ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

দুর্গন্ধময় ময়লা পানিই ঢাকাবাসীর ভরসা, আক্রান্ত পেটের পীড়ায়

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ২৯ মার্চ ২০১৬

দুর্গন্ধময় ময়লা পানিই ঢাকাবাসীর ভরসা, আক্রান্ত পেটের পীড়ায়

ফিরোজ মান্না ॥ প্রতিবছরের মতো এবারও একই চিত্র ঢাকা ওয়াসার। ময়লা আর দুর্গন্ধেভরা ওয়াসার পানি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। নগরবাসী ওয়াসার পানি ব্যবহার করে নানা রকম পেটের পীড়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। ওয়াসা বলছে, শীতলক্ষ্যা ও বুড়িগঙ্গার পানি কল-কারখানার বর্জ্যে অতিমাত্রায় দূষিত এবং দুর্গন্ধ। এই পানিকে শোধন করতে বেশি পরিমাণ ক্লোরিন ব্যবহার করা হচ্ছে। ফলে পানিতে কিছুটা দুর্গন্ধময় পাওয়াটাই স্বাভাবিক। তবে পানি বিশুদ্ধ। অনেক জায়গায় পাইপ লাইন পুরনো হওয়ায় ময়লা ও ঘোলা পানি আসতে পারে। ওয়াসার পানি দৈনন্দিন কাজেও ব্যবহার করা যাচ্ছে না। পানির এমন অবস্থা নিয়ে মগবাজার, পেয়ারাবাগ, আমবাগান, গাবতলা, মধুবাগ, হাজীপাড়া, শাহজাহানপুর, উত্তর শাহজাহানপুর, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা, বাড্ডা, মিরপুর এলাকার মানুষ গত এক সপ্তাহ ধরে দিন কাটাচ্ছে। পানি সরবরাহও কম দেয়া হচ্ছে। ওয়াসা বলছে, চলতি শুষ্ক মৌসুমে রাজধানীতে পানি সরবরাহে কোন সমস্যা না হয় তার জন্য সব ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। কোন এলাকায় পানি সঙ্কট দেখা দিলে ওয়াসার গাড়ি দিয়ে পানি সরবরাহ দেয়া হবে। সূত্র জানায়, সায়েদাবাদ ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট থেকে যে পানি সরবরাহ দেয়া হচ্ছে ওই পানিতে কিছুটা গন্ধ আসছে। কারণ শীতলক্ষ্যা ও বুড়িগঙ্গার পানির দূষণের মাত্রা এত বেশি যে, ওই পানি শোধন করতে অনেক বেশি কেমিক্যাল দিতে হচ্ছে। পানি গন্ধ হলেও মান ভাল আছে। ময়লা ও ঘোলা পানি যে সব এলাকায় পাওয়া যাচ্ছে ওই সব এলাকায় ডিপটিউবওয়েল থেকে পানি সরবরাহ দেয়া হয়। এ কারণে পানিতে ময়লা ও ঘোলা হতে পারে। পানিতে ময়লা আসার আরও একটি কারণ হচ্ছে পাইপে যখন পানির চাপ কম থাকে তখন পুরনো পাইপগুলোর বিভিন্ন স্থানের ছিদ্র পথ দিয়ে ময়লা ঢুকে পড়ে। ওই ময়লাগুলো ঘর পর্যন্ত চলে যায়। সমস্যা সমাধানের জন্য এডিবির অর্থায়নে সাড়ে তিন হাজার কিলোমিটার নতুন পাইপ লাইন স্থাপন করা হচ্ছে। নতুন পাইপ লাইন বসে গেলে আর কোন সমস্যা থাকবে না। নদীর পানি বৃদ্ধি পেলে ওয়সার পানির দুর্গন্ধ দূর হবে। বৃষ্টি হলেও ওয়াসার পানি অনেকাংশে ভাল হবে। পানিতে ময়লা পাওয়ার আরেকটি কারণ হচ্ছে বাসার ‘রিজার্ভ ট্যাঙ্ক’ পরিষ্কার না থাকলে পানিতে ময়লা আসতে পারে। অনেক বাড়ি আছে দীর্ঘদিন ধরে এসব ট্যাঙ্ক পরিষ্কার করা হয় না। তবে কারও কাছ থেকে অভিযোগ পেলে আমরা লোক পাঠিয়ে পানি