ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কোর্সে অর্থ বরাদ্দ বাড়াবে না সরকার

বঙ্গবন্ধু মেডিক্যালের আয় থেকেই বেতন বাড়ানোর পরামর্শ

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ২৫ মার্চ ২০১৬

বঙ্গবন্ধু মেডিক্যালের আয় থেকেই বেতন বাড়ানোর পরামর্শ

নাজনীন আখতার ॥ পোস্ট গ্রাজুয়েট কোর্সের আবাসিক ডাক্তারদের বেতন বাড়ানোর অর্থ সরকার দেবে না। এ খাতে সব ধরনের ব্যয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়কে (বিএসএমএমইউ) নিজস্ব আয় থেকে বহন করার সুপারিশ করেছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। রেসিডেন্সি প্রোগ্রাম বা আবাসিক কর্মসূচী খাতে সরকারের কাছ থেকে টাকা না নিয়ে বিএসএমএমইউকে নিজস্ব আয় বাড়িয়ে অথবা নতুন কোন প্রকল্প চালু করে আবাসিক ডাক্তারদের বেতন বাড়ানোর পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে সংসদীয় কমিটির সঙ্গে একমত প্রকাশ করেছে মন্ত্রণালয়ও। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকের কার্যবিবরণী থেকে জানা গেছে এ তথ্য। জানা গেছে, ওই বৈঠকে বিএসএমএমইউ’র ভিসি অধ্যাপক ডাঃ কামরুল হাসান ওই কর্মসূচীতে সরকার থেকে বাজেট বরাদ্দের দাবি জানিয়ে বলেন, আবাসিক কর্মসূচী বা রেসিডেন্সি প্রোগ্রাম হচ্ছে পোস্ট গ্রাজুয়েট কোর্সের জন্য সর্বাধুনিক আন্তর্জাতিক স্বীকৃত একটি প্রোগ্রাম। এ কোর্সটি বিএসএমএমইউ’র পক্ষ থেকে বাংলাদেশে চালু করা হয়েছে। বড় বড় দেশগুলোতে পোস্ট গ্রাজুয়েট ডাক্তাররা চব্বিশ ঘণ্টা সার্ভিস দিয়ে থাকেন। সেখানে তাদের বড় ধরনের সম্মানী দেয়া হয়। বাংলাদেশে বেসরকারী যারা রেসিডেন্সি প্রোগ্রামে আসছে তাদের মাত্র ১০ হাজার টাকা করে দেয়া হচ্ছে। সে কারণে দাবি করা হয়েছিল এ সম্মানি ১০ হাজার টাকার স্থলে ২০ হাজার টাকা করা যায় কিনা। তিনি বলেন, এ খাতে সরকারী বরাদ্দ কখনও ছিল না। বঙ্গবন্ধু মেডিক্যালের আয় থেকেই তাদের টাকা দেয়া হচ্ছে। এটাকে হয়ত দীর্ঘায়িত করা সম্ভব হবে না। অথচ দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তনের জন্য কোর্সটাকে আরও শক্তিশালী ও সুন্দর করা প্রয়োজন। বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ৩৮টি প্রতিষ্ঠানে এ কোর্সটি পরিচালিত হচ্ছে। এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রী, স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও স্বাস্থ্য সচিবের সঙ্গেও কথা হয়েছে। তবে ওই কর্মসূচীতে সরকার থেকে বাজেট বরাদ্দের বিরোধিতা করে সংসদীয় কমিটির সভাপতি শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকার থেকে ১১৫ কোটি টাকার থোক বরাদ্দ দেয়া হয়। বিএসএমএমইউ একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠান তাদের নিজস্ব আয় দিয়েই চালানোর কথা। তিনি বিএসএমএমইউকে আত্মনির্ভরশীল হওয়ার পরার্মশ দিয়ে বলেন, প্রতিষ্ঠানের আয় সরকারী খাতে দেয়া হয় না। তাই প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব আয় বাড়িয়ে অথবা নতুন কোন প্রকল্প চালু করে সেখান থেকে রেসিডেন্সি প্রোগ্রামের জন্য বরাদ্দ বৃদ্ধি করা যেতে পারে। কমিটির সভাপতিকে সমর্থন দিয়ে স্বাস্থ্য সচিব সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম ওই সময় বলেন, বিষয়টি নিয়ে আগেও আলোচনা হয়েছে। সে সময়েও সিদ্ধান্ত হয়েছিল যে, বিএসএমএমইউ’র নিজস্ব আয় দিয়ে রেসিডেন্সি চিকিৎসায় কর্মরত ডাক্তারদের বেতন বাড়াতে হবে। তিনি বলেন, প্রতিবছর সরকার থেকে বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে যে অনুদান দেয়া হয় তার পরিমাণ বাড়ানো হয়। গত বছর ১০০ কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে ১১৫ কোটি টাকা করা হয়েছে। এর বাইরেও সম্প্রতি একনেকে যে প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়েছে তাসহ প্রায় ১৫শ’ কোটি টাকার প্রকল্পে সরকার থেকে বিএসএমএমইউকে সহায়তা দেয়া হয়েছে। এছাড়াও সরকার থেকে বিভিন্ন সময়ে যন্ত্রপাতি কেনাসহ অন্যান্য বিষয়ে সহায়তা দেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, প্রয়োজনীয়তার নিরিখে রেসিডেন্সি ডাক্তারদের বেতন বিএসএমএমইউ বাড়িয়ে দিতে পারে। বরাদ্দ বাড়ানোর ব্যাপারে কোন আশ্বাস দেননি স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমও। তিনি বলেন, রেসিডেন্সি প্রোগ্রামের বিষয়ে আগেও বলা হয়েছে এবং এখনও বলা হচ্ছে, বিষয়টি ভবিষ্যতে দেখা হবে। এদিকে কমিটির সদস্য ইউনুস আলী সরকার বিএসএমএমইউ’র জন্য এ ধরনের রেসিডেন্সি প্রোগ্রামের কোন প্রয়োজন ছিল না বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, এ ধরনের সহায়তা মেডিক্যাল কলেজগুলোতে দেয়ার যৌক্তিকতা আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন প্রয়োজন নেই। ওই সময় কমিটির সদস্য সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. আ ফ ম রুহুল হক বলেন, মেডিক্যাল কলেজে যেসব কোর্স চালু আছে এবং সেখানে বেসরকারিভাবে যারা পড়তে আসেন তাদের বেতন বিএসএমএমইউ থেকে দিতে হয়। বিএসএমএমইউ’র বাইরে যারা বেসরকারীভাবে ট্রেনিং করছে তাদের বেতন কেন বিএসএমএমইউ বহন করবে। এটি কিভাবে অনুমোদন হলো তা বোধগম্য নয়। স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক ডা. দীন মোঃ নুরুল হক বলেন, সারাদেশের রেসিডেন্সি প্রোগামটি বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ন্ত্রণ করে। এ কারণে বিএসএমএমইউ-তে পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হলেও সেখানকার শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন হাসপাতালে যাচ্ছেন। এজন্য বিএসএমএমইউ প্রতিবছর বাইরের প্রতিষ্ঠানের ডাক্তারদের ভাতা বাবদ ৪ কোটি ২৯ লাখ ৬০ হাজার টাকা দেয়। স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, শিক্ষার্থীদের বিএসএমএমইউ থেকে ওইসব কলেজে পাঠানো হচ্ছে। তাই দায়িত্ব হিসাবে বিএসএমএমইউ তাদের ভাতা বহন করছে। কার্যবিবরণী থেকে জানা যায়, ওই বিষয়ে অন্যদের মন্তব্যের পর বিএসএমএমইউ’র ভিসি বলেন, শুধুমাত্র বিএসএমএমইউতে সবাই ভর্তি হচ্ছেন বিষয়টি তা নয়। শিক্ষীর্থীরা বাইরের হলেও পরীক্ষার মান বজায় রাখার জন্য বিএসএমএমইউ থেকে কোর্সটি নিয়ন্ত্রণ করা হয়। তিনি বলেন, কোর্সটিকে উৎসাহিত করার জন্য কিছু টাকা তাদের দেয়া হচ্ছে। টাকা দেয়ার সময় এলে সবাই এসে চাপ সৃষ্টি করে যাতে টাকা দেয়া বন্ধ না হয়।
×