ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

রাজধানীজুড়ে নানা আয়োজন

স্বাধীনতার অজর কবিতা অবিনাশী গান, লাল সবুজের উৎসব

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ২৬ মার্চ ২০১৬

স্বাধীনতার অজর কবিতা অবিনাশী গান, লাল সবুজের উৎসব

মোরসালিন মিজান ॥ ধর্মের ভিত্তিতে পাকিস্তান। বাঙালী মানস এর জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিল না। তদুপরি শুরু হয়ে গেল অন্যায় অবিচার। পশ্চিম পাকিস্তানীরা গিলে খেতে চাইল পূর্ব পকিস্তানের সব। কিন্তু এভাবে আর কতদিন? কত আর সহ্য করা যায় বৈষম্য? সর্বশেষ সত্তরের নির্বাচন। বিপুল ভোটে নির্বাচিত হলেন শেখ মুজিবুর রহমান। এবার আরও বড় ষড়যন্ত্র। পশ্চিমারা পূর্ব পাকিস্তানের কাছে কিছুতেই ক্ষমতা হস্তান্তর করবে না। তো ঠিক আছে। আমাদেরকে আমাদের মতো থাকতে দাও। ৭ মার্চের বিশাল জনসমুদ্রে বঙ্গবন্ধু ঘোষণা দিলেন- এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম। এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। আর তার পর ফল পাওয়া হলো ২৫ মার্চ। ইতিহাসের ভয়াল এই দিনে সুচতুর পাকিস্তান বাহিনী বাঙালী নিধনে নেমে গেল। রাজধানী ঢাকার নিরীহ নির্দোষ মানুষের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল তারা। অগণিত মানুষকে হত্যা করল। এক রাতেই লাশের শহর হয়ে গেল ঢাকা। গণহত্যা সেই থেকে শুরু। এখনও সেই কালো রাতের কথা ভুলতে পারেনি বাঙালী। প্রতিবছর ভয়াল রাতে অগণিত শহীদদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করা হয়। থাকে বিভিন্ন কর্মসূচী। এবারও তা-ই ছিল। রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শোক করা হয় নিহত স্বজনদের জন্য। রাত ৮টায় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে আলোর মিছিলের আয়োজন করে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি। বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ এতে অংশ নেয়। সকলের হাতে ছিল মোমবাতি। অন্ধকার তারা আলোয় ভরিয়ে দেন। অন্ধকারের শক্তির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে একই রকম আয়োজন ছিল ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। শিখা চিরন্তনের সামনে প্রদীপ প্রজ্বলন কর্মসূচী পালন করে সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম। শিল্পকলা একাডেমিতেও প্রদীপ প্রজ্বলনের মাধ্যমে ২৫ মার্চ নিহতদের স্মরণ করা হয়। এদিন সবচেয়ে বড় আয়োজন ছিল বঙ্গবন্ধু এ্যাভিনিউতে। এখানে মোমবাতি জ্বালিয়ে কালরাতে নিহতদের স্মরণ করেন হাজার হাজার মানুষ। আজও যে অন্ধকার দৃশ্যমান তার বিনাশ কামনা করেন সর্বস্তরের জনগণ। ছিল আরও বেশ কিছু আয়োজন। কালরাত পেড়িয়ে আসতেই আলোর ঝলকানি। আজ শনিবার মহান স্বাধীনতা দিবস। বাঙালীর সবচেয়ে বড় চাওয়াটি এই দিনে এসে পূর্ণ হয়। দিবসটি ঘিরে আজ তাই নতুন উদ্দীপনা। শহরের প্রধান প্রধান সড়কে আজ উড়বে লাল-সবুজের পাতাকা। বিভিন্ন ভবনে আলোকসজ্জা করা হয়েছে। সেখানেই দৃশ্যমান হচ্ছে লাল সবুজ। দেখে মন কেমন আবেগঘন হয়ে ওঠে। পোশাকেও আজ থাকবে লাল-সবুজ। পাঞ্জাবি, শাড়িতে পতাকার রং বহন করবে বাঙালী। থাকবে নানা অনুষ্ঠান। কবি শামসুর রাহমান থেকে বললে, অবিনাশী গান হবে। হবে অজর কবিতা। নাচ হবে। আলোচনায় আড্ডায় আর কিছু স্থান পাবে না। কেবলই একাত্তর। কেবলই ২৬ মার্চ। আজ কোথায় উৎসব অনুষ্ঠান আছে? এই প্রশ্ন অবান্তর। বরং নেই কোথায়? সেটা প্রশ্ন। হ্যাঁ, শহরজুড়েই থাকবে বর্ণাঢ্য আয়োজন। সকালে জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণের মধ্য দিয়ে শুরু হবে দিনের কর্মসূচী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় নামবে জনস্রোত। টিএসসি, রাজু ভাস্কর্যসহ আশপাশের এলাকায় বহুবিধ আয়োজনে উঠে আসবে বাঙালীর মুক্তিসংগ্রাম। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে চলছে সাংস্কৃতিক জোটের স্বাধীনতা দিকসের অনুষ্ঠান। আজ সেখানে থাকবে মূল পরিবেশনা। স্বাধীনতা দিবস যেহেতু, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিশেষ লোকসমাগম ঘটবে। এখানে রয়েছে স্বাধীনতা স্তম্ভ ও ভূগর্ভস্থ জাদুঘর। একই স্থানে চলছে বিশেষ আলোকচিত্র প্রদর্শনী। আয়োজন করেছে স্বাধীনতা চারুশিল্পী পরিষদ। ১৫ শতক থেকে শুরু। ১৯৭১ সাল পর্যন্ত তুলে ধরা হয়েছে। শতাধিক আলোকচিত্রে শিল্পীদের রং তুলিতে আঁকা গণহত্যার চিত্র। স্বাধীনতার সংগ্রাম। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরেও আগে থেকে শুরু হয়ে গিয়েছিল স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানমালা। আজ শনিবার সকালে জাতীয়সঙ্গীত ও জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে শুরু হবে মূল আয়োজন। জাদুঘরের উন্মুক্ত মঞ্চে বিভিন্ন পরিবেশনা নিয়ে থাকবে কল্পরেখা, ইউরিকো এ্যাঞ্জেলস স্কুল, খেলাঘর, নৃত্যজন ও বাড্ডা আলাতুন্নেসা উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়। সন্ধ্যায় পরিবেশিত হবে ‘মহুয়ার পালা’। বিশেষ এই পরিবেশনা নিয়ে আসবে মানিকগঞ্জের মুকুল নৃত্যকলা একাডেমি। একই দিন বিকেলে মিরপুরের জল্লাদখানা বধ্যভূমি বিদ্যাপীঠে থাকবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এখানে বিভিন্ন পরিবেশনা নিয়ে থাকবে সপ্তসুর সঙ্গীত একাডেমি, উইথ লিভিং লিজেন্ড, কথাসুর সাংস্কৃতিক সংগঠন, চারুলতা একাডেমি, বধ্যভূমির সন্তানদল, মিরপুর সাংস্কৃতিক একাডেমি ঘাসফুল শিশুকিশোর সংগঠন ও মিরপুর সাংস্কৃতিক ঐক্য ফোরাম। গৌরব একাত্তর নামের একটি সংগঠনের পক্ষ থেকে সকালে আয়োজন চারুকলা অনুষদে আয়োজন করা হবে শিশুচিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা। এভাবে সারা শহর দিনভর বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজনের মাধ্যমে ফিরে যাবে একাত্তরে। মহান স্বাধীনতা ধরে রাখার স্বার্থক করার শপথ নেবে নতুন করে।
×