ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ভারতের হাতেই এশিয়ার ঝান্ডা

প্রকাশিত: ০৬:২৬, ২৯ মার্চ ২০১৬

ভারতের হাতেই এশিয়ার ঝান্ডা

মিথুন আশরাফ, কলকাতা থেকে ॥ খেলা হয়েছে মোহালিতে। অথচ পুরো ভারতেই সে কি উৎসব! অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে সেমিফাইনালে খেলা নিশ্চিত হতেই রাস্তায় রাস্তায় মোটর র‌্যালি, গায়ে রং মাখামাখি, ‘ইন্ডিয়া, ইন্ডিয়া’ চিৎকারে উল্লাস। মনে হলো যেন গত বৃহস্পতিবার নয়; ‘হোলি’ হয়েছে রবিবার রাতে! কলকাতায় সেই আঁচ ভালভাবেই মিলেছে। চোখের সামনে দেখা গেছে ভারতের সমর্থকরা দলকে নিয়ে কি পাগল! কি তাদের জয়ের উল্লাসে মাতাল হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা। হবেই বা না কেন, এবার টি২০ বিশ্বকাপে যে দক্ষিণ এশিয়ার ঝা-া একমাত্র ভারতের হাতেই আছে। শ্রীলঙ্কা গেছে। এবার বিশ্বকাপে যাচ্ছে তাই অবস্থা হয়েছে দলটির। মাত্র ১টি জয় পেয়েছে। তাও বড় কোন দলের বিপক্ষে নয়, আফগানিস্তানের বিপক্ষে জিতেছে। পাকিস্তানও গেছে। তারাও একটি ম্যাচই জিততে পেরেছে। সেই জয়টি এসেছে বাংলাদেশের বিপক্ষে। বাংলাদেশও গেছে। টি২০ বিশ্বকাপে ‘সুপার টেনে’ একটি ম্যাচেও জিততে পারেনি বাংলাদেশ। উল্টো ৭০ রানে অলআউট হওয়ার লজ্জায় ডুবেছে। এবার বিশ্বকাপে একটি দলই শুধু ‘সুপার টেনে’ কোন ম্যাচ জিততে পারেনি। সেই দলটি বাংলাদেশ। আফগানিস্তানও শেষে ঝলক দেখিয়ে দিয়েছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের মতো শক্তিশালী দলকে হারিয়ে শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তানের মতো ১ জয় নিয়েই ‘সুপার টেন’ থেকে বিদায় নিয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার দলগুলোর মধ্যে শুধু বাকি রয়েছে ভারতই। এখন স্বাগতিক ভারতের হাতেই সব আশা-ভরসা! দলটি বৃহস্পতিবার মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ফাইনালে ওঠার ম্যাচে লড়াই কবে। রবিবারের আগ পর্যন্ত সেমিফাইনালে তিনটি দলের খেলা নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল। তিনটি দলই ছিল দক্ষিণ এশিয়ার বাইরে। সবার আগে ‘গ্রুপ-২’ থেকে নিউজিল্যান্ড সেমিফাইনালে খেলা নিশ্চিত করে। এরপর ‘গ্রুপ-১’ থেকে ওয়েস্ট ইন্ডিজ শেষ চারে ওঠে। তৃতীয় দল হিসেবে একই গ্রুপ থেকে ইংল্যান্ডও সেমিফাইনালে খেলার টিকেট পায়। বাকি থাকে আরেকটি দল। সেই দল কোনটিÑ ভারত না অস্ট্রেলিয়া? তাতেই আটকা ছিল ক্রিকেট বিশ্ব। শেষ পর্যন্ত রবিবার অসিদের হারিয়ে ভারতই সেমিফাইনালে খেলা নিশ্চিত করে। তাতে সেমিফাইনালের চারটি দলও মিলে যায়। এখন টুর্নামেন্টে টিকে রইল চারটি দল। দিল্লীতে বুধবার প্রথম সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ড ও ইংল্যান্ড এবং মুম্বাইয়ে দ্বিতীয় সেমিফাইনালে ভারত ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের মধ্যকার ম্যাচ হবে। দুই সেমিফাইনালের দুই জয়ী দল ৩ এপ্রিল কলকাতার ইডেন গার্ডেনে ফাইনালে মুখোমুখি হবে। এ ফাইনালের আগে সেমিফাইনাল শেষে থাকবে বাকি দুই দল। সেখান থেকে চ্যাম্পিয়ন হবে এক দল। সেই দলটি কারা? সেই হিসেব মেলানোর আগে সেমিফাইনালে জিতবে কোন দুটি দল; সেই আলোচনাই এখন তুঙ্গে। বিশ্বকাপ শুরুর আগে স্বাগতিক ভারতকেই চ্যাম্পিয়ন দলের তালিকায় সবার ওপরে রাখা হয়েছিল। দলটি