ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বিউটি পারভীন

অপ্রাপ্তির মাঝেও আছে অনেক অর্জন

প্রকাশিত: ০৬:৫৪, ৩০ মার্চ ২০১৬

অপ্রাপ্তির মাঝেও আছে অনেক অর্জন

এবার টি২০ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে খেলার প্রত্যাশা নিয়েই ভারতে গিয়েছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। কিন্তু সব ম্যাচ হেরে সুপার টেনের গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নিতে হয়েছে। এ জন্য অবশ্য দলের ক্রিকেটারদের ওপর মানসিক আঘাতটাও বড় কারণ হিসেবে দেখছেন অনেকে। সুপার টেন পর্বের আগেই স্পিনার আরাফাত সানি ও অপরিহার্য পেসার তাসকিন আহমেদ ত্রুটিযুক্ত বোলিং এ্যাকশনের জন্য সাময়িক নিষেধাজ্ঞা পান আইসিসি থেকে আর তাতেই মনোবল ভেঙ্গে যায় টাইগারদের। কারণ তাসকিন দুর্দান্ত বোলিং করে অন্যতম নির্ভরতা হয়ে উঠেছিলেন দলের। যেহেতু অন্যতম পেসস্তম্ভ মুস্তাফিজুর রহমান ইনজুরিতে, সেই অবস্থায় তাসকিনকে হারানোর বেদনা ভুলতে পারেনি বাংলাদেশ দল। সে কারণেই সব ম্যাচ হেরেই বিদায় নিতে হলো। যদিও অস্ট্রেলিয়া ও ভারতের মতো ক্রিকেট পরাশক্তিদের বিরুদ্ধে দারুণ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে হারার কারণে নিজেদের শক্তিমত্তার প্রমাণটা দিতে পেরেছে বাংলাদেশ দল। বিশ্বের যে কোন দলকে হারানোর আত্মবিশ্বাসটা অর্জিত হয়েছে এর মাধ্যমে। ভারতের কাছে ১ রানের হারটাই বিশ্ব ক্রিকেটকে চরমপত্র যে ভবিষ্যতে এই ফরমেটেরও ভয়ঙ্কর দল হয়ে উঠবে বাংলাদেশ দল। কারণ একইভাবে ২০১২ এশিয়া কাপে পাকিস্তানের কাছে ফাইনালে ২ রানের পরাজয়ে পুরো দেশ শোকস্তব্ধ হয়েছিল। কিন্তু সেই আক্ষেপটাই টাইগারদের বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম ওয়ানডে শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠা দিয়েছে। এ কারণেই মাশরাফির প্রত্যয় আগামীতে বিশ্বের অন্যতম শক্তিধর টি২০ দল হয়ে উঠবে বাংলাদেশ। দলগতভাবে সফল না হলেও ব্যক্তিগত সাফল্যে উজ্জ্বল বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররা। সুপার টেন পর্ব শেষে টুর্নামেন্টের সর্বাধিক রান সংগ্রাহক ওপেনার তামিম ইকবাল। তিনি আবার এই বিশ্বকাপেই দেশের হয়ে প্রথম টি২০ সেঞ্চুরিয়ান ও ১ হাজার রানের মালিক হয়েছেন। সাকিব আল হাসান সুপার টেন শেষে ১০ উইকেট নিয়ে তৃতীয় অবস্থান পেয়েছেন। আর টি২০ বিশ্বকাপে দেশের পক্ষে সেরা বোলিং নৈপুণ্য এবং চলতি আসরের সেরা বোলিং করেছেন পেসার মুস্তাফিজ। পুরো টুর্নামেন্টে ভাল ক্রিকেট খেলেছে লাল-সবুজের দল। তারা জানান দিয়েছে এই টুর্নামেন্টের মাধ্যমে টি২০ ফরমেটেও উত্থান হয়েছে তাদের। তবে ম্যাচ জিততে না পারায় উন্নতির মানদ-টা বিচার করা যায়নি! এশিয়া