ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ফাইনালে ভারত না উইন্ডিজ ফয়সালা আজ

প্রকাশিত: ০৬:২৪, ৩১ মার্চ ২০১৬

ফাইনালে ভারত না উইন্ডিজ ফয়সালা আজ

মিথুন আশরাফ, মুম্বাই থেকে ॥ কথায় আছে, ‘ব্যক্তির চেয়ে দল বড়। দলের চেয়ে দেশ বড়।’ কিন্তু আজ যখন ভারত-ওয়েস্ট ইন্ডিজ হাইভোল্টেজ সেমিফাইনালে মুখোমুখি হবে, এর আগে যেন দলের চেয়ে ব্যক্তিই বড় হয়ে উঠছে। সেই দুই ব্যক্তি আর কেউ নন, দুই দলের দুই মধ্যমণি; ভারতের বিরাট কোহলি; ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিস গেইল। ভারত-ওয়েস্ট ইন্ডিজ ম্যাচ ছাপিয়ে আসলে ম্যাচটি কোহলি-গেইল যুদ্ধেই যেন পরিণত হয়েছে। একদিকে কোহলি, আরেকদিকে গেইল। চিন্তা করা যায়, ম্যাচটি কতটা আমেজপূর্ণ হতে চলেছে। টি২০ ক্রিকেট মানেই হচ্ছে বিনোদন। যে বিনোদন কোহলি এবং গেইল; দুইজনেই দিয়ে গেছেন। কোহলি দলকে সেমিফাইনালেই তুলেছেন। যাকে বলা হচ্ছে, ভবিষ্যত শচীন টেন্ডুলকর। আর গেইল তো টি২০ ক্রিকেটের ফেরিওয়ালাই হয়ে গেছেন। কথাতেই আছে, যেদিন গেইল খেলেন; সেদিন কোন দলই সামনে টিকতে পারে না। তবে কোহলির বেলাতে যেন কথাটির গভীরতা অনেক। এখন সবাই বলে একটি কথা। ‘ওহ, কোহলি আছে না! প্রতিপক্ষ যে দলই হোক, দিনশেষে জিতবে তো ভারতই!’ এখন সবাই দেখার অপেক্ষায় আছেন, আসলে জয় হয় কার? দল হিসেবে, ভারত না ওয়েস্ট ইন্ডিজের। ব্যক্তি হিসেবে, কোহলি না গেইলের। আরেকটি কথা উঠছে। শেষপর্যন্ত না আবার আইপিএলের জয় হয়ে যায়। আইপিএলের জয় হওয়া মানে হচ্ছে, ওয়েস্ট ইন্ডিজের জয় হওয়া। কিভাবে? ব্যাখ্যায় গেলেই বোঝা যাবে। আইপিএলের ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিকেটাররা বেশি খেলেন। বিশেষ করে গেইল আইপিএল চষে বেড়ান। আবার ভালও খেলেন। মাঠ গেইলের কাছে মুখ্য নয়, যখন মেজাজ দেখান; তখন সেঞ্চুরি করেই মাঠ ছাড়েন। ভারতের মাটিতে খেলতে খেলতে এমন এক অবস্থা হয়েছে, যে কোন মাঠের মাটি, ঘাস, সবকিছুই যেন গেইলের কথা বলে। এক এক করে সবচেয়ে বেশি ৫টি শতকও আইপিএলে হাঁকিয়েছেন গেইল। ২০০৯ সাল থেকে আইপিএলে অংশ নিয়ে ৮২ ম্যাচও খেলে ফেলেছেন। রানও করেছেন ৩১৯৯। সর্বোচ্চ অপরাজিত ১৭৫ রানের ইনিংসটিও গেইলেরই। আর তাই তো এন্টিগায় বসে সেমিফাইনালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের জয়ই দেখছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের গ্রেট ক্রিকেটার স্যার ভিভ রিচার্ডস। বলেছেন, ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজ ড্যাঞ্জেরাস টিম। বিশেষ করে ভারতের মাটিতে। আইপিএল হওয়াতে এমন এক অবস্থা হয়েছে, ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিকেটাররা প্রতিটি মাঠ সম্পর্কেই ভাল জানে। তাই ভারতের জন্য কঠিন চ্যালেঞ্জই অপেক্ষা করছে।’ গেইলকে নিয়ে ভিভ বলেন, ‘গেইল এত বেশি ভারতের মাটিতে খেলেছে যে সবকিছুই তার নখদর্পণে চলে এসেছে। এটাই সেরা সুযোগ নিজেকে দেখানোর। মনে হচ্ছে, ভারতেরই বিদায় ঘটবে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের জেতার সেরা সুযোগ এটি।’ বোঝাই যাচ্ছে, গেইলকে ঘিরেই সব আশা ওয়েস্ট ইন্ডিজের। তা থাকবেই বা না কেন। দলের সেরা ব্যাটসম্যান তো এখন গেইলই। শুধু কী তাই, ‘সুপার টেনে’ এখন পর্যন্ত একটি মাত্র শতক হয়েছে; সেই শতকটি গেইলের ব্যাট থেকেই এসেছে। মাত্র ৪৮ বলে টি২০ বিশ্বকাপ শুরুর দ্বিতীয় দিনেই, নিজেদের প্রথম ম্যাচেই অপরাজিত ১০০ রানের ইনিংস খেলেন গেইল। তাতে দলও জিতে। সেই জয় দিয়ে শুরু হয় বিশ্বকাপ। শ্রীলঙ্কা ও দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে ‘গ্রুপ-১’ থেকে সবার আগে সেমিফাইনালে খেলাও নিশ্চিত করে