মানব দেহে পানিশূন্যতার বিপরীতে স্যালাইন দিয়ে রক্ষা করার পদ্ধতি পুরনো হলেও তা কার্যকর বৈকিএ রাজনৈতিক শূন্যতার বিপরীতে ভগ্নস্তূপে পড়ে থাকা যুদ্ধাপরাধীর দল জামায়াতের সহচর বিএনপি বাঁচার প্রচেষ্টায় তৎপর। একমুঠো আওয়ামী লীগের ভিশন-২০২১ ও ভিশন ২০৪১-এর আদলে ভিশন-২০৩০, এক চিমটে সিরাজুল আলম খান ও রবের বহুচর্চিত এবং জনসমর্থন না পাওয়া দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ, আরেক চিমটে সুশীল নামধারীদের প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার মধ্যে ভারসাম্য আনার গীত মিলিয়ে যে স্যালাইন তৈরি করেছেন বিএনপি নেত্রী, তা থেকে দল জেগে উঠবে, এমন সম্ভাবনা দেখা যায় না। জঙ্গীবাদ, সন্ত্রাসবাদ এবং দুর্নীতির ভেতর যার ঘুরপাক, তাকে কোন স্যালাইনই রক্ষা করতে পারে না। পাকিস্তানী মানসিকতায় দীর্ঘদিন লালিত মস্তিষ্ক ভিশন-২০৩০-এর মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ না হয়ে যুদ্ধাপরাধী ও সাজাপ্রাপ্ত গোলাম আযমের ‘পূর্ব পাকিস্তান পুনরুদ্ধার প্রকল্প’-এর বিস্তার ঘটানো কিনা, তা আগামী দিনের কার্যক্রমে প্রমাণ করে দেবে। দলটির দেহসৌষ্ঠব, ভঙ্গিমার সঙ্গে ঘোষিত রূপরেখা স্থান পেতে পারে না কোন যুক্তিতেই। তাদের অতীত কর্মকা- প্রমাণ করে এসেছে যে তারা দেশের উন্নতি ও অগ্রগতির বিপরীতে অবস্থান করে দেশের সম্পদ লুণ্ঠন করে বিদেশে পাচার করেছে। সেই পাচারের অর্থে পলাতক পুত্র কাম দলের কো-চেয়ারম্যান বিলাতে আয়েসের সঙ্গে বসবাস করছেন। দলীয় রাজনীতিতে কোন গুণগত পরিবর্তন না এনে জাতীয় রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন আসবে কি অলৌকিকভাবে? প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতায় ভারসাম্য আনার আগে যদি ব্যবস্থা নিতেন দলীয় প্রধানের পদে ভারসাম্য আনার, তবে তার ‘গণতন্ত্র’ চর্চিত হতো। সকল ক্ষমতার উৎস দলীয় প্রধানÑ এই যার অবস্থান তিনি ক্ষমতায় গিয়ে প্রধানমন্ত্রী পদে ভারসাম্য আনবেন বলে ঘোষণা দিতেই পারেন স্যালাইনের মিশ্রণে, কিন্তু বাস্তবে তা কখনওই সম্ভব নয়। আগে দলে চর্চা করা হলে, তবেই সরকারে গিয়ে তার প্রতিফলন ঘটানো যায়। দলের একচ্ছত্র ক্ষমতাভোগকারী এসব বলে লোক হাসানোর কাজটাই করেছেন। গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি গড়ে তুলতে রাজনৈতিক দলের মধ্যেও যে গণতন্ত্রের চর্চা অপরিহার্য, তা বিএনপি নেত্রী বিশ্বাসই করেন না। দল পুনর্গঠনে কারও মতামতের তোয়াক্কা যিনি করেন না, তিনি প্রধানমন্ত্রী পদে আসীন হয়ে কি কি করেছেন, সে ফিরিস্তি বিশাল হলেও সেই অবস্থান থেকে লৌকিকভাবে সরে আসবেন, এমনটা বিশ্বাস করা কঠিনই বটে। একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী জামায়াত, হেফাজতে ইসলাম, জেএমবিকে সঙ্গে নিয়ে বেগম জিয়া জঙ্গীবাদ, সন্ত্রাসবাদ দমন করবেন, এটা বিশ্বাস করা তার পক্ষেই সম্ভব, যে চেতনায় পাকিস্তানী। এই ঘোষণা বিশ্বাসযোগ্য হতো, যদি তিনি জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগ, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে সোচ্চার হতেন। তবে বিশ্বাস করা যেত, রাজনৈতিক চেতনায় পরিবর্তন এসেছে। মূলত কোন ফলাফল ছাড়াই, কেবল দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত খালেদা-তারেকের বিএনপিকে স্যালাইন দিয়ে রক্ষা করার এই কাউন্সিলটি অনেক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। এটাও পরিষ্কার করেছে যে, বেগম জিয়া যা বিশ্বাস করেন, তা বলেন না। যা বলেন, তা বিশ্বাস করেন না। একই সঙ্গে মাতা-পুত্রের ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য গঠনতন্ত্রও সংশোধন করা হয়েছে। কাউন্সিল হলেও দলীয় প্রধানের হাতে কমিটি গঠনের ভার দেয়ার মধ্যে গণতান্ত্রিকতার লেশ না থাকুক, মাতা-পুত্রের রাজনৈতিক শূন্যতার ভুবনে কিছুটা প্রাণ রক্ষাকারী ভূমিকা পালনের সুযোগ হয়ত দেবে। কাউন্সিল হয়ে যাওয়ার দশদিন পেরিয়েও কমিটির ঘোষণা দিতে না পারার অক্ষমতা স্পষ্ট করে, শুধু স্যালাইনে কাজ হবে না, দরকার গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক চর্চার বটিকা সেবন।