কাপের ফাইনাল খেলেই ভারতের উদ্দেশে রওনা দেন মাশরাফিরা। ধর্মশালায় বাংলাদেশকে বিশ্বকাপের প্রাথমিক রাউন্ড খেলতে হয়েছে আইসিসির সহযোগী তিন দেশের বিপক্ষে। ৯ মার্চ প্রথম ম্যাচে হল্যান্ডের বিরুদ্ধে ৮ রানের জয় দিয়ে টুর্নামেন্টে শুভসূচনা করে তামিম-সাকিবরা। আগে ব্যাট করে বাংলাদেশ তামিমের ৮৩ রানের ওপর দাঁড়িয়ে ১৫৩ রানের ইনিংস খেলে। জবাবে ৭ উইকেট হারিয়ে আইরিশদের ইনিংস ১৪৫ রানেই থেমে যায়। ধর্মশালাতে বাংলাদেশ দ্বিতীয় ম্যাচে মুখোমুখি হয় আইরিশদের বিপক্ষে। কিন্তু বৃষ্টির কারণে ম্যাচটি পরিত্যক্ত হয়। তবে বাংলাদেশ ওই ম্যাচে ব্যাটিং অনুশীলনটা করে নিয়েছিল। ১২ ওভারের ম্যাচে আগে ব্যাটিং পাওয়া বাংলাদেশ ৮ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে ৯৪ রান করে। এই ম্যাচেও তামিম ৪৭ রানের বিধ্বংসী ইনিংস খেলেন। ১৩ মার্চ প্রথম রাউন্ডের শেষ ম্যাচটিতে ওমানের মুখোমুখি হয় বাংলাদেশ। দুই দলের জন্যই ম্যাচটি অলিখিত ফাইনালে রূপান্তরিত হয়। ডাকওয়ার্থ-লুইস পদ্ধতিতে ৫৪ রানে জিতে বিশ্বকাপের মূল পর্বে খেলার টিকেট নিশ্চিত করে বাংলাদেশ। শুধু তাই নয়, এই ম্যাচটি বাংলাদেশের ক্রিকেটে ইতিহাস হয়ে থাকবে। টি২০ ক্রিকেটে বাংলাদেশের প্রথম সেঞ্চুরির মালিক হন তামিম। ওমানের বিপক্ষে তার ব্যাট থেকে এসেছে ১০৩ রানের বিস্ফোরক এক ইনিংস। ৬৩ বলে ১০ চার ও ৫ ছয়ে তিনি তার ইনিংসটি সাজান। ওয়ানডে ও টেস্টের মতো বাংলাদেশের ক্রিকেটে টি২০ প্রথম সেঞ্চুরিয়ানের নাম ক্রিকেটের বাইবেলে আজীবন লেখা থাকবে। এই বিশ্বকাপে এটি বাংলাদেশের অন্যতম প্রাপ্তি। এই ম্যাচেই প্রথম বাংলাদেশী ব্যাটসম্যান হিসেবে টি২০ ক্রিকেটে ১ হাজার রানের মালিক হয়ে যান তিনি। ধর্মশালাতে প্রাথমিক রাউন্ড শেষ করে বাংলাদেশ কলকাতার উদ্দেশে উড়াল দেয়। সেখানে মূল পর্বের প্রথম ম্যাচে তাদের জন্য অপেক্ষা করে পাকিস্তান। এশিয়া কাপে পাকিস্তানকে বিদায় করে দিয়ে ফাইনাল খেলেছিল বাংলাদেশ। বিশ্বকাপেও এর পুনরাবৃত্তি ঘটবে এমনটাই ভেবেছিল টাইগার ভক্তরা। কিন্তু মূল পর্বের শুরুটা ভাল হয়নি টাইগারদের। ১৪ মার্চ পাকিস্তানের কাছে বাংলাদেশ ম্যাচ হেরে যায় ৫৫ রানে। মূল পর্বের শুরুটা বাজেভাবে করে ব্যাঙ্গালুরুর উদ্দেশে কলকাতা ছাড়েন টাইগাররা। ওখানে যাওয়ার আগে আইসিসি জানিয়েছিল অবৈধ বোলিং এ্যাকশনের কারণে পরীক্ষা দিতে হবে তাসকিন আহমেদ ও আরাফাত সানিকে। আইসিসির কথায় সানি ১৩ মার্চ ও তাসকিন ১৪ মার্চ পরীক্ষা দেন। সবাই ভেবেছিল সানি হয়ত উতরে যেতে পারবেন না। কিন্তু নিশ্চিতভাবে পরীক্ষায় পাস করবেন তাসকিন। মাশরাফিসহ টিম ম্যানেজমেন্ট ধরেই নিয়েছিলেন তাসকিন বোলিংয়ের বৈধতা পাবেন। কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে তাসকিন