ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

ভিন্ন আঙ্গিকে মঞ্চস্থ শেক্সপিয়ারের রোমিও জুলিয়েট

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ২৯ মার্চ ২০১৬

ভিন্ন আঙ্গিকে মঞ্চস্থ শেক্সপিয়ারের রোমিও জুলিয়েট

স্টাফ রিপোর্টার ॥ উইলিয়াম শেক্সপিয়রের কালজয়ী সৃষ্টি রোমিও-জুলিয়েট। বইয়ের পৃষ্ঠা থেকে সেলুলয়েড কিংবা মঞ্চÑ নানাভাবে শিল্পরসিককে আলোড়িত করেছে এই প্রেমগাথা। সেই সূত্রে রসিকজনদের কাছে খুবই পরিচিত। চিরকালই যেন এর আবেদন সমানভাবে প্রবহমান। সেই চিরকালীন আবেদনের রেশ ধরে আরেকবার মঞ্চস্থ হলো রোমিও এ্যান্ড জুলিয়েট। তবে এ মঞ্চায়নের আঙ্গিকে ঘটেছে পরিবর্তন। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট বিবেচনায় রেখে সাজানো হয়েছে প্রযোজনাটি। সবচেয়ে পরিবর্তনের বিষয়টি হচ্ছে অভিনয়শিল্পী নির্বাচন। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে তুলে আনা শারীরিক, দৃষ্টি ও শ্রবণ প্রতিবন্ধীরা হয়েছেন এই নাটকের কুশীলব। ভিন্নভাবে সক্ষম এই মানুষগুলোর শরীরী প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে অভিনয়ের গুণে অনবদ্য হয়ে ধরা দিয়েছে প্রযোজনাটি। ইতালির ভেরোনা নগরীকে ঢাকায় রূপান্তরিত করে একঝাঁক শারীরিক প্রতিবন্ধী মঞ্চে তুলে আনলেন বিশ্বসাহিত্য ইতিহাসের সবচেয়ে করুণ প্রেমকাহিনী। স্ক্যাচে কিংবা হুইলচেয়ারে ভর করে হেঁটে, ইশারা ভাষায় শিল্পীরা মিলনায়তনভর্তি দশর্কের চোখের কোণে আনলেন অশ্রু, মন জয় করে পেলেন তুমুল করতালি। সোমবার বসন্ত বাতাসমাখা সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে মঞ্চস্থ হলো এ ডিফারেন্ট রোমিও এ্যান্ড জুলিয়েট। উইলিয়াম শেক্সপিয়রের ৪০০তম প্রয়াণবার্ষিকী স্মরণীয় করে রাখতে ঢাকা থিয়েটার ও যুক্তরাজ্যের গ্রায়ে থিয়েটারের সঙ্গে যৌথভাবে প্রযোজনাটি মঞ্চস্থ করল ব্রিটিশ কাউন্সিল। খ্যাতিমান সাহিত্যিক দেবেশ রায়ের অনুবাদ থেকে নাটকটির প্রাথমিক ভাবনা আসে নাসির উদ্দিন ইউসুফের কাছ থেকে। ১৬ জন মেধাবী প্রতিবন্ধী শিল্পী নাটকটি মঞ্চায়ন করে। তাদের স্বতন্ত্র অভিনয়শৈলীতে নাটকটিকে দিয়েছে অভিনবত্ব। ঢাকা থিয়েটারের পরিচালক নাসির উদ্দিন ইউসুফের প্রযোজনায় নাটকটির নির্দেশনা দিয়েছেন গ্রায়ে থিয়েটারের আর্টিস্টিক ডিরেক্টর জেনি সিইলি। সহযোগী শিল্প নির্দেশকের দায়িত্বে ছিলেন এশা ইউসুফ। সহকারী কারিগরি নির্দেশনায় ছিলেন ইশরাত নিশাত। কর্মশালার সাহায্যে প্রতিবন্ধীদের ক্ষমতায়নে ও সামাজিক অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে তাদের নিজেদের পরিচয় তুলে ধরতে ২০১৩ সালে এ প্রকল্পটি শুরু করে ব্রিটিশ কাউন্সিল। নাট্যগুরু শেক্সপিয়রকে সম্মান জানিয়ে বিশ্বের ১৩০টি দেশে মঞ্চস্থ হবে অনুপ্রেরণামূলক নাটকটি। নাটকের গল্পেও যুক্ত হয়েছে নতুনত্ব। একদল ছেলেমেয়ে ক্রিকেট খেলছিল। তাদের মধ্যে একটি বাক্প্রতিবন্ধী মেয়ে বই পড়ছিল। বাকিরা ওকে খেলায় নেয়ার জন্য টানাটানি করতে থাকে। একপর্যায়ে বইটা ছিঁড়ে যায়। সবাই মিলে তখন চোখ ফেলে