ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

শহিদুল ইসলাম

স্বাধীনতার পতাকা তলে

প্রকাশিত: ০৬:৩৮, ২৮ মার্চ ২০১৬

স্বাধীনতার পতাকা  তলে

২৬ মার্চ আমাদের বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। দিনটি আসলেই আমাদের ভেতর উৎসাহ কাজ করে। আমরা উজ্জীবিত হই। এই দিনটি আমাদের জাতীয় জীবনের এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করতে সাহায্য করে। কিন্তু কেন? কারণ এই দিনটি আমাদের মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় দিন। এইদিন বিশ্বের মানচিত্রে নতুন এক স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম সূচিত হয়। নাম তার বাংলাদেশ। ২৬ মার্চ আমাদের স্বাধীনতা দিবস। আমাদের আত্মমর্যাদার-সার্বভৌমত্বের প্রতীক। কিন্তু এই স্বাধীনতা কি আমরা সহজেই পেয়েছি? না, তা নয়। এর পেছনে রয়েছে অনেক ত্যাগ ও সংগ্রামের দীর্ঘ ইতিহাস। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে শুরু হওয়া যুদ্ধ শেষ হয় ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের মাধ্যমে। ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে আমাদের জাতীয়তাবাদী চেতনার উন্মেষ ঘটে। এরই পটভূমিতে ১৯৭১ সালে বাঙালী পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়। শুরু হয় এদেশের ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ ঘটনা মুক্তিযুদ্ধ। দীর্ঘ ৯ মাস যুদ্ধের মধ্য দিয়ে ত্রিশ লাখ বাঙালীর জীবন বিসর্জনের মাধ্যমে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর আমাদের বিজয় সূচিত হয়। ৩০ লাখ জীবনের বিনিময়ে স্বাধীনতা, অশ্রু বিসর্জনে পাওয়া এই স্বাধীনতা আমাদের কাছে অত্যন্ত গৌরবের। তাই তো প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে বয়ে নিয়ে চলছে মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় পতাকা। প্রতিবছর এ দিবস পালনের মাধ্যমে আমরা নতুন প্রজন্মকে এবং বিশ্বকে বার বার মনে করিয়ে দেই। আমাদের মুক্তিযুদ্ধ আর মুক্তিযোদ্ধাদের কথা, বীর শহীদদের কথা। এইদিনে আমরা অনুপ্রাণিত হই আমাদের গৌরবময় ইতিহাসের কথা স্মরণ করে। উদ্বুদ্ধ হই অগ্রগতির পথযাত্রায় এগিয়ে যেতে। একটি শোষণমুক্ত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনের জন্য মুক্তিযুদ্ধের বিজয় হলেও আমাদের সেই স্বপ্ন বাস্তবতার আঘাতে আজ ছিন্নভিন্ন। দেশের গণতন্ত্র আজ সঙ্কটে। স্বাধীনতা পেলেও আমাদের কাক্সিক্ষত অর্থনৈতিক মুক্তি এখনও আসেনি। আর মুক্তিযুদ্ধের সময় যে জাতীয় ঐক্য গড়ে উঠেছিল তা আজ আর নেই। আর এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য স্বাধীনতা দিবস আমাদের অনুপ্রাণিত করে। এ দিবস আমাদের উজ্জীবিত করার একটি দিন। সারাদেশে এই দিনটি সাজে লাল-সবুজে। গাড়ির সামনে, দোকানে, রাস্তায়, অফিসে, স্কুল-কলেজ, এমনকি রিকশার সামনে শোভা পায় লাল-সবুজের জাতীয় পতাকা। গ্রামে- শহরে সবজায়গায় যেন অন্যরকম আমেজ লেগে যায়। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীরা নানা রকম অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী নানা রকম গণমুখী অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। সরকারী বাহিনীর লোকজন এইদিনে প্যারেড, কুচকাওয়াজের আয়োজন করে। এবং বিভিন্ন জায়গায় স্বাধীনতা দিবসের মেলা বসানো হয়। এই উৎসবমুখর পরিবেশ এই দিনটিতে বাংলাদেশের প্রত্যেকটা জায়গায় হয়ে থাকে। স্বাধীনতা দিবস আমাদের গৌরবের দিন হলেও এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে ’৭১-এর শহীদদের স্মৃতি, স্বজন হারানোর আর্তনাদ। মানুষের দীর্ঘশ্বাস। এটি শুধু আমাদের বিশেষ একটি দিন নয়। এটি আমাদের চেতনার জাগরণেরও দিন। তাই এই দিনে প্রতিটি বাঙালী নতুন করে দেশ গড়তে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হোক। শুধু একটি দিন কেন্দ্রিক যেন না হয়। সারা বছরই যেন স্বাধীনতার প্রেরণা আমাদের উজ্জীবিত করে। বিশ্বের সামনে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর মর্যাদা লাভ করুক। আমাদের অর্থনৈতিক মুক্তি আসুক। এবং ভেদাভেদ ভুলে জাতীয় ঐক্য নিয়ে সবাই এক সঙ্গে এই দেশে বসবাস করুক। এটাই হোক সবার কাম্য। ছবি : ফারুক হোসেন মডেল : তাহসিন, আকাশ, ইসমান, মোহসিন, মিম ও মিমি পোশাক : কেক্রাফট কোরিওগ্রাফি : বিডি মিজু
×