ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কুমিল্লার বিশাল বিক্ষোভ সমাবেশে ডাঃ ইমরান এইচ সরকার

তনু হত্যাকারীরা যত প্রভাবশালীই হোক বিচার করতে হবে

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ২৮ মার্চ ২০১৬

তনু হত্যাকারীরা যত প্রভাবশালীই হোক  বিচার করতে হবে

নিজস্ব সংবাদদাতা, কুমিল্লা, ২৭ মার্চ ॥ গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ডাঃ ইমরান এইচ সরকার বলেছেন, তনু আমাদের বোন, তনু হত্যার বিচার হলে বাংলাদেশে নারী হত্যা ও ধর্ষণ বন্ধ হবে। তনু হত্যাকারীদের বিচারের মধ্য দিয়ে কুমিল্লার মানুষের বিজয় হলে তা হবে বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের বিজয়। তনুর ধর্ষণ-হত্যাকারীরা যত প্রভাবশালীই হোক না কেন তাদের আইনের আওতায় এনে বিচার করতে হবে। আমরা প্রত্যাশা করব দেশের বুদ্ধিজীবী ও গণমাধ্যম আপোসহীনভাবে এ অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়াবেন। অন্যায়ের সঙ্গে কেউ আপোস করবেন না। তনুর হত্যাকারীদের ফাঁসি না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে, আমরা ঘরে ফিরব না। রবিবার ঢাকা থেকে রোডমার্চ শেষে বিকেলে কুমিল্লা মহানগরীর কান্দিরপাড় পূবালী চত্বরে তনুর ধর্ষক ও খুনীদের ফাঁসির দাবিতে গণজাগরণ মঞ্চ আয়োজিত বিশাল বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। গণজাগরণ মঞ্চ কুমিল্লার সংগঠক খায়রুল আনাম রায়হানের সভাপতিত্বে ওই বিক্ষোভ সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি লাকী আক্তার, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের কেন্দ্রীয় সভাপতি ইমরুল হাবিব ইমনসহ গণজাগরণ মঞ্চের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। এদিকে, কুমিল্লায় তনু হত্যার বিচার দাবিতে রবিবার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করা হলে ৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়। কুমিল্লার জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার হ্যান্ড মাইকে ঘোষণা দিয়ে ৭ দিনের মধ্যে তনু হত্যাকারীদের গ্রেফতারের আশ্বাস দিলে ৩ ঘণ্টা পর বেলা ২টার দিকে অবরোধ তুলে নেয় প্রতিবাদীরা। এর আগে ডাঃ ইমরান এইচ সরকার ঢাকার শাহবাগ থেকে গণজাগরণ মঞ্চের রোডমার্চ কুমিল্লায় আসার পথে মহাসড়কের চট্টগ্রাম রোড, কাঁচপুর ব্রিজ এলাকা, কুমিল্লার দাউদকান্দি, গৌরীপুর, চান্দিনা, নিমসার বাজার ও ময়নামতি এলাকায় পথসভা করেন। এতে পথে পথে হাজারো প্রতিবাদী জনতার সমাগম ঘটে। কুমিল্লার সমাবেশে ডাঃ ইমরান এইচ সরকার আরও বলেন, দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে দেশ স্বাধীন করেছে। দেশের বাইরেও বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর সুনাম রয়েছে। আমরা চাই তনু হত্যাকা-ের ব্যাপারে সেনাবাহিনী সিভিল প্রশাসনকে সহায়তা করবে এবং এ হত্যাকা- নিয়ে খুনীদের সঙ্গে সেনাবাহিনী জিরো টলারেন্স দেখাবে। তিনি আরও বলেন, ব্যাংক লুটের ঘটনার পরপর তনু হত্যা এটি কি বিচ্ছিন্ন ঘটনা। না রিজার্ভ লুটের ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার জন্য পরিকল্পিত ঘটনা। যারা ব্যাংক লুট করেছেন তনু হত্যাকা-ের পর তাদের মুখে মুচকি হাসি। আমরা বলতে চাই, বাংলাদেশের মানুষ ব্যাংক লুটেরাদের ভুলে যায়নি। তনু হত্যাসহ সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। যত বৈপরিত্য থাকুক না কেন জাতীয় ইস্যুতে সকলকে এক থাকতে হবে। ১৯৯৫ সালে দিনাজপুরে ইয়াসমিন ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ধর্ষকদের ফাঁসির দাবিতে রাস্তায় নেমে আন্দোলন করেছেন। আমরা চাই তনু ধর্ষণ ও হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবিতেও তিনি আমাদের সঙ্গেই থাকবেন। জানা গেছে, তনু হত্যাকারীদের শনাক্ত ও গ্রেফতারসহ বিচার দাবিতে রবিবার বেলা ১০টার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের আদর্শ সদর উপজেলার নন্দনপুর এলাকায় জড়ো হয় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, ভিক্টোরিয়া কলেজ, বাছিক শিল্প চর্চা কেন্দ্র, বন্ধু মহল, কুমিল্লাস্থ মুরাদনগর ছাত্রকল্যাণ পরিষদসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ছাড়াও সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের কয়েক হাজার ছাত্র-জনতা এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা। একপর্যায়ে বেলা ১১টার দিকে বিক্ষুব্ধরা মহাসড়কের নন্দনপুর এলাকায় অবরোধ সৃষ্টি করে রাস্তায় টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে। এ সময় অবরোধকারীরা বিভিন্ন প্লে-কার্ড বহন করে এবং সড়কে শুয়ে-বসে হত্যাকারীদের গ্রেফতারের দাবিতে গগণবিদারী সেøাগান তুলে। ফলে মহাসড়কের অবরোধস্থলের উভয় দিকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার এলাকায় ভয়াবহ যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে শত শত যানবাহন আটকা পড়ে চরম ভোগান্তিতে পড়েন বিভিন্ন পরিবহনের যাত্রী ও সাধারণ মানুষ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন সদর দক্ষিণ মডেল থানার ওসি প্রশান্ত পালসহ হাইওয়ে পুলিশের কর্মকর্তারা। একপর্যায়ে প্রতিবাদ-বিক্ষোভে পরিস্থিতি অনেকটা পুলিশের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। পরে অবরোধস্থলে পৌঁছেন কুমিল্লা সদর আসনের এমপি আ.ক.ম বাহাউদ্দিন বাহার, কুমিল্লার জেলা প্রশাসক মোঃ হাসানুজ্জামান কল্লোল, পুলিশ সুপার মোঃ শাহ আবিদ হোসেন, হাইওয়ে পূর্বাঞ্চলের পুলিশ সুপার রেজাউল করিমসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা। এ সময় তারা অবরোধকারীদের সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনা করে অবরোধ প্রত্যাহারের আহ্বান জানান। পরে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার হ্যান্ড মাইকের মাধ্যমে তনু হত্যাকারীদের আগামী ৭ দিনের মধ্যে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হবে এমন আশ্বাস দিলে ৩ ঘণ্টা পর দুপুর ২টার দিকে প্রতিবাদীরা অবরোধ তুলে নেয়। এতে দুপুর ২টার পর থেকে ধীরে ধীরে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়।
×