘটনার তথ্য-প্রমাণ) সমস্ত কিছুই কনসিডার (বিবেচনা) করেই শাস্তি বহাল রাখা হয়েছে। এবার রিভিউতে এসে নতুন করে কিছু বলার নেই। তবে তিনি বলেন, দেখতে হবে, রায় যেটা হয়েছে এতে কোন ভুল ভ্রান্তি আছে কিনা। তার জন্য তাদের রিভিউ পিটিশন গ্রহণ করা যাবে কিনা। বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় পাবনায় হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণ এবং বুদ্ধিজীবী গণহত্যার দায়ে ২০১৪ সালের ২৯ অক্টোবর নিজামীকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদ-ের রায় দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। চলতি বছর ৬ জানুয়ারি আপীল আংশিক মঞ্জুর করে সেই ফাঁসির রায়ই বহাল রাখে সর্বোচ্চ আদালত। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আসামি নিজামীর রায়ে কিছু পর্যবেক্ষণ প্রদান করেছিলেন। পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছিল, ইসলামী ছাত্র সংঘ কিংবা আলবদর শুধু ক্রিমিনাল অর্গানাইজেশন নয়, এই সংগঠনগুলো কম্যুনাল বা সাম্প্রদায়িক অর্গানাইজেশন। নিজামী ইসলাম ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত। কিন্তু ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজনীতিতে ধর্মের অপব্যবহার করেছিলেন তিনি। ১১ থেকে ১৪ নম্বর অভিযোগে মানবতাবিরোধী অপরাধে উস্কানির যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে সেগুলো বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, একাত্তরের ৩ আগস্ট চট্টগ্রাম মুসলিম ইনস্টিটিউটে ইসলামী ছাত্র সংঘের সভায় পাকিস্তানকে ‘আল্লাহর ঘর’ বলেন। স্পষ্টতই তিনি এবং তার দল জামায়াতে ইসলামী ইসলামের মূল কথার বিকৃতি ঘটিয়ে রাজনীতিতে ব্যবহার করেছেন। রাজনীতিতে ধর্মের অপব্যবহার করেছেন। রায়ের পর্যবেক্ষণে আরও বলা হয়েছে, নিজামীকে ২০০১ সালে মন্ত্রী বানানো ভুল ছিল। এটাকে একাত্তর সালে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের গালে চড় মারার শামিল। আলবদর বাহিনী সম্পর্কে ট্রাইব্যুনাল বলে, নিজামী শুধু আলবদর বাহিনীর প্রধানই ছিলেন না, এটি গঠনের ক্ষেত্রেও তার অনেক ভূমিকা ছিল। আলবদর বাহিনী ছিল ছাত্রসংঘের ‘এ্যাকশন সেকশন’। স্পষ্টতই ছাত্রসংঘ ও আলবদরের ওপরে নিজামীর দৃঢ় নিয়ন্ত্রণ ছিল। নিজামী মনপ্রাণ দিয়ে শুধু বাংলাদেশের বিরোধিতাই করেননি, তিনি পরিকল্পিতভাবে বুদ্ধিজীবী হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। বুদ্ধিজীবী ডাঃ আলীম চৌধুরী, আজহারুল হক ও হুমায়ুন কবিরের হত্যাকা-ের সঙ্গে তার সংশ্লিষ্টতা সাক্ষ্যের মাধ্যমে প্রমাণ হয়েছে। জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী রায় হয়েছে বলেও মনে করে ট্রাইব্যুনাল।
×