নেয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। দুটি ম্যাচে ব্যাট করার সুযোগ পান। এক ম্যাচে শতক করেন, আরেক ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৪ রান করলেও বল হাতে ২ উইকেট নিয়ে নেন। গেইলের ওপরই তাই ভরসা করা হচ্ছে। তবে যতই গেইল থাকুক ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলে, ভারতে আছেন কোহলি। যিনি গেইলের মতো ধুন্ধুমার ব্যাটিং করায় বিশ্বাসী নন। ‘হয় ছক্কা, নয় পক্কা’তে বিশ্বাসী নন। তিনি ‘অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা’ নেয়ার পক্ষপাতী। তা করে ভারতকে শেষ চারেই উঠিয়ে দিয়েছেন। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে যে ইনিংসটি খেলেছেন কোহলি, তা সবার দৃষ্টিতে ‘সেরা ইনিংসে’র খেতাবও পেয়ে যাচ্ছে। সবার মুখে এখন শুধু ‘কোহলি, কোহলি’ গুণগানই শোনা যাচ্ছে। ভিভ ভারতকে পাত্তা দেননি। ঠিক আছে। তাই বলে কোহলির নাম মুখ দিয়ে উচ্চারণ করবেন না এমনটি নয়। এ নামটি ভোলার কোন অপশনও নেই। ভিভ বলেছেনও, ‘একজনকে অবশ্য ভয় পেতেই হবে। তিনি বিরাট কোহলি। যাকে আটকাতে পারলেই হয়ে যায়!’ কোহলি ভীতি যে ওয়েস্ট ইন্ডিজদের ভেতরও ভালভাবে ঝেঁকে ধরেছে, তা আর বোঝার কিছু থাকে না। ভয় কেনই বা হবে না। বিশ্বকাপ তো আসলে মাতিয়ে রেখেছেন কোহলিই। কি দুর্দান্ত ব্যাটিং করে চলেছেন। পরিস্থিতি বুঝে নিজেকে সামলে নিচ্ছেন। টপাটপ উইকেট পড়ার পরও মেজাজ হারাচ্ছেন না। চাপও নিচ্ছেন না। মনে হয়, ঈশ্বর প্রদত্ত ক্ষমতা! তিনি আগে থেকেই জেনে যান যে, কখন কিভাবে খেলতে হবে। কখন কিভাবে ব্যাটিং করতে হবে। তাহলেই জয় আসবে। কোহলির বেলাতে আসলে তেমনটিই দেখা গেছে। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে নিজেদের প্রথম ম্যাচে কোহলি কিছুই করে দেখাতে পারেননি। তাতে ভারত হেরেছে। পাকিস্তানের বিপক্ষে হারলে বিদায় ঘণ্টা বেজে যেত ভারতের। এমন মুহূর্তে সবরই জানা হয়ে যায়, কোন উপায় নেই; কোহলিকে খেলতেই হবে। না হলে ভারত হেরেও যেতে পারে। ঠিকই কোহলি ব্যাট হাতে ভারতকে জিতিয়ে দিলেন। বিপদে পড়া ভারতকে অপরাজিত ৫৫ রান করে খাদের কিনারা থেকে টেনে তুললেন। এই যে তুলতেন, তুলতেই থাকলেন। যখনই ভারতের সামনে বিপদ এসেছে, একজন ঠিকই হাল ধরেছেন। তিনি কোহলি। বাংলাদেশের বিপক্ষে ভাগ্যক্রমে ১ রানে জিতেছে ভারত। সেই ম্যাচে কোহলির ব্যাট থেকে এসেছে ২৪ রান। অসিদের বিপক্ষে হারলেই বিদায় নেবে ভারত। শিরোপা জেতা দূরে থাক, সেমিফাইনালেই খেলতে পারবে না। এমন মুহূর্তে আবার ত্রাতা হয়ে গেলেন কোহলি। কি সব সুন্দর শট। কি তার ব্যাটিং করার ধরন। মুহূর্তেই ভারত বিপদে পড়ল। কিন্তু অবিচল উইকেটে দাঁড়িয়ে থাকলেন। অপরাজিত ৮২ রান করে ম্যাচ জিতিয়েই মাঠ ছাড়লেন। তাতে অস্ট্রেলিয়ান সাবেক ক্রিকেটাররা, বর্তমান ক্রিকেটাররা, অসি মিডিয়া অস্ট্রেলিয়ার হারের চেয়ে কোহলির প্রশংসাই করেছে বেশি। আর বিশ্ব ক্রিকেট দরবারে তো ‘কোহলি, কোহলি’ রব উঠেছেই। আজও কী সেই রব বজায় থাকবে? নাকি কোহলিকে নিয়ে যে এত উচ্চৈঃস্বর, সেটি ব্যাটিং ঝড় তুলে কেড়ে নেবেন গেইল? সেটি সময়ই বলে দেবে। তবে আজ সেমিফাইনাল ম্যাচে ভারত কিংবা ওয়েস্ট ইন্ডিজের জয়ের যে রূপরেখা, তা কোহলি ও গেইলকে ঘিরেই দেখা হচ্ছে। সেখানে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে মাত্র ২ টি২০ খেলে অর্ধশতকসহ ৬৮ রান যে করেছেন কোহলি এবং ভারতের বিপক্ষে ৩ ম্যাচে একটি ৯৮ রানের ইনিংসসহ ১৫৪ রান করেছেন গেইল, ব্যাটিং দানব গেইলই যে এখানে এগিয়ে রয়েছেন, তা কেউই আমলে নিচ্ছেন না। সবই যে অতীত। সবাই সেমিফাইনাল ম্যাচটি নিয়েই ভাবতে রাজি। যে ভারত-ওয়েস্ট ইন্ডিজ সেমিফাইনালে ম্যাচকে ছাপিয়ে কোহলি-গেইল যুদ্ধই যেন বড় হয়ে উঠেছে।
×