ছেঁড়া পাতাগুলোয়। আর ওই বইটি ছিল শেক্সপিয়রের রোমিও-জুলিয়েট। তখনই সবাই সিদ্ধান্ত নেয়Ñ নাটকটিতে অভিনয় করবে তারা। তারপর সবাই ঢুকে পড়ে শেক্সপিয়রে। এগিয়ে যায় রোমিও-জুলিয়েটের গল্প। নাটকে ব্যবহৃত উত্তরবঙ্গের বিয়ের গীতের মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে এদেশের সংস্কৃতির ঐতিহ্য। মূল নাটকে ক্যাপিউলেত ও মন্ত্যাগিউ পরিবার রূপ পায় চৌধুরী ও খান পরিবারে। সাড়ে চার শ’ বছর আগের পোশাকে নয়, সব সময়কার পোশাক পরে নানা অঙ্গ-ভঙ্গিমায় তারা তুলে আনে ওই দুই পরিবারের দুই সন্তান রোমিও ও জুলিয়েটের বিয়োগান্ত প্রেমের গল্প। তাদের গভীর প্রণয় ও পরিবারের বাইরে গিয়ে গোপনে বিয়ে এবং শেষ পর্যন্ত দুইজনের করুণ মৃত্যু। আর এই প্রেমিক যুগলের জীবনাবসানের মধ্য দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা দুই পরিবারের দ্বন্দ্বের অবসান ঘটে। নাটকটিতে দুইজন রোমিও এবং দুইজন জুলিয়েট অভিনয় করেন। এদের একজন সংলাপ বলছিলেন, অপরজন ইশারা ভাষায় জানাচ্ছিলেন ভালবাসার কথা। ছোটখাটো হাস্যরসের মধ্যেই তারা জানান দিলেন প্রেমের কাছে সবকিছুই তুচ্ছ। আর ফাঁকে একেবারের গ্রামবাংলার গান পরিবেশন করছিলেন বগুড়ার একটি সঙ্গীত দল। তারাও কিন্তু শারীরিক প্রতিবন্ধী। ৯০ মিনিটের নাটকটি মুগ্ধ করেছে মিলনায়তন ভর্তি দর্শকদের। নাটকে রোমিও চরিত্রে রাব্বি মিয়া ও তাইফুর রহমান রোমান (ইশারা ভাষা) এবং জুলিয়েট চরিত্রে শাকিলা জাফর ও জান্নাতুল ফেরদৌস স্মৃতি (ইশারা ভাষা)। অন্যান্য চরিত্রে অভিনয় করেছেনÑ সাদ্দাম হোসেন, আফসারউদ্দিন রিয়াদ (ইশারা ভাষা), শরিফুল ইসলাম, মোস্তাফিজুর রহমান সজল (ইশারা ভাষা), মুর্শিদ মিয়া, মনির হোসেন সিকদার, পারভীন আক্তার, শরিফ হাসান চৌধুরী, মহুয়া আক্তার মুক্তা, নূর ইসলাম রিপন (ইশারা ভাষা)। সঙ্গীত দলে ছিলেনÑ সাহেব আলী, নার্গিস পারভীন, বাউল আব্দুল কাফি ও সন্তোষ চন্দ্র বর্মণ। নাটকটির মঞ্চ পরিকল্পনায় ছিলেন ঢালী আল মামুন ও সঙ্গীত পরিচালনায় ছিলেন শিমূল ইউসুফ। নানা আয়োজনে সত্যেন সেন স্মরণ ॥ সংগ্রামী সাহিত্যিক-সাংবাদিক-কৃষক নেতা সত্যেন সেনের ১০৯তম জন্মদিন ছিল সোমবার। নানা আয়োজনে স্মরণ করা হয় এই কীর্তিমান পুরুষকে। এ উপলক্ষে শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় সঙ্গীত ও নৃত্যকলা কেন্দ্র মিলনায়তনে উদীচী ঢাকা মহানগর সংসদের পক্ষ থেকে আয়োজন করা হয় আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের। সুফিয়া কামাল জাতীয় গণগ্রন্থাগারের শওকত ওসমান স্মৃতি মিলনায়তনে আলোচনা সভা, সত্যেন সেন স্মৃতি সম্মাননা পদক প্রদান ও সঙ্গীতানুষ্ঠানের আয়োজন করে সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠী। সত্যেন সেন সম্মাননা প্রদান করা হয় লেখক, প্রকাশক ও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের অন্যতম ট্রাস্টি মফিদুল হককে। বসন্তের বিকেলে উদীচীর অনুষ্ঠানের সূচনাতেই দলীয়সঙ্গীত পরিবেশন করে ঢাকা মহানগর সংসদের শিল্পীরা। এরপর শুরু হয় আলোচনা পর্ব। এতে সভাপতিত্ব