যে টি২০’র সেরা দল এখন। সেই ভারত এখন খেলছে সেমিফাইনালে। স্বল্প ওভারে এক নম্বর দল এখন ভারত। এরপরও ছোট আকারের এ খেলায় কোন দল যে চ্যাম্পিয়ন হবে, তা বলা মুশকিলই। একটি দিন খারাপ গেলেই শেষ। তাই ভবিষ্যদ্বানী করাও মহাবিপজ্জনক। এরপরও ভারতের পক্ষেই ভোট পড়েছে বেশি। এই ভোট দেড় শ’’ কোটি ভারতীয়র নয়, বাকি ক্রিকেট বিশ্বেরই। বিশ্বের কিংবদন্তি ক্রিকেটাররা ভারতের হাতেই যে শিরোপা উঠবে, তা সাহস করে বলে দিয়েছেন। ওয়ানডে ক্রিকেটের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া; তাদেরই কিংবদন্তি অধিনায়ক স্টিভ ওয়াহ মুখে মুখে টি২০ শিরোপাটা মহেন্দ্র সিং ধোনির হাতে তুলে দিয়েছেন। একই কথা বলেছেন বিশ্বজুড়ে টি২০ টুর্নামেন্টে যারা ক্রিকেটার ‘সরবরাহ’ করে, সেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের কিংবদন্তি ব্রায়ান লারাও। এমনকি ভারতকে চ্যাম্পিয়নের দাবিদার বলে দিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার শেন ওয়াটসনও। যিনি দলকে রবিবার ভারতের বিপক্ষেই হারতে দেখেছেন। পাকিস্তানের লিজেন্ড পেসার ওয়াসিম আকরামও ভারতের ঘরেই শিরোপা দেখছেন। বৈশ্বিক এসব স্বীকৃতির পাশাপাশি সুনীল গাভাস্কার, শচীন টেন্ডুলকর, কপিল দেব, বিরেন্দর শেবাগ, সৌরভ গাঙ্গুলীদের ভারতের চ্যাম্পিয়ন হওয়া নিয়ে আগাম ইঙ্গিততো আছেই। কিন্তু কি কারণে স্বদেশে-বিদেশে ভারতকে সবাই এগিয়ে রাখছে? নিজেদের মাঠে খেলার সুবিধা আছে। সেই সুবিধা নিয়ে ভারত সেমিফাইনালে উঠেছে। টি২০ র‌্যাঙ্কিংয়ের এক নম্বরে অবস্থান এখনও পাকা। এর আগে ১৯৮৭ ও ১৯৯৬ সালে দুটি ওয়ানডে বিশ্বকাপ যৌথভাবে পরিচালনা করে ভারত। ভারত চ্যাম্পিয়ন হতে পারে। সেমিফাইনাল পর্যন্তই আটকে থেকেছে। তবে এখনকার ভারত একেবারেই ভিন্ন দল। ২০১১ সালে যে ভারতে ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনাল হয় শিরোপা ভারতই জিতে। এবার প্রথমবারের মতো যখন ভারতে হচ্ছে টি২০ বিশ্বকাপ, সেই ফরমেটের সেরা দলটিও তারা; প্রত্যাশাতো আকাশচুম্বি থাকবেই। সেই প্রত্যাশা আরও বেড়ে গেছে, যখন শেষ চারে দক্ষিণ এশিয়ার মাত্র একটি দল খেলছে। সেটি ভারতই। ২০০৭ সালের বিশ্বকাপেতো ভারত-পাকিস্তান ফাইনালই হয়। ২০০৯ সালেও অল এশিয়া ফাইনাল হয়। পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা ফাইনালে খেলে। ২০১০ সালে এশিয়ার কোন দল ফাইনালে না খেললেও সেমিফাইনালে পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা খেলে। ২০১২ সালেও দক্ষিণ এশিয়ার দুই দল পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা সেমিফাইনালে থাকে। ফাইনালে থাকে শুধু শ্রীলঙ্কা। ২০১৪ সালেও অল এশিয়া ফাইনাল হয়। ভারত ও শ্রীলঙ্কা শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে খেলে। টি২০ বিশ্বকাপ মানেই সেমিফাইনালে দক্ষিণ এশিয়ার দুটি দল থাকবেই। এমনই নিয়তি হয়ে গিয়েছিল। এবার ষষ্ঠ আসরে এসে তা পাল্টে গেল। শুধু ভারত থাকল সেমিফাইনালে। বিশ্বকাপ শেষ হতে ৬ দিন বাকি। ১৬ দল থেকে ১০ দল হয়ে এখন আছে ৪ দল। ৪ দল থেকে আর তিনদিনের মধ্যে বাকি থাকবে দুই দল। ৩ এপ্রিল শেষ হয়ে যাবে টি২০ বিশ্বকাপ। ২৭ দিনের এ টুর্নামেন্টে শিরোপা জিততে পারে, দক্ষিন এশিয়ার এমন দলগুলোর মধ্যে এখন ভারতই শুধু বেঁচে আছে। এশিয়ার ঝা-া এখন ভারতের হাতেই।
×