ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

চাই সঠিক পরিকল্পনা

প্রকাশিত: ০৪:১৭, ৩১ মার্চ ২০১৬

চাই সঠিক পরিকল্পনা

মোঃ মিনহাজুর রহমান ভূঁঞা কৃষিপ্রধান দেশ বাংলাদেশ। এদেশের অর্থনীতির সঙ্গে কৃষির গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। অর্থাৎ অর্থনীতির গতির এক বিশেষ নিয়ামক হিসেবে কাজ করে বাংলাদেশের কৃষি। আমাদের প্রধান খাদ্য চাল-গম-ভুট্টাসহ বিভিন্ন রকম সবজি-মাছ। সহজ করে বললে, ১৬ কোটি মানুষের খাদ্যের চাহিদা মিটিয়ে থাকে কৃষি। শুধু খাদ্যই নয়, কৃষির ওপর নির্ভরশীল আমাদের কর্মসংস্থানও। প্রশ্ন দেখা দিয়েছে কৃষির ওপর যতটা নির্ভরশীল, ঠিক ততটা কি গুরুত্ব দিচ্ছি কৃষির ওপর? সভ্যতার ক্রমোন্নতির বিকাশ আর আধুনিকতার ছোঁয়ায় পাল্টে যাচ্ছে প্রাকৃতিক পরিবেশ। প্রাকৃতিক পরিবেশের সঙ্গে যেহেতু কৃষি জমির গভীর সম্পর্ক, তাই সভ্যতার যতটা নকশা চিত্রায়িত হচ্ছে, ততটাই বিলীন হচ্ছে আমাদের কৃষি জমি। আর আমাদের সোনার বাংলার মাটি কৃষি চাষের জন্য এতটা উর্বর আর এতটা উপযোগী যা পৃথিবীর অন্য সব মাটির চেয়েও শ্রেষ্ঠ। সেই মাটির উর্বরতা আর ফসল ফলানোকে আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি না। বিভিন্ন কারণে কৃষি জমি বিলীন হতে যাচ্ছে। একদিকে নদীভাঙ্গন জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এবং আমাদের সভ্যতার উন্নয়ন মানসিকতায় আমাদের কৃষি জমি কমতে শুরু করেছে। শহরায়ন-নগরায়ন সৃষ্টির নামে কিছু হাউজিং ব্যবসায়ীর কু-দৃষ্টি আবাদযোগ্য জমির ওপর। আবার জলবায়ু পরিবর্তন যেমন ভূমিক্ষয়, নদীগর্ভ ভরাট, শুষ্ক মৌসুমে নদীপ্রবাহ কমে যাওয়া, বর্ষাকালে অধিক বৃষ্টিপাত, বন্যা, জলাবদ্ধতা, অনাবৃষ্টি, অত্যধিক খরা, উপকূল অঞ্চলের লবণাক্ততা বৃদ্ধি ইত্যাদি কারণে কৃষির উৎপাদন ব্যবস্থা হুমকির মুখে। পাশাপাশি নদী দূষণের কারণেও কৃষির সার্বিক উৎপাদন ব্যাঘাত ঘটছে। কৃষি পরিবারের এমন কেউ আছেন, যারা ভাবেন যে কৃষি জমি ভরাট করে দালান ভবন নির্মাণ করবে। আবার কেউ আছেন যারা, জমি ভরাট করে দোকানপাট দিয়ে বসেছে, একটু বেশি আয়ের আশায়। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে আবাসস্থলের চাহিদা বৃদ্ধি পায়। যার কারণেকমে যাচ্ছে কৃষি জমি। শহরের নগরের ধনীরা যদি আংশিকভাবেও একজন কৃষকের ওপর নির্ভরশীল হয়, তাহলে কৃষকের কেন অধিকার হবে না সভ্যতা আর আধুনিক বিজ্ঞানের ছোঁয়া স্পর্শ করার? কৃষকের কৃষি জমি অটুট রেখেও তাকে সভ্যতা আর শহরের সুবিধা ভোগ করার সুযোগ দিতে হবে। কৃষক কষ্ট করে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে ফসল ফলিয়ে তেমন মুনাফা অর্জন করতে পারে না। বরং সেই ফসল ভোক্তা পর্যন্ত পৌঁছাতে তিন চার স্তরের ব্যবসায়ী মুনাফা অর্জন করে। এরকম পুঁজি ছাড়া রুজি করার মতো। কিন্তু কৃষক যদি জাতীয় স্বার্থে ফসল উৎপাদন করতে পারে তবে সে কেন ন্যায্য অধিকার পাবে না? কৃষকদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করাও কৃষির ওপর নেতিবাচক প্রভাব বর্তায়। জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে কৃষি উৎপাদন আরও কিভাবে বৃদ্ধি করা যায়, তা নিয়ে কৃষি বিজ্ঞানীরা সজাগ দৃষ্টিতে আছেন বলে বিশ্বাস করছি। খাদ্য ঘাটতি সংকুলান, পুষ্টি নিরাপত্তা, গ্রামীণ দারিদ্র্য দূরীকরণ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ইত্যাদিতে কৃষির গুরুত্ব অপরিসীম। দেশের অর্থনীতির চালিকাশক্তি কৃষিকে আরও গুরুত্ব সহকারে এগিয়ে নিতে হবে। কৃষককে বাঁচালে কৃষি বাঁচবে, কৃষি বাঁচলে দেশ বাঁচবে তবেই আমরা বাঁচব। পশ্চিম রেসকোর্স, কুমিল্লা থেকে
×