ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

স্কুলের খেলার মাঠ ছোট বলায় বহিষ্কার- আদালতে স্থগিত

প্রকাশিত: ০৭:২০, ৩০ মার্চ ২০১৬

স্কুলের খেলার মাঠ ছোট বলায় বহিষ্কার- আদালতে স্থগিত

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীর বাড্ডায় স্যার জন উইলসন স্কুলের শিক্ষার্থী মালিহা মুসকান আহমেদ ও মানইউ আহমেদকে বহিষ্কার করার সিদ্ধান্তকে অবৈধ ঘোষণা করেছে হাইকোর্ট। একই সঙ্গে বহিষ্কারাদেশের আদেশ স্থগিত করে ওই দুই শিক্ষার্থীকে নিয়মিত ক্লাস ও পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার জন্য সুযোগ করে দেয়ার নির্দেশও দেয়া হয়েছে। মঙ্গলবার এক রিট আবেদনের শুনানি শেষে হাইকোর্টের বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ দস্তগীর হোসেন ও বিচারপতি একেএম সাহিদুল হকের সমন্বয়ে গঠিত দ্বৈত বেঞ্চ এ আদেশ দেন। স্কুলের মাঠ ছোট বলে অভিভাবকের করা মন্তব্যের কারণে বাড্ডার স্যার জন উইলসন স্কুল কর্তৃপক্ষ দুই শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করে। উল্লেখ্য, রিট করার আগে দুই শিশু মালিহা মুসকান আহমেদ (১৪) এবং মানইউ আহমেদের (৭) পিতা মিনহাজ আহমেদ স্কুল কর্তৃপক্ষ তার সন্তানদের শিক্ষার অধিকার খর্ব করেছে- এর প্রতিকার চেয়ে ১৯ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বরাবর একটি আবেদনও করেন। এদিকে, শুনানিকালে আদালত বলেন, ‘যে স্কুল এই ছোট ছোট শিক্ষার্থীর সঙ্গে এ ধরনের আচরণ করতে পারে, সেখানে কেন আপনারা তাদের ভর্তি করেন? তাদের কি বাচ্চাদের জন্য একটুও মায়া লাগে না? তাহলে এই স্কুলে পড়িয়ে কী লাভ? বহিষ্কারের এই ঘটনা খুবই দুঃখজনক।’ বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা নিয়ে এই দুই শিক্ষার্থীর বাবা মিনহাজ আহমেদ শাফিল বলেছিলেন, ‘স্পোর্টস ভাল হয়েছে। কিন্তু খেলার মাঠ খুবই ছোট।’ প্রকল্প পরিচালক এমএ রউফকে এই কথা বলায় স্কুল কর্তৃপক্ষ ওই শিক্ষার্থীদের বহিষ্কার করে। এই আদেশ চ্যালেঞ্জ করে রিট আবেদন করেন মিনহাজ আহমেদ। আবেদনের পক্ষে এ্যাডভোকেট হাবিবুল ইসলাম ভূঁইয়া ও ব্যারিস্টার মনিরুজ্জামান আসাদ শুনানি করেন। শুনানি শেষে আদালত রুল জারি করে অন্তবর্তীকালীন আদেশ দেয়। এর আগে স্কুল কর্তৃপক্ষের বহিষ্কারাদেশ চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন ওই দুই শিক্ষার্থীর বাবা মিনহাজ আহমেদ। মিনহাজ আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, গত ২৪ মার্চ তিনি হাইকোর্টে এ আবেদন করেন। এর আগে গত ১০ মার্চ মিনহাজ আহমেদ তাঁর ছেলেকে স্কুল থেকে আনতে গেলে ওই স্কুলের অভ্যর্থনাকক্ষে থাকা কর্মী জানতে চান, স্কুলের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা কেমন হয়েছে। ওই কর্মীর কথার জবাবে তিনি বলেন, ভালই। কিন্তু স্কুলের মাঠটি এতই ছোট যে, সেখানে ঠিকভাবে খেলাধুলা করা যায় না। এ সময় অভ্যর্থনাকক্ষের কর্মী মাঠ না থাকার বিষয়টি প্রকল্প পরিচালককে জানাতে বলেন। কর্মীর সঙ্গে কথা বলার একপর্যায়ে এক ব্যক্তি এগিয়ে এসে নিজেকে প্রকল্প পরিচালক পরিচয় দিয়ে কথা বলতে চান। এর পর মাঠ নিয়ে তাঁর সঙ্গে বাকবিত-া হয়। মিনহাজ আহমেদ বলেন, ‘আমি তাদের বলি, স্কুলটি যেহেতু নিজের জায়গায় জমি কিনে ভবন করেছে, সেখানে মাঠটা একটু বড় করলেই হতো। এতে ওই ব্যক্তি ক্ষুব্ধ হয়ে তর্ক শুরু করেন। আমি তখন আর এ বিষয়ে কোন কথা বলতে রাজি হইনি। ছেলেকে নিয়ে বাড়িতে ফেরার পর ওই দিন বিকেলেই স্কুল কর্তৃপক্ষ চিঠি দিয়ে জানায়, আমার দুই সন্তান আর এই স্কুলে পড়তে পারবে না।’ পরে মিনহাজ আহমেদ স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেন। তবে তারপরও তাঁর সন্তানদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করেনি স্কুল কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে তিনি হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন। পরে রিটের শুনানি শেষে হাইকোর্ট ওই বহিষ্কারকে অবৈধ ঘোষণা করে শিক্ষার্থী দু’জনকে নিয়মিত ক্লাস ও পরীক্ষা দিতে নির্দেশ দেয়। উল্লেখ্য, জন উইলসন স্কুলটি আগে গুলশানে ছিল। মাস তিনেক আগে এটি বাড্ডার সাঁতারকূলে কেনা জমিতে স্থায়ী ভবনে যায়। মিনহাজ আহমেদের এক মেয়ে ও এক ছেলে ওই স্কুলেরই শিক্ষার্থী ছিল।
×