ও সানিকে সাময়িকভাবে অবৈধ ঘোষণা করে আইসিসি। এমন ঘটনার প্রভাব দলের মধ্যেও পড়ে। অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে ম্যাচের আগেরদিন ভেঙ্গে পড়েন মাশরাফি। এর কারণও আছে। আগের ম্যাচগুলোতে নিয়মিত মূল একাদশে খেলেছিলেন তাসকিন ও সানি। প্রথম ম্যাচ হারার পর দ্বিতীয় ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দুইজন মূল বোলার ছাড়া নামতে হয়েছে মাশরাফিদের। ওইদিন অসুস্থতার কারণে খেলতে পারেননি তামিমও। তারপরও মাশরাফিরা অসিদের বিপক্ষে লড়াই করেছে খুব ভালভাবেই। ম্যাচটিতে বাংলাদেশ হারে ৩ উইকেটে। দারুণ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে অবশ্য দল। তৃতীয় ম্যাচে ভারতের মুখোমুখি হয় বাংলাদেশ। পুরো ম্যাচে এগিয়ে ছিল টাইগাররা। শেষ ৩ বলে বাংলাদেশের জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ২ রান। ওখান থেকে ম্যাচটি হেরে যায় বাংলাদেশ। আগে ব্যাটিং করে ভারতকে বাংলাদেশের বোলাররা ১৪৬ রানেই আটকে রাখে। জবাবে খেলতে নেমে ১ রানে হেরে যায় বাংলাদেশ। ওই হারের পরই বিদায় নিশ্চিত হয়ে যায় মাশরাফিদের। কিন্তু এ ম্যাচ থেকে সবাই টের পেয়ে যান বিশ্ব ক্রিকেটের পরবর্তী আতঙ্ক হতে চলেছে বাংলাদেশ। এরপর আবার কলকাতায় ফিরে আসেন মাশরাফিরা। উদ্দেশ্য নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টুর্নামেন্টে নিজেদের শেষ ম্যাচটি খেলা। শেষটা ভাল করতে চেয়েছিলেন মাশরাফিরা। কিন্তু পারেননি। হার দিয়েই শেষ হয়েছে তাদের বিশ্বকাপ মিশন। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে এই টুর্নামেন্টের সবচেয়ে বাজে ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। মাশরাফিরা নিউজিল্যান্ডের বোলারদের তোপে মাত্র ৭০ রানে অলআউট হয়। এমন একটি বাজে দিনে মুস্তাফিজ ছিলেন উজ্জ্বল। তিনি এদিন টি২০-তে ক্যারিয়ারসেরা বোলিং করেন। ২২ রান খরচায় ৫ উইকেট তুলে নেন। এটি সুপার টেন পর্যন্ত এই টুর্নামেন্টের সেরা বোলিং ফিগার। টি২০ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের পক্ষে সেরা বোলিং নৈপুণ্য। চলতি বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত তামিম রান সংগ্রহের দিক থেকে সবার ওপরে। আর বিশ্বকাপের আগে বাজে সময়ের মধ্যে যাওয়া বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানও দারুণ ফর্মে ফিরেছেন। তিনি ৭ ম্যাচে ১০ উইকেট শিকার করে তিন নম্বরে। এক হাজার রান ও ৫০ উইকেটও হয়ে গেছে তার। পুরো আসরে মুস্তাফিজ খেলতে না পারলেও তিন ম্যাচ খেলেই মুস্তাফিজ চমক দেখিয়েছেন। ৯ উইকেট তার ঝুলিতে নিয়ে চারে অবস্থান করছেন। ধারাবাহিকভাবে সফল ছিলেন বোলিংয়ে আল আমিন হোসেন এবং ব্যাটিংয়ে সাব্বির ও মাহমুদুল্লাহ।
×