ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বন্ধ হোক অপরিকল্পিত শিল্পায়ন

প্রকাশিত: ০৪:১৯, ৩১ মার্চ ২০১৬

বন্ধ হোক অপরিকল্পিত শিল্পায়ন

সাদিয়া তাবাসসুম বৃষ্টি আধুনিক সভ্যতার স্বর্ণ শিখরে আরোহণ করেও আজ মানুষ ক্লান্ত ও পরিশ্রান্ত হয়ে পড়েছে। আধুনিকতার কর্মনেশা জীবনে শস্য-শ্যামল আরণ্যিক পটভূমি আজ ধ্বংসের দিকে পতিত হতে চলেছে। ‘সুজলা-সুফলা, শস্য-শ্যামলা আমাদের এই বাংলাদেশ’ কবি গুরুর এই কথাটি শহুরে কৃত্রিমতার চাপে হারিয়ে যেতে বসেছে তা নিঃসন্দেহেই বলা যায়। বাংলাদেশের অস্তিত্বের সঙ্গে মিশে আছে কৃষি। অনেক আদিমতম একটি জীবিকার মাধ্যমের কথা যদি বলতে হয় তাহলে প্রথমেই আসবে কৃষি কাজের কথা। বাংলাদেশের শতকরা ৮০ জন ব্যক্তি কৃষি কাজের মাধ্যমে তাদের জীবিকা নির্বাহ করে। তাই জাতি তথা পুরো দেশের সার্বিক উন্নতিতে সর্বাত্মক ভূমিকা পালন করে কৃষি কাজ। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের থেকে বাংলাদেশের মাটি অনেক বেশি উর্বর এবং কৃষি কাজের অনুকূলে রয়েছে। তবে আমাদের অত্যন্ত ব্যর্থতার বিষয় এই যে, অন্যান্য দেশের মানুষ যখন প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে তাদের ভূমিকে কৃষি কাজের উপযুক্ত করে গড়ে তোলার জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ করছে তখন বাংলাদেশে ক্রমান্বয়ে কমছে কৃষিজমি। প্রতিবছর অনেক অপরিকল্পিত নগরায়ণও শিল্পায়নের কারণে বাংলাদেশের কৃষি জমি কমছে দিনের পর দিন। গ্রামের শস্য-শ্যামল মেঠো পথে হেঁটে গেলে স্বভাবতই কিছুদিন আগেও আমাদের চোখ জুড়িয়ে যেত। যেদিকে তাকানো যেত কেবলমাত্র সবুজ ফসলে ভরে থাকা কৃষি জমিই আমরা দেখতে পেতাম। তবে এখন সেই একই জমিতে গড়ে উঠেছে বহুতল শিল্প কারখানা, আবার কখনও বা মৎস্য খামার। যেতে যেতে চোখে পড়ে অনেক দোতলা ঘর, যা একদিকে কেড়ে নেয় গ্রামীণ সৌন্দর্য অন্যদিকে কমিয়ে দিচ্ছে কৃষি জমি। আধুনিকতার নামে এ সকল শিল্পায়ন, নগরায়ণ যে আমাদের দেশের অর্থনৈতিক মেরুদণ্ডকে কতটা ক্ষতিগ্রস্ত করছে তা ভাবার সময় এসে গেছে। শুধু নগরায়ণই নয় নদী ভাঙ্গনের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের কাছেও আমরা আজ অসহায় হয়ে হারিয়ে ফেলছি কৃষি জমি। লবণাক্ততার কারণে অনেক জমি কৃষি কাজের অনুপযোগী বলে গণ্য হচ্ছে। সবকিছু বিবেচনার প্রেক্ষিতে দেখা গেছে বাংলাদেশে শতকরা মোট ১ ভাগ কৃষি জমি আমরা প্রতিবছর হারিয়ে ফেলছি। যদি এভাবে তার অফুরন্ত কৃষি জমিকে হারাতে থাকে তাহলে খাদ্য উৎপাদন ব্যাহত হবে। একটি দেশে যদি পর্যাপ্ত উৎপাদন করতে না পারা যায় তাহলে সে দেশের অবস্থান কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তা কল্পনা করাও যায় না। এই দেশের মেরুদণ্ড যদি এভাবে ভেঙ্গে দেয়া হয় তবে দেশ ও জাতির জন্য তা এক ভয়ঙ্কর অন্ধকার যুগ বয়ে নিয়ে আসবে। তবে আমাদের দেশের মানুষের অন্ন ও বাংলাদেশের চিরচেনা রূপকে ধরে রাখতে হবে আমাদেরকেই। যার জন্য পরিকল্পনা মতো পদক্ষেপ গ্রহণের সঠিক সময় এখন। সরকারকে এ বিষয়ে অধিক গুরুত্ব আরোপ করতে হবে। সরকারী উদ্যোগে সুনির্দিষ্ট কিছু জমি রাখতে হবে যা কেবলমাত্র কৃষি কাজেই ব্যবহৃত হবে। অপরিকল্পিতভাবে কোন আবাসন ও অন্য অবকাঠামো গড়ে তোলা যাবে না- এমন সতর্কবার্তা পৌঁছে দিতে হবে সকলের মাঝে। মনে রাখতে হবে আমার দেশ- আমার জন্মভূমি। সেই ভূমিকে রক্ষা করা ও সুপরিকল্পনার মাধ্যমে সঠিক ব্যবহার করার দায়িত্বও সকলের। সবার ভেতরের এই ভাবনাই পারবে আমাদের দেশকে ধন-ধান্যে ভরিয়ে রাখতে। জামালপুর থেকে
×