করেন উদীচী ঢাকা মহানগর সংসদের সভাপতি কাজী মোহাম্মদ শীশ। আলোচনা পর্বে সত্যেন সেনের জীবন, রাজনৈতিক আদর্শ, সাহিত্যিক ও শিল্পীসত্তাসহ বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি কামাল লোহানী, উদীচীর সাবেক সভাপতি গোলাম মোহাম্মদ ইদু, অধ্যাপক বদিউর রহমান এবং প্রবীর সরদার। আলোচনা পর্বের পর সত্যেন সেনকে শ্রদ্ধা নিবেদনের উদ্দেশে প্রদীপ প্রজ্বলন করা হয়। আলোচনা পর্ব ও প্রদীপ প্রজ্বলনের পর শুরু হয় বিচিত্রানুষ্ঠান। এ পর্বের শুরুতে সত্যেন সেন রচিত গান এবং তার জীবনের উল্লেখযোগ্য ঘটনাবলী নিয়ে ‘স্মৃতিতে সত্যেন সেন’ শিরোনামের আলেখ্য অনুষ্ঠান পরিবেশন করেন উদীচী ঢাকা মহানগর সংসদের শিল্পীরা। দলীয় ও একক সঙ্গীত পরিবেশন করেন উদীচী মিরপুর শাখা সংসদের শিল্পীরা। দ্বৈত আবৃত্তি পরিবেশন করেন উদীচী কাফরুল শাখা সংসদের শিল্পীরা। একক আবৃত্তি পরিবেশন করেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহসভাপতি বেলায়েত হোসেন এবং আবৃত্তি বিভাগের শিল্পী সুমিত পাল। ‘নিশীথ রাত্রির প্রতিধ্বনি শুনি’ গানটির সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করেন উদীচী ঢাকা মহানগরের শিল্পীরা। উদীচীর প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে যারা নিয়মিতভাবে সঙ্গীত দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এমন বেশ কয়েকজন প্রবীণ উদীচী কর্মী পরিবেশন করেন সমবেত সঙ্গীত। সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠীর উদ্যোগে রাজধানীর শাহবাগের সুফিয়া কামাল জাতীয় গণগ্রন্থাগারের শওকত ওসমান স্মৃতি মিলনায়তনে ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও সত্যেন সেন পদক সম্মাননা প্রদান। একই সঙ্গে সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠী তাদের নবম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্যাপন করে। অনুষ্ঠানের সূচনা হয় সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠী ও কলকাতা থেকে আগত এসটিএম কালচারাল গ্রুপের শিল্পীদের কণ্ঠে একটি করে সমবেত সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে। শুরুতেই সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠীর শিল্পীরা পরিবেশন করেন ‘মারো জোয়ান হেইও/মারো কষে টান’। পরে কলকাতার শিল্পীরা পরিবেশন করেন ‘মা গো ভাবনা কেনো’। রূপগঞ্জ রণাঙ্গনে বীরবাহাদুর মঞ্চস্থ ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা রূপগঞ্জ থেকে জানান, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ প্রেসক্লাবের পরিবেশনায় মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক মঞ্চ নাটক ‘রণাঙ্গনে বীরবাহাদুর’ মঞ্চায়িত হয়েছে। রবিবার রাতে উপজেলার মুড়াপাড়া পাইলট হাই স্কুল মাঠে নাটকটি মঞ্চায়িত হয়। নাটকে অভিনয় করেন প্রেসক্লাবের সকল সাংবাদিক। পরে আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারহানা ইসলাম। প্রধান অতিথি ছিলেন, স্থানীয় সংসদ সদস্য গোলাম দস্তগীর গাজী (বীর প্রতীক)।
×