সংগ্রহ করে পরীক্ষা করে বাড়ির মালিককে জানিয়ে দেই কেন, কী কারণে পানিতে ময়লা আসছে। যদি ওয়াসার কোন ত্রুটি থাকে তাহলে সঙ্গে সঙ্গে তা দূর করা হয়। সায়েদাবাদের পানি বড় জোর গুলিস্তান এলাকা পর্যন্ত সরবরাহ হয়ে থাকে। মগবাজার, মালিবাগ, উত্তর শাজাহানপুর, শাজাহানপুর এলাকার পানিতে ময়লা ও দুর্গন্ধ বেশি হতে পারে। কিছু এলাকার পাইপ লাইন পুরনো হওয়ায় পানিতে ময়লা আসতে পারে। সূত্র মতে, বর্তমানে রাজধানীতে ৬০২টি গভীর নলকূপ এবং ৪টি পানি শোধনাগারের মাধ্যমে ২১০ থেকে ২২৫ কোটি লিটার পানির চাহিদার বিপরীতে প্রায় ২১০ থেকে ২১৫ কোটি লিটার পানি উৎপাদন ও সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে। তবে বর্তমানে দৈনিক ২০৮ কোটি লিটার পানি উৎপাদন করে সরবরাহ করা হচ্ছে। প্রায় ১৭ কোটি লিটার পানি ঘাটতি রয়েছে। ওয়াসার পানির ৮৭ শতাংশ ভূ-গর্ভস্থ এবং অবশিষ্ট ১৩ শতাংশ ভূ-পৃষ্ঠের উৎস থেকে সংগ্রহ হচ্ছে। মাত্র ১৭ কোটি লিটার পানি উৎপাদন কমের জন্য বিশেষ কোন অসুবিধা দেখা দেবে না। ওয়াসার এমডি তাকসিম এ খানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে ওয়াসার কর্মকর্তারা স্বীকার করেছেন, গত কয়েক দিন ধরে ওয়াসার পানিতে কিছুটা দুর্গন্ধ আসছে। তবে এ পানি খেলে কোন ক্ষতি হবে না। তাছাড়া চলতি শুষ্ক মৌসুমে ঢাকা মহানগরীসহ আশপাশের এলাকায় পানি সঙ্কট হবে না। পানি সঙ্কট মোকাবেলায় হাতে নেয়া হয়েছে নানা উদ্যোগ। বেশ কিছু নতুন পাম্প বসানো হয়েছে। ফলে নগরবাসী পানির কোন সমস্যায় পড়বে না। এমন আশার কথা শুনিয়েছেন তারা। চলতি শুষ্ক মৌসুমে রাজধানীতে পানির সঙ্কট সমাধানে গত এক বছরে প্রায় ৮৮ গভীর নলকূপ স্থাপন করা হয়েছে। আরও ২৩ গভীর নলকূপ স্থাপনের কাজ চলছে। বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের সময় পানির উৎপাদন অব্যাহত রাখতে মোট ৬০২ পাম্প স্টেশনের মধ্যে ৪৩৩টিতে স্থায়ী জেনারেটর স্থাপন করা হয়েছে। পাশাপাশি জরুরী ব্যবহারের জন্য ৬০ ভ্রাম্যমাণ (মোবাইল) জেনারেটর রয়েছে। যেখানেই বিদ্যুতের লোডশেডিং দেখা দেবে সেখানেই ভ্রাম্যমাণ জেনারেটর পৌঁছে যাবে। এছাড়া লোডশেডিংয়ের বিষয়টি বিবেচনায় রেখে ২০৪ পাম্প স্টেশনে ডুয়েল লাইন বিদ্যুত সংযোগ দেয়া হয়েছে। জরুরী অবস্থা মোকাবেলায় ৩৬ পানির গাড়ি, ১৬ ট্রাক্টর এবং ২৮ ট্রলি প্রস্তুত রাখা হয়েছে। কোন এলাকায় পানি সমস্যা দেখা দিলে পানির গাড়ি দিয়ে পানি পৌঁছে দেয়া হবে। শুষ্ক মৌসুমে কয়েকটি কারণে পানি সরবরাহে ঘাটতি হয়। পানি উত্তোলনের তুলনায় রিচার্জ কম হওয়ায় ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যায়। বিদ্যুত বিভ্রাটের জন্য গভীর নলকূপগুলো ২৪ ঘণ্টা চালু রাখা সম্ভব হয় না। জেনারেটর দিয়ে অবিরাম পাম্প চালানোও সম্ভব নয় বলে পানির উৎপাদন কম হয়। তবে এবার ওয়াসা আগে থেকেই শুষ্ক মৌসুম মোকাবেলায় কাজ শুরু